‘ইরাক যুদ্ধ অবৈধ ছিল’
ইরাক যুদ্ধকে ‘অবৈধ’ বলে মন্তব্য করলেন যুক্তরাজ্যের সাবেক উপপ্রধানমন্ত্রী জন প্রেসকট। ২০০৩ সালে ইরাকের বিরুদ্ধে শুরু করা যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন ওই যুদ্ধে ব্রিটিশরাও অংশ নেয়। ওই সময় প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারের উপপ্রধানমন্ত্রী ছিলেন তিনি। ওই আগ্রাসনের দীর্ঘ ১৩ বছর পর এসে সানডে মিরর পত্রিকার একটি লেখায় প্রেসকট এই মন্তব্য করেন। এতে তিনি আরও লেখেন, তাঁকে বাকি জীবন ‘বিপর্যয়কর’ এ সিদ্ধান্ত মাথায় নিয়ে কাটাতে হবে। লর্ড প্রেসকট বলেন, জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনানের মতো গভীর দুঃখ ও ক্ষোভের সঙ্গে তিনি এখন একমত যে ওই যুদ্ধ ছিল অবৈধ। তা সত্ত্বেও ইরাক আগ্রাসনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার।
প্রেসকট বলেন, ২০০৩ সালের মার্চে ইরাক অভিযান শুরুর আগে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশকে পাঠানো ব্লেয়ারের বার্তা, ‘যাই ঘটুক, আমি আপনার সঙ্গে আছি’—ছিল ‘বিধ্বংসী’। প্রেসকট বলেন, ‘এমন একটা দিনও কাটে না, যেদিন যুদ্ধে যাওয়ার ওই সিদ্ধান্তের কথা আমি ভাবি না। যেসব ব্রিটিশ সেনা দেশের জন্য যুদ্ধে অংশ নিয়ে জীবন দিয়েছেন বা আহত হয়েছেন; সাদ্দাম হোসেনকে উৎখাতের মাধ্যমে আমাদের খোলা প্যান্ডোরার বাক্সের কারণে যে ১ লাখ ৭৫ হাজার বেসামরিক ইরাকি নিহত হয়েছে তাদের কথা না ভেবে এক দিনও পার হয় না।’ ওই যুদ্ধের জন্য দলের পক্ষ থেকে যুক্তরাজ্যের বিরোধী দল লেবার পার্টির নেতা জেরেমি করবিনের দুঃখপ্রকাশকে অভিনন্দন জানান প্রেসকট। প্রেসকটের ওই মন্তব্যের আগে গত বুধবার সাদ্দাম হোসেনকে উৎখাতে ইরাকে হামলার যৌক্তিকতা ও ফলাফল নিয়ে বহুল প্রতীক্ষিত তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ‘চিলকট রিপোর্ট’ নামের ঐতিহাসিক এ প্রতিবেদন প্রকাশের পর টনি ব্লেয়ারকে বিচারের মুখোমুখি করার দাবি জোরালো হয়ে উঠেছে।
ইরাক যুদ্ধে হতাহত ব্রিটিশ সৈন্যদের পরিবার ব্লেয়ারের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার উদ্যোগের কথাও জানিয়েছে। প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, ২০০৩ সালে মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোটের সঙ্গে মিলে যুক্তরাজ্য ইরাকে যে হামলা চালিয়েছে, সেটার কোনো যৌক্তিক বিবেচনার ভিত্তিতে ছিল না। দেশটিকে নিরস্ত্র করার শান্তিপূর্ণ উপায় পাশ কাটিয়ে ওই হামলা চালানো হয়। ভবিষ্যতে কোনো দেশে হস্তক্ষেপ বা হামলার আগে এই প্রতিবেদনের শিক্ষাগুলো বিবেচনায় রাখতে যুক্তরাজ্য সরকারকে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে। ইরাকে হামলায় যুক্তরাজ্যের অংশগ্রহণের যৌক্তিকতা অনুসন্ধান ও তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার সরকারের ভূমিকা তদন্তে সাবেক সরকারি কর্মকর্তা স্যার জন চিলকটকে প্রধান করে ২০০৯ সালে একটি কমিটি গঠন করা হয়। পাঁচ সদস্যের ওই কমিটি দীর্ঘ সাত বছর পর তাদের ঐতিহাসিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
No comments