হামলার দায় স্বীকার দুই সংগঠনের
ওয়াগাহ সীমান্ত তোরণে গতকাল সতর্ক পাহারায় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর এক সদস্য।ছবি: এএফপি |
পাকিস্তানের ওয়াগাহ সীমান্তে গত রোববারের আত্মঘাতী হামলায় ৬০ জন নিহত হওয়ার পর ওই সীমান্ত দিয়ে ভারত ও পাকিস্তানের বাণিজ্য বন্ধ হয়ে গেছে। তবে তিনদিনের জন্য স্থগিত করার কথা বলা হলেও শেষ পর্যন্ত গতকাল সোমবার দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর প্রথাগত জমকালো কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এদিকে পাকিস্তানের কট্টরপন্থী সংগঠন জানদাল্লাহ এবং তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তানের (টিটিপি) সহযোগী সংগঠন জামাত-উল-আহরার পৃথকভাবে এই হামলার দায় স্বীকার করেছে। খবর রয়টার্স, এনডিটিভি ও ডনের। আত্মঘাতী হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগে গতকাল সোমবার সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ঘটনাস্থলসংলগ্ন এলাকা থেকে গতকাল আরও বিস্ফোরক ও আত্মঘাতী হামলা চালানোর সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়েছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এ হামলাকে ‘কাপুরুষোচিত সন্ত্রাসবাদী কাজ’ আখ্যা দিয়ে এর তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন।
হতাহতের ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছেন তিনি। চির প্রতিদ্বন্দ্বী দুই প্রতিবেশী ভারত ও পাকিস্তানের একমাত্র পাঞ্জাবের ওয়াগাহ সীমান্তেই প্রতিদিন বর্ণাঢ্য সামরিক কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হয়। দুই দেশের হাজারো মানুষ প্রতিদিন ওই আয়োজন দেখতে যান। বোমা হামলার পর পর উভয় পক্ষ কুচকাচওয়াজ তিনদিনের জন্য বন্ধে সম্মত হয়। শেষ পর্যন্ত কুচকাওয়াজ সত্যিই বন্ধ থাকলে তা হতো ১৯৭১ সালের পর প্রথমবারের মতো স্থগিত করার ঘটনা। ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, পাকিস্তানের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) কুচকাওয়াজসহ পতাকা নামানোর অনুষ্ঠান স্থগিত করতে সম্মত হয়েছিল। তবে গতকাল উভয় দেশের বেশ কিছুসংখ্যক দর্শকের উপস্থিতিতে এ কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হয়েছে। তবে ওয়াগাহ সীমান্তের দুই দেশের শুল্ক কর্মকর্তারা জানান, হামলার পর পর বাণিজ্যিক কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। আরও দুই দিন তা বন্ধ থাকতে পারে। দুই দেশেই সীমান্ত ক্রসিংয়ে ফল, সবজি ও অন্যান্য মালামাল নিয়ে শত শত ট্রাক আটকে রয়েছে। তবে আত্মঘাতী হামলা সত্ত্বেও লাহোর-দিল্লি বাস চলাচল অব্যাহত রয়েছে। দিল্লি পরিবহন করপোরেশনের (ডিটিসি) মুখপাত্র আরএস মিনহাজ আইএএনএসকে বলেন, ‘বাস চলাচল স্থগিত করার বিষয়ে সরকারি কোনো নির্দেশনা পাইনি। সোমবার সকালে দিল্লি থেকে বাস যথাসময় লাহোরের উদ্দেশে ছেড়ে গেছে।’ রোববার সন্ধ্যা সোয়া ছয়টার দিকে ভারত-পাকিস্তান আন্তর্জাতিক সীমারেখা থেকে পাকিস্তানের ৫০০ মিটার ভেতরে ভয়াবহ ওই আত্মঘাতী হামলার ঘটনা ঘটে।
এতে হতাহতদের বেশির ভাগই কুচকাওয়াজ দেখে বাড়ি ফিরছিলেন। হামলায় শতাধিক মানুষ আহত হয়। পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক মুশতাক সুখেরার বরাত দিয়ে ভারতের সংবাদ সংস্থা পিটিআই জানায়, এটা আত্মঘাতী হামলা। প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, অল্প বয়সী একজন তরুণ এই হামলা চালিয়েছে। হতাহতদের বেশির ভাগ বেসামরিক লোক। নিহতদের মধ্যে তিনজন পাকিস্তানি সীমান্তরক্ষী বাহিনী পাকিস্তান রেঞ্জার্সের সদস্য। বিভিন্ন সূত্রের বরাত দিয়ে ভারতের টেলিভিশন চ্যানেল এনডিটিভি জানায়, আত্মঘাতী হামলার আশঙ্কায় ১৫ দিন আগে সীমান্তসংশ্লিষ্টদের সতর্ক করে দেওয়া হয়। সতর্ক বার্তা পেয়ে উভয় দেশই নিরাপত্তা জোরদার করেছিল। পাকিস্তানের বিস্ফোরক নিস্ক্রিয়করণ স্কোয়াডের একজন সদস্যের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা এএফপি জানায়, ঘটনাস্থলের আশপাশ থেকে আট কেজি বিস্ফোরক উদ্ধার করা হয়েছে। এ ছাড়া বোমা তৈরির সরঞ্জাম বল, বিয়ারিং ও আত্মঘাতী হামলার পোশাক উদ্ধার করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র এই হামলার নিন্দা জানিয়ে হতাহতদের পরিবার ও পাকিস্তান সরকারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছে।
No comments