সামাজিক যোগাযোগ- বদলে যাচ্ছে উপসাগরীয় অঞ্চল
আরব বসন্তের অভিজ্ঞতার কারণেই হয়তো পারস্য উপসাগরীয় এলাকার দেশগুলোতে ইন্টারনেটভিত্তিক সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোর ওপর কড়া সরকারি নিয়ন্ত্রণের খড়্গ নেমে এসেছে। তবে সরকার যে সবকিছু ঠেকাতে পারছে, তা নয়।
ইন্টারনেটে এ অঞ্চলের বিশেষ করে তরুণ সমাজের মধ্যে মত ও তথ্যবিনিময় চলছে। উপসাগরীয় দেশগুলোর মানুষের জীবনাচরণে লক্ষণীয় পরিবর্তন আনতে শুরু করেছে অনলাইনভিত্তিক সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলো।
সম্প্রতি সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) সরকার দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরও শক্ত করতে প্রচলিত আইনে সংশোধনী এনেছে। পর্যবেক্ষকেরা বলছেন, উপসাগরীয় দেশগুলোর কর্তৃপক্ষ অনলাইনভিত্তিক সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে সমালোচনাকে কতটা ভয়ের চোখে দেখে তার একটি উদাহরণ হচ্ছে ইউএই সরকারের এই উদ্যোগ।
আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট শেখ খলিফা বিন জায়েদ আল-নাহিয়ান গত মাসে একটি ডিক্রি জারি করেন। ওই ডিক্রির মাধ্যমে ইন্টারনেটভিত্তিক অপরাধ বিষয়ে দেশের প্রচলিত আইনে সংশোধনী আনার ঘোষণা দেওয়া হয়। এতে বলা হয়েছে, দেশের নাগরিকদের মধ্যে কেউ রাষ্ট্র বা রাষ্ট্রীয় কোনো প্রতিষ্ঠানের ক্ষতি বা অবজ্ঞা করতে ইন্টারনেট ব্যবহার করলে বা ওয়েবসাইট তৈরি করলে তাঁকে তিন বছর কারাদণ্ডের সম্মুখীন হতে হবে।
ডিক্রি অনুযায়ী রাষ্ট্রীয় ‘প্রতিষ্ঠানের’ মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন প্রেসিডেন্ট নিজে, দেশের ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং ইউএই ফেডারেশনের সাতটি আমিরাতের শাসকদের সবাই, তাঁদের যুবরাজ ও উপপ্রধান শাসকেরা।
ঘটনাক্রমে শেখ খলিফার ওই ডিক্রি জারির মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগেই সংযুক্ত আরব আমিরাত জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের সদস্য নির্বাচিত হয়। কাউন্সিলের এশিয়ার জন্য সংরক্ষিত পাঁচটি আসনের একটিতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয় দেশটি।
মানবাধিকারবিষয়ক সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) বলেছে, ডিক্রির মূল প্রভাব পড়বে সভা-সমাবেশ করাসহ স্বাধীনভাবে মত প্রকাশ করার ওপর। এগুলোর ওপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ হতে পারে এই ডিক্রির ফলে।
এইচআরডব্লিউর মধ্যপ্রাচ্য এলাকার উপপরিচালক জো স্টর্কের ভাষ্য, এরই মধ্যে ডিক্রির প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। বিবিসিকে তিনি বলেন, এর একটা ‘হিমশীতল প্রভাব’ এরই মধ্যে পড়তে শুরু করেছে। আরব আমিরাতের স্বনামধন্য মানবাধিকার কর্মীরা এরই মধ্যে ‘টুইট’ করা বন্ধ করে দিয়েছেন।
