সুন্দরবনের পানিতে ঘাতক উদ্ভিদকণা
বঙ্গোপসাগরে নতুন ধরনের এক আণুবীক্ষণিক ফাইটোপ্লাংটন বা বিষাক্ত উদ্ভিদকণার কারণে সুন্দরবনের খাদ্যশৃঙ্খল ভেঙে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ খবর উদ্বিগ্ন করে তুলেছে ভারত ও বাংলাদেশের বন বিভাগসহ পরিবেশবিজ্ঞানীদের।
তাঁদের আশঙ্কা, বাংলাদেশ হয়ে পশ্চিমবঙ্গ পর্যন্ত বিস্তৃত প্রায় চার হাজার ১১০ কিলোমিটার বনের ভেতর দিয়ে এঁকেবেঁকে বয়ে যাওয়া অসংখ্য নদী ও খালের জলজ প্রাণীর অস্তিত্বের জন্য হুমকি হয়ে দেখা দিতে পারে এই উদ্ভিদকণা। বিষক্রিয়ায় তারা মারা তো পড়বেই, বন্য প্রাণীর অস্তিত্বও সংকটে পড়বে।
গবেষণায় দেখা গেছে, পরিবেশ বিপর্যয়ের কবলে বঙ্গোপসাগরের লবণাক্ততার মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ায় নতুন উদ্ভিদকণাগুলো সিউডোনেৎসিয়া জাতীয় ঘাতক বিষ বহন করছে। বিষাক্ত উদ্ভিদকণাগুলো নতুন পরিবেশে খাপ খাইয়ে নিতে খুবই সক্ষম। বিষাক্ত এই উদ্ভিদকণা খেলে সুন্দরবনের মাছ, কাঁকড়া, শামুক, ঝিনুকসহ অন্যান্য জলজ প্রাণী মারাত্মক বিষক্রিয়ায় মারা পড়বে। আবার এসব জলজ প্রাণীর ওপর নির্ভরশীল বনের পাখপাখালিসহ অন্যান্য বন্য প্রাণীর দেহেও ছড়িয়ে পড়বে বিষক্রিয়া। ফলে তারাও ঢলে পড়বে মৃত্যুর কোলে।
বন সংরক্ষক (বন্য প্রাণী ও প্রকৃতি) ড. তপন কুমার দে উদ্বেগ প্রকাশ করে কালের কণ্ঠকে বলেন, এমনিতেই পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে সুন্দরবনের নদী-নালার লবণাক্ততা বাড়ছে। এতে বন ও বন্য প্রাণীর মধ্যে বিরূপ প্রভাব দেখা দিচ্ছে। এ অবস্থায় নতুন ধরনের বিষাক্ত উদ্ভিদকণার সন্ধান পরিবেশবিদদের ভাবিয়ে তুলেছে। এ সম্পর্কে আরো খোঁজখবর নিয়ে তবেই বিস্তারিত বলা সম্ভব।
তপন কুমার আরো বলেন, সুন্দরবনের পরিবেশে বেশ কিছু ক্ষতিকারক অণুজীব আছে, যারা সাধারণত সুপ্ত বা নিষ্ক্রীয় অবস্থায় থাকে। উপযুক্ত পরিবেশ পেলেই এসব ক্ষতিকারক অণুজীব সক্রিয় হয়ে ওঠে। সারা বিশ্বের পরিবেশবিজ্ঞানীরাই এসব ক্ষতিকারক অণুজীব মোকাবিলায় গবেষণা করে চলেছেন।
ভারতের শীর্ষস্থানীয় জাতীয় দৈনিক হিন্দুস্থান টাইমসের ১২ ডিসেম্বরের অনলাইন সংস্করণের এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, পরিবেশবিজ্ঞানীরা ২০১০ সাল থেকে ধারাবাহিক গবেষণার ফল হিসেবে অতিসম্প্রতি সুন্দরবনের পানিতে ওই নতুন ধরনের বিষাক্ত উদ্ভিদকণার সন্ধান পেয়েছেন। বঙ্গোপসাগরে এ ধরনের উদ্ভিদকণার সন্ধান আগে মেলেনি। এসব উদ্ভিদকণার বিষ জীবদেহের জন্য তো বটেই, জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। ভারতের বিজ্ঞান শিক্ষা ও গবেষণাকেন্দ্রের সহকারী অধ্যাপক পুন্যশ্লোক ভাদুড়ি হিন্দুস্থান টাইমসকে বলেন, 'আমরা গবেষণায় অতিসম্প্রতি সুন্দরবনসংলগ্ন বিস্তীর্ণ অঞ্চলে বিষাক্ত উদ্ভিদকণার বসতির সন্ধান পেয়েছি। বিষয়টি সবাইকে ভাবিয়ে তুলেছে।'
