হরতাল ডাকলেই ক্ষতি by মনির হোসেন
হরতাল মানেই ক্ষতি। সবচেয়ে বড় ক্ষতির শিকার হন ব্যবসায়ীরা। শিল্প-কলকারখানায় উৎপাদন চরমভাবে ব্যাহত হয়। আর নানা অজুহাতে পরিচালনা খরচও বাড়ে। অথচ হরতাল চলাকালে বেশির ভাগ শিল্প ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের আয়ের চাকা একেবারে বন্ধ হয়ে যায়। ওদিকে সামগ্রিক হিসেবে প্রতিটি হরতাল দেশের পুরো অর্থনীতিতে ব্যাপক ক্ষতি ডেকে আনে। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ১ দিনের হরতালে ক্ষতি হয় দেড় হাজার কোটি টাকা। যার ৯০ ভাগই গুনতে হয় ব্যবসায়ীদের। পর্যবেক্ষক মহলের মতে, বড় বড় শিল্পপতিসহ আপামর ব্যবসায়ী সমাজ দেশের অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখলেও হরতালে তাদের ক্ষতি নিয়ে কারও যেন মাথাব্যথা নেই। সরকারের নীতিনির্ধারক মহলও সেভাবে ভাবেন না। বরং হরতাল শেষে সরকার বলে হরতাল ব্যর্থ হয়েছে, বিপরীতে হরতাল আহবানকারীরা দাবি করেন সফল হয়েছে। এভাবে দীর্ঘদিন থেকে দেশে হরতাল নিয়ে এক ধরনের অপসংস্কৃতি চালু রয়েছে, যা কারও কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। তারা বলেন, হরতালে সরকারের নীতিনির্ধারক মহলসহ আমলা ও চাকরিজীবীদের ব্যক্তিগত কোনো ক্ষতি নেই। কিন্তু ব্যবসায়ী ও দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির ক্ষতি ভয়াবহ। তাই হরতাল সফল কিংবা ব্যর্থ হয়েছে, এটি প্রধান বিবেচ্য বিষয় নয়। হরতাল ডাকা হলেই ব্যবসায়ীদের ক্ষতির মুখোমুখি হতে হয়। বিষয়টিকে এ বিবেচনায় মূল্যায়ন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।
এছাড়া হরতালের কারণে বর্তমান বিনিয়োগ নিয়েও ব্যবসায়ীরা উদ্বিগ্ন। এমনিতেই তারা নানা সংকটে বিনিয়োগ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। হরতালের কারণে এই অবস্থা আরও দীর্ঘায়িত হবে। আর হরতালের পর ট্রাকসহ পরিবহন সংস্থাগুলো তাদের ভাড়া তিনগুণ বাড়িয়ে দেয়। ফলে পণ্যের পরিবহন খরচ বেড়ে যাবে। এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়বে পণ্যের দামও। হরতালের আরও বড় নেতিবাচক প্রভাব হচ্ছে, বিদেশে ইমেজ সংকটকে আরও উস্কে দিচ্ছে। ফলে বিদেশী বিনিয়োগকারীরা আরও নেতিবাচক ধারণা নেবে বাংলাদেশ সম্পর্কে। রফতানি বাণিজ্যেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। কেননা সময়মতো পণ্যের সরবরাহ করতে না পাড়ার শংকায় ক্রেতারা বাংলাদেশ থেকে অর্ডার গুটিয়ে নিচ্ছে। এ প্রসঙ্গে দেশের শীর্ষস্থানীয় অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, বছর না ঘুরতেই অর্থনীতিতে আবার হরতালের থাবা পড়ায় এবার ক্ষতির পরিমাণ আরও বেশি হওয়ার আশংকা রয়েছে। গত বছরের হরতাল, অবরোধ ও রাজনৈতিক সহিংসতার কারণে যে ক্ষতি হয়েছে, সেই ক্ষতি এখনও পুষিয়ে ওঠা সম্ভব হয়নি। তাদের মতে, যত ছোট দলই হোক হরতাল ডাকলেই ব্যবসা-বাণিজ্য বাধাগ্রস্ত হয়। উৎপাদনের চাকা থেমে যায়। এতে দীর্ঘ মেয়াদে কর্মসংস্থান সংকুচিত করে, বেকারত্ব বাড়ে। তাদের মতে, হরতালের কারণে শিল্প পণ্যের উৎপাদন ব্যয় বাড়লেও খুচরা পর্যায়ে দাম বাড়ানো যায় না। এতে ব্যবসায়ীরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
