সমঅধিকার এবং প্রত্যাশা by মেজর সুধীর সাহা (অব.)
বাংলাদেশের প্রধান তিন ধর্মীয় সম্প্রদায় মুসলিম, হিন্দু এবং খ্রিস্টানের উত্তরাধিকার আইনে তিন রকম ভিন্ন ব্যবস্থা বিদ্যমান। বৌদ্ধদের জন্য কোনো উত্তরাধিকার আইন বাংলাদেশে নেই বলেই জানি। তারা মূলত হিন্দু সম্প্রদায়ের পথ অনুসরণ করে। মুসলিম উত্তরাধিকার আইনে নারী এবং পুরুষের পৈতৃক সম্পত্তিতে সমান অধিকার নেই।
একজন নারী একজন পুরুষের অর্ধেক সম্পত্তির অধিকারী হয় অর্থাৎ পিতার মৃত্যুর পর পুত্রসন্তান পায় তার সম্পত্তির যেটুকু অংশ, কন্যাসন্তান পায় তার অর্ধেকটা। একজন হিন্দু পিতার মৃত্যুর পর তার কন্যাসন্তান পিতার সম্পত্তিতে কোনো অধিকারই লাভ করে না। অর্থাৎ পুত্র ও কন্যা উভয় সন্তান রেখে যাওয়া হিন্দু সম্প্রদায়ের পিতার পুরো সম্পত্তিই তার পুত্রসন্তান লাভ করে। অন্যদিকে পিতার সম্পত্তিতে কন্যা ও পুত্রসন্তানের সমান অধিকারের আইন বিদ্যমান আছে খ্রিস্টান ব্যক্তিগত আইনে। এক দেশে তিন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের তিন রকম উত্তরাধিকার আইন বিদ্যমান। বাংলাদেশের সামাজিক এবং নারী আন্দোলনে নারীর সমান অধিকারের বিষয়টি একটি শক্তিশালী অধ্যায়। নারীর সমঅধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে এ দেশের নারী সমাজই শুধু নয়, বরং প্রগতিশীল পুরুষ সমাজও সোচ্চার হয়ে শত বছর ধরে আন্দোলন করে যাচ্ছে। নারীর মুক্তি, সমাজে এবং পরিবারে নারীর সহাবস্থান, নারীর জাগরণ ইত্যাদি অনেক কিছুই মানুষের মুখে মুখে। সেমিনার-সিম্পোজিয়াম, মিছিল-মিটিংয়ে নারীর সমঅধিকার বিষয়টি উচ্চস্বরে ধ্বনিত হয় হাজারও কণ্ঠে। রাস্তায় রাস্তায় হাতে হাত রেখে হাজার হাজার নারী-পুরুষ একত্রে সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে মানববন্ধন সৃষ্টি করে নারী আন্দোলনের প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করে। পুরুষের বিরুদ্ধে হাজার হাজার নারীবাদী কণ্ঠ একসঙ্গে সোচ্চার হয়ে উঠে। স্বামী কর্তৃক স্ত্রীর অবমাননা হলে অথবা কোনো স্ত্রী স্বামীর পাশবিক অত্যাচারের শিকার হলে নারীবাদী সংগঠনগুলো ঝাঁপিয়ে পড়ে ওই অবহেলিত স্ত্রীর সাহায্যে।
গণমাধ্যম থেকে শুরু করে এনজিও প্রতিষ্ঠানগুলো নারীদের অধিকার নিয়ে কাজ করছে বাংলাদেশে বহু বছর ধরে। ১৬ কোটি লোকসংখ্যার দেশ বাংলাদেশে অর্ধেকই নারী। সেই অর্ধেক নারী সমাজকে উপেক্ষা করে বাংলাদেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়_ এমন সত্য অনুধাবন করে নারী-পুরুষ সবাই নারী উন্নয়নের স্বার্থে নারী অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে সমানভাবে জড়িত। ফলে বাংলাদেশের উন্নয়ন এবং নারী সমাজের উন্নয়ন সমার্থক শব্দ হিসেবে ধরা দিয়েছে সচেতন শ্রেণীর কাছে।
