মেক্সিকোর নতুন নেতার জন্য চ্যালেঞ্জ
শুরুটা মোটেও ভালো হয়নি মেক্সিকোর নতুন প্রেসিডেন্ট এনরিকে পেনা নিয়েতোর। ১ ডিসেম্বর তিনি প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করার সময় পার্লামেন্টের বাইরে বিরোধীরা বিক্ষোভ করছিল। এ সময় তাদের হাতে ছিল নিয়েতোর বিরুদ্ধে নানা বক্তব্যসংবলিত ব্যানার ও প্ল্যাকার্ড।
একটি প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল, ‘নিয়েতো, জনগণ তোমাকে ঘৃণা করে’—এ রকম চরম নিন্দাবাক্যও। বিক্ষোভকারীরা পার্লামেন্ট ভবন লক্ষ্য করে ককটেল ও ইটও ছোড়ে।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, প্রেসিডেন্ট নিয়েতোর জন্য ভবিষ্যতে কী অপেক্ষা করছে, তার একটা ইঙ্গিত হতে পারে অভিষেকের সময়কার এ ঘটনা। মেক্সিকো বেশ কিছুদিন ধরে মাদক-সংশ্লিষ্ট সহিংসতায় জর্জরিত। গত ছয় বছরে শুধু মাদকজনিত সহিংসতায় প্রায় ৬০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এ সময়ে অবাধে মাদক পাচার হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। এ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বোঝাপড়া চলছে এখনো। খুন, চাঁদাবাজি, নারী নির্যাতন, অপহরণ—এসব নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা মেক্সিকোর অনেক স্থানে। এসব অপরাধের একটা বড় অংশ ঘটে মাদকের কারণেই।
পেনা নিয়েতোর ইনস্টিটিউশনাল রেভল্যুশনারি পার্টি (পিআরআই) ক্ষমতায় ফিরে আসুক, তা বামপন্থীরাসহ অনেকেই চায়নি। টানা ৮০ বছর মেক্সিকোর শাসনক্ষমতায় থাকার পর ২০০০ সালের নির্বাচনে হেরে যায় পিআরআই। সেবার জেতেন ন্যাশনাল অ্যাকশন পার্টির (পিএএন) প্রার্থী ভিসেন্ত ফক্স। ২০০৬ সালেও ক্ষমতায় আসেন পিএএন পার্টির নেতা ফিলিপ ক্যালদেরন। তাঁর সরকারকে সফল বলেই দেখা হয়। ক্যালদেরনের শাসনামলে মেক্সিকো ধীরে ধীরে অর্থনৈতিক মন্দা কাটিয়ে উঠছিল। অন্যদিকে পিআরআইয়ের দীর্ঘদিনের শাসনামলে তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতিসহ অনেক অভিযোগ উঠেছে। ১২ বছর পর সেই দল ক্ষমতায় ফিরে আসায় অনেকে উদ্বিগ্ন। তাদের আশঙ্কা, মেক্সিকোতে ফের দমনমূলক শাসনব্যবস্থা ফিরে আসবে। যদিও পেনা নির্বাচিত হওয়ার পর বলেছেন, ‘আমরা নতুন প্রজন্মের মানুষ। অতীতের পুনরাবৃত্তি কখনোই হবে না।’
প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগে পেনা নিয়েতো রাজধানীসংলগ্ন মেক্সিকো অঙ্গরাজ্যের গভর্নর ছিলেন। জনবহুল এ রাজ্যে তাঁর ব্যাপারে জনগণের অভিমত মিশ্র। কয়েকটি শহরে দারুণ জনপ্রিয় তিনি। যেমন, ভ্যাল দেল ব্রাভো শহরের মানুষ তাঁর খুব ভক্ত। তারা বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণের মাধ্যমে এ শহরের পর্যটনশিল্পের বিকাশের জন্য পেনা নিয়েতোকে কৃতিত্ব দেয়। শহরটিতে যাওয়ার জন্য পুরোনো এবড়োখেবড়ো হাইওয়েটির সংস্কার করে এর চেহারা পুরো বদলে দিয়েছেন নিয়েতো। এ ছাড়া বহু হাসপাতালসহ নানা অবকাঠামো নির্মাণ করেছেন তিনি। এ এলাকায় তাঁর উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের মধ্যে আরও রয়েছে একটি আধুনিক ক্রীড়াকেন্দ্র এবং জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক জাদুঘর।