তারা আরও বলেছেন, হরতালের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় স্বল্প আয়ের মানুষ। তারা কাজ করতে পারে না বলে খেয়ে না খেয়ে জীবনযাপন করে। বেড়ে যায় কষ্টের মাত্রা। সূত্র জানায়, হরতালে অপ্রাতিষ্ঠানিক ব্যবসা-বাণিজ্যের অবস্থা স্থবির হয়ে পড়ে। পণ্যের সরবরাহ বন্ধ থাকায় বেড়ে যায় দাম। কৃষিপণ্য পচে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ব্যবসায়িক বা বেড়াতে আসা বিদেশীরা আটকে যাচ্ছে। এতে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ম হচ্ছে। পাশাপাশি পরীক্ষা পেছানোর কারণে দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
টাকার প্রবাহ স্থবির : হরতালের কারণে অর্থনীতির সবচেয়ে বড় উপকরণ টাকার ঘূর্ণন স্থবির হয়ে পড়ে। ফলে টাকা হাতবদল না হওয়ায় অর্থনীতিতে এর কোনো অবদান থাকছে না। অলস পড়ে থাকছে টাকা, যা অর্থনীতিতে মূল্যস্ফীতির হার বাড়িয়ে দিচ্ছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মতে টাকা যত বেশি ঘুরবে, তত বেশি অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড জোরদার হবে। বাড়বে উৎপাদন। টাকার হাতবদল দ্রুত করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সেম ডে ক্লিয়াইরং হাউস চালু করেছে। যাতে দিনে দিনে চেক ক্লিয়ারিং হয়ে যাচ্ছে।
সিপিডির পর্যালোচনা : বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছর ছয় মাসে দেশে মোট ৫৫টি হরতাল-অবরোধ হয়েছে। ওই সময়ে রাজনৈতিক সহিংসতায় ক্ষতি হয়েছে ৪৯ হাজার কোটি টাকা। ২০১৩ সালের জুলাই থেকে ২০১৪ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত ১৮০ দিনের মধ্যে ওই হরতাল-অবরোধ হয়েছে। তাদের প্রতিবেদন অনুযায়ী দেশে একদিনের হরতালের কারণে ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় ৮৯১ কোটি টাকা। এর মধ্যে পরিবহন খাতে ক্ষতি ৩০৩ কোটি টাকা, কৃষি খাতে ২৮৮ কোটি টাকা, বস্ত্র ও গার্মেন্ট খাতে ২৫০ কোটি টাকা এবং পর্যটন খাতে ক্ষতির পরিমাণ ৫০ কোটি টাকা।
বিজিএমইএর তথ্য : গার্মেন্ট মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর তথ্য মতে, একদিনের হরতালে তাদের ক্ষতির পরিমাণ কমপক্ষে ১১০ কোটি টাকা। হরতালের কারণে ১৯৯০ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত ১০ বছরে তাদের ক্ষতি হয়েছে ৮০ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। শুধু ১৯৯৯ সালেই ক্ষতির পরিমাণ ছিল ২ হাজার ১৩৫ কোটি টাকা। এ হিসাবে প্রতি বছরে ক্ষতি হয়েছে ৮ হাজার ৩৮ কোটি টাকা। সংস্থাটি বলছে, বিশ্বমন্দার কারণে ইউরোপ এবং আমেরিকাতে রফতানি প্রতি বছরই হ্রাস পাচ্ছে। আর হরতালের কারণে রফতানিতে আরও নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
আন্তর্জাতিক সংস্থার জরিপ : এদিকে জাতিসংঘ উন্নয়ন তহবিলের (ইউএনডিপি) এক জরিপ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশের ৪৪ শতাংশ লোক মনে করেন হরতালের কারণে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষতি হয়। ২০ শতাংশ মনে করেন, হরতাল জাতীয় অর্থনীতির ক্ষতি করে। ৯৫ শতাংশ মানুষ হরতাল পছন্দ করেন না।
