চরাচর-নানা রঙের শীতের ফুল by পাভেল রহমান
মানুষ কেন ফুল ভালোবাসে- এমন প্রশ্নের উত্তর প্রকৃতির রূপবৈচিত্র্যের মতোই ভিন্ন হবে। তবে ফুলের সৌন্দর্য প্রায় সব মানুষকে মুগ্ধ করে; কারণ মানুষ সুন্দরকে পছন্দ করে।
ফুল কি আসলেই সুন্দরের প্রতীক? রবীন্দ্রনাথ যখন তাঁর কবিতায় বলেন, 'গোলাপের দিকে চেয়ে বললুম সুন্দর তাই সুন্দর হলো সে', তখন প্রশ্ন তৈরি হয় ফুল সুন্দর, নাকি মানুষের ভাবনা সুন্দর? আসলে মানুষের ভাবনা সুন্দর বলেই মানুষ সব সময় সুন্দরের অন্বেষণ করে। মানুষ সুন্দরকে উপলব্ধি করতে পারে বলেই প্রকৃতির সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়। ফুল হচ্ছে প্রকৃতির নান্দনিকতার রঙিন রূপ। তাইতো প্রকৃতিকে নানা রঙে সাজিয়ে তোলে। শীত এলে বাহারি রঙের ফুলে সেজে ওঠে বাগান। সৌন্দর্যপিয়াসী মানুষ তখন বাড়ির চারপাশ সাজাতে চায় বাহারি ফুলে, ঘুমুতে চায় ফুলের গন্ধে। শীত এলে প্রকৃতিতে যেন ফুলের উৎসব শুরু হয়। গাঁদা, ডালিয়া, কসমস, চন্দ্রমলি্লকা, ফ্লকস, ভোরগরবী, কর্নফ্লাওয়ার, প্যান্সি, সূর্যমুখী, অ্যান্টিরিন্যাম, নাস্টারশিয়াম, হোলিহক, মর্নিংগ্লোরি, অ্যাজালিয়া, পিটুনিয়া, জারবেরা, অ্যাস্টারসহ নানার রঙের বাহারি ফুলের রূপবৈচিত্র্যে সেজে ওঠে প্রকৃতি। শীতের সময় প্রকৃতির এই সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য ঘুরে আসতে পারেন মিরপুরের বোটানিক্যাল গার্ডেন, ওয়ারীর বলধা গার্ডেন, রমনার মৌসুমি বাগান, কার্জন হল ও লালবাগ কেল্লা থেকে কিংবা নিজেই বাড়ির আঙিনাকে সাজিয়ে নিতে পারেন বাহারি সব ফুলের বাগান করে। যেকোনো ধরনের দোআঁশ মাটির সঙ্গে সমপরিমাণ পচা গোবর অথবা টবপ্রতি ২৫০ গ্রাম প্যাকেটের কম্পোস্ট সার, পাঁচ চামচ টিএসপি সার ও তিন চামচ এমপি সার ভালো করে মিশিয়ে নিতে হবে। এর সঙ্গে এক মুঠো হাড়ের গুঁড়া দিতে পারলে ভালো হয়। ঝরঝরে মাটির সঙ্গে এসব সার ভালো করে মিশিয়ে টব এমনভাবে ভরতে হবে যেন ওপরে এক ইঞ্চি পরিমাণ খালি থাকে। ঠিক মাঝখানে গোড়ার মাটিসহ টবে লাগিয়ে গোড়ার মাটি হালকা চেপে দিতে হবে। চারা লাগিয়ে পানি দিয়ে ভিজিয়ে দিতে হবে। কেবল গাছের গোড়ায় পানি না দিয়ে ঝাঁঝরি দিয়ে ওপর থেকে পানি দিতে হবে। গাছের চারা দুর্বল দেখালে পরপর তিন-চার দিন দুই চামচ ইউরিয়া সার পানিতে গুলে গাছের গোড়ায় দিতে হবে। ফুল ফোটা শুরু হলে ফুলগাছ না ভিজিয়ে গাছের গোড়ায় পানি দিতে হবে। ফুল শুকিয়ে গেলে তা দ্রুত গাছ থেকে কেটে ফেলতে হবে। প্রতি ১০ দিনে একবার গাছের গোড়া নিড়িয়ে দিতে হবে। শীতের সবচেয়ে সুন্দর ফুল হচ্ছে প্যান্সি। সবুজ পাতার ওপর বাহারি রঙের এই ফুলকে অনেকটা প্রজাপতির মতো দেখায়। এ প্রজাতির ফুলে নিচের দিকে দুটি এবং ওপরের দিকে তিনটি পাপড়ি থাকে। এ ফুলের বৈজ্ঞানিক নাম ভাইয়োলা ট্রিকোলার হরটেনিসিস। তবে বাংলাদেশে শীতের জনপ্রিয় ফুল হচ্ছে গাঁদা। রঙের বৈচিত্র্য আর সহজে জন্মায় বলে বাগান তৈরিতে এই ফুলের কদর বেশি। গাঢ় সবুজ চিরল পাতার আগায় হলুদ এই ফুল দেখতে চমৎকার। একসঙ্গে অনেক ফুল ফুটলে পুরো বাগান যেন হুলুদ রঙে সেজে ওঠে। এই ফুলে হালকা গন্ধ আছে। হলুদ ছাড়াও কমলা, খয়েরি ও সাদা রঙের গাঁদা ফুলও দেখা যায়। গাঁদা ফুলের বৈজ্ঞানিক নাম টেগেটস ইরেকটা।
পাভেল রহমান
পাভেল রহমান
No comments