কারবালার ইমামের আজ বড় প্রয়োজন by মাহমুদ আহমদ সুমন
মুসলিম জাহান আজ চরম বিপর্যয়ের সম্মুখীন। শ্রেষ্ঠ নবীর (সা.) অনুসারীরা আজ সর্বগ্রাসী অবক্ষয়ের শিকার। অধঃপতিত মুসলমানরা আজ প্রকৃত ইসলামের স্রোতধারা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। তারা আজ শতধা বিভক্ত হয়ে পরস্পর ঝগড়া-বিবাদে লিপ্ত। আর মুসলমানদের এ অনৈক্যের কারণেই ভ্রাতৃঘাতী দ্বন্দ্ব-সংঘাত। ইরাক, সিরিয়া, আফগানিস্তানে যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ প্রতিদিন ঘটছে আর এতে অগণিত নিরীহ মুসলমান এমনকি নিষ্পাপ শিশুও নিহত হচ্ছে এর প্রতিকারের জন্য কি কারও কোনো মাথাব্যথা আছে? ইতিহাস থেকে জানা যায়, যখন থেকে মুসলমানরা ভ্রাতৃঘাতী দ্বন্দ্ব-সংঘাতে লিপ্ত হয়ে পড়েছে, তখন থেকেই তাদের উন্নতি ও অগ্রগতি থেমে গেছে।
পৃথিবীর বর্তমান যে পরিস্থিতি, চারদিক দিয়ে মুসলমানরা আজ নানা সমস্যার সম্মুখীন এবং সর্বত্র তারা মার খাচ্ছে এর কারণ কী? এর একমাত্র কারণ হল মুসলিম উম্মাহর মাঝে ইমাম হোসাইনের (রা.) মতো সত্যবাদী কোনো নেতা নেই। মুসলমানদের এ অধঃপতন থেকে উদ্ধারের জন্য একজন সত্য ইমাম হোসাইনের বড় প্রয়োজন। যিনি এসে অশান্ত বিশ্বকে শান্তিময় করে তুলবেন, যিনি মুসলিম বিশ্বের ইমাম হবেন, যার নেতৃত্বে ইসলামের বিশ্ববিজয় সংঘটিত হবে। যিনি রক্তাক্ত বিশ্বকে তরবারির পরিবর্তে ইসলামের দলিল-প্রমাণের মাধ্যমে শান্ত করবেন। মুসলিম বিশ্বে ঘরে ঘরে যে কারবালা সংঘটিত হচ্ছে তা তিনি দূর করবেন। শ্রেষ্ঠ নবীর শ্রেষ্ঠ উম্মতের এ চরম অধঃপতন ও বিপর্যয় থেকে উদ্ধারের জন্য এমন নেতৃত্বের বিকল্প নেই। মহানবী (সা.) বিশ্ববাসীকে ধ্বংস ও পতন থেকে রক্ষা করে পুণ্যের পথে চালিত করার জন্যই পৃথিবীতে এসেছিলেন। তিনি ঐশী নেতৃত্বের প্রতি প্রশ্নাতীত আনুগত্য স্বীকার করে একতার শৃংখলে আবদ্ধ হয়ে ভ্রাতৃত্বের সেতুবন্ধন সুদৃঢ়তর করে প্রগতির পথে চলতে বলেছেন। আজ সমগ্র মুসলিম জাহান কোন পথে চলছে? আজ মুসলমানদের মাঝে কোনো ঐশী ইমাম নেই। যার ফলে সারা মুসলিম জাহান যেন আজ এক রক্তপিণ্ডে পরিণত হয়েছে। আমরা জানি, প্রিয় নবীর (সা.) অন্তর্ধানের পর মুসলমানদের মধ্যে একক নেতৃত্বের ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, কিন্তু যখন থেকে মুসলমান একক নেতৃত্বকে ভুলে বসল, তখন থেকেই মুসলিম উম্মাহর রক্ত ঝরা শুরু হয়। তাই মুসলিমবিশ্বকে আবার এক পতাকাতলে একত্রিত করার জন্য একজন সত্য ইমাম হোসাইনের প্রয়োজন।