হরতালে সরকারের রাজস্ব আয়ে ক্ষতি : হরতালে প্রতিদিন শুল্ক খাতে গড়ে ক্ষতি হচ্ছে ৪০ কোটি টাকা। স্থানীয় মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) খাতে ক্ষতি যোগ করলে এর পরিমাণ শত কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। রাজস্ব বোর্ডের নির্দেশে শুল্ক বন্দর ও কমিশনারেটগুলো হরতালের কারণে পৃথকভাবে রাজস্বের দৈনিক গড় ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করেছে। গত বছরের মার্চে পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে, ১৯টি শুল্ক বন্দর ও কমিশনারেটের মধ্যে ১৪টিতে রাজস্ব আদায় কম হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় চট্টগ্রাম কাস্টমস। এতে দৈনিক ক্ষতির পরিমাণ ১৭ কোটি ৮২ লাখ টাকা। ঢাকা কাস্টমসে ১ কোটি ৪৮ লাখ, আইসিডিতে ৪ কোটি, বেনাপোল কাস্টমসে ২ কোটি ৭৮ লাখ, মংলা কাস্টমসে ১ কোটি ৪৫ লাখ, চট্টগ্রাম বন্ড কমিশনারেটে ২ কোটি, শুল্ক, আবগারি ও মূসক কমিশনারেট ঢাকা (উত্তরে) ৩ কোটি, ঢাকা পশ্চিমে ৬৩ লাখ, শুল্ক, আবগারি ও মূসক কমিশনারেট চট্টগ্রামে ১০ লাখ, শুল্ক, আবগারি ও মূসক কমিশনারেট রাজশাহীতে ১ কোটি ৫৯ লাখ, শুল্ক, আবগারি ও মূসক কমিশনারেট রংপুরে ৪৭ লাখ, শুল্ক, আবগারি ও মূসক কমিশনারেট যশোরে ৩ কোটি ১৫ লাখ, শুল্ক, আবগারি ও মূসক কমিশনারেট খুলনায় ৮১ লাখ এবং শুল্ক, আবগারি ও মূসক কমিশনারেট সিলেটে ৪৫ লাখ টাকা রাজস্বের ক্ষতি হয়।
ঢাকা চেম্বারের জরিপ : নিজস্ব এক গবেষণার উদ্ধৃতি দিয়ে ডিসিসিআইর সাবেক সভাপতি সবুর খান বলেন, একদিনের হরতালে দেশের অর্থনীতিতে ২০ কোটি মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ ক্ষতি হয়। ওই প্রতিবেদন অনুসারে ১৫ দিনের হরতালে যে পরিমাণ ক্ষতি হয় তা দিয়ে অনায়াসে একটি পদ্মা সেতু নির্মাণ করা সম্ভব। সবুর খান বলেন, দেশের অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক চাহিদা কম থাকায় শিল্প খাতের প্রবৃদ্ধি কম হওয়ার আশংকা রয়েছে।
ব্যবসায়ীদের অভিমত : ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইর সভাপতি আকরাম উদ্দিন আহমেদ মনে করেন, হরতালে অর্থনীতির মেরদণ্ড ভেঙে পড়ে। সামগ্রিকভাবে দেশের মানুষ এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। রাজনৈতিক দলগুলোর বিষয়টি বিবেচনা করা উচিত। এফবিসিসিআই সাবেক সভাপতি একে আজাদ বলেন, টানা হরতালে ব্যবসায়ীরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। হরতাল কখনও দেশের জন্য মঙ্গল নয়। তিনি বলেন, ৫০-এর দশকে হরতালের উৎপত্তি। ওই সময়ে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ছিল ভিন্ন। কিন্তু বর্তমানে পরিস্থিতি পাল্টে গেছে। পরিবর্তিত বিশ্ব ব্যবস্থায় উন্নত দেশগুলো হরতাল করে না। দেশেও এখন হরতাল এখন আর জনমতের প্রতিফলন নয়। এটি রাজনৈতিক দলগুলোর পেশিশক্তির মহড়া। ফলে আন্তর্জাতিক মহলে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হচ্ছে। এটি অর্থনীতির জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। ফলে শিল্প-কারখানার উৎপাদন ব্যাহত হয়। জনজীবনে ব্যাপক দুর্ভোগ বাড়বে। এছাড়া বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হবে। বিজিএমইএ’র সভাপতি আতিকুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, বিদ্যুৎ, গ্যাস সংকট ও হরতাল নিয়ে আমরা আছি বড় যন্ত্রণায়। এ দেশে ব্যবসা করতে এসে কিছু কর্মসংস্থান করেছি, দেশের জন্য বৈদেশিক মুদ্রা আনছি, এটা যেন আমাদের অপরাধ হয়ে গেছে। রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক অস্ত্র দিয়ে রাজনীতিবিদরা আমাদের ঘায়েল করছে। এটা নিজের পেটে নিজেই ছুরি চালানোর মতো। আমরা এ থেকে মুক্তি চাই।