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এক দশক আগে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া প্রদেশের পশ্চিম উপকূলে একই ধরনের বিষাক্ত উদ্ভিদকণার কারণে পেলিক্যান, সি লায়ন, ডলফিন এবং অন্যান্য সামুদ্রিক পাখি মারা পড়ে। গবেষণায় দেখা যায়, এসব বিষাক্ত উদ্ভিদকণাখেকো সামুদ্রিক ঝিনুক খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে শতাধিক মানুষ। অসুস্থদের মধ্যে বেশ কয়েকজন মারাও যায়। পরে কয়েক বিলিয়ন ডলার খরচ করে সমুদ্র উপকূলকে বিষমুক্ত করতে হয়।
বন বিভাগ জানায়, জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতিবিষয়ক সংস্থা- ইউনেস্কো ১৯৯৭ সালে সুন্দরবনকে বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে ঘোষণা করে। এই বনে রয়েছে প্রায় ৩১৫ প্রজাতির পাখির বাস। এর মধ্যে ৮০ প্রজাতির অতিথি পাখি। রয়েছে ৪০০ প্রজাতির মাছ ও জলজ প্রাণী। আছে ৩৩৪ প্রজাতির গাছপালা, ১৬৫ প্রজাতির শৈবাল ও ১৩ প্রজাতির অর্কিড। সেখানে সুন্দরী, কেওড়া, গরান, গোলপাতা, পশুর, কাঁকড়া, হেতাল, বলা, সিংড়া ও খলসী গাছ বেশি জন্মে। রয়েল বেঙ্গল টাইগারের জন্য বিখ্যাত হলেও সুন্দরবনে ৩৭৫ প্রজাতির বেশি বন্য প্রাণী রয়েছে। এর মধ্যে ৩৫ প্রজাতির সরীসৃপ, ৩১৫ প্রজাতির পাখি, ৪২ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ২৯১ প্রজাতির মাছ, ২৪ প্রজাতির চিংড়ি, ১৪ প্রজাতির কাঁকড়া ও ৪৩ প্রজাতির মলাস্কা অন্যতম। লোনা পানির কুমির, বন্যশূকর, বানর, ডলফিন, মেছো ও বনবিড়াল এবং বিখ্যাত চিত্রল হরিণ উল্লেখযোগ্য।
২০০৪ সালে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) জরিপ অনুযায়ী, সেখানে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের সংখ্যা ৪৪০টি। বন বিভাগের হিসাবে, বাঘের সংখ্যা এখন অনেক বেড়েছে। বিশ্বের সবচেয়ে বড় গরান বনভূমি সুন্দরবনের মোট বিস্তৃতি ৪,১১০ কিলোমিটার। এর মধ্যে বাংলাদেশে পড়েছে ১,৭০০ কিলোমিটার।
গবেষণায় দেখা গেছে, পরিবেশ বিপর্যয়ের কবলে বঙ্গোপসাগরের লবণাক্ততার মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ায় নতুন উদ্ভিদকণাগুলো সিউডোনেৎসিয়া জাতীয় ঘাতক বিষ বহন করছে। বিষাক্ত উদ্ভিদকণাগুলো নতুন পরিবেশে খাপ খাইয়ে নিতে খুবই সক্ষম। বিষাক্ত এই উদ্ভিদকণা খেলে সুন্দরবনের মাছ, কাঁকড়া, শামুক, ঝিনুকসহ অন্যান্য জলজ প্রাণী মারাত্মক বিষক্রিয়ায় মারা পড়বে। আবার এসব জলজ প্রাণীর ওপর নির্ভরশীল বনের পাখপাখালিসহ অন্যান্য বন্য প্রাণীর দেহেও ছড়িয়ে পড়বে বিষক্রিয়া। ফলে তারাও ঢলে পড়বে মৃত্যুর কোলে।
বন সংরক্ষক (বন্য প্রাণী ও প্রকৃতি) ড. তপন কুমার দে উদ্বেগ প্রকাশ করে কালের কণ্ঠকে বলেন, এমনিতেই পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে সুন্দরবনের নদী-নালার লবণাক্ততা বাড়ছে। এতে বন ও বন্য প্রাণীর মধ্যে বিরূপ প্রভাব দেখা দিচ্ছে। এ অবস্থায় নতুন ধরনের বিষাক্ত উদ্ভিদকণার সন্ধান পরিবেশবিদদের ভাবিয়ে তুলেছে। এ সম্পর্কে আরো খোঁজখবর নিয়ে তবেই বিস্তারিত বলা সম্ভব।