সরকারবিরোধী প্রচারণা রুখতে কড়াকড়ি আরোপের দিক দিয়ে অন্য উপসাগরীয় দেশগুলোর চিত্রও একই। কাতারের স্বনামধন্য কবি মোহাম্মদ আল-আজমিকে (তিনি মোহাম্মদ ইবনে আল-ধিব নামেও পরিচিত) সম্প্রতি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। তাঁর একজন আইনজীবী এ কথা জানিয়েছেন। ওই আইনজীবী জানান, দেশের ‘প্রতীক’কে অসম্মান করায় এবং প্রচলিত শাসনব্যবস্থা উৎখাতে প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগে তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করেন নিরাপত্তাবিষয়ক একটি আদালত। ২০১০ সালে আমির শেখ হামাদ আল-থানির সমালোচনা করে লেখা একটি কবিতার জের ধরে কবি আজমির বিরুদ্ধে ওই মামলা হয়। তবে মানবাধিকার কর্মীরা বলেছেন, আজমি ‘সব আরব সরকার’কে ‘ভেদবুদ্ধিহীন চোর’ আখ্যা দিয়ে ২০১১ সালে একটি কবিতা লিখেছিলেন। এ কারণেই সরকার তাঁর ওপর ক্ষিপ্ত হয়।
ওমানে গত জুলাই মাসে বেশ কয়েকজন অনলাইনভিত্তিক মানবাধিকার কর্মীকে এক থেকে দেড় বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে সুলতান কাবুস বিন সাইদের ‘মানহানি’ করার অভিযোগ আনা হয়েছিল। গণবিক্ষোভের মুখে ওমান সরকার বাহরাইনের মানবাধিকার কর্মী নাবিল রজব বর্তমানে তিন বছরের জেল খাটছেন। তাঁর টুইটার অ্যাকাউন্টের অনুসরণকারীর সংখ্যা এক লাখের বেশি।
বাহরাইন সরকার দাবি করেছে, জনগণকে বিক্ষোভ এবং নিষিদ্ধ সমাবেশে যোগ দেওয়ায় উৎসাহিত করার মাধ্যমে ‘অবৈধ কাজে উসকানি দেওয়ায়’ রজবকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
সৌদি আরবের ব্লগার আহমেদ আল-ওমরান বলেন, ২০০৬ সালে তিনি যখন টুইটার অ্যাকাউন্ট খোলেন তখন দেশটির কেউই মাইক্রোব্লগের ব্যবহার জানতো না বলে তাঁর ধারণা। সে তুলনায় এখন এর বিস্ফোরণ ঘটেছে বলা চলে। বিশ্বে টুইটার ব্যবহারের হার সবচেয়ে দ্রুত বাড়ছে সৌদি আরবেই।
সৌদি আরব এখনো খুব রক্ষণশীল একটি দেশ। তবে অনলাইন সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলো সামাজিক সম্পর্ক বিষয়ে দৃষ্টিভঙ্গিতে বিরাট এক পরিবর্তন এনে দিয়েছে।
সৌদি আরবের আল আরব সংবাদ চ্যানেলের প্রধান সম্পাদক জামাল খাশোগি বলেন, ‘টুইটার হয়ে উঠছে সে রকম একটি সংবাদপত্র যা কি না আমরা কখনো পাইনি। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম একটা বিরাট প্রভাব ফেলছে।’
হারুন-অর-রশীদ
তথ্যসূত্র: বিবিসি
সম্প্রতি সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) সরকার দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরও শক্ত করতে প্রচলিত আইনে সংশোধনী এনেছে। পর্যবেক্ষকেরা বলছেন, উপসাগরীয় দেশগুলোর কর্তৃপক্ষ অনলাইনভিত্তিক সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে সমালোচনাকে কতটা ভয়ের চোখে দেখে তার একটি উদাহরণ হচ্ছে ইউএই সরকারের এই উদ্যোগ।
আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট শেখ খলিফা বিন জায়েদ আল-নাহিয়ান গত মাসে একটি ডিক্রি জারি করেন। ওই ডিক্রির মাধ্যমে ইন্টারনেটভিত্তিক অপরাধ বিষয়ে দেশের প্রচলিত আইনে সংশোধনী আনার ঘোষণা দেওয়া হয়। এতে বলা হয়েছে, দেশের নাগরিকদের মধ্যে কেউ রাষ্ট্র বা রাষ্ট্রীয় কোনো প্রতিষ্ঠানের ক্ষতি বা অবজ্ঞা করতে ইন্টারনেট ব্যবহার করলে বা ওয়েবসাইট তৈরি করলে তাঁকে তিন বছর কারাদণ্ডের সম্মুখীন হতে হবে।
ডিক্রি অনুযায়ী রাষ্ট্রীয় ‘প্রতিষ্ঠানের’ মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন প্রেসিডেন্ট নিজে, দেশের ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং ইউএই ফেডারেশনের সাতটি আমিরাতের শাসকদের সবাই, তাঁদের যুবরাজ ও উপপ্রধান শাসকেরা।