অর্থনীতিবিদদের অভিমত : তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলামের মতে, ক্রমেই অস্থির হয়ে উঠছে দেশের রাজনীতি। রাজনৈতিক দলগুলোর মনোভাব দেখে মনে হচ্ছে অদূর ভবিষ্যতে এ অবস্থা নিরসনের সম্ভাবনা কম। তিনি বলেন, টানা এই হরতালের ফলে অর্থনীতিতে মারাত্মকভাবে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। দেশী-বিদেশী উদ্যোক্তারা বিনিয়োগে আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে। শিল্প উৎপাদন কমে যাবে। নতুন করে কর্মসংস্থান তৈরি হবে না। ফলে জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমে আসবে। সার্বিকভাবে অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়বে দেশ। তার মতে, রাজনৈতিক দলগুলোর এই সংঘাতের রাজনীতি থেকে বের হয়ে আসা উচিত। বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাবেক সভাপতি ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদের মতে, হরতালের কারণে অর্থনৈতিক কার্যক্রম বন্ধ থাকছে। ফলে অর্থনৈতিক কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়বে। উৎপাদন ব্যাহত হবে। এছাড়া পরিবহন সমস্যার ফলে সরবরাহ কমায় জিনিসপত্রের দাম বাড়বে। সবকিছু মিলে দেশের সামষ্টিক অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ রাজনীতিতে হরতাল দিয়ে কোনো সমস্যার সমাধান হয়নি। ফলে সমস্যা আরও বেড়েছে। তাই দেশের স্বার্থেই রাজনৈতিক দলগুলোর হরতালের মতো ধ্বংসাত্মক কর্মসূচি পরিহার করা উচিত।
ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশন : বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশেনের চেয়ারম্যান শেখ করিব হোসেন বলেন, হরতালে বীমা খাত সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কারণ গাড়ি পোড়ানো হলে বীমা কোম্পানিকে ক্ষতিপূরণ দিতে হয়। তিনি বলেন, এই হরতালের ফলে দেশের অর্থনীতিতে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেবে। এতে জনসাধারণের স্বাভাবিক জীবনযাপন বাধাগ্রস্ত হবে। তিনি বলেন, হরতালের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর বীমার ক্ষতিপূরণ কোম্পানিগুলোকে দিতে হবে। ফলে বীমা প্রতিষ্ঠানগুলো বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বে।
সড়ক পরিবহন সমিতি : ঢাকা সড়ক পরিবহন সমিতির এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, প্রতিদিনের হরতালে দেশের সড়ক পরিবহন খাতে প্রায় ২৫০ কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে শুধু পরিবহন বন্ধ থাকার কারণে। এর বাইরে অনেক বাস-ট্রাক পুড়িয়ে ফেলা হচ্ছে। এগুলোর ফলে ক্ষতির পরিমাণ আরও বেশি।
