প্রাথমিক–মাধ্যমিকে অর্ধেকই ছাত্রী- উন্নয়নসূচিতে আগাম সাফল্য by মোশতাক আহমেদ
সহস্রাব্দের উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায় ঠিক করা সময়সূচির আগেই বাংলাদেশে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছাত্রছাত্রীর সমতা অর্জিত হয়েছে। উপরন্তু মাধ্যমিক স্তরে মোট শিক্ষার্থীর ৫৩ শতাংশই ছাত্রী। উচ্চমাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষায়ও মেয়েদের অংশগ্রহণ প্রতিবছর বাড়ছে। জেনেভাভিত্তিক বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের ‘বিশ্ব লিঙ্গবৈষম্য প্রতিবেদন ২০১৪’-এ প্রাথমিক শিক্ষায় নারীর অংশগ্রহণের (এনরোলমেন্ট) সূচকে এশীয় প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। মাধ্যমিক শিক্ষায় নারীর অংশগ্রহণের সূচকেও এই অঞ্চলের প্রথম সারির ১০টি দেশের একটি বাংলাদেশ। এই প্রতিবেদনে নারীশিক্ষায় গত বছর ১৩৬টি দেশের মধ্যে ১১৫তম অবস্থানে থাকলেও এবার বাংলাদেশ ১১১তম অবস্থানে উঠে এসেছে।
শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ প্রথম আলোকে বলেন, আগামী তিন বছরে উচ্চমাধ্যমিক ও সাত বছরে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়েও নারী-পুরুষের অংশগ্রহণ সমান করা হবে। তিনি বলেন, মানুষের সচেতনতা ও উপবৃত্তিসহ সরকারের নেওয়া বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগের ফলে নারীশিক্ষায় এই অগ্রগতি হয়েছে। এর ফলে এখন ওপরের শ্রেণিগুলোতেও নারীর অংশগ্রহণ বাড়ছে। বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইস) সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে প্রাথমিক স্তরে যত শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে, তার মধ্যে ৫০ দশমিক ১ শতাংশ ছাত্রী। বাকিরা ছাত্র। সংখ্যার হিসাবে প্রাথমিকে এখন ৯৮ লাখ চার হাজার ২০ জন ছাত্রী পড়াশোনা করছে। আর ছাত্র পড়ছে ৯৭ লাখ ৮০ হাজার ৯৫৩ জন।
ব্যানবেইসের তথ্য অনুযায়ী, মাধ্যমিক স্তরে ছাত্রীর সংখ্যা আরও বেশি; ৫৩ শতাংশ। আর ছাত্র ৪৭ শতাংশ। মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) পরীক্ষায় পাসের হারেও ছাত্রীরা প্রতিবছর এগিয়ে চলছে। ২০০৯ সালে যেখানে ছাত্রীদের পাসের হার ছিল ৬৫ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ, সেখানে ২০১৪ সালের পরীক্ষায় ছাত্রীদের পাসের হার ৯২ দশমিক ১২ শতাংশ। অবশ্য গত কয়েক বছরে মোট পাসের হারও বাড়ছে।
জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধূরী প্রথম আলোকে বলেন, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে নারীশিক্ষার সমতা অর্জনের সবচেয়ে বড় কারণ হলো রাজনৈতিক অঙ্গীকার। সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন বিষয় পরিবর্তন হলেও শিক্ষা, বিশেষ করে নারীশিক্ষার প্রতি অঙ্গীকারটি আরও শক্ত হয়েছে।
উদাহরণ হিসেবে রাশেদা কে চৌধূরী বলেন, আগে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ছেলে-মেয়েদের পড়ালেখা অবৈতনিক ছিল। নব্বইয়ের পর বিএনপি সরকার প্রথম মেয়াদে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত ছাত্রীদের অবৈতনিক করল। আওয়ামী লীগ সরকার এসে সেটাকে প্রথমে দশম শ্রেণি পর্যন্ত করল। এখন ডিগ্রিতেও (পাসকোর্স) নারীশিক্ষা অবৈতনিক। এর মধ্যে উপবৃত্তি এই অগ্রগতিকে আরও ত্বরান্বিত করেছে। এ ছাড়া শিক্ষার প্রতি জনমানুষের মধ্যে বিরাট চাহিদা তৈরি হয়েছে। এটাও কাজে দিয়েছে। এ ক্ষেত্রে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি সংস্থাগুলো সচেতনতা তৈরিতে ভূমিকা পালন করেছে।
