অবিলম্বে অবশ্যই মৃত্যুদন্ড মুলতবি করতে হবে -অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল
অবিলম্বে
অবশ্যই মৃত্যুদন্ড মুলতবি করতে হবে বাংলাদেশকে। শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদন্ড
বাতিল করার ক্ষেত্রে এটা হবে প্রথম পদক্ষেপ। নিশ্চিত করতে হবে যে, রাজনৈতিক
হস্তক্ষেপ যেন বিচার বিভাগের কর্মকান্ড ক্ষতিগ্রস্ত না করে। আন্তর্জাতিক
মানবাধিকার বিষয়ক সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এসব কথা বলেছে। এক
বিবৃতিতে তারা বাংলাদেশের প্রতি এসব আহ্বান জানায়। ‘বাংলাদেশ: ফ্রেশ ডেথ
সেন্টেন্সেস শো আরজেন্ট নিড টু এন্ড এক্সিকিউশনস’ শীর্ষক বিবৃতিতে বলা হয়,
বাংলাদেশে অব্যাহতভাবে মৃত্যুদন্ড দেয়া হচ্ছে- এ বিষয়টি ভীষণ উদ্বেগের। এর
আগে সর্বশেষ মৃত্যুদন্ড দেয়া হয় এখন থেকে ৯ মাস আগে। তারপর কিছুটা বিলম্বের
পর এক সপ্তাহেরও কম সময়ের মধ্যে মৃত্যুদন্ড দেয়া হলো তিন জনকে। মাত্র
দু’দিনে দুটি মৃত্যুদন্ড দন্ডিত করার পর অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এ
বিবৃতি দিয়েছে। এতে আরও বলা হয়, বিরোধী দল জামায়াতে ইসলামীর সিনিয়র নেতা
মোহাম্মদ কামারুজ্জামান। ২০১৩ সালের মে মাসে তাকে প্রথম মৃত্যুদন্ড দেয়া
হয়। সেই রায়ের আপিল শুনানিতে বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্ট মৃত্যুদন্ড বহাল
রেখেছেন। তাকে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত হত্যাকান্ড সব বিভিন্ন অভিযোগে
অভিযুক্ত করেছে। এই আদালত স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় সংঘটিত অপরাধের বিচারের
জন্য গঠন করা হয়েছে। এ বিষয়ে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের বাংলাদেশ গবেষক
আব্বাস ফয়েজ বলেন, স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় নির্যাতনের শিকার লাখ লাখ মানুষ ও
তাদের পরিবারের সদস্যদের সুবিচার দিতে গিয়ে ফাঁসি দেয়া হলে তা শুধুই
সহিংসতা অব্যাহত রাখবে। গত রোববার ২রা নভেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত
আরেক জামায়াত নেতা মীর কাসেম আলীকে মৃত্যুদন্ড দিয়েছে। গত সপ্তাহে ২৯শে
অক্টোবর জামায়াতের সবচেয়ে সিনিয়র নেতা মতিউর রহমান নিজামিকে মৃত্যুদন্ড
দেয়া হয়। এর পরই কামারুজ্জামানকে মৃত্যুদন্ড দেয়া হলো। ২০০৯ সালে প্রতিষ্ঠা
করা হয় আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত। তার পর থেকে এ পর্যন্ত ১২টি রায় দেয়া
হয়েছে। তার সবগুলোই বিরোধী দলীয় সদস্যদের বিরুদ্ধে। বিশেষ করে তাদের বেশির
ভাগই জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। এর মধ্যে ৯ জনকে দেয়া হয়েছে
মৃত্যুদন্ড। কামারুজ্জামানের আপীলের রায় সুপ্রিম কোর্ট ঘোষণা কারার পর
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হবে।
এটর্নি জেনারেল সাংবাদিকদের সাক্ষাতকারে বলেছেন, বিচার বিভাগীয় আর কোন ছাড়
পাওয়ার সুযোগ নেই। ওই বিবৃতিতে বলা হয়, আপীলের সর্বশেষ স্থান হিসেবে সুপিম
কোর্টে বিচারের বিষয়ে পর্যালোচনা (রিভিউ) করার অধিকার বিবাদীকে দিয়েছে
সংবিধান। কিন্তু এটর্নি জেনারেল আর কোন রিভিউ করার সুযোগ নেই বলে যে
মন্তব্য করেছেন তা এই অধিকারকে খর্ব করে। আব্বাস ফয়েজ বলেন, আন্তর্জাতিক
অপরাধ আদালত যে প্রক্রিয়ায় রায় দিয়েছে তাতে রয়েছে ভীষণভাবে রাজনীতিকরণ।
সমর্থকদের রাজনৈতিক চাপের মুখে সরকারের মাথা নত করা চলবে না। উল্টো
অবিলম্বে দেশের সব মৃত্যুদন্ড লাঘব করতে হবে। পূর্ণাঙ্গভাবে মৃত্যুদন্ড
বাতিল করতে মৃত্যুদন্ড মুলতবি করতে হবে। এখন পর্যন্ত ১৪০টি দেশ মৃত্যুদন্ড
বাতিল করেছে। ২০০৯ থেকে ২০১৩ সালের মধ্যে প্রতি বছর মৃত্যুদন্ড দেয়া হয় এমন
৯টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। ওই বিবৃতিতে আরও বলা হয়, কিছু ব্যতিক্রম
ছাড়া সব মৃত্যুদন্ডের বিরোধিতা করে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।
No comments