ঘটনাক্রমে শেখ খলিফার ওই ডিক্রি জারির মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগেই সংযুক্ত আরব আমিরাত জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের সদস্য নির্বাচিত হয়। কাউন্সিলের এশিয়ার জন্য সংরক্ষিত পাঁচটি আসনের একটিতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয় দেশটি।
মানবাধিকারবিষয়ক সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) বলেছে, ডিক্রির মূল প্রভাব পড়বে সভা-সমাবেশ করাসহ স্বাধীনভাবে মত প্রকাশ করার ওপর। এগুলোর ওপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ হতে পারে এই ডিক্রির ফলে।
এইচআরডব্লিউর মধ্যপ্রাচ্য এলাকার উপপরিচালক জো স্টর্কের ভাষ্য, এরই মধ্যে ডিক্রির প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। বিবিসিকে তিনি বলেন, এর একটা ‘হিমশীতল প্রভাব’ এরই মধ্যে পড়তে শুরু করেছে। আরব আমিরাতের স্বনামধন্য মানবাধিকার কর্মীরা এরই মধ্যে ‘টুইট’ করা বন্ধ করে দিয়েছেন।
সরকারবিরোধী প্রচারণা রুখতে কড়াকড়ি আরোপের দিক দিয়ে অন্য উপসাগরীয় দেশগুলোর চিত্রও একই। কাতারের স্বনামধন্য কবি মোহাম্মদ আল-আজমিকে (তিনি মোহাম্মদ ইবনে আল-ধিব নামেও পরিচিত) সম্প্রতি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। তাঁর একজন আইনজীবী এ কথা জানিয়েছেন। ওই আইনজীবী জানান, দেশের ‘প্রতীক’কে অসম্মান করায় এবং প্রচলিত শাসনব্যবস্থা উৎখাতে প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগে তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করেন নিরাপত্তাবিষয়ক একটি আদালত। ২০১০ সালে আমির শেখ হামাদ আল-থানির সমালোচনা করে লেখা একটি কবিতার জের ধরে কবি আজমির বিরুদ্ধে ওই মামলা হয়। তবে মানবাধিকার কর্মীরা বলেছেন, আজমি ‘সব আরব সরকার’কে ‘ভেদবুদ্ধিহীন চোর’ আখ্যা দিয়ে ২০১১ সালে একটি কবিতা লিখেছিলেন। এ কারণেই সরকার তাঁর ওপর ক্ষিপ্ত হয়।
ওমানে গত জুলাই মাসে বেশ কয়েকজন অনলাইনভিত্তিক মানবাধিকার কর্মীকে এক থেকে দেড় বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে সুলতান কাবুস বিন সাইদের ‘মানহানি’ করার অভিযোগ আনা হয়েছিল। গণবিক্ষোভের মুখে ওমান সরকার বাহরাইনের মানবাধিকার কর্মী নাবিল রজব বর্তমানে তিন বছরের জেল খাটছেন। তাঁর টুইটার অ্যাকাউন্টের অনুসরণকারীর সংখ্যা এক লাখের বেশি।
বাহরাইন সরকার দাবি করেছে, জনগণকে বিক্ষোভ এবং নিষিদ্ধ সমাবেশে যোগ দেওয়ায় উৎসাহিত করার মাধ্যমে ‘অবৈধ কাজে উসকানি দেওয়ায়’ রজবকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
সৌদি আরবের ব্লগার আহমেদ আল-ওমরান বলেন, ২০০৬ সালে তিনি যখন টুইটার অ্যাকাউন্ট খোলেন তখন দেশটির কেউই মাইক্রোব্লগের ব্যবহার জানতো না বলে তাঁর ধারণা। সে তুলনায় এখন এর বিস্ফোরণ ঘটেছে বলা চলে। বিশ্বে টুইটার ব্যবহারের হার সবচেয়ে দ্রুত বাড়ছে সৌদি আরবেই।
সৌদি আরব এখনো খুব রক্ষণশীল একটি দেশ। তবে অনলাইন সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলো সামাজিক সম্পর্ক বিষয়ে দৃষ্টিভঙ্গিতে বিরাট এক পরিবর্তন এনে দিয়েছে।
সৌদি আরবের আল আরব সংবাদ চ্যানেলের প্রধান সম্পাদক জামাল খাশোগি বলেন, ‘টুইটার হয়ে উঠছে সে রকম একটি সংবাদপত্র যা কি না আমরা কখনো পাইনি। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম একটা বিরাট প্রভাব ফেলছে।’
হারুন-অর-রশীদ
তথ্যসূত্র: বিবিসি
No comments