ব্যানবেইসের হিসাবে, কলেজশিক্ষায় ছাত্রীদের সংখ্যা ছাত্রদের চেয়ে কিছুটা কম। এই স্তরে মোট শিক্ষার্থীর মধ্যে ৪৭ শতাংশ ছাত্রী, মানে ৩ শতাংশ পিছিয়ে আছে ছাত্রীরা। তবে পরিসংখ্যান বলছে, প্রতিবছরই কলেজ পর্যায়ে ছাত্রীদের অংশগ্রহণ বাড়ছে। ২০১২ সালেও ছাত্রীদের হার ছিল ৪৫ দশমিক ৪৮ শতাংশ। মাদ্রাসাশিক্ষায়ও ছাত্রী বেশি। মোট শিক্ষার্থীর ৫৩ দশমিক ১৪ শতাংশ ছাত্রী। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কয়েকজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, গত মহাজোট ও বর্তমান সরকার সম্মান কোর্স চালু, পাঠ্যক্রম সংশোধনসহ মাদ্রাসাশিক্ষার উন্নয়নে বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে। এর ফলে এখন মাদ্রাসায়ও নারীর অংশগ্রহণ বাড়ছে।
ব্যানবেইসের হিসাবে চিকিৎসা, আইনসহ পেশাগত শিক্ষায়ও এগিয়ে চলছে নারী। তিন বছর আগে ২০১১ সালে পেশাগত শিক্ষায় নারীর অংশগ্রহণ ছিল ৩৬ শতাংশের কিছু বেশি। ২০১৩ সালে এসে এই হার ৩৮ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে এখন যত শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে তার ৩৩ শতাংশ নারী। ২০১২ সালেও এই হার ছিল ৩০ শতাংশ। তবে তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে গিয়ে নারীর অংশগ্রহণ প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের চেয়ে তুলনামূলকভাবে কম বাড়ছে।
এর কারণ জানতে চাইলে রাশেদা কে চৌধূরী বলেন, নিরাপত্তার অভাবের কারণে এখনো অনেক মেয়েকে বিয়ে দেওয়া হয়। এ বিষয়ে রাষ্ট্রের উচিত হবে নিরাপত্তা জোরদার করা এবং সচেতনতা বাড়ানো। এ ক্ষেত্রে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলো বড় ভূমিকা পালন করতে পারে। সচেতনতা ও উদ্যোগ বাড়ালে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়েও নারীর অংশগ্রহণ বাড়বে।
শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ ওপরের শ্রেণিতে নারীর অংশগ্রহণ কম থাকার বিষয়ে বলেছেন, দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা কিছু বাধার কারণে এটা হচ্ছে। যেমন মেয়েদের বাড়ির বাইরে গিয়ে পড়ার জন্য প্রথমত থাকার বিষয়টি একটি সমস্যা হিসেবে দেখা দেয়। উচ্চশিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে মেয়েদের জন্য আবাসিক সুবিধাও পর্যাপ্ত নয়। এ জন্য এখন সরকার নীতিগতভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ছাত্রদের জন্য একটি ছাত্রাবাস করলে ছাত্রীদের জন্যও আরেকটি করা হবে।
শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ প্রথম আলোকে বলেন, আগামী তিন বছরে উচ্চমাধ্যমিক ও সাত বছরে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়েও নারী-পুরুষের অংশগ্রহণ সমান করা হবে। তিনি বলেন, মানুষের সচেতনতা ও উপবৃত্তিসহ সরকারের নেওয়া বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগের ফলে নারীশিক্ষায় এই অগ্রগতি হয়েছে। এর ফলে এখন ওপরের শ্রেণিগুলোতেও নারীর অংশগ্রহণ বাড়ছে। বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইস) সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে প্রাথমিক স্তরে যত শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে, তার মধ্যে ৫০ দশমিক ১ শতাংশ ছাত্রী। বাকিরা ছাত্র। সংখ্যার হিসাবে প্রাথমিকে এখন ৯৮ লাখ চার হাজার ২০ জন ছাত্রী পড়াশোনা করছে। আর ছাত্র পড়ছে ৯৭ লাখ ৮০ হাজার ৯৫৩ জন।
ব্যানবেইসের তথ্য অনুযায়ী, মাধ্যমিক স্তরে ছাত্রীর সংখ্যা আরও বেশি; ৫৩ শতাংশ। আর ছাত্র ৪৭ শতাংশ। মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) পরীক্ষায় পাসের হারেও ছাত্রীরা প্রতিবছর এগিয়ে চলছে। ২০০৯ সালে যেখানে ছাত্রীদের পাসের হার ছিল ৬৫ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ, সেখানে ২০১৪ সালের পরীক্ষায় ছাত্রীদের পাসের হার ৯২ দশমিক ১২ শতাংশ। অবশ্য গত কয়েক বছরে মোট পাসের হারও বাড়ছে।
জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধূরী প্রথম আলোকে বলেন, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে নারীশিক্ষার সমতা অর্জনের সবচেয়ে বড় কারণ হলো রাজনৈতিক অঙ্গীকার। সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন বিষয় পরিবর্তন হলেও শিক্ষা, বিশেষ করে নারীশিক্ষার প্রতি অঙ্গীকারটি আরও শক্ত হয়েছে।
উদাহরণ হিসেবে রাশেদা কে চৌধূরী বলেন, আগে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ছেলে-মেয়েদের পড়ালেখা অবৈতনিক ছিল। নব্বইয়ের পর বিএনপি সরকার প্রথম মেয়াদে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত ছাত্রীদের অবৈতনিক করল। আওয়ামী লীগ সরকার এসে সেটাকে প্রথমে দশম শ্রেণি পর্যন্ত করল। এখন ডিগ্রিতেও (পাসকোর্স) নারীশিক্ষা অবৈতনিক। এর মধ্যে উপবৃত্তি এই অগ্রগতিকে আরও ত্বরান্বিত করেছে। এ ছাড়া শিক্ষার প্রতি জনমানুষের মধ্যে বিরাট চাহিদা তৈরি হয়েছে। এটাও কাজে দিয়েছে। এ ক্ষেত্রে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি সংস্থাগুলো সচেতনতা তৈরিতে ভূমিকা পালন করেছে।
ব্যানবেইসের হিসাবে, কলেজশিক্ষায় ছাত্রীদের সংখ্যা ছাত্রদের চেয়ে কিছুটা কম। এই স্তরে মোট শিক্ষার্থীর মধ্যে ৪৭ শতাংশ ছাত্রী, মানে ৩ শতাংশ পিছিয়ে আছে ছাত্রীরা। তবে পরিসংখ্যান বলছে, প্রতিবছরই কলেজ পর্যায়ে ছাত্রীদের অংশগ্রহণ বাড়ছে। ২০১২ সালেও ছাত্রীদের হার ছিল ৪৫ দশমিক ৪৮ শতাংশ। মাদ্রাসাশিক্ষায়ও ছাত্রী বেশি। মোট শিক্ষার্থীর ৫৩ দশমিক ১৪ শতাংশ ছাত্রী। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কয়েকজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, গত মহাজোট ও বর্তমান সরকার সম্মান কোর্স চালু, পাঠ্যক্রম সংশোধনসহ মাদ্রাসাশিক্ষার উন্নয়নে বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে। এর ফলে এখন মাদ্রাসায়ও নারীর অংশগ্রহণ বাড়ছে।
ব্যানবেইসের হিসাবে চিকিৎসা, আইনসহ পেশাগত শিক্ষায়ও এগিয়ে চলছে নারী। তিন বছর আগে ২০১১ সালে পেশাগত শিক্ষায় নারীর অংশগ্রহণ ছিল ৩৬ শতাংশের কিছু বেশি। ২০১৩ সালে এসে এই হার ৩৮ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে এখন যত শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে তার ৩৩ শতাংশ নারী। ২০১২ সালেও এই হার ছিল ৩০ শতাংশ। তবে তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে গিয়ে নারীর অংশগ্রহণ প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের চেয়ে তুলনামূলকভাবে কম বাড়ছে।
এর কারণ জানতে চাইলে রাশেদা কে চৌধূরী বলেন, নিরাপত্তার অভাবের কারণে এখনো অনেক মেয়েকে বিয়ে দেওয়া হয়। এ বিষয়ে রাষ্ট্রের উচিত হবে নিরাপত্তা জোরদার করা এবং সচেতনতা বাড়ানো। এ ক্ষেত্রে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলো বড় ভূমিকা পালন করতে পারে। সচেতনতা ও উদ্যোগ বাড়ালে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়েও নারীর অংশগ্রহণ বাড়বে।
শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ ওপরের শ্রেণিতে নারীর অংশগ্রহণ কম থাকার বিষয়ে বলেছেন, দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা কিছু বাধার কারণে এটা হচ্ছে। যেমন মেয়েদের বাড়ির বাইরে গিয়ে পড়ার জন্য প্রথমত থাকার বিষয়টি একটি সমস্যা হিসেবে দেখা দেয়। উচ্চশিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে মেয়েদের জন্য আবাসিক সুবিধাও পর্যাপ্ত নয়। এ জন্য এখন সরকার নীতিগতভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ছাত্রদের জন্য একটি ছাত্রাবাস করলে ছাত্রীদের জন্যও আরেকটি করা হবে।
No comments