জয়ের মালা ঝন্টুর গলায় by পাভেল হায়দার চৌধুরী ও স্বপন চৌধুরী
রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বেসরকারি ফল অনুযায়ী বিজয়ী হয়েছেন শরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টু। ঘন কুয়াশা, কনকনে শীত, সঙ্গে ঠাণ্ডা বাতাস- কোনো কিছুই ঘরে আটকে রাখতে পারেনি রংপুর সিটি করপোরেশনের অধিবাসীদের।
প্রকৃতির এ বৈরী আচরণ উপেক্ষা করে প্রথম 'নগর পিতা' নির্বাচনের জন্য গতকাল বৃহস্পতিবার ভোটকেন্দ্রে ছুটে যান ভোটাররা। নবগঠিত সিটি করপোরেশন নির্বাচনে উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট দিয়েছেন তাঁরা। বিচ্ছিন্ন কয়েকটি ঘটনা ছাড়া সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত টানা ভোটগ্রহণ চলেছে। নারী ভোটারের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো।
রাত পৌনে ২টায় ১৭৪টি ভোটকেন্দ্রের বেসরকারি ফল পাওয়া যায়। এতে শরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টু পেয়েছেন এক লাখ তিন হাজার ৪২২ ভোট, মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা পেয়েছেন ৭৫ হাজার ৩২৪ ভোট এবং এ কে এম আবদুর রউফ মানিক পেয়েছেন ৩৩ হাজার ৫২২ ভোট। মোট ভোটকেন্দ্র ১৭৮টি।
নির্বাচনী এলাকা ঘুরে দেখার সময় সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে কথা হয় রিটার্নিং অফিসার মনিরুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে ভোট গ্রহণ করা হয়েছে। অপ্রীতিকর কোনো ঘটনা ঘটেনি। শান্তিপূর্ণ ও চমৎকার পরিবেশে ভোট দিয়েছেন ভোটাররা। এ জন্য ভোটারদের ধন্যবাদ জানান তিনি।
বুথ-ফেরত ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নাগরিক কমিটির প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা শরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টুর পাল্লাই ভারী।
নির্বাচনে প্রায় ৭০ শতাংশ ভোট পড়েছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে।
এদিকে রাত সোয়া ৮টায় গণমঞ্চের প্রার্থী বিএনপি নেতা কাওসার জামান বাবলা বলেন, 'নির্বাচনে ভোট কারচুপি হয়েছে। এ নির্বাচন আমি প্রত্যাখ্যান করলাম।'
নির্বাচনী এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সকাল ৮টায় ভোটগ্রহণ শুরু হলেও কনকনে শীত উপেক্ষা করে অনেক আগেই লাইনে দাঁড়ান ভোটাররা। দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দেন তাঁরা। শহুরে এলাকার তুলনায় গ্রামীণ এলাকায় ভোটারের উপস্থিতি ছিল অনেক বেশি।
ভোটকেন্দ্রগুলোর আশপাশ ছিল প্রার্থীদের পোস্টারে ছাওয়া। কেন্দ্রের আশপাশে অস্থায়ী খাবারের দোকানগুলো ছিল জমজমাট। পার্বতীপুর নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, নিসবেতগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কেরানীরহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কেরানীরহাট স্কুল অ্যান্ড কলেজ, হাজি তমিজউদ্দিন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, লায়ন্স স্কুল অ্যান্ড কলেজ, উত্তর মূলাটোল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মডার্ন ক্যাডেট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ বিভিন্ন কেন্দ্রে ছিল ভোটারদের দীর্ঘ লাইন।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, সাম্প্রতিক সময়ে যত নির্বাচন হয়েছে সেসবের মধ্যে রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোটারদের উপস্থিতি ছিল সবচেয়ে বেশি। দুপুর ১২টার মধ্যেই প্রায় অর্ধেক ভোটার ভোট দেন।
নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবেই হয়েছে। একটি কেন্দ্রের বাইরে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ছাড়া সকাল থেকে বড় কোনো গোলোযোগের খবর পাওয়া যায়নি। শঙ্কা একেবারে কম ছিল না; তবে পুলিশের সতর্ক নজরদারি ছিল। তেমন কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।
একটি কেন্দ্রে সংঘর্ষ, আটক ৩ : ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের মাহিগঞ্জ এলাকার মহিন্দ্রফাতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের বাইরে দুই মেয়র পদপ্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় তিনজনকে আটক করেছে পুলিশ। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, সকাল সোয়া ১১টার দিকে নাগরিক কমিটির প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা শরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টু (মোটরসাইকেল) এবং গণমঞ্চের প্রার্থী বিএনপি নেতা কাওসার জামান বাবলার (আনারস) সমর্থকদের মধ্যে কথাকাটাকাটির একপর্যায়ে সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
