৬০ ভিআইপির পাচার করা হাজার কোটি টাকা আনার মিশনে দুদক by আদিত্য আরাফাত
প্রভাবশালী ৬০ ব্যক্তির বিদেশে পাচার করা প্রায় এক হাজার কোটি টাকা দেশে ফেরত আনতে আইনি প্রক্রিয়া চালাচ্ছে দুর্নীতি দমন কমিশন(দুদক)। দুদকের অনুসন্ধান ও তদন্ত বিভাগ সূত্র এসব তথ্য বাংলানিউজকে জানায়।
দুদক সূত্র জানায়, গত দশ বছরে দেশ থেকে এক লাখ দশ হাজার কোটিরও বেশি টাকা বিদেশে পাচার হয়েছে। ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটির (জিএফআই) চলতি সপ্তাহের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
দুর্নীতি ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে এই অর্থ স্থানান্তর করা হয়েছে বলে জিএফআইয়ের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
জিএফআইয়ের এ প্রতিবেদনকে আমলে নিয়ে পাচার করা এসব অর্থ দেশে ফেরত আনতে উদ্যোগ নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ইতিমধ্যে প্রভাবশালী ৬০ ব্যক্তির প্রায় এক হাজার কোটি টাকা অর্থ দেশে ফেরত আনতে আইনি প্রক্রিয়া চলছে বলে জানিয়েছেন দুদকের আইন কর্মকর্তারা।
এসব ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন রাজনীতিক,ব্যবসায়ী, আমলা ও অন্যান্য পেশার ভিআইপি ব্যক্তিরা।
দুদকের আইন বিভাগ জানায়, ২০১২ সালের মধ্যে পাচার করা অর্থ ফেরত আনতে বিভিন্ন দেশের সরকারের কাছে অর্থ পাচার-সংক্রান্ত তথ্য চেয়ে অ্যাটর্নি জেনারেলের মাধ্যমে এমএলএআর (মিউচুয়াল লিগ্যাল আন্ডারস্ট্যান্ডিং রিকোয়েস্ট) পাঠানো হয়েছে।
দুদকের আইন উপদেষ্টা আনিসুল হক বাংলানিউজকে বলেন, ‘‘পাচার করা অর্থ ফেরত আনতে দুদকের আইনগত প্রক্রিয়া চলছে। ইতিমধ্যে আরাফাত রহমান কোকোর (বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে) টাকা ফেরত এসেছে। বিভিন্ন ব্যক্তির পাচার করা অর্থ ফেরত আনতে আইনি প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে।’’
দুদকের আইন বিভাগ জানায়, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় থেকে এ পর্যন্ত অর্থপাচার সংক্রান্ত ৫০টি মামলা করা হয়েছে। অর্থপাচারের অভিযোগে শিগগিরই আরও কিছু মামলা করা হবে।
দেশ থেকে কানাডা, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, চীন, হংকং, জার্মানি, জাপান, আরব আমিরাতসহ বিভিন্ন দেশে অর্থ পাচার করা হয়েছে।
অর্থ ফেরত আনতে অ্যাটর্নি জেনারেলের মাধ্যমে ওই সব দেশের সর্বোচ্চ আইন কর্মকর্তার সঙ্গে চিঠি আদান-প্রদানসহ বিভিন্নভাবে যোগাযোগ করা হচ্ছে। জাতিসংঘের দুর্নীতিবিরোধী কনভেনশনের আওতায় সমঝোতামূলকভাবে এ আইনি সহায়তা নেওয়া হচ্ছে। দুদক পাচার করা অর্থ ফেরত আনতে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। পাচার করা অর্থ দেশে ফেরত আনতে সংস্থার সর্বশক্তি নিয়োগ করা হয়েছে।
দুদকের দাবি, সম্প্রতি বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর ঘুষের অর্থ সিঙ্গাপুর থেকে এই প্রথম তারা ফেরত এনেছে।
