সাফল্য সম্ভাবনার বাংলাদেশ—অনুমান নয় বাস্তবতা by মিজানুর রহমান খান
বাংলাদেশ কবে একটি বিরাট বিস্ময়কর সাফল্যের গল্পে পরিণত হবে, তা হয়তো অনিশ্চিত। কিন্তু এটা এখন বিন্দুমাত্র বাড়িয়ে বলা নয় যে, বাংলাদেশ একটি অমিত সম্ভাবনাময় দেশ। বাংলাদেশের জনগণ নিজেদের সাফল্যের জন্য গর্ব করতে পারে। বিশ্বে কেবল অন্যরাই পেরেছে, আমাদের দিয়ে হবে না—সেটা আর সত্য নয়। বরং বাস্তবতা এটাই, আজ আর কোনো আবেগপ্রসূত নিছক অনুমানসিদ্ধ কোনো আশাবাদ নয় যে, বাংলাদেশ একদিন একটি অনুসরণীয় উন্নয়ন মডেলে রূপান্তরিত হতে পারে।
২০০৬ সালের জানুয়ারিতে প্রথম মার্কিন বহুজাতিক বিনিয়োগ ব্যাংকিং সংস্থা গোল্ডম্যান স্যাকসের সেই প্রতিবেদনটি আলোড়ন তুলেছিল, যখন সবেমাত্র বার্লিনভিত্তিক টিআইবি বাংলাদেশকে শীর্ষস্থানীয় দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। অক্টোবরে টিআইবির সেই প্রতিবেদন প্রকাশের দুই মাসের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক সাফল্যের জন্য বিশ্বের সবচেয়ে সম্ভাবনাময় ১১টি দেশের একটি তালিকা প্রকাশ করেছিল গোল্ডম্যান স্যাকস। আর তাতে চীন, ভারত, ব্রাজিল ও রাশিয়ার পাশে বাংলাদেশ নামটিও ঠাঁই করে নেয়।
আগামী এক দশকে বাংলাদেশের রাজনৈতিক বিতর্কের একটা স্থায়ী কিনারা হতে পারে, আবার না-ও পারে। তবে গণতন্ত্রের পথ চলার প্রয়াসকে বাধাগ্রস্ত করা যাবে না। কারণ, গণতন্ত্র ছাড়া সামাজিক সূচকের শ্রীবৃদ্ধি টেকসই হবে না। উন্নয়নহীনতা জাতীয় নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্বের জন্য যতটা না হুমকি, তার চেয়ে অনেক বড় হুমকি গণতন্ত্রহীন পরিবেশ। তবে আমাদেরকে সম্ভবত এই দুইয়ের টানাপোড়েনের মধ্য দিয়ে পথ চলতে হতে পারে। আর সেটা করতে গিয়ে কী করে আমরা একটি মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হতে পারি, সেদিকেই মনোযোগী হতে হবে।
২০২১ সালের মধ্যে আমাদের মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার লক্ষণ আছে কি? অবশ্যই আছে। কারণ অর্থনীতিবিদরা মানছেন বাংলাদেশ সেদিকেই যাচ্ছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলেন, মধ্যম আয়ের মর্যাদাকে কীভাবে সংজ্ঞায়িত করা হবে, সেটা এখানে গুরুত্বপূর্ণ। প্রকৃত জিডিপি (গ্রস ডোমেস্টিক প্রডাক্ট) নয়, জিএনআই (গ্রস ন্যাশনাল ইনকাম) হলো ‘মধ্যম আয়’ মাপার মাপকাঠি। নিম্ন আয় হলো ১০২৫ ডলার। নিম্ন মধ্যম আয় ১০২৬ থেকে ৪০৩৫ ডলার। উচ্চ মধ্যম আয় ৪০৩৬ থেকে ১২৪৭৫ ডলার। উচ্চ আয় ১২,৪৭৬ ডলার ও তার ওপরে। দুই বছর আগে জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন লিখেছিলেন, ‘বাংলাদেশের মাথাপিছু জিএনআই এখন ১৮৫১ ডলার, এটা অব্যাহতভাবে ২ দশমিক ১ ভাগ এবং মোট জিডিপি বছরে নিয়মিতভাবে সাড়ে তিন ভাগ হারে বৃদ্ধি পেতে হবে। আর তাহলেই ২০২১ সালে বাংলাদেশ তার ৫০তম স্বাধীনতা বার্ষিকী উদযাপনকালে একটি মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবে।’