কোতোয়ালি থানার ওসি আলতাফ হোসেন জানান, এ ঘটনায় তিনজনকে আটক করা হয়েছে। তারা হলো ঝন্টুর সমর্থক রাজু এবং বাবলার সমর্থক জবায়দুল ইসলাম ও ফরহাদ হোসেন। ভোটকেন্দ্রে এর কোনো প্রভাব পড়েনি বলে তিনি জানান।
হেভিওয়েট তিন প্রার্থীর ভোট : বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পুরুষ ভোটারদের উপস্থিতি কমলেও নারী ভোটারদের উপস্থিতি বাড়তে থাকে। দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দিয়েছেন তাঁরা। নির্বাচনসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, সংরক্ষিত আসনে নারী প্রার্থী থাকায় নারী ভোটারদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। ওই প্রার্থীরা নারীদের ভোট দিতে উৎসাহ জুগিয়েছেন।
হেভিওয়েট তিন প্রার্থী ভোট দেন নিজ নিজ বাড়ির কাছের ভোটকেন্দ্রে। সকাল ৯টার দিকে বাড়ির পাশের কেন্দ্র লায়ন্স স্কুল ও কলেজে ভোট দেন শরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টু। মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা ভোট দেন নগরীর আলমনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে। এ কে এম আবদুর রউফ মানিক সকালে মরিয়ম নেসা স্কুল কেন্দ্রে ভোট দেন।
নারী ভোটারের আধিক্য : বেশির ভাগ মহিলা ভোটকেন্দ্রে প্রায় ৭০ শতাংশ ভোট পড়েছে। মাহিগঞ্জ আফানুল্লাহ উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার মোশাররফ হোসেন কালের কণ্ঠকে জানান, এখানে মোট ভোটার এক হাজার ৭৩২ জন। দুপুর ১টা পর্যন্ত প্রায় ৯০০ ভোট পড়েছে। এ কেন্দ্রে মহিলাদের দীর্ঘ লাইন দেখা গেছে। সকাল ১০টায় ভোটার রেশমা এ প্রতিবেদকদের বলেন, 'ভোট তো দিতে হবে, আবার ঘরের কাজও করতে হবে। তাই সকাল সকাল এসেছি। ভোট শান্তিপূর্ণর্ভাবে হচ্ছে।'
ভোটার উপস্থিতিতে অবাক পর্যবেক্ষক ও সাংবাদিকরা : শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ও ভোটার উপস্থিতিতে অবাক পর্যবেক্ষক ও দায়িত্বে নিয়োজিত সাংবাদিকরা। জাতীয় মানবাধিকার সংস্থার মো. ফিরোজ নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতে এসে তাঁর প্রতিক্রিয়ায় জানান, এত শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ও ভোটার উপস্থিতি এর আগে চোখে পড়েনি। আশরতপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (মহিলা কেন্দ্র) কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার মিজানুর রহমান বলেন, 'এর আগে অনেক নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করেছি; কিন্তু এ নির্বাচনের মতো ভোটার উপস্থিতি খুব কম দেখেছি।' নির্বাচনের সংবাদ সংগ্রহের জন্য ঢাকা থেকে আসা সাংবাদিকরাও একই অভিমত ব্যক্ত করেন।
মোমবাতি জ্বালিয়ে ভোটগ্রহণ : ঘন কুশায়ার কারণে ভোটগ্রহণে বিলম্ব হয়েছে ৭০টি কেন্দ্রে। বিদ্যুৎ না থাকায় এ বিলম্ব হয়। পরে মোমবাতি জ্বালিয়ে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। এসব ভোটকেন্দ্রে বিদ্যুৎ সংযোগ নেই। নগরের আলমনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সকাল ৯টা পর্যন্ত মোমবাতি সরবরাহ করা হয়নি। ভোটারদের অভিযোগ, নির্বাচন কমিশন ইচ্ছা করলে সময়মতো ভোটগ্রহণ শুরু করতে পারত।
চার কেন্দ্রে ইভিএম : মোট ৩৩টি ওয়ার্ডের একটিতে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার করেছে ইসি। প্রথমবারের মতো এ পদ্ধতিতে ভোট দিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন ভোটাররা। নির্বাচনসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ১১ নম্বর ওয়ার্ডের চারটি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ হয়েছে। এগুলো হচ্ছে রাজেন্দ্রপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কামদেবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কেরানীহাট স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও কেরানীহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র। চার কেন্দ্রে মোট ভোটার সাত হাজার ৭১৩ জন।