জানা গেছে, গত ছয় বছরে দুদক প্রায় ৫০টি অভিযোগ অনুসন্ধান শেষ করে তদন্ত করছে এবং ১৫টির অনুসন্ধান চলছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিরা হলেন, সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, বিএনপি দলীয় সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন এবং তার স্ত্রী ও পুত্র, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এম মোর্শেদ খান ও তার পুত্র, সাবেক যোগাযোগ মন্ত্রী ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা ও তার স্ত্রী, সাবেক ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী ব্যারিস্টার আমিনুল হক, বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমান ও তার বন্ধু ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন আল মামুন, সাবেক সাংসদ হাফিজ ইব্রাহীম, জামায়াত নেতা মীর কাশেম আলী।
তারেক-মামুন
দুদকের মামলা পরবর্তী তদন্তে দেখা যায়, সিঙ্গাপুরের সিটি ব্যাংকের ক্যাপিটাল স্কয়ার শাখায় মোঃ গিয়াসউদ্দিন আল মামুন ২০০৩ সালে নিজ নামে একটি ব্যাংক হিসাব খোলেন (হিসাব নম্বর ১৫৮০৫২, ম্যাক্সি সেভ হিসাব নম্বর ০-১৫৮০৫২-০০৮ এবং সিটি একসেস হিসাব ০-১৫৮০৫২-০১৬)। টঙ্গীর ৮০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ কাজের কার্যাদেশ লাভে আগ্রহী নির্মাণ কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক খাদিজা ইসলামের কাছে চাঁদা দাবির প্রেক্ষিতে তিনি তার সিঙ্গাপুরের ওসিবিসি ব্যাংক হিসাব থেকে গিয়াস উদ্দিন আল মামুনের হিসাবে ৭ লাখ ৫০ হাজার মার্কিন ডলার টিটির মাধ্যমে জমা দেন। হংকংয়ের কাউলনের স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক থেকে হোসাফ গ্রুপের মোয়াজ্জেম হোসেন এক কোটি এক লাখ ৬৭ হাজার মার্কিন ডলার জমা করেন।
একই ব্যাংক হিসাবে মেয়ার সাইরী ৪ লাখ ২০ হাজার ৫৬৬ মার্কিন ডলার ও মেরিনা জামান ৩ হাজার মার্কিন ডলার জমা করেন। ২০০৭ সাল পর্যন্ত গিয়াস উদ্দিন আল মামুনের ওই ব্যাংক হিসেবে জমা পড়ে ২ কোটি ৭৭ লাখ ৮ হাজার ৯৭০ মার্কিন ডলার।
২০০৩ সালে থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত এ ব্যাংক হিসাব থেকে গিয়াসউদ্দিন আল মামুনের নামে ইস্যুকৃত গোল্ড ভিসা কার্ডের মাধ্যমে ৭৯ হাজার ৫৪২ দশমিক ৭৮ মার্কিন ডলার খরচ করা হয় (কার্ড নম্বর ৪৫৬৮-৮১৭০-০০০৬-৪১২৪)। একই ব্যাংক হিসাব থেকে তারেক রহমানের নামে ইস্যুকৃত সাপ্লিমেন্টারি গোল্ড ভিসা কার্ডের মাধ্যমে ৫৪ হাজার ৯৮২ দশমিক ৪২ মার্কিন ডলার খরচ করা হয় (কার্ড নম্বর ৪৫৬৮-৮১৭০-১০০৬-৪১২২)।
মওদুদ আহমদ
ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ এমপির বাড়ি কেনার বিষয়টি অনুসন্ধানের দায়িত্বে রয়েছেন মোঃ মোনায়েম হোসেন। মওদুদ আহমদের বিরুদ্ধে অভিযোগ হচ্ছে, তিনি ২০১০ সালে যুক্তরাজ্যের লন্ডন শহরের ১৫ হান্টিংটন এলাকার কেন্ট ডিএফাইভের টুএফডি অ্যাপার্টমেন্ট ক্রয় করেন। ওই বছরের ৫ মার্চ তিনি এইচএসবিসি ব্যাংকের মাধ্যমে অ্যাপার্টমেন্টটির ফান্ড প্রেরণ করেন। অ্যাপার্টমেন্টের মূল্য হচ্ছে তিন লাখ ৬০ হাজার পাউন্ড। বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় সাড়ে চার কোটি টাকা।