মহানবীর (সা.) প্রিয় দৌহিত্র, হজরত ইমাম হোসাইন (রা.) অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে গিয়ে চক্রান্তকারী ইয়াজিদ বাহিনীর হাতে পবিত্র মহররম মাসের ১০ তারিখে নির্মমভাবে কারবালার প্রান্তরে শাহাদতবরণ করেন। সেদিন প্রকৃত ইসলাম ও সত্যের জন্য হজরত ইমাম হোসাইন (রা.) ইয়াজিদ বাহিনীর কাছে মাথানত না করে যুদ্ধ করে শাহাদতবরণ করেছিলেন। তিনি সেদিন ন্যায় ও সত্যের জন্য চরম আত্মত্যাগের যে দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন তা অনুকরণীয়। ধর্মের জন্য তার যে ত্যাগ তা আমাদের অনুসরণ করতে হবে। রাস্তাঘাট বন্ধ করে অপরকে কষ্ট দিয়ে শোক প্রকাশের কোনো শিক্ষা ইসলামে নেই। আর শোক দিবস পালনের কোনো অনুমতিও শ্রেষ্ঠ রাসূল (সা.) তার উম্মতকে দেননি। তবে রাসূল (সা.) মৃত ব্যক্তির জন্য মাত্র তিন দিন শোক পালনের অনুমতি দিয়েছেন আর মৃত স্বামীর জন্য স্ত্রীর পক্ষে চার মাস ১০ দিন ইদ্দতকাল পালনের নির্দেশ রয়েছে। শহীদে কারবালায় হজরত ইমাম হোসাইন (রা.) বলে গেছেন- ‘আমি শহীদ হলে তোমরা আমার জন্য উহ্! আহ্! কর না, আঁচল ছিঁড়ো না, বরং ধৈর্য ধারণ করে থাকবে।’ নিঃসন্দেহে আমরা বলতে পারি, হজরত ইমাম হোসাইন (রা.) ইসলামে একক নেতৃত্বের ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য নিজ দেহের শেষ রক্তবিন্দু পর্যন্ত দান করে গেছেন, যুগ যুগ ধরে তার এ ত্যাগ মুসলিম উম্মাহকে এক ইমামের ছত্রছায়ায় জীবন অতিবাহিত করার অনুপ্রেরণা জোগাবে।
ইমাম হোসাইন (রা.) শান্তি চেয়েছিলেন, তিনি ইয়াজিদের প্রতিনিধিদের এ কথাও বলেছিলেন, আমি যুদ্ধ চাই না, আমাকে যেতে দাও, আমি আল্লাহর ইবাদত করতে চাই বা কোনো সীমান্তে আমাকে পাঠিয়ে দাও যেন ইসলামের জন্য যুদ্ধ করতে করতে শাহাদত বরণ করতে পারি। কিন্তু ইয়াজিদ বাহিনী তা গ্রহণ করেনি। ইয়াজিদ বাহ্যত সাময়িক সফলতা লাভ করেছেন। প্রশ্ন হল, ইয়াজিদের এ ঘটনার কারণে কি আজকে কেউ তাকে স্মরণ করে? যদি তার সুখ্যাতি থাকত তাহলে অনেক মুসলমান নিজেদের নাম ইয়াজিদই রাখত। কিন্তু কোনো ব্যক্তি নিজের পুত্রের নাম আজ ইয়াজিদ আর রাখে না। হজরত ইমাম হোসাইনের (রা.) জীবনের একটি উদ্দেশ্য ছিল। তিনি কখনও রাষ্ট্রক্ষমতা অর্জনের লোভ করতেন না, তিনি সত্য প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছেন। যে ন্যায়ের জন্য ইমাম হোসাইন দণ্ডায়মান হয়েছিলেন, অর্থাৎ খেলাফতের নির্বাচনের অধিকার, তা রাষ্ট্রবাসীর ও সব মুসলমানের। কোনো ছেলে পিতাকে উত্তরাধিকার সূত্রে এ অধিকার দিতে পারে না। তার শাহাদত এ অধিকারকে আরও স্পষ্ট করেছে। তার ত্যাগ, কোরবানি আমাদের জন্য অনেক শিক্ষা রেখে গেছে। তাই অশান্ত বিশ্বকে শান্তিময় করার জন্য আবারও ইমাম হোসাইনের মতো নেতার প্রয়োজন।