প্রথমবারের মতো ইভিএমে ভোট দিয়ে উচ্ছ্বসিত ভোটাররা। জীবন সায়াহ্নে এসে প্রথমবারের মতো ইভিএমে ভোট দিয়ে ভীষণ খুশি অশীতিপর আয়েশা বেওয়া। তিনি কেরানীহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভোট দিয়েছেন। এই বৃদ্ধা বলেন, 'জীবনে ম্যালা ভোট দিছি, পট করিয়া অ্যাংকা (এমন) ভোট কোনো দিনই দিবার পাওনি।' আরেক ভোটার বলেন, 'টিপ দিলেই পটপট ভোট হয়া যায়। ভোট দিয়া খুব ভালো লাগছে।'
রাত পৌনে ২টায় ১৭৪টি ভোটকেন্দ্রের বেসরকারি ফল পাওয়া যায়। এতে শরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টু পেয়েছেন এক লাখ তিন হাজার ৪২২ ভোট, মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা পেয়েছেন ৭৫ হাজার ৩২৪ ভোট এবং এ কে এম আবদুর রউফ মানিক পেয়েছেন ৩৩ হাজার ৫২২ ভোট। মোট ভোটকেন্দ্র ১৭৮টি।
নির্বাচনী এলাকা ঘুরে দেখার সময় সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে কথা হয় রিটার্নিং অফিসার মনিরুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে ভোট গ্রহণ করা হয়েছে। অপ্রীতিকর কোনো ঘটনা ঘটেনি। শান্তিপূর্ণ ও চমৎকার পরিবেশে ভোট দিয়েছেন ভোটাররা। এ জন্য ভোটারদের ধন্যবাদ জানান তিনি।
বুথ-ফেরত ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নাগরিক কমিটির প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা শরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টুর পাল্লাই ভারী।
নির্বাচনে প্রায় ৭০ শতাংশ ভোট পড়েছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে।
এদিকে রাত সোয়া ৮টায় গণমঞ্চের প্রার্থী বিএনপি নেতা কাওসার জামান বাবলা বলেন, 'নির্বাচনে ভোট কারচুপি হয়েছে। এ নির্বাচন আমি প্রত্যাখ্যান করলাম।'
নির্বাচনী এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সকাল ৮টায় ভোটগ্রহণ শুরু হলেও কনকনে শীত উপেক্ষা করে অনেক আগেই লাইনে দাঁড়ান ভোটাররা। দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দেন তাঁরা। শহুরে এলাকার তুলনায় গ্রামীণ এলাকায় ভোটারের উপস্থিতি ছিল অনেক বেশি।
ভোটকেন্দ্রগুলোর আশপাশ ছিল প্রার্থীদের পোস্টারে ছাওয়া। কেন্দ্রের আশপাশে অস্থায়ী খাবারের দোকানগুলো ছিল জমজমাট। পার্বতীপুর নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, নিসবেতগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কেরানীরহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কেরানীরহাট স্কুল অ্যান্ড কলেজ, হাজি তমিজউদ্দিন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, লায়ন্স স্কুল অ্যান্ড কলেজ, উত্তর মূলাটোল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মডার্ন ক্যাডেট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ বিভিন্ন কেন্দ্রে ছিল ভোটারদের দীর্ঘ লাইন।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, সাম্প্রতিক সময়ে যত নির্বাচন হয়েছে সেসবের মধ্যে রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোটারদের উপস্থিতি ছিল সবচেয়ে বেশি। দুপুর ১২টার মধ্যেই প্রায় অর্ধেক ভোটার ভোট দেন।
নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবেই হয়েছে। একটি কেন্দ্রের বাইরে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ছাড়া সকাল থেকে বড় কোনো গোলোযোগের খবর পাওয়া যায়নি। শঙ্কা একেবারে কম ছিল না; তবে পুলিশের সতর্ক নজরদারি ছিল। তেমন কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।
একটি কেন্দ্রে সংঘর্ষ, আটক ৩ : ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের মাহিগঞ্জ এলাকার মহিন্দ্রফাতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের বাইরে দুই মেয়র পদপ্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় তিনজনকে আটক করেছে পুলিশ। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, সকাল সোয়া ১১টার দিকে নাগরিক কমিটির প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা শরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টু (মোটরসাইকেল) এবং গণমঞ্চের প্রার্থী বিএনপি নেতা কাওসার জামান বাবলার (আনারস) সমর্থকদের মধ্যে কথাকাটাকাটির একপর্যায়ে সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