কৃষকের সর্বনাশ : কৃষকের দীর্ঘ শ্রমের ফসল হিসেবে বাজারে আসবে শীতের সবজি ও আমন ধান। ইতিমধ্যে ক্ষেত থেকে সবজি তুলে বাজারে আনা হচ্ছে। হরতালের কারণে সবজিবাহী ট্রাক চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। ফলে কৃষকের ক্ষেত থেকে সবজি বাজারে আসতে পারছে না। এতে ক্ষেতেই পচে নষ্ট হচ্ছে শীতের সবজি। ফলে মোটা অংকের লোকসানের মুখে পড়ছে কৃষক। আবার বাজারে সরবরাহ কম থাকায় দাম বেড়ে যাচ্ছে। ফলে কৃষকের পাশাপাশি ভোক্তারাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কৃষকের একবারের ফসল মার খাওয়ার কারণে তারা ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ করতে পারছে না। ফলে ঋণখেলাপি হয়ে যাচ্ছে।
ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী : ক্ষুদ্র বা অপ্রাতিষ্ঠানিক অনেক ব্যবসায়ী রয়েছে যারা প্রতিদিন বিভিন্ন পাইকারি বাজারে গিয়ে পণ্যের বেচাকেনা করে। হরতালের কারণে তারা তা করতে পারছে না। ফলে তাদের উৎপাদন বন্ধ থাকছে না। শ্রমিকরা অলস সময় কাটাচ্ছে। এতে তাদের লোকসান বেড়ে যাচ্ছে। ফলে অনেকে পরিবাবর পরিজন নিয়েও কষ্ট করছে।
এছাড়া হরতালের কারণে বর্তমান বিনিয়োগ নিয়েও ব্যবসায়ীরা উদ্বিগ্ন। এমনিতেই তারা নানা সংকটে বিনিয়োগ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। হরতালের কারণে এই অবস্থা আরও দীর্ঘায়িত হবে। আর হরতালের পর ট্রাকসহ পরিবহন সংস্থাগুলো তাদের ভাড়া তিনগুণ বাড়িয়ে দেয়। ফলে পণ্যের পরিবহন খরচ বেড়ে যাবে। এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়বে পণ্যের দামও। হরতালের আরও বড় নেতিবাচক প্রভাব হচ্ছে, বিদেশে ইমেজ সংকটকে আরও উস্কে দিচ্ছে। ফলে বিদেশী বিনিয়োগকারীরা আরও নেতিবাচক ধারণা নেবে বাংলাদেশ সম্পর্কে। রফতানি বাণিজ্যেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। কেননা সময়মতো পণ্যের সরবরাহ করতে না পাড়ার শংকায় ক্রেতারা বাংলাদেশ থেকে অর্ডার গুটিয়ে নিচ্ছে। এ প্রসঙ্গে দেশের শীর্ষস্থানীয় অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, বছর না ঘুরতেই অর্থনীতিতে আবার হরতালের থাবা পড়ায় এবার ক্ষতির পরিমাণ আরও বেশি হওয়ার আশংকা রয়েছে। গত বছরের হরতাল, অবরোধ ও রাজনৈতিক সহিংসতার কারণে যে ক্ষতি হয়েছে, সেই ক্ষতি এখনও পুষিয়ে ওঠা সম্ভব হয়নি। তাদের মতে, যত ছোট দলই হোক হরতাল ডাকলেই ব্যবসা-বাণিজ্য বাধাগ্রস্ত হয়। উৎপাদনের চাকা থেমে যায়। এতে দীর্ঘ মেয়াদে কর্মসংস্থান সংকুচিত করে, বেকারত্ব বাড়ে। তাদের মতে, হরতালের কারণে শিল্প পণ্যের উৎপাদন ব্যয় বাড়লেও খুচরা পর্যায়ে দাম বাড়ানো যায় না। এতে ব্যবসায়ীরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
তারা আরও বলেছেন, হরতালের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় স্বল্প আয়ের মানুষ। তারা কাজ করতে পারে না বলে খেয়ে না খেয়ে জীবনযাপন করে। বেড়ে যায় কষ্টের মাত্রা। সূত্র জানায়, হরতালে অপ্রাতিষ্ঠানিক ব্যবসা-বাণিজ্যের অবস্থা স্থবির হয়ে পড়ে। পণ্যের সরবরাহ বন্ধ থাকায় বেড়ে যায় দাম। কৃষিপণ্য পচে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ব্যবসায়িক বা বেড়াতে আসা বিদেশীরা আটকে যাচ্ছে। এতে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ম হচ্ছে। পাশাপাশি পরীক্ষা পেছানোর কারণে দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