এ বিষয়টি নিশ্চিত হতে দেশ-বিদেশের সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোর সঙ্গে দুদকের পক্ষ থেকে দীর্ঘ দিন ধরে চিঠি চালাচালি হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান।
সাকা চৌধুরী
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য যুদ্ধাপরাধ মামলায় অভিযুক্ত কারাবন্দী সাংসদ সালাউদ্দিন কাদের সাকা চৌধুরীর মুদ্রাপাচার সংক্রান্ত নথিপত্র চেয়ে সিঙ্গাপুর ও হংকংয়ের সর্বোচ্চ আইন কর্মকর্তার কাছে এমএলএআর পাঠানো হয়েছে। তার বিরুদ্ধে পাচার করা অর্থের মধ্যে সিঙ্গাপুরে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকে আড়াই লাখ মার্কিন ডলার, হংকংয়ে এইচএসবিসিতে (হংকং সাংহাই ব্যাংকিং কর্পোরেশন) ১ লাখ হংকং ডলার জমা রাখার অভিযোগ করা হয়েছে।
এমএলএআরে ব্যাংক দুটিতে হিসাব খোলার তারিখ, হিসাব খোলার উদ্দেশ্য ও লেনদেন সংক্রান্ত বিবরণী চাওয়া হয়েছে।
সূত্র জানায়, সাকা চৌধুরী ২০০৫ সালে হংকংয়ের কুইন্টিনা হোল্ডিংস ইন কর্পোরেশনের মাধ্যমে লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জ থেকে আড়াই লাখ ডলারের শেয়ারপত্র- গ্লোবাল ডিপোজিটরি রিসিট (জিডিআর) ক্রয় করেন। এই জিডিআর কেনার জন্য সিঙ্গাপুর থেকে প্রথমে কুইন্টিনা হোল্ডিংয়ের কাছে আড়াই লাখ মার্কিন ডলার পাঠানো হয়। জিডিআর ক্রয়ের জন্য পরে হংকং থেকে আরও ১ লাখ হংকং ডলার পাঠানো হয়।
ব্যাংকিং চ্যানেলে ওই পরিমাণ অর্থ পাচার করা হয়েছে বলে তথ্য-প্রমাণ রয়েছে দুদকের কাছে।
খন্দকার মোশাররফ
বিএনপির প্রভাবশালী নেতা ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন এবং তার স্ত্রী বিলকিস হোসেন ও ছেলের নামে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় লন্ডনে বিপুল অর্থের সন্ধান পায় দুদক। সেখানে তাদের একাধিক ব্যাংকে ১০ লাখ পাউন্ড পাওয়া গেছে।
লন্ডন মেট্রোপলিটন পুলিশের এক তদন্তে লয়েডস টিএসবি ব্যাংকের যৌথ অ্যাকাউন্টে এ অর্থের তথ্য পাওয়া যায়। এসব অর্থ ফিরিয়ে আনার জন্য যাবতীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়।
দুর্নীতি দমন কমিশনে দাখিল করা সম্পদ বিবরণীতে ওই নেতা ও তার স্ত্রীর নামে লয়েডস ব্যাংকে ২ লাখ ৫০ হাজার পাউন্ড রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। তবে অভিযোগ রয়েছে, লয়েডস ব্যাংকে যে টাকা পাওয়া গেছে, তা দুর্নীতির মাধ্যমে তিনি অর্জন করেন এবং তা পাচার করা হয়।
তদন্তে আরও জানা যায়, ২০০৩ সালে ১ হাজার পাউন্ড দিয়ে মোশাররফ তার স্ত্রীর নামে একটি অ্যাকাউন্ট খোলেন। তদন্ত কর্মকর্তাদের রিপোর্ট অনুযায়ী ২০০৪ সালে ২ লাখ ৯ হাজার পাউন্ড দিয়ে যুক্তরাজ্যের কেন্টে বাড়ি ক্রয় করেন তিনি। বাড়ির ঠিকানা ৫৯ হিলদা ভেল রোড, কেন্ট বিআর ৬, ৭ এডাব্লিউ। পরে তিনি বাড়িটি বিক্রি করে দেন।
এদিকে, যুক্তরাজ্যের দুর্নীতি দমন বিভাগের তদন্ত কর্মকর্তারা বিএনপির এ নেতা ও তার স্ত্রী হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাচার করেছেন বলে এ সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করে বাংলাদেশে পাঠান। ওই নেতা ও তার স্ত্রী এবং ছেলে বিভিন্ন ব্যাংকের মাধ্যমে এ অর্থ লেনদেন করেছেন।
মীর কাশেম আলী