কোতোয়ালি থানার ওসি আলতাফ হোসেন জানান, এ ঘটনায় তিনজনকে আটক করা হয়েছে। তারা হলো ঝন্টুর সমর্থক রাজু এবং বাবলার সমর্থক জবায়দুল ইসলাম ও ফরহাদ হোসেন। ভোটকেন্দ্রে এর কোনো প্রভাব পড়েনি বলে তিনি জানান।
হেভিওয়েট তিন প্রার্থীর ভোট : বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পুরুষ ভোটারদের উপস্থিতি কমলেও নারী ভোটারদের উপস্থিতি বাড়তে থাকে। দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দিয়েছেন তাঁরা। নির্বাচনসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, সংরক্ষিত আসনে নারী প্রার্থী থাকায় নারী ভোটারদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। ওই প্রার্থীরা নারীদের ভোট দিতে উৎসাহ জুগিয়েছেন।
হেভিওয়েট তিন প্রার্থী ভোট দেন নিজ নিজ বাড়ির কাছের ভোটকেন্দ্রে। সকাল ৯টার দিকে বাড়ির পাশের কেন্দ্র লায়ন্স স্কুল ও কলেজে ভোট দেন শরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টু। মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা ভোট দেন নগরীর আলমনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে। এ কে এম আবদুর রউফ মানিক সকালে মরিয়ম নেসা স্কুল কেন্দ্রে ভোট দেন।
নারী ভোটারের আধিক্য : বেশির ভাগ মহিলা ভোটকেন্দ্রে প্রায় ৭০ শতাংশ ভোট পড়েছে। মাহিগঞ্জ আফানুল্লাহ উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার মোশাররফ হোসেন কালের কণ্ঠকে জানান, এখানে মোট ভোটার এক হাজার ৭৩২ জন। দুপুর ১টা পর্যন্ত প্রায় ৯০০ ভোট পড়েছে। এ কেন্দ্রে মহিলাদের দীর্ঘ লাইন দেখা গেছে। সকাল ১০টায় ভোটার রেশমা এ প্রতিবেদকদের বলেন, 'ভোট তো দিতে হবে, আবার ঘরের কাজও করতে হবে। তাই সকাল সকাল এসেছি। ভোট শান্তিপূর্ণর্ভাবে হচ্ছে।'
ভোটার উপস্থিতিতে অবাক পর্যবেক্ষক ও সাংবাদিকরা : শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ও ভোটার উপস্থিতিতে অবাক পর্যবেক্ষক ও দায়িত্বে নিয়োজিত সাংবাদিকরা। জাতীয় মানবাধিকার সংস্থার মো. ফিরোজ নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতে এসে তাঁর প্রতিক্রিয়ায় জানান, এত শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ও ভোটার উপস্থিতি এর আগে চোখে পড়েনি। আশরতপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (মহিলা কেন্দ্র) কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার মিজানুর রহমান বলেন, 'এর আগে অনেক নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করেছি; কিন্তু এ নির্বাচনের মতো ভোটার উপস্থিতি খুব কম দেখেছি।' নির্বাচনের সংবাদ সংগ্রহের জন্য ঢাকা থেকে আসা সাংবাদিকরাও একই অভিমত ব্যক্ত করেন।
মোমবাতি জ্বালিয়ে ভোটগ্রহণ : ঘন কুশায়ার কারণে ভোটগ্রহণে বিলম্ব হয়েছে ৭০টি কেন্দ্রে। বিদ্যুৎ না থাকায় এ বিলম্ব হয়। পরে মোমবাতি জ্বালিয়ে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। এসব ভোটকেন্দ্রে বিদ্যুৎ সংযোগ নেই। নগরের আলমনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সকাল ৯টা পর্যন্ত মোমবাতি সরবরাহ করা হয়নি। ভোটারদের অভিযোগ, নির্বাচন কমিশন ইচ্ছা করলে সময়মতো ভোটগ্রহণ শুরু করতে পারত।
চার কেন্দ্রে ইভিএম : মোট ৩৩টি ওয়ার্ডের একটিতে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার করেছে ইসি। প্রথমবারের মতো এ পদ্ধতিতে ভোট দিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন ভোটাররা। নির্বাচনসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ১১ নম্বর ওয়ার্ডের চারটি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ হয়েছে। এগুলো হচ্ছে রাজেন্দ্রপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কামদেবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কেরানীহাট স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও কেরানীহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র। চার কেন্দ্রে মোট ভোটার সাত হাজার ৭১৩ জন।
প্রথমবারের মতো ইভিএমে ভোট দিয়ে উচ্ছ্বসিত ভোটাররা। জীবন সায়াহ্নে এসে প্রথমবারের মতো ইভিএমে ভোট দিয়ে ভীষণ খুশি অশীতিপর আয়েশা বেওয়া। তিনি কেরানীহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভোট দিয়েছেন। এই বৃদ্ধা বলেন, 'জীবনে ম্যালা ভোট দিছি, পট করিয়া অ্যাংকা (এমন) ভোট কোনো দিনই দিবার পাওনি।' আরেক ভোটার বলেন, 'টিপ দিলেই পটপট ভোট হয়া যায়। ভোট দিয়া খুব ভালো লাগছে।'
No comments