মাহমুদ আহমদ সুমন: প্রাবন্ধিক ও ইসলামী চিন্তাবিদ
masumon83@yahoo.com
পৃথিবীর বর্তমান যে পরিস্থিতি, চারদিক দিয়ে মুসলমানরা আজ নানা সমস্যার সম্মুখীন এবং সর্বত্র তারা মার খাচ্ছে এর কারণ কী? এর একমাত্র কারণ হল মুসলিম উম্মাহর মাঝে ইমাম হোসাইনের (রা.) মতো সত্যবাদী কোনো নেতা নেই। মুসলমানদের এ অধঃপতন থেকে উদ্ধারের জন্য একজন সত্য ইমাম হোসাইনের বড় প্রয়োজন। যিনি এসে অশান্ত বিশ্বকে শান্তিময় করে তুলবেন, যিনি মুসলিম বিশ্বের ইমাম হবেন, যার নেতৃত্বে ইসলামের বিশ্ববিজয় সংঘটিত হবে। যিনি রক্তাক্ত বিশ্বকে তরবারির পরিবর্তে ইসলামের দলিল-প্রমাণের মাধ্যমে শান্ত করবেন। মুসলিম বিশ্বে ঘরে ঘরে যে কারবালা সংঘটিত হচ্ছে তা তিনি দূর করবেন। শ্রেষ্ঠ নবীর শ্রেষ্ঠ উম্মতের এ চরম অধঃপতন ও বিপর্যয় থেকে উদ্ধারের জন্য এমন নেতৃত্বের বিকল্প নেই। মহানবী (সা.) বিশ্ববাসীকে ধ্বংস ও পতন থেকে রক্ষা করে পুণ্যের পথে চালিত করার জন্যই পৃথিবীতে এসেছিলেন। তিনি ঐশী নেতৃত্বের প্রতি প্রশ্নাতীত আনুগত্য স্বীকার করে একতার শৃংখলে আবদ্ধ হয়ে ভ্রাতৃত্বের সেতুবন্ধন সুদৃঢ়তর করে প্রগতির পথে চলতে বলেছেন। আজ সমগ্র মুসলিম জাহান কোন পথে চলছে? আজ মুসলমানদের মাঝে কোনো ঐশী ইমাম নেই। যার ফলে সারা মুসলিম জাহান যেন আজ এক রক্তপিণ্ডে পরিণত হয়েছে। আমরা জানি, প্রিয় নবীর (সা.) অন্তর্ধানের পর মুসলমানদের মধ্যে একক নেতৃত্বের ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, কিন্তু যখন থেকে মুসলমান একক নেতৃত্বকে ভুলে বসল, তখন থেকেই মুসলিম উম্মাহর রক্ত ঝরা শুরু হয়। তাই মুসলিমবিশ্বকে আবার এক পতাকাতলে একত্রিত করার জন্য একজন সত্য ইমাম হোসাইনের প্রয়োজন।
মহানবীর (সা.) প্রিয় দৌহিত্র, হজরত ইমাম হোসাইন (রা.) অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে গিয়ে চক্রান্তকারী ইয়াজিদ বাহিনীর হাতে পবিত্র মহররম মাসের ১০ তারিখে নির্মমভাবে কারবালার প্রান্তরে শাহাদতবরণ করেন। সেদিন প্রকৃত ইসলাম ও সত্যের জন্য হজরত ইমাম হোসাইন (রা.) ইয়াজিদ বাহিনীর কাছে মাথানত না করে যুদ্ধ করে