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ঠেকাতে ২০১০ সালের ৬ অক্টোবর ওয়াশিংটনের ক্যাসিডি অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটের সঙ্গে যুদ্ধাপরাধীদের রাজনৈতিক দল জামায়াতের নেতা মীর কাশেম আলী চুক্তি করেন। ওই চুক্তিতে যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে স্বাক্ষর করেন মীর কাশেম আলী আর ক্যাসিডির পক্ষে স্বাক্ষর করেন অ্যান্ড্রিও জে ক্যামিরস।
চুক্তিতে উল্লেখ রয়েছে, ক্যাসিডিকে অগ্রিম ২৫ মিলিয়ন ডলার (দেশি টাকায় প্রায় পৌনে তিনশ’ কোটি টাকা) দিলেই তারা যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে কাজ শুরু করবে। এছাড়া ক্যাসিডির এ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের এ কাজে ভ্রমণের জন্য একশ’ পঞ্চাশ হাজার ডলার অতিরিক্ত দিতে হবে। তাছাড়া ভ্রমণের সব ধরনের পকেটমানি মীর কাশেম আলী বহন করার দায়িত্ব নেন। একটি বিশেষ ব্যাংকের মাধ্যমে ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে মুদ্রা লেন-দেন হবে।
চুক্তির পর মীর কাশেম আলী মার্কিন লবিস্ট ফার্ম ক্যাসিডি অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটসের কাছে প্রায় আড়াইশ’ কোটি টাকা (২৫ মিলিয়ন ডলার) পাঠান বলে অভিযোগ রয়েছে। দুদুকের উপ-পরিচালক নুর হোসেনের নেতৃত্বে একটি টিম অভিযোগটির অনুসন্ধান করছেন। তার মুদ্রাপাচারের অভিযোগ সম্পর্কে তথ্য চেয়ে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে সরকারের কাছে তথ্য চেয়েছে দুদক। একই বিষয়ে জানতে চিঠি পাঠানো হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক শাখায়ও।
হাফিজ ইব্রাহিম ও তার স্ত্রী
টেলিটকের টেন্ডারে সিমেন্স বাংলাদেশকে কাজ পাইয়ে দেওয়ার বিনিময়ে সিমেন্সের কনসালট্যান্ট জুলফিকার আলীর কাছ থেকে ১ কোটি ৩১ লাখ ২৫ হাজার টাকা (১ লাখ ৭৫ হাজার মার্কিন ডলার) ঘুষ নিয়েছিলেন সাবেক সংসদ সদস্য হাফিজ ইব্রাহিম ও তার স্ত্রী মাহফুজা সুলতানা। সিঙ্গাপুরের ব্যাটারি রোডে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক শাখায় হাফিজ ইব্রাহীম ও তার স্ত্রীর একটি যৌথ হিসাবে জমা করা হয় ঘুষের ওই পরিমাণ অর্থ। এ অভিযোগে গত বছরের ১৬ আগস্ট ঢাকার গুলশান মডেল থানায় মামলাটি দায়ের করেন উপ-পরিচালক গোলাম শাহরিয়ার চৌধুরী বাদী হয়ে।
মামলার অভিযোগ তদন্তের লক্ষ্যে গচ্ছিত টাকার তথ্য চেয়ে সিঙ্গাপুর সরকারের কাছে এমএলএআর পাঠানো হয়েছে।
এছাড়া মহাজোট সরকারের আমলে শেয়ার কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িত প্রায় এক ডজন ব্যক্তির টাকা বিদেশে পাচার হয়েছে বলে দুদকের কাছে অভিযোগ রয়েছে।
গত বছরের ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে পুঁজিবাজারে একের পর এক বিপর্যয়ের পর অভিযোগ ওঠে, একটি সিন্ডিকেট শেয়ারবাজার থেকে অর্থ আত্মসাত করায় বড় ধরনের ধসের ঘটনা ঘটে। ঘটনার সঙ্গে কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যবসায়ী জড়িত বলে বিভিন্ন তদন্তে নাম উঠে আসে। তারা বিদেশে অর্থপাচার করেন বলেও দুদকে অভিযোগ আসে।