টাকার প্রবাহ স্থবির : হরতালের কারণে অর্থনীতির সবচেয়ে বড় উপকরণ টাকার ঘূর্ণন স্থবির হয়ে পড়ে। ফলে টাকা হাতবদল না হওয়ায় অর্থনীতিতে এর কোনো অবদান থাকছে না। অলস পড়ে থাকছে টাকা, যা অর্থনীতিতে মূল্যস্ফীতির হার বাড়িয়ে দিচ্ছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মতে টাকা যত বেশি ঘুরবে, তত বেশি অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড জোরদার হবে। বাড়বে উৎপাদন। টাকার হাতবদল দ্রুত করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সেম ডে ক্লিয়াইরং হাউস চালু করেছে। যাতে দিনে দিনে চেক ক্লিয়ারিং হয়ে যাচ্ছে।
সিপিডির পর্যালোচনা : বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছর ছয় মাসে দেশে মোট ৫৫টি হরতাল-অবরোধ হয়েছে। ওই সময়ে রাজনৈতিক সহিংসতায় ক্ষতি হয়েছে ৪৯ হাজার কোটি টাকা। ২০১৩ সালের জুলাই থেকে ২০১৪ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত ১৮০ দিনের মধ্যে ওই হরতাল-অবরোধ হয়েছে। তাদের প্রতিবেদন অনুযায়ী দেশে একদিনের হরতালের কারণে ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় ৮৯১ কোটি টাকা। এর মধ্যে পরিবহন খাতে ক্ষতি ৩০৩ কোটি টাকা, কৃষি খাতে ২৮৮ কোটি টাকা, বস্ত্র ও গার্মেন্ট খাতে ২৫০ কোটি টাকা এবং পর্যটন খাতে ক্ষতির পরিমাণ ৫০ কোটি টাকা।
বিজিএমইএর তথ্য : গার্মেন্ট মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর তথ্য মতে, একদিনের হরতালে তাদের ক্ষতির পরিমাণ কমপক্ষে ১১০ কোটি টাকা। হরতালের কারণে ১৯৯০ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত ১০ বছরে তাদের ক্ষতি হয়েছে ৮০ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। শুধু ১৯৯৯ সালেই ক্ষতির পরিমাণ ছিল ২ হাজার ১৩৫ কোটি টাকা। এ হিসাবে প্রতি বছরে ক্ষতি হয়েছে ৮ হাজার ৩৮ কোটি টাকা। সংস্থাটি বলছে, বিশ্বমন্দার কারণে ইউরোপ এবং আমেরিকাতে রফতানি প্রতি বছরই হ্রাস পাচ্ছে। আর হরতালের কারণে রফতানিতে আরও নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
আন্তর্জাতিক সংস্থার জরিপ : এদিকে জাতিসংঘ উন্নয়ন তহবিলের (ইউএনডিপি) এক জরিপ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশের ৪৪ শতাংশ লোক মনে করেন হরতালের কারণে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষতি হয়। ২০ শতাংশ মনে করেন, হরতাল জাতীয় অর্থনীতির ক্ষতি করে। ৯৫ শতাংশ মানুষ হরতাল পছন্দ করেন না।
হরতালে সরকারের রাজস্ব আয়ে ক্ষতি : হরতালে প্রতিদিন শুল্ক খাতে গড়ে ক্ষতি হচ্ছে ৪০ কোটি টাকা। স্থানীয় মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) খাতে ক্ষতি যোগ করলে এর পরিমাণ শত কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। রাজস্ব বোর্ডের নির্দেশে শুল্ক বন্দর ও কমিশনারেটগুলো হরতালের কারণে পৃথকভাবে রাজস্বের দৈনিক গড় ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করেছে। গত বছরের মার্চে পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে, ১৯টি শুল্ক বন্দর ও কমিশনারেটের মধ্যে ১৪টিতে রাজস্ব আদায় কম হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় চট্টগ্রাম কাস্টমস। এতে দৈনিক ক্ষতির পরিমাণ ১৭ কোটি ৮২ লাখ টাকা। ঢাকা কাস্টমসে ১ কোটি ৪৮ লাখ, আইসিডিতে ৪ কোটি, বেনাপোল কাস্টমসে ২ কোটি ৭৮ লাখ, মংলা কাস্টমসে ১ কোটি ৪৫ লাখ, চট্টগ্রাম বন্ড কমিশনারেটে ২ কোটি, শুল্ক, আবগারি ও মূসক কমিশনারেট ঢাকা (উত্তরে) ৩ কোটি, ঢাকা পশ্চিমে ৬৩ লাখ, শুল্ক, আবগারি ও মূসক কমিশনারেট চট্টগ্রামে ১০ লাখ, শুল্ক, আবগারি ও মূসক কমিশনারেট রাজশাহীতে ১ কোটি ৫৯ লাখ, শুল্ক, আবগারি ও মূসক কমিশনারেট রংপুরে ৪৭ লাখ, শুল্ক, আবগারি ও মূসক কমিশনারেট যশোরে ৩ কোটি ১৫ লাখ, শুল্ক, আবগারি ও মূসক কমিশনারেট খুলনায় ৮১ লাখ এবং শুল্ক, আবগারি ও মূসক কমিশনারেট সিলেটে ৪৫ লাখ টাকা রাজস্বের ক্ষতি হয়।