তপন কুমার আরো বলেন, সুন্দরবনের পরিবেশে বেশ কিছু ক্ষতিকারক অণুজীব আছে, যারা সাধারণত সুপ্ত বা নিষ্ক্রীয় অবস্থায় থাকে। উপযুক্ত পরিবেশ পেলেই এসব ক্ষতিকারক অণুজীব সক্রিয় হয়ে ওঠে। সারা বিশ্বের পরিবেশবিজ্ঞানীরাই এসব ক্ষতিকারক অণুজীব মোকাবিলায় গবেষণা করে চলেছেন।
ভারতের শীর্ষস্থানীয় জাতীয় দৈনিক হিন্দুস্থান টাইমসের ১২ ডিসেম্বরের অনলাইন সংস্করণের এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, পরিবেশবিজ্ঞানীরা ২০১০ সাল থেকে ধারাবাহিক গবেষণার ফল হিসেবে অতিসম্প্রতি সুন্দরবনের পানিতে ওই নতুন ধরনের বিষাক্ত উদ্ভিদকণার সন্ধান পেয়েছেন। বঙ্গোপসাগরে এ ধরনের উদ্ভিদকণার সন্ধান আগে মেলেনি। এসব উদ্ভিদকণার বিষ জীবদেহের জন্য তো বটেই, জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। ভারতের বিজ্ঞান শিক্ষা ও গবেষণাকেন্দ্রের সহকারী অধ্যাপক পুন্যশ্লোক ভাদুড়ি হিন্দুস্থান টাইমসকে বলেন, 'আমরা গবেষণায় অতিসম্প্রতি সুন্দরবনসংলগ্ন বিস্তীর্ণ অঞ্চলে বিষাক্ত উদ্ভিদকণার বসতির সন্ধান পেয়েছি। বিষয়টি সবাইকে ভাবিয়ে তুলেছে।'
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এক দশক আগে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া প্রদেশের পশ্চিম উপকূলে একই ধরনের বিষাক্ত উদ্ভিদকণার কারণে পেলিক্যান, সি লায়ন, ডলফিন এবং অন্যান্য সামুদ্রিক পাখি মারা পড়ে। গবেষণায় দেখা যায়, এসব বিষাক্ত উদ্ভিদকণাখেকো সামুদ্রিক ঝিনুক খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে শতাধিক মানুষ। অসুস্থদের মধ্যে বেশ কয়েকজন মারাও যায়। পরে কয়েক বিলিয়ন ডলার খরচ করে সমুদ্র উপকূলকে বিষমুক্ত করতে হয়।
বন বিভাগ জানায়, জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতিবিষয়ক সংস্থা- ইউনেস্কো ১৯৯৭ সালে সুন্দরবনকে বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে ঘোষণা করে। এই বনে রয়েছে প্রায় ৩১৫ প্রজাতির পাখির বাস। এর মধ্যে ৮০ প্রজাতির অতিথি পাখি। রয়েছে ৪০০ প্রজাতির মাছ ও জলজ প্রাণী। আছে ৩৩৪ প্রজাতির গাছপালা, ১৬৫ প্রজাতির শৈবাল ও ১৩ প্রজাতির অর্কিড। সেখানে সুন্দরী, কেওড়া, গরান, গোলপাতা, পশুর, কাঁকড়া, হেতাল, বলা, সিংড়া ও খলসী গাছ বেশি জন্মে। রয়েল বেঙ্গল টাইগারের জন্য বিখ্যাত হলেও সুন্দরবনে ৩৭৫ প্রজাতির বেশি বন্য প্রাণী রয়েছে। এর মধ্যে ৩৫ প্রজাতির সরীসৃপ, ৩১৫ প্রজাতির পাখি, ৪২ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ২৯১ প্রজাতির মাছ, ২৪ প্রজাতির চিংড়ি, ১৪ প্রজাতির কাঁকড়া ও ৪৩ প্রজাতির মলাস্কা অন্যতম। লোনা পানির কুমির, বন্যশূকর, বানর, ডলফিন, মেছো ও বনবিড়াল এবং বিখ্যাত চিত্রল হরিণ উল্লেখযোগ্য।
২০০৪ সালে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) জরিপ অনুযায়ী, সেখানে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের সংখ্যা ৪৪০টি। বন বিভাগের হিসাবে, বাঘের সংখ্যা এখন অনেক বেড়েছে। বিশ্বের সবচেয়ে বড় গরান বনভূমি সুন্দরবনের মোট বিস্তৃতি ৪,১১০ কিলোমিটার। এর মধ্যে বাংলাদেশে পড়েছে ১,৭০০ কিলোমিটার।
No comments