পরবর্তীতে দুদক উপ-পরিচালক হারুন-অর রশিদের নেতৃত্বে অর্থপাচার অনুসন্ধান করার জন্য পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে। অনুসন্ধান কর্মকর্তারা ১২ জনের অর্থপাচারের অভিযোগের অনুসন্ধান করছেন। তবে এসব ব্যক্তিদের নাম জানা যায়নি।
শেয়ার কেলেঙ্কারির হোতা ছাড়াও ব্যবসায়ী ও আমলাসহ ৬০ ব্যক্তির পাচারের টাকা ফেরত আনার মিশনে দুদক রয়েছে বলেও সূত্র জানায়।
জিএফআইয়ের এ প্রতিবেদনকে আমলে নিয়ে পাচার করা এসব অর্থ দেশে ফেরত আনতে উদ্যোগ নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ইতিমধ্যে প্রভাবশালী ৬০ ব্যক্তির প্রায় এক হাজার কোটি টাকা অর্থ দেশে ফেরত আনতে আইনি প্রক্রিয়া চলছে বলে জানিয়েছেন দুদকের আইন কর্মকর্তারা।
এসব ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন রাজনীতিক,ব্যবসায়ী, আমলা ও অন্যান্য পেশার ভিআইপি ব্যক্তিরা।
দুদকের আইন বিভাগ জানায়, ২০১২ সালের মধ্যে পাচার করা অর্থ ফেরত আনতে বিভিন্ন দেশের সরকারের কাছে অর্থ পাচার-সংক্রান্ত তথ্য চেয়ে অ্যাটর্নি জেনারেলের মাধ্যমে এমএলএআর (মিউচুয়াল লিগ্যাল আন্ডারস্ট্যান্ডিং রিকোয়েস্ট) পাঠানো হয়েছে।
দুদকের আইন উপদেষ্টা আনিসুল হক বাংলানিউজকে বলেন, ‘‘পাচার করা অর্থ ফেরত আনতে দুদকের আইনগত প্রক্রিয়া চলছে। ইতিমধ্যে আরাফাত রহমান কোকোর (বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে) টাকা ফেরত এসেছে। বিভিন্ন ব্যক্তির পাচার করা অর্থ ফেরত আনতে আইনি প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে।’’
দুদকের আইন বিভাগ জানায়, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় থেকে এ পর্যন্ত অর্থপাচার সংক্রান্ত ৫০টি মামলা করা হয়েছে। অর্থপাচারের অভিযোগে শিগগিরই আরও কিছু মামলা করা হবে।
দেশ থেকে কানাডা, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, চীন, হংকং, জার্মানি, জাপান, আরব আমিরাতসহ বিভিন্ন দেশে অর্থ পাচার করা হয়েছে।
অর্থ ফেরত আনতে অ্যাটর্নি জেনারেলের মাধ্যমে ওই সব দেশের সর্বোচ্চ আইন কর্মকর্তার সঙ্গে চিঠি আদান-প্রদানসহ বিভিন্নভাবে যোগাযোগ করা হচ্ছে। জাতিসংঘের দুর্নীতিবিরোধী কনভেনশনের আওতায় সমঝোতামূলকভাবে এ আইনি সহায়তা নেওয়া হচ্ছে। দুদক পাচার করা অর্থ ফেরত আনতে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। পাচার করা অর্থ দেশে ফেরত আনতে সংস্থার সর্বশক্তি নিয়োগ করা হয়েছে।
দুদকের দাবি, সম্প্রতি বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর ঘুষের অর্থ সিঙ্গাপুর থেকে এই প্রথম তারা ফেরত এনেছে।
জানা গেছে, গত ছয় বছরে দুদক প্রায় ৫০টি অভিযোগ অনুসন্ধান শেষ করে তদন্ত করছে এবং ১৫টির অনুসন্ধান চলছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিরা হলেন, সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, বিএনপি দলীয় সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন এবং তার স্ত্রী ও পুত্র, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এম মোর্শেদ খান ও তার পুত্র, সাবেক যোগাযোগ মন্ত্রী ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা ও তার স্ত্রী, সাবেক ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী ব্যারিস্টার আমিনুল হক, বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমান ও তার বন্ধু ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন আল মামুন, সাবেক সাংসদ হাফিজ ইব্রাহীম, জামায়াত নেতা মীর কাশেম আলী।