সাংবাদিক শওকত হোসেন মাসুমের ‘ভারতকে ছাপিয়ে গেছে বাংলাদেশ’ শীর্ষক প্রতিবেদন কার্যত সেই সম্ভাবনার ওপর আলো ফেলেছেন। বিশ্বব্যাংক দেখিয়ে দিয়েছে যে, অস্থিরতার মধ্যে এই সমাজে শুভ লক্ষণগুলো দারুণভাবে ফুটে উঠেছে। বিশ্বব্যাংকের হিসাব মতে, ক্রয়ক্ষমতার সমতার ভিত্তিতে বাংলাদেশ ও ভারতের মাথাপিছু আয় যথাক্রমে ১৮৮৩ ডলার ও ৩,৮৭৬ ডলার।
সামাজিক প্রায় সব সূচকে বাংলাদেশ যে ভারতকে ছাপিয়ে যেতে পারল, সেটা কিন্তু রাজনৈতিক অস্থিরতাকে বাগে আনতে না পারার অক্ষমতা সত্ত্বেও। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা থাকলে আমরা কোথায় যেতে পারতাম, সেই প্রশ্ন অমীমাংসিত থাকলেও এসব অর্জনের পথে তা বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। সীমিত হলেও একটি উন্নয়নের গল্প ইতিমধ্যে বাস্তবে রূপ নিয়েছে। বাংলাদেশ ও তার জনগণকে তাই নিজের শক্তির দিকে নতুন করে নজর দিতে হবে। মনের গহিনে লালন করতে হবে আত্মমর্যাদা ও আস্থা।
নানা ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনের বিষয়টি টিভি টক শোর মতো পাবলিক ফোরামে সাধারণ আলোচনার বিষয় হওয়া উচিত। এ জন্য আমাদের সমাজ এখন যেভাবে দলীয় লাইনে বিভক্ত রয়েছে, সেই দুঃখজনক বিভক্তি সত্ত্বেও এ নিয়ে আলোচনা হতে পারে। কারণ, কিছু বিষয়ে আমরা এমন সাফল্য পেয়েছি, যার কৃতিত্ব কোনো একটি রাজনৈতিক দল এককভাবে দাবি করতে পারে না। উন্নয়ন ও অগ্রগতির এই অর্জন যেটা সাধারণ মানুষের। সরকারে কে থাকল বা থাকল না, তা বিবেচনায় নেয়নি তারা। এখানে একটি সত্য হলো প্রতিদ্বন্দ্বিতা সত্ত্বেও বিশেষ করে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি যারাই যখন ক্ষমতায় থেকেছে, তারা উন্নয়নের কয়েকটি সাধারণ নীতি অনুসরণে ধারাবাহিকতা রক্ষা করেছে। এসবের কারণেই নারীশিক্ষা, শিশুমৃত্যুর হার, জন্মহার, অপুষ্টির মতো সামাজিক সূচকগুলোতে একসময় যথেষ্ট পিছিয়ে থাকা বাংলাদেশ বদলে গেছে। তারপর এসব ক্ষেত্রে ভারতকে ছাড়িয়ে যাওয়া বা তার অবস্থানের কাছাকাছি পৌঁছে যাওয়া নিশ্চয় বিস্ময়কর।
হাজারো প্রতিকূলতার জন্য বেঁচে থাকাই যখন পরমানন্দ, বেঁচে থাকাই যখন জিন্দাবাদ, তখন তো আমরা ক্ষণকালের জন্য হলেও অবাক হতে পারি। ১৯৭১ সালে আমাদের ভূখণ্ডের মানুষের প্রত্যাশিত আয়ুষ্কাল ছিল ৩৯ আর ভারতের ছিল ৫০ বছর। আর এখন ভারতে ৬৬ বছর, বাংলাদেশে ৬৯। বিশ্বব্যাংককে ধন্যবাদ ভারতের সঙ্গে তুলনামূলক এই প্রতিবেদনটি প্রকাশের জন্য।
