অপুষ্টিতে শিশুমৃত্যু-মায়েদের প্রতিও নজর দিন
বাংলাদেশে অপুষ্টিতে প্রতিদিন পাঁচ বছরের কম বয়সী আড়াইশ' শিশুর মৃত্যু ঘটে_ এ তথ্য জানানো হয়েছে বাংলাদেশ সিভিল সোসাইটি ফর প্রোমোটিং নিউট্রিশন আয়োজিত এক সেমিনারে। অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. রুহুল হক প্রধান অতিথি ছিলেন।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধে বলা হয়, এ সমস্যা শুধু বাংলাদেশের নয়। বিশ্বে প্রতি বছর অপুষ্টিতে অন্তত ১০ লাখ শিশু প্রাণ হারায়। স্বাস্থ্যমন্ত্রীও স্বীকার করেছেন, মা ও শিশুদের অপুষ্টিজনিত সমস্যা দেশে এখনও প্রকট। কেন অপুষ্টি, তার কারণ অনুসন্ধানে বিশেষজ্ঞ হওয়ার দরকার নেই। দেশের অন্তত চার ভাগের এক ভাগ লোক দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করে। এসব পরিবারে শিশু ও বয়স্ক সবাই কমবেশি অপুষ্টিতে ভুগবে, এটাই স্বাভাবিক। পুষ্টিবিজ্ঞানীরা বলেন, শরীরের পুষ্টির জন্য প্রতিদিন মাছ-মাংস-দুধ খাওয়ার প্রয়োজন নেই। অনেক ধরনের শাক-সবজি বাড়ির আঙিনায় মেলে। কিংবা পাওয়া যায় স্বল্পমূল্যে। আর শিশুর জন্য সবচেয়ে বড় পুষ্টির উৎস মায়ের বুকের দুধ। এসব যুক্তি উপেক্ষা করার দরকার নেই। সংবাদপত্র-বেতার-টিভিতে এ ধরনের বক্তব্য নিয়মিত প্রচার হচ্ছে এবং তা এমনকি সাধারণ মানুষের কাছেও গুরুত্ব পায়। কিন্তু এটাও মনে রাখতে হবে যে, শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানোর জন্য মায়েরও পুষ্টি চাই। এ জন্য অপরিহার্য শর্ত হচ্ছে, তাদের প্রতি মনোযোগ বাড়ানো। সরকারের দরিদ্র পরিবারগুলোর জন্য কয়েক ধরনের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি রয়েছে। দিনমজুর পরিবারগুলোর আয়ও আগের তুলনায় বাড়ছে। শহর ও গ্রামে একেবারে হতদরিদ্র পরিবারের দেখা অতীতের যে কোনো সময়ের তুলনায় কম। এ ক্ষেত্রে সরকারি-বেসরকারি ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচি ভালো ভূমিকা রাখছে। এনজিওদের কর্মকাণ্ডের বিষয়টিও মনে রাখতে হবে। তবে এরপরও পরিস্থিতি যে আদৌ সন্তোষজনক নয়, সেটা প্রতিদিন পাঁচ বছরের কম বয়সী প্রায় আড়াইশ' শিশুর করুণ মৃত্যুর তথ্য থেকেও স্পষ্ট। সার্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির উন্নতি ঘটলে দারিদ্র্যসীমার নিচে লোকসংখ্যা কমে আসবে, এটা জানা কথা। মধ্য আয়ের দেশে পরিণত হতে পারলে এ সমস্যা থাকবে না_ বিশেষজ্ঞদের এ অভিমতও আমরা জানি। কিন্তু এ লক্ষ্যে পেঁৗছানোর জন্য অপেক্ষা না করে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি আরও বাড়ানো সম্ভব বলে আমরা মনে করি। এতে মা ও শিশু উভয়েরই মঙ্গল হবে।
No comments