শাহাদতবরণ করেছিলেন। তিনি সেদিন ন্যায় ও সত্যের জন্য চরম আত্মত্যাগের যে দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন তা অনুকরণীয়। ধর্মের জন্য তার যে ত্যাগ তা আমাদের অনুসরণ করতে হবে। রাস্তাঘাট বন্ধ করে অপরকে কষ্ট দিয়ে শোক প্রকাশের কোনো শিক্ষা ইসলামে নেই। আর শোক দিবস পালনের কোনো অনুমতিও শ্রেষ্ঠ রাসূল (সা.) তার উম্মতকে দেননি। তবে রাসূল (সা.) মৃত ব্যক্তির জন্য মাত্র তিন দিন শোক পালনের অনুমতি দিয়েছেন আর মৃত স্বামীর জন্য স্ত্রীর পক্ষে চার মাস ১০ দিন ইদ্দতকাল পালনের নির্দেশ রয়েছে। শহীদে কারবালায় হজরত ইমাম হোসাইন (রা.) বলে গেছেন- ‘আমি শহীদ হলে তোমরা আমার জন্য উহ্! আহ্! কর না, আঁচল ছিঁড়ো না, বরং ধৈর্য ধারণ করে থাকবে।’ নিঃসন্দেহে আমরা বলতে পারি, হজরত ইমাম হোসাইন (রা.) ইসলামে একক নেতৃত্বের ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য নিজ দেহের শেষ রক্তবিন্দু পর্যন্ত দান করে গেছেন, যুগ যুগ ধরে তার এ ত্যাগ মুসলিম উম্মাহকে এক ইমামের ছত্রছায়ায় জীবন অতিবাহিত করার অনুপ্রেরণা জোগাবে।
ইমাম হোসাইন (রা.) শান্তি চেয়েছিলেন, তিনি ইয়াজিদের প্রতিনিধিদের এ কথাও বলেছিলেন, আমি যুদ্ধ চাই না, আমাকে যেতে দাও, আমি আল্লাহর ইবাদত করতে চাই বা কোনো সীমান্তে আমাকে পাঠিয়ে দাও যেন ইসলামের জন্য যুদ্ধ করতে করতে শাহাদত বরণ করতে পারি। কিন্তু ইয়াজিদ বাহিনী তা গ্রহণ করেনি। ইয়াজিদ বাহ্যত সাময়িক সফলতা লাভ করেছেন। প্রশ্ন হল, ইয়াজিদের এ ঘটনার কারণে কি আজকে কেউ তাকে স্মরণ করে? যদি তার সুখ্যাতি থাকত তাহলে অনেক মুসলমান নিজেদের নাম ইয়াজিদই রাখত। কিন্তু কোনো ব্যক্তি নিজের পুত্রের নাম আজ ইয়াজিদ আর রাখে না। হজরত ইমাম হোসাইনের (রা.) জীবনের একটি উদ্দেশ্য ছিল। তিনি কখনও রাষ্ট্রক্ষমতা অর্জনের লোভ করতেন না, তিনি সত্য প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছেন। যে ন্যায়ের জন্য ইমাম হোসাইন দণ্ডায়মান হয়েছিলেন, অর্থাৎ খেলাফতের নির্বাচনের অধিকার, তা রাষ্ট্রবাসীর ও সব মুসলমানের। কোনো ছেলে পিতাকে উত্তরাধিকার সূত্রে এ অধিকার দিতে পারে না। তার শাহাদত এ অধিকারকে আরও স্পষ্ট করেছে। তার ত্যাগ, কোরবানি আমাদের জন্য অনেক শিক্ষা রেখে গেছে। তাই অশান্ত বিশ্বকে শান্তিময় করার জন্য আবারও ইমাম হোসাইনের মতো নেতার প্রয়োজন।
মাহমুদ আহমদ সুমন: প্রাবন্ধিক ও ইসলামী চিন্তাবিদ
masumon83@yahoo.com
No comments