লন্ডনের প্রভাবশালী সাময়িকী দি ইকোনমিস্ট সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশের অনেক বিষয়ে কঠোর মন্তব্য করলেও এ দেশকে চিনতে ভুল করেনি। ২০১২ সালের ৩ নভেম্বর ‘আউট অব দ্যা বাস্কেট’ নিবন্ধে ইকোনমিস্ট বলেছে, ‘কী করা যায়, সেটা দেখিয়ে দেওয়ার মডেলে পরিণত হয়েছে বাংলাদেশ। কী করে উন্নয়নের মডেলে পরিণত হওয়া যায়, সেটা দেখিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ। যদিও তার অগ্রগতি রাজনীতির কারণে ভঙ্গুর রয়ে গেছে।’
২০০৬ সালের জানুয়ারিতে প্রথম মার্কিন বহুজাতিক বিনিয়োগ ব্যাংকিং সংস্থা গোল্ডম্যান স্যাকসের সেই প্রতিবেদনটি আলোড়ন তুলেছিল, যখন সবেমাত্র বার্লিনভিত্তিক টিআইবি বাংলাদেশকে শীর্ষস্থানীয় দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। অক্টোবরে টিআইবির সেই প্রতিবেদন প্রকাশের দুই মাসের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক সাফল্যের জন্য বিশ্বের সবচেয়ে সম্ভাবনাময় ১১টি দেশের একটি তালিকা প্রকাশ করেছিল গোল্ডম্যান স্যাকস। আর তাতে চীন, ভারত, ব্রাজিল ও রাশিয়ার পাশে বাংলাদেশ নামটিও ঠাঁই করে নেয়।
আগামী এক দশকে বাংলাদেশের রাজনৈতিক বিতর্কের একটা স্থায়ী কিনারা হতে পারে, আবার না-ও পারে। তবে গণতন্ত্রের পথ চলার প্রয়াসকে বাধাগ্রস্ত করা যাবে না। কারণ, গণতন্ত্র ছাড়া সামাজিক সূচকের শ্রীবৃদ্ধি টেকসই হবে না। উন্নয়নহীনতা জাতীয় নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্বের জন্য যতটা না হুমকি, তার চেয়ে অনেক বড় হুমকি গণতন্ত্রহীন পরিবেশ। তবে আমাদেরকে সম্ভবত এই দুইয়ের টানাপোড়েনের মধ্য দিয়ে পথ চলতে হতে পারে। আর সেটা করতে গিয়ে কী করে আমরা একটি মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হতে পারি, সেদিকেই মনোযোগী হতে হবে।
২০২১ সালের মধ্যে আমাদের মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার লক্ষণ আছে কি? অবশ্যই আছে। কারণ অর্থনীতিবিদরা মানছেন বাংলাদেশ সেদিকেই যাচ্ছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলেন, মধ্যম আয়ের মর্যাদাকে কীভাবে সংজ্ঞায়িত করা হবে, সেটা এখানে গুরুত্বপূর্ণ। প্রকৃত জিডিপি (গ্রস ডোমেস্টিক প্রডাক্ট) নয়, জিএনআই (গ্রস ন্যাশনাল ইনকাম) হলো ‘মধ্যম আয়’ মাপার মাপকাঠি। নিম্ন আয় হলো ১০২৫ ডলার। নিম্ন মধ্যম আয় ১০২৬ থেকে ৪০৩৫ ডলার। উচ্চ মধ্যম আয় ৪০৩৬ থেকে ১২৪৭৫ ডলার। উচ্চ আয় ১২,৪৭৬ ডলার ও তার ওপরে। দুই বছর আগে জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন লিখেছিলেন, ‘বাংলাদেশের মাথাপিছু জিএনআই এখন ১৮৫১ ডলার, এটা অব্যাহতভাবে ২ দশমিক ১ ভাগ এবং মোট জিডিপি বছরে নিয়মিতভাবে সাড়ে তিন ভাগ হারে বৃদ্ধি পেতে হবে। আর তাহলেই ২০২১ সালে বাংলাদেশ তার ৫০তম স্বাধীনতা বার্ষিকী উদযাপনকালে একটি মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবে।’