তারেক-মামুন
দুদকের মামলা পরবর্তী তদন্তে দেখা যায়, সিঙ্গাপুরের সিটি ব্যাংকের ক্যাপিটাল স্কয়ার শাখায় মোঃ গিয়াসউদ্দিন আল মামুন ২০০৩ সালে নিজ নামে একটি ব্যাংক হিসাব খোলেন (হিসাব নম্বর ১৫৮০৫২, ম্যাক্সি সেভ হিসাব নম্বর ০-১৫৮০৫২-০০৮ এবং সিটি একসেস হিসাব ০-১৫৮০৫২-০১৬)। টঙ্গীর ৮০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ কাজের কার্যাদেশ লাভে আগ্রহী নির্মাণ কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক খাদিজা ইসলামের কাছে চাঁদা দাবির প্রেক্ষিতে তিনি তার সিঙ্গাপুরের ওসিবিসি ব্যাংক হিসাব থেকে গিয়াস উদ্দিন আল মামুনের হিসাবে ৭ লাখ ৫০ হাজার মার্কিন ডলার টিটির মাধ্যমে জমা দেন। হংকংয়ের কাউলনের স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক থেকে হোসাফ গ্রুপের মোয়াজ্জেম হোসেন এক কোটি এক লাখ ৬৭ হাজার মার্কিন ডলার জমা করেন।
একই ব্যাংক হিসাবে মেয়ার সাইরী ৪ লাখ ২০ হাজার ৫৬৬ মার্কিন ডলার ও মেরিনা জামান ৩ হাজার মার্কিন ডলার জমা করেন। ২০০৭ সাল পর্যন্ত গিয়াস উদ্দিন আল মামুনের ওই ব্যাংক হিসেবে জমা পড়ে ২ কোটি ৭৭ লাখ ৮ হাজার ৯৭০ মার্কিন ডলার।
২০০৩ সালে থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত এ ব্যাংক হিসাব থেকে গিয়াসউদ্দিন আল মামুনের নামে ইস্যুকৃত গোল্ড ভিসা কার্ডের মাধ্যমে ৭৯ হাজার ৫৪২ দশমিক ৭৮ মার্কিন ডলার খরচ করা হয় (কার্ড নম্বর ৪৫৬৮-৮১৭০-০০০৬-৪১২৪)। একই ব্যাংক হিসাব থেকে তারেক রহমানের নামে ইস্যুকৃত সাপ্লিমেন্টারি গোল্ড ভিসা কার্ডের মাধ্যমে ৫৪ হাজার ৯৮২ দশমিক ৪২ মার্কিন ডলার খরচ করা হয় (কার্ড নম্বর ৪৫৬৮-৮১৭০-১০০৬-৪১২২)।
মওদুদ আহমদ
ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ এমপির বাড়ি কেনার বিষয়টি অনুসন্ধানের দায়িত্বে রয়েছেন মোঃ মোনায়েম হোসেন। মওদুদ আহমদের বিরুদ্ধে অভিযোগ হচ্ছে, তিনি ২০১০ সালে যুক্তরাজ্যের লন্ডন শহরের ১৫ হান্টিংটন এলাকার কেন্ট ডিএফাইভের টুএফডি অ্যাপার্টমেন্ট ক্রয় করেন। ওই বছরের ৫ মার্চ তিনি এইচএসবিসি ব্যাংকের মাধ্যমে অ্যাপার্টমেন্টটির ফান্ড প্রেরণ করেন। অ্যাপার্টমেন্টের মূল্য হচ্ছে তিন লাখ ৬০ হাজার পাউন্ড। বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় সাড়ে চার কোটি টাকা।
এ বিষয়টি নিশ্চিত হতে দেশ-বিদেশের সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোর সঙ্গে দুদকের পক্ষ থেকে দীর্ঘ দিন ধরে চিঠি চালাচালি হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান।
সাকা চৌধুরী