নিয়েতোর বন্ধু ও তাঁর দলেরই মেক্সিকো রাজ্যের কংগ্রেস সদস্য গ্যাবরিয়েল ওলভেরা হারনানদেজ বলেন, ‘আমাদের প্রত্যাশা, নিয়েতো সত্যিকারের পরিবর্তন আনতে পারবেন। বিশেষ করে নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক বিষয়ে প্রকৃত পরিবর্তন হবে বলে আশা করছি আমরা। দেশের জন্য এখন সত্যিই তা খুব দরকার।’
ওলভেরা হারনানদেজ স্বীকার করেন, পিআরআই ১২ বছর প্রেসিডেন্ট প্রাসাদের বাইরে থাকায় দলের মধ্যেই পেনা নিয়েতোকে ঘিরে বহু প্রত্যাশা তৈরি হয়েছে।
অন্যদিকে একই রাজ্যের সিউদাদ নেজা শহরে নিয়েতো ততটা জনপ্রিয় নন। ভ্যাল দেল ব্রাভোর তুলনায় এটি অনুন্নত। বাইরের লোকের কাছে ভিড়াক্রান্ত রাজধানী মেক্সিকো সিটিরই একটি উপশহর মনে হতে পারে একে। এ শহরের অনেকেই বলেন, রাজ্যের গভর্নর থাকার সময় অনেক সমস্যার সমাধান করতে ব্যর্থ হয়েছেন নিয়েতো।
গত জুলাই মাসে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে পিনা নিয়েতো প্রায় ৩৮ শতাংশ ভোট পান। পরাজিত করেন বামপন্থী ও ডানপন্থী দলের দুই প্রার্থীকে। নির্বাচনী প্রচারণায় নিয়েতো নিজেকে বিশেষ কোনো রাজনৈতিক দলের সদস্য হিসেবে নয়, বরং ‘সমস্যা সমাধানকারী’ হিসেবে উপস্থাপন করেন। আর এটাই তাঁকে নির্বাচনে জিততে সাহায্য করেছে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ধারণা।
১ ডিসেম্বর প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের সময় নিয়েতো বলেন, তাঁর সরকারের প্রথম লক্ষ্য হচ্ছে দেশে শান্তি ফিরিয়ে আনা। নতুন প্রেসিডেন্ট তাঁর এ কথা রাখতে পারেন কি না, তা দেখতে দেশবাসী অপেক্ষায় থাকবে।
রোকেয়া রহমান
বিশ্লেষকেরা বলছেন, প্রেসিডেন্ট নিয়েতোর জন্য ভবিষ্যতে কী অপেক্ষা করছে, তার একটা ইঙ্গিত হতে পারে অভিষেকের সময়কার এ ঘটনা। মেক্সিকো বেশ কিছুদিন ধরে মাদক-সংশ্লিষ্ট সহিংসতায় জর্জরিত। গত ছয় বছরে শুধু মাদকজনিত সহিংসতায় প্রায় ৬০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এ সময়ে অবাধে মাদক পাচার হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। এ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বোঝাপড়া চলছে এখনো। খুন, চাঁদাবাজি, নারী নির্যাতন, অপহরণ—এসব নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা মেক্সিকোর অনেক স্থানে। এসব অপরাধের একটা বড় অংশ ঘটে মাদকের কারণেই।
পেনা নিয়েতোর ইনস্টিটিউশনাল রেভল্যুশনারি পার্টি (পিআরআই) ক্ষমতায় ফিরে আসুক, তা বামপন্থীরাসহ অনেকেই চায়নি। টানা ৮০ বছর মেক্সিকোর শাসনক্ষমতায় থাকার পর ২০০০ সালের নির্বাচনে হেরে যায় পিআরআই। সেবার জেতেন ন্যাশনাল অ্যাকশন পার্টির (পিএএন) প্রার্থী ভিসেন্ত ফক্স। ২০০৬ সালেও ক্ষমতায় আসেন পিএএন পার্টির নেতা ফিলিপ ক্যালদেরন। তাঁর সরকারকে সফল বলেই দেখা হয়। ক্যালদেরনের শাসনামলে মেক্সিকো