সাংবাদিক শওকত হোসেন মাসুমের ‘ভারতকে ছাপিয়ে গেছে বাংলাদেশ’ শীর্ষক প্রতিবেদন কার্যত সেই সম্ভাবনার ওপর আলো ফেলেছেন। বিশ্বব্যাংক দেখিয়ে দিয়েছে যে, অস্থিরতার মধ্যে এই সমাজে শুভ লক্ষণগুলো দারুণভাবে ফুটে উঠেছে। বিশ্বব্যাংকের হিসাব মতে, ক্রয়ক্ষমতার সমতার ভিত্তিতে বাংলাদেশ ও ভারতের মাথাপিছু আয় যথাক্রমে ১৮৮৩ ডলার ও ৩,৮৭৬ ডলার।
সামাজিক প্রায় সব সূচকে বাংলাদেশ যে ভারতকে ছাপিয়ে যেতে পারল, সেটা কিন্তু রাজনৈতিক অস্থিরতাকে বাগে আনতে না পারার অক্ষমতা সত্ত্বেও। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা থাকলে আমরা কোথায় যেতে পারতাম, সেই প্রশ্ন অমীমাংসিত থাকলেও এসব অর্জনের পথে তা বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। সীমিত হলেও একটি উন্নয়নের গল্প ইতিমধ্যে বাস্তবে রূপ নিয়েছে। বাংলাদেশ ও তার জনগণকে তাই নিজের শক্তির দিকে নতুন করে নজর দিতে হবে। মনের গহিনে লালন করতে হবে আত্মমর্যাদা ও আস্থা।
নানা ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনের বিষয়টি টিভি টক শোর মতো পাবলিক ফোরামে সাধারণ আলোচনার বিষয় হওয়া উচিত। এ জন্য আমাদের সমাজ এখন যেভাবে দলীয় লাইনে বিভক্ত রয়েছে, সেই দুঃখজনক বিভক্তি সত্ত্বেও এ নিয়ে আলোচনা হতে পারে। কারণ, কিছু বিষয়ে আমরা এমন সাফল্য পেয়েছি, যার কৃতিত্ব কোনো একটি রাজনৈতিক দল এককভাবে দাবি করতে পারে না। উন্নয়ন ও অগ্রগতির এই অর্জন যেটা সাধারণ মানুষের। সরকারে কে থাকল বা থাকল না, তা বিবেচনায় নেয়নি তারা। এখানে একটি সত্য হলো প্রতিদ্বন্দ্বিতা সত্ত্বেও বিশেষ করে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি যারাই যখন ক্ষমতায় থেকেছে, তারা উন্নয়নের কয়েকটি সাধারণ নীতি অনুসরণে ধারাবাহিকতা রক্ষা করেছে। এসবের কারণেই নারীশিক্ষা, শিশুমৃত্যুর হার, জন্মহার, অপুষ্টির মতো সামাজিক সূচকগুলোতে একসময় যথেষ্ট পিছিয়ে থাকা বাংলাদেশ বদলে গেছে। তারপর এসব ক্ষেত্রে ভারতকে ছাড়িয়ে যাওয়া বা তার অবস্থানের কাছাকাছি পৌঁছে যাওয়া নিশ্চয় বিস্ময়কর।
হাজারো প্রতিকূলতার জন্য বেঁচে থাকাই যখন পরমানন্দ, বেঁচে থাকাই যখন জিন্দাবাদ, তখন তো আমরা ক্ষণকালের জন্য হলেও অবাক হতে পারি। ১৯৭১ সালে আমাদের ভূখণ্ডের মানুষের প্রত্যাশিত আয়ুষ্কাল ছিল ৩৯ আর ভারতের ছিল ৫০ বছর। আর এখন ভারতে ৬৬ বছর, বাংলাদেশে ৬৯। বিশ্বব্যাংককে ধন্যবাদ ভারতের সঙ্গে তুলনামূলক এই প্রতিবেদনটি প্রকাশের জন্য।
লন্ডনের প্রভাবশালী সাময়িকী দি ইকোনমিস্ট সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশের অনেক বিষয়ে কঠোর মন্তব্য করলেও এ দেশকে চিনতে ভুল করেনি। ২০১২ সালের ৩ নভেম্বর ‘আউট অব দ্যা বাস্কেট’ নিবন্ধে ইকোনমিস্ট বলেছে, ‘কী করা যায়, সেটা দেখিয়ে দেওয়ার মডেলে পরিণত হয়েছে বাংলাদেশ। কী করে উন্নয়নের মডেলে পরিণত হওয়া যায়, সেটা দেখিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ। যদিও তার অগ্রগতি রাজনীতির কারণে ভঙ্গুর রয়ে গেছে।’
No comments