ঢাকা চেম্বারের জরিপ : নিজস্ব এক গবেষণার উদ্ধৃতি দিয়ে ডিসিসিআইর সাবেক সভাপতি সবুর খান বলেন, একদিনের হরতালে দেশের অর্থনীতিতে ২০ কোটি মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ ক্ষতি হয়। ওই প্রতিবেদন অনুসারে ১৫ দিনের হরতালে যে পরিমাণ ক্ষতি হয় তা দিয়ে অনায়াসে একটি পদ্মা সেতু নির্মাণ করা সম্ভব। সবুর খান বলেন, দেশের অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক চাহিদা কম থাকায় শিল্প খাতের প্রবৃদ্ধি কম হওয়ার আশংকা রয়েছে।
ব্যবসায়ীদের অভিমত : ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইর সভাপতি আকরাম উদ্দিন আহমেদ মনে করেন, হরতালে অর্থনীতির মেরদণ্ড ভেঙে পড়ে। সামগ্রিকভাবে দেশের মানুষ এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। রাজনৈতিক দলগুলোর বিষয়টি বিবেচনা করা উচিত। এফবিসিসিআই সাবেক সভাপতি একে আজাদ বলেন, টানা হরতালে ব্যবসায়ীরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। হরতাল কখনও দেশের জন্য মঙ্গল নয়। তিনি বলেন, ৫০-এর দশকে হরতালের উৎপত্তি। ওই সময়ে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ছিল ভিন্ন। কিন্তু বর্তমানে পরিস্থিতি পাল্টে গেছে। পরিবর্তিত বিশ্ব ব্যবস্থায় উন্নত দেশগুলো হরতাল করে না। দেশেও এখন হরতাল এখন আর জনমতের প্রতিফলন নয়। এটি রাজনৈতিক দলগুলোর পেশিশক্তির মহড়া। ফলে আন্তর্জাতিক মহলে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হচ্ছে। এটি অর্থনীতির জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। ফলে শিল্প-কারখানার উৎপাদন ব্যাহত হয়। জনজীবনে ব্যাপক দুর্ভোগ বাড়বে। এছাড়া বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হবে। বিজিএমইএ’র সভাপতি আতিকুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, বিদ্যুৎ, গ্যাস সংকট ও হরতাল নিয়ে আমরা আছি বড় যন্ত্রণায়। এ দেশে ব্যবসা করতে এসে কিছু কর্মসংস্থান করেছি, দেশের জন্য বৈদেশিক মুদ্রা আনছি, এটা যেন আমাদের অপরাধ হয়ে গেছে। রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক অস্ত্র দিয়ে রাজনীতিবিদরা আমাদের ঘায়েল করছে। এটা নিজের পেটে নিজেই ছুরি চালানোর মতো। আমরা এ থেকে মুক্তি চাই।
অর্থনীতিবিদদের অভিমত : তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলামের মতে, ক্রমেই অস্থির হয়ে উঠছে দেশের রাজনীতি। রাজনৈতিক দলগুলোর মনোভাব দেখে মনে হচ্ছে অদূর ভবিষ্যতে এ অবস্থা নিরসনের সম্ভাবনা কম। তিনি বলেন, টানা এই হরতালের ফলে অর্থনীতিতে মারাত্মকভাবে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। দেশী-বিদেশী উদ্যোক্তারা বিনিয়োগে আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে। শিল্প উৎপাদন কমে যাবে। নতুন করে কর্মসংস্থান তৈরি হবে