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য যুদ্ধাপরাধ মামলায় অভিযুক্ত কারাবন্দী সাংসদ সালাউদ্দিন কাদের সাকা চৌধুরীর মুদ্রাপাচার সংক্রান্ত নথিপত্র চেয়ে সিঙ্গাপুর ও হংকংয়ের সর্বোচ্চ আইন কর্মকর্তার কাছে এমএলএআর পাঠানো হয়েছে। তার বিরুদ্ধে পাচার করা অর্থের মধ্যে সিঙ্গাপুরে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকে আড়াই লাখ মার্কিন ডলার, হংকংয়ে এইচএসবিসিতে (হংকং সাংহাই ব্যাংকিং কর্পোরেশন) ১ লাখ হংকং ডলার জমা রাখার অভিযোগ করা হয়েছে।
এমএলএআরে ব্যাংক দুটিতে হিসাব খোলার তারিখ, হিসাব খোলার উদ্দেশ্য ও লেনদেন সংক্রান্ত বিবরণী চাওয়া হয়েছে।
সূত্র জানায়, সাকা চৌধুরী ২০০৫ সালে হংকংয়ের কুইন্টিনা হোল্ডিংস ইন কর্পোরেশনের মাধ্যমে লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জ থেকে আড়াই লাখ ডলারের শেয়ারপত্র- গ্লোবাল ডিপোজিটরি রিসিট (জিডিআর) ক্রয় করেন। এই জিডিআর কেনার জন্য সিঙ্গাপুর থেকে প্রথমে কুইন্টিনা হোল্ডিংয়ের কাছে আড়াই লাখ মার্কিন ডলার পাঠানো হয়। জিডিআর ক্রয়ের জন্য পরে হংকং থেকে আরও ১ লাখ হংকং ডলার পাঠানো হয়।
ব্যাংকিং চ্যানেলে ওই পরিমাণ অর্থ পাচার করা হয়েছে বলে তথ্য-প্রমাণ রয়েছে দুদকের কাছে।
খন্দকার মোশাররফ
বিএনপির প্রভাবশালী নেতা ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন এবং তার স্ত্রী বিলকিস হোসেন ও ছেলের নামে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় লন্ডনে বিপুল অর্থের সন্ধান পায় দুদক। সেখানে তাদের একাধিক ব্যাংকে ১০ লাখ পাউন্ড পাওয়া গেছে।
লন্ডন মেট্রোপলিটন পুলিশের এক তদন্তে লয়েডস টিএসবি ব্যাংকের যৌথ অ্যাকাউন্টে এ অর্থের তথ্য পাওয়া যায়। এসব অর্থ ফিরিয়ে আনার জন্য যাবতীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়।
দুর্নীতি দমন কমিশনে দাখিল করা সম্পদ বিবরণীতে ওই নেতা ও তার স্ত্রীর নামে লয়েডস ব্যাংকে ২ লাখ ৫০ হাজার পাউন্ড রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। তবে অভিযোগ রয়েছে, লয়েডস ব্যাংকে যে টাকা পাওয়া গেছে, তা দুর্নীতির মাধ্যমে তিনি অর্জন করেন এবং তা পাচার করা হয়।
তদন্তে আরও জানা যায়, ২০০৩ সালে ১ হাজার পাউন্ড দিয়ে মোশাররফ তার স্ত্রীর নামে একটি অ্যাকাউন্ট খোলেন। তদন্ত কর্মকর্তাদের রিপোর্ট অনুযায়ী ২০০৪ সালে ২ লাখ ৯ হাজার পাউন্ড দিয়ে যুক্তরাজ্যের কেন্টে বাড়ি ক্রয় করেন তিনি। বাড়ির ঠিকানা ৫৯ হিলদা ভেল রোড, কেন্ট বিআর ৬, ৭ এডাব্লিউ। পরে তিনি বাড়িটি বিক্রি করে দেন।
এদিকে, যুক্তরাজ্যের দুর্নীতি দমন বিভাগের তদন্ত কর্মকর্তারা বিএনপির এ নেতা ও তার স্ত্রী হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাচার করেছেন বলে এ সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করে বাংলাদেশে পাঠান। ওই নেতা ও তার স্ত্রী এবং ছেলে বিভিন্ন ব্যাংকের মাধ্যমে এ অর্থ লেনদেন করেছেন।
মীর কাশেম আলী
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ঠেকাতে ২০১০ সালের ৬ অক্টোবর ওয়াশিংটনের ক্যাসিডি অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটের সঙ্গে যুদ্ধাপরাধীদের রাজনৈতিক দল জামায়াতের নেতা মীর কাশেম আলী চুক্তি করেন। ওই চুক্তিতে যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে স্বাক্ষর করেন মীর কাশেম আলী আর ক্যাসিডির পক্ষে স্বাক্ষর করেন অ্যান্ড্রিও জে ক্যামিরস।
