জেনিথ ও আহাদ এখন দু’জনে দু’জনার by ওয়েছ খছরু
বিয়ের লাল শাড়ি পরলেন ইংগ্রিথ জেনিথ।
বসলেন বিয়ের পিঁড়িতে। প্রেমিক আবদুল আহাদকে করে নিলেন সারা জীবনের সঙ্গী।
বিয়ের পরও সুখী জেনিথ। আহাদের ভালবাসায় সার্থক তিনি। তার পরিবার ও
আত্মীয়স্বজনদের মমতায় আপ্লুত হয়ে পড়লেন। এত ভালবাসা জীবনে আগে দেখেননি
জেনিথ। বিয়ের পর এখন স্বামী আহাদকে সঙ্গে করে নিয়ে যেতে চালাচ্ছেন দাপ্তরিক
কাজ। জেনিথের জন্মভূমি আমেরিকার সানথা ক্লেফানিয়ায়। ওখানকার হাসপাতালের
নার্স তিনি। পাশাপাশি করেন ব্যবসাও। আমেরিকার সানথা শহরের একটি গ্রোসারি
শপের মালিক তিনি। তার পিতা মৃত রবাম লিং মেনসিল ও মা ফ্রানাইসকা গ্রথরিয়াম।
আর আহাদের বাড়ি সিলেট নগরীর হাজারীবাগ এলাকার ৪৯ নং বাসায়। পেশায় একজন
ব্যবসায়ী। নগরীর প্লাজা মার্কেটে রয়েছে তার কাপড়ের দোকান। আহাদের পিতা
আবদুল কাদির ও মা মিনারা বেগম। মাস তিনেক আগের কথা। আবদুল আহাদের সঙ্গে
ফেসবুকে বন্ধু হয়ে ওঠেন আমেরিকার সানথা শহরের মেয়ে ইংগ্রিথ জেনিথ। প্রথম
বন্ধু হিসেবে দুই জন চ্যাটের মাধ্যমে কথাবার্তা বলেন। একে অপরের সম্পর্কে
জানতে চান। এভাবে তাদের মধ্যে প্রতিদিনই ফেসবুকে কথা হয়। ভাব বিনিময় ঘটে
দু’জনের। এক পর্যায়ে এই ভাব বিনিময় রূপ নেয় ভালবাসায়। ফেসবুকের মাধ্যমেই
তারা জড়িয়ে পড়েন গভীর ভালবাসায়। নিয়মিত কথা হয় তাদের। আরও কাছে আসতে চান
দু’জন। জিনিথের প্রস্তাবের সূত্র ধরে দু’জনের কথা হয় স্কাইপিতে। এভাবে
ঘনিষ্ঠতা বাড়ে আহাদ ও জেনিথের। সেই সূত্র ধরে আসে বিয়ের প্রস্তাব। একে
অপরকে বিয়ে করতেও রাজি হন। আবদুল আহাদ গতকাল মানবজমিনকে জানিয়েছেন, তিনি
বিয়েতে রাজি হওয়ার পর গত ৩০শে অক্টোবর বাংলাদেশে আসার জন্য তারিখ ঠিক করেন
জেনিথ। সেই অনুযায়ী ওই দিন আমেরিকা থেকে বাংলাদেশে এসে পৌঁছেন তিনি।
বিমানবন্দরে দেখা হয় দু’জনের। আহাদ বলেন, তিন মাসের প্রেমের পর এই প্রথম
আমরা দু’জন এক হলাম। আমি জেনিথকে দেখে খুশি হয়েছি। জেনিথও আমাকে দেখে খুশি।
এরপর জেনিথকে নিয়ে চলে আসি সিলেটে। হাজারীবাগের বাসায় সে ওঠে। জেনিথের
সঙ্গে তার পরিবারের কেউ আসেননি। এদিকে, জেনিথ সিলেটে আসার পর তার অনুমতি
অনুযায়ী বিয়ের দিনক্ষণ ঠিক হয়। গত রোববার আহাদ ও জেনিথের বিয়ে হয় বাসাতেই।
আত্মীয়-স্বজনদের নিয়ে বেশ ধুমধাম করেই দু’জনে বিয়ের বাঁধনে আবদ্ধ হন।
জেনিথও বিয়েতে খুশি। আহাদের পরিবারের সদস্যদের ভালবাসায় সন্তুষ্ট তিনি।
জানান, আমি আহাদকে ভালবেসে বিয়ে করেছি। আমাদের দু’ জনের পরিচয় ফেসবুকে।
এরপর আমরা স্কাইপির মাধ্যমে কথা বলি। জেনিথ বলেন, আহাদের ভালবাসার টানে
আমি বাংলাদেশে এসেছি। এরপর বিয়ে করেছি। এদিকে, আহাদের বিয়েতে খুশি তার
পরিবারের সদস্যরা। তারা জানিয়েছেন, জেনিথ আমেরিকার মেয়ে হলেও সে খুব সহজেই
মানিয়ে নেয় বাংলাদেশের পরিবেশ। সিলেটে আসার পর সে বাসাতেই ওঠে। খুবই মিশুক
স্বভাবের মেয়ে হওয়ায় তাকে পরিবারের সদস্যদের পছন্দ হয়। এক পর্যায়ে পরিবারের
সদস্য ও আত্মীয়স্বজনরা মিলে আহাদ ও জেনিথের বিয়ে দেন। আর আহাদ জানিয়েছেন,
ভালবাসা মানুষের মনের মধ্যে কখন জন্ম নেয় তা কেউ বলতে পারবে না। আমি
ইংগ্রিথ জেনিথকে ভালবাসি। তাই তাকে আমার স্ত্রীর মর্যাদা দিচ্ছি। আমার মনের
রাজকন্যা হিসেবে জেনিথকে সারা জীবন রাখতে চাই। এদিকে, জেনিথ আমেরিকান
হওয়ায় সে এখন খ্রিস্টান। আহাদ জানান, আমি জেনিথের ধর্মে আঘাত করিনি। আমি
চাই জেনিথ তার ইচ্ছা মতো ধর্ম পালন করুক। আমি তাতে বাধা দেবো না। জেনিথ
বাংলাদেশে এসেই আহাদকে তার সঙ্গে আমেরিকায় নিয়ে যেতে কাজ শুরু করেছেন।
ইতিমধ্যে আমেরিকান দূতাবাসে এ নিয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে। করা হয়েছে আবেদন। আহাদ
জানান, আমেরিকান দূতাবাস থেকে সাড়া পেলেই ভালবাসার মানুষ জেনিথের সঙ্গে
চলে যাবো আমেরিকায়।
No comments