না। ফলে জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমে আসবে। সার্বিকভাবে অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়বে দেশ। তার মতে, রাজনৈতিক দলগুলোর এই সংঘাতের রাজনীতি থেকে বের হয়ে আসা উচিত। বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাবেক সভাপতি ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদের মতে, হরতালের কারণে অর্থনৈতিক কার্যক্রম বন্ধ থাকছে। ফলে অর্থনৈতিক কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়বে। উৎপাদন ব্যাহত হবে। এছাড়া পরিবহন সমস্যার ফলে সরবরাহ কমায় জিনিসপত্রের দাম বাড়বে। সবকিছু মিলে দেশের সামষ্টিক অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ রাজনীতিতে হরতাল দিয়ে কোনো সমস্যার সমাধান হয়নি। ফলে সমস্যা আরও বেড়েছে। তাই দেশের স্বার্থেই রাজনৈতিক দলগুলোর হরতালের মতো ধ্বংসাত্মক কর্মসূচি পরিহার করা উচিত।
ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশন : বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশেনের চেয়ারম্যান শেখ করিব হোসেন বলেন, হরতালে বীমা খাত সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কারণ গাড়ি পোড়ানো হলে বীমা কোম্পানিকে ক্ষতিপূরণ দিতে হয়। তিনি বলেন, এই হরতালের ফলে দেশের অর্থনীতিতে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেবে। এতে জনসাধারণের স্বাভাবিক জীবনযাপন বাধাগ্রস্ত হবে। তিনি বলেন, হরতালের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর বীমার ক্ষতিপূরণ কোম্পানিগুলোকে দিতে হবে। ফলে বীমা প্রতিষ্ঠানগুলো বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বে।
সড়ক পরিবহন সমিতি : ঢাকা সড়ক পরিবহন সমিতির এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, প্রতিদিনের হরতালে দেশের সড়ক পরিবহন খাতে প্রায় ২৫০ কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে শুধু পরিবহন বন্ধ থাকার কারণে। এর বাইরে অনেক বাস-ট্রাক পুড়িয়ে ফেলা হচ্ছে। এগুলোর ফলে ক্ষতির পরিমাণ আরও বেশি।
কৃষকের সর্বনাশ : কৃষকের দীর্ঘ শ্রমের ফসল হিসেবে বাজারে আসবে শীতের সবজি ও আমন ধান। ইতিমধ্যে ক্ষেত থেকে সবজি তুলে বাজারে আনা হচ্ছে। হরতালের কারণে সবজিবাহী ট্রাক চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। ফলে কৃষকের ক্ষেত থেকে সবজি বাজারে আসতে পারছে না। এতে ক্ষেতেই পচে নষ্ট হচ্ছে শীতের সবজি। ফলে মোটা অংকের লোকসানের মুখে পড়ছে কৃষক। আবার বাজারে সরবরাহ কম থাকায় দাম বেড়ে যাচ্ছে। ফলে কৃষকের পাশাপাশি ভোক্তারাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কৃষকের একবারের ফসল মার খাওয়ার কারণে তারা ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ করতে পারছে না। ফলে ঋণখেলাপি হয়ে যাচ্ছে।
ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী : ক্ষুদ্র বা অপ্রাতিষ্ঠানিক অনেক ব্যবসায়ী রয়েছে যারা প্রতিদিন বিভিন্ন পাইকারি বাজারে গিয়ে পণ্যের বেচাকেনা করে। হরতালের কারণে তারা তা করতে পারছে না। ফলে তাদের উৎপাদন বন্ধ থাকছে না। শ্রমিকরা অলস সময় কাটাচ্ছে। এতে তাদের লোকসান বেড়ে যাচ্ছে। ফলে অনেকে পরিবাবর পরিজন নিয়েও কষ্ট করছে।
No comments