ধান-আলুতে ক্ষতিগ্রস্ত অনেক চাষির ভরসা এখন ফুল চাষ



নেহাতই আগ্রহ আর কৌতূহল থেকে গত বছর ফুলের চাষ করেছিলেন বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার বিহার গ্রামের মিলন মিয়া (৩৫)। লাভের মুখ দেখে তিনি ঠিক করেছেন, ধান-আলুর অনিশ্চিত ফলনে নয়, এখন থেকে এ মৌসুমে ভরসা রাখবেন ফুলের বিকল্প চাষেই।
মিলন মিয়া জানান, ধান, আলু চাষে নিশ্চয়তা ক্রমেই কমছে। চাষ করার আগে জানা যায় না, বছরটা কেমন যাবে। সেদিক থেকে ফুলের চাষে নিশ্চয়তা রয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে বিঘাপ্রতি জমিতে এক লাখ টাকার ওপর লাভ হওয়া সম্ভব। মিলন মিয়ার মতো এ উপজেলার অনেক চাষিই এখন ফুল চাষ শুরু করেছেন। ধান চাষে বিপর্যয়ের পর লাভের মুখ দেখতে এ বছর বেশি পরিমাণ জমিতে ফুলের চাষ করছেন চাষিরা।
ফুলচাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ছয় বছর আগেও তাঁরা জানতেন না সবজি বা আলুর বিকল্প হিসেবে ফুল চাষ করে লাভবান হওয়া যায়। ধীরে ধীরে এলাকার মানুষ ফুলের চাষ শুরু করে। লাভ হচ্ছে দেখে সেই চাষ এখন এলাকার চাষিদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয়। তাঁদের দাবি, প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে এই চাষে মোটা অঙ্কের লাভ নিশ্চিত। তাঁরা জানান, শীত শুরু হতেই শুরু হয়ে যায় এই ফুল চাষের জন্য জমি তৈরির কাজ। অধিকাংশ চাষিই বীজ কেনেন বগুড়া শহর থেকে। বড় গাঁদা ফুলের জন্য ভারত থেকে আসা বীজ সংগ্রহ করতে হয়। ডিসেম্বর মাস থেকে শুরু হয় চারা গাছের ব্যবসা। আর ফুল বিক্রি শুরু হবে ফেব্রুয়ারির শুরু থেকেই। চাষিদের কেউ গাঁদা ফুলের চারা বিক্রি করছেন, কেউ বা ফুল বিক্রি করতে খেত প্রস্তুত করছেন। কেউ আবার চারা বিক্রি করে একই খেতে চারা বড় করে ফুল বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। গত সোমবার উপজেলার বিহার ও ভাসুবিহার এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ফুলের চারার চাষ শুরু হয়েছে। জমির আশপাশে ভিড় খরিদ্দারদের। জমি থেকে ফুলসমেত চারা তুলে নিচের অংশে পাটের চিকন সুতা দিয়ে প্যাঁচিয়ে তোলা হচ্ছে গাড়িতে। ফুলবোঝাই গাড়ি পাড়ি দিচ্ছে বিভিন্ন এলাকায়।
ভাসুবিহার গ্রামের মোজাফ্ফর হোসেন (৪০) জানান, তিনি গত বছর ৫ শতাংশ খেতে গাঁদা ফুলের চাষ করে সব খরচ বাদ দিয়ে ২০ হাজার টাকার মতো লাভ করেছিলেন। এবার প্রায় এক বিঘা জমিতে গাঁদা ফুলের চাষ করছেন। এর মধ্যে অর্ধেক পরিমাণ খেতে চারা তৈরি করে বিক্রি শুরু করেছেন। চাষি আফজাল হোসেন জানান, এ উপজেলার বেলে, দো-আঁশ মাটিতে যে চারা তৈরি হয়, তা অনেক বেশি সতেজ। ফুলও হয় তাড়াতাড়ি। এখানকার গাঁদা ফুল গাছের চাহিদা সব থেকে বেশি। সমস্যা হয় নিম্নচাপ বা স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়া থাকলে। সে ক্ষেত্রে চারা পচে যায়। উপজেলা সহকারী কৃষি কর্মকর্তা এজাজ কামাল জানান, সৌন্দর্যবর্ধক ফসল হিসেবে ফুল চাষ শুরু হয়েছে এ উপজেলায়। এই বিকল্প চাষে চাষিরা ভালো লাভবান হচ্ছেন।

No comments

Powered by Blogger.