চুক্তিতে উল্লেখ রয়েছে, ক্যাসিডিকে অগ্রিম ২৫ মিলিয়ন ডলার (দেশি টাকায় প্রায় পৌনে তিনশ’ কোটি টাকা) দিলেই তারা যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে কাজ শুরু করবে। এছাড়া ক্যাসিডির এ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের এ কাজে ভ্রমণের জন্য একশ’ পঞ্চাশ হাজার ডলার অতিরিক্ত দিতে হবে। তাছাড়া ভ্রমণের সব ধরনের পকেটমানি মীর কাশেম আলী বহন করার দায়িত্ব নেন। একটি বিশেষ ব্যাংকের মাধ্যমে ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে মুদ্রা লেন-দেন হবে।
চুক্তির পর মীর কাশেম আলী মার্কিন লবিস্ট ফার্ম ক্যাসিডি অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটসের কাছে প্রায় আড়াইশ’ কোটি টাকা (২৫ মিলিয়ন ডলার) পাঠান বলে অভিযোগ রয়েছে। দুদুকের উপ-পরিচালক নুর হোসেনের নেতৃত্বে একটি টিম অভিযোগটির অনুসন্ধান করছেন। তার মুদ্রাপাচারের অভিযোগ সম্পর্কে তথ্য চেয়ে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে সরকারের কাছে তথ্য চেয়েছে দুদক। একই বিষয়ে জানতে চিঠি পাঠানো হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক শাখায়ও।
হাফিজ ইব্রাহিম ও তার স্ত্রী
টেলিটকের টেন্ডারে সিমেন্স বাংলাদেশকে কাজ পাইয়ে দেওয়ার বিনিময়ে সিমেন্সের কনসালট্যান্ট জুলফিকার আলীর কাছ থেকে ১ কোটি ৩১ লাখ ২৫ হাজার টাকা (১ লাখ ৭৫ হাজার মার্কিন ডলার) ঘুষ নিয়েছিলেন সাবেক সংসদ সদস্য হাফিজ ইব্রাহিম ও তার স্ত্রী মাহফুজা সুলতানা। সিঙ্গাপুরের ব্যাটারি রোডে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক শাখায় হাফিজ ইব্রাহীম ও তার স্ত্রীর একটি যৌথ হিসাবে জমা করা হয় ঘুষের ওই পরিমাণ অর্থ। এ অভিযোগে গত বছরের ১৬ আগস্ট ঢাকার গুলশান মডেল থানায় মামলাটি দায়ের করেন উপ-পরিচালক গোলাম শাহরিয়ার চৌধুরী বাদী হয়ে।
মামলার অভিযোগ তদন্তের লক্ষ্যে গচ্ছিত টাকার তথ্য চেয়ে সিঙ্গাপুর সরকারের কাছে এমএলএআর পাঠানো হয়েছে।
এছাড়া মহাজোট সরকারের আমলে শেয়ার কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িত প্রায় এক ডজন ব্যক্তির টাকা বিদেশে পাচার হয়েছে বলে দুদকের কাছে অভিযোগ রয়েছে।
গত বছরের ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে পুঁজিবাজারে একের পর এক বিপর্যয়ের পর অভিযোগ ওঠে, একটি সিন্ডিকেট শেয়ারবাজার থেকে অর্থ আত্মসাত করায় বড় ধরনের ধসের ঘটনা ঘটে। ঘটনার সঙ্গে কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যবসায়ী জড়িত বলে বিভিন্ন তদন্তে নাম উঠে আসে। তারা বিদেশে অর্থপাচার করেন বলেও দুদকে অভিযোগ আসে।
পরবর্তীতে দুদক উপ-পরিচালক হারুন-অর রশিদের নেতৃত্বে অর্থপাচার অনুসন্ধান করার জন্য পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে। অনুসন্ধান কর্মকর্তারা ১২ জনের অর্থপাচারের অভিযোগের অনুসন্ধান করছেন। তবে এসব ব্যক্তিদের নাম জানা যায়নি।
শেয়ার কেলেঙ্কারির হোতা ছাড়াও ব্যবসায়ী ও আমলাসহ ৬০ ব্যক্তির পাচারের টাকা ফেরত আনার মিশনে দুদক রয়েছে বলেও সূত্র জানায়।
No comments