ধীরে ধীরে অর্থনৈতিক মন্দা কাটিয়ে উঠছিল। অন্যদিকে পিআরআইয়ের দীর্ঘদিনের শাসনামলে তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতিসহ অনেক অভিযোগ উঠেছে। ১২ বছর পর সেই দল ক্ষমতায় ফিরে আসায় অনেকে উদ্বিগ্ন। তাদের আশঙ্কা, মেক্সিকোতে ফের দমনমূলক শাসনব্যবস্থা ফিরে আসবে। যদিও পেনা নির্বাচিত হওয়ার পর বলেছেন, ‘আমরা নতুন প্রজন্মের মানুষ। অতীতের পুনরাবৃত্তি কখনোই হবে না।’
প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগে পেনা নিয়েতো রাজধানীসংলগ্ন মেক্সিকো অঙ্গরাজ্যের গভর্নর ছিলেন। জনবহুল এ রাজ্যে তাঁর ব্যাপারে জনগণের অভিমত মিশ্র। কয়েকটি শহরে দারুণ জনপ্রিয় তিনি। যেমন, ভ্যাল দেল ব্রাভো শহরের মানুষ তাঁর খুব ভক্ত। তারা বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণের মাধ্যমে এ শহরের পর্যটনশিল্পের বিকাশের জন্য পেনা নিয়েতোকে কৃতিত্ব দেয়। শহরটিতে যাওয়ার জন্য পুরোনো এবড়োখেবড়ো হাইওয়েটির সংস্কার করে এর চেহারা পুরো বদলে দিয়েছেন নিয়েতো। এ ছাড়া বহু হাসপাতালসহ নানা অবকাঠামো নির্মাণ করেছেন তিনি। এ এলাকায় তাঁর উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের মধ্যে আরও রয়েছে একটি আধুনিক ক্রীড়াকেন্দ্র এবং জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক জাদুঘর।
নিয়েতোর বন্ধু ও তাঁর দলেরই মেক্সিকো রাজ্যের কংগ্রেস সদস্য গ্যাবরিয়েল ওলভেরা হারনানদেজ বলেন, ‘আমাদের প্রত্যাশা, নিয়েতো সত্যিকারের পরিবর্তন আনতে পারবেন। বিশেষ করে নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক বিষয়ে প্রকৃত পরিবর্তন হবে বলে আশা করছি আমরা। দেশের জন্য এখন সত্যিই তা খুব দরকার।’
ওলভেরা হারনানদেজ স্বীকার করেন, পিআরআই ১২ বছর প্রেসিডেন্ট প্রাসাদের বাইরে থাকায় দলের মধ্যেই পেনা নিয়েতোকে ঘিরে বহু প্রত্যাশা তৈরি হয়েছে।
অন্যদিকে একই রাজ্যের সিউদাদ নেজা শহরে নিয়েতো ততটা জনপ্রিয় নন। ভ্যাল দেল ব্রাভোর তুলনায় এটি অনুন্নত। বাইরের লোকের কাছে ভিড়াক্রান্ত রাজধানী মেক্সিকো সিটিরই একটি উপশহর মনে হতে পারে একে। এ শহরের অনেকেই বলেন, রাজ্যের গভর্নর থাকার সময় অনেক সমস্যার সমাধান করতে ব্যর্থ হয়েছেন নিয়েতো।
গত জুলাই মাসে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে পিনা নিয়েতো প্রায় ৩৮ শতাংশ ভোট পান। পরাজিত করেন বামপন্থী ও ডানপন্থী দলের দুই প্রার্থীকে। নির্বাচনী প্রচারণায় নিয়েতো নিজেকে বিশেষ কোনো রাজনৈতিক দলের সদস্য হিসেবে নয়, বরং ‘সমস্যা সমাধানকারী’ হিসেবে উপস্থাপন করেন। আর এটাই তাঁকে নির্বাচনে জিততে সাহায্য করেছে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ধারণা।
১ ডিসেম্বর প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের সময় নিয়েতো বলেন, তাঁর সরকারের প্রথম লক্ষ্য হচ্ছে দেশে শান্তি ফিরিয়ে আনা। নতুন প্রেসিডেন্ট তাঁর এ কথা রাখতে পারেন কি না, তা দেখতে দেশবাসী অপেক্ষায় থাকবে।
রোকেয়া রহমান
No comments