নারীর প্রতি এত খেয়াল দেওয়ার পরও, নারী আন্দোলনে নারীর পাশাপাশি পুরুষের সাহায্য বিদ্যমানু থাকার পরও, নারীর শিক্ষা বিস্তারের পরও এবং নারী সমাজের প্রতিটি স্তরে সমানভাবে আবির্ভাব হওয়ার পরও বাংলাদেশে নারীর সমঅধিকার প্রতিষ্ঠা করা এখনও সম্ভব হয়নি। নারীর সমঅধিকারের জন্য আজও নারীকে সংগ্রাম করতে হচ্ছে, পথে নামতে হচ্ছে। যেখানে বিংশ শতাব্দীতে বিশ্বের অধিকাংশ দেশেই নারীর সমঅধিকারকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে উত্তরাধিকার আইনে, সেখানে শুধু বাংলাদেশের মতো কিছু দেশে এখন পর্যন্ত উত্তরাধিকার আইনে নারীর সমঅধিকার প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয়নি। বাংলাদেশে একটি কন্যাসন্তান জন্ম লাভের সঙ্গে সঙ্গে সেই কন্যাসন্তান অসম পরিস্থিতির শিকার হয়। পরিবার থেকেই শুরু হয় এই বৈষম্য। অন্যদিকে নির্দিষ্ট করে বলতে গেলে পিতা-মাতা থেকেই শুরু হয় বৈষম্য। জীবদ্দশায় পিতা-মাতা এই বৈষম্য পালনে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে। আর তাই এ বৈষম্যের বিষ সময়ের ব্যবধানে আরও শক্তিশালী হয়ে দেখা দেয় পিতার মৃত্যুর পর, যখন তার রেখে যাওয়া সম্পত্তি থেকে কন্যাকে বাদ বা অর্ধেক প্রদানের বিধান মেনে নিতে হয় সমাজকে।
নারী-পুরুষকে সমান চোখে দেখতে হলে এবং সমাজে নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হলে অবশ্যই হিন্দু এবং মুসলিম উত্তরাধিকার আইনে পরিবর্তন আনতে হবে। মুখে শুধু নারীর অধিকার মেনে নেওয়া নয়, বরং আইনে যে বৈষম্য বিদ্যমান তা দূর করতে হবে। নারীকে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করার একটি বিকল্প উপায় তার পিতার সম্পত্তিতে সমান অধিকার প্রতিষ্ঠা করা। পুরুষকে তাতে ঠকানো হবে না, বরং পুরুষের প্রতিও তাতে ন্যায়বিচার করা হবে। পিতার প্রতি সব সন্তানের সমদায়িত্ব এবং সমান অধিকার প্রতিষ্ঠাই সত্য ও সুন্দর আইনের বহিঃপ্রকাশ হবে। এতে সমাজ থেকে একটি বড় বৈষম্য দূর হওয়ার পথ খুঁজে পাবে। একটি বৈষম্য অন্য বৈষম্যের জন্ম দেয়। তাই সমাজের বৈষম্য দূর করতে উত্তরাধিকার আইনের পরিবর্তন প্রয়োজন। মুললিম এবং হিন্দু উত্তরাধিকার আইন পরিবর্তন করে সেখানে খ্রিস্টান উত্তরাধিকার আইনের মতো পুরুষ এবং নারীর সমঅধিকারকে প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন। নারীর মুক্তি, নারীর সমঅধিকার, নারীর উন্নয়ন, নারীর সমমর্যাদা প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে আমাদের সর্বাগ্রে উত্তরাধিকার আইনে নারীর সমঅধিকার মেনে নিতে হবে। সংসার থেকে, পরিবার থেকে, পিতা-মাতা থেকে শুরু করতে হবে নারীর সমঅধিকারের উৎস। নারী যদি তার পরিবারে, তার পিতার কাছেই সমঅধিকার থেকে বঞ্চিত হয়, তবে সমাজের অন্যান্য ক্ষেত্রে তার সমঅধিকার চাওয়ার যুক্তি অর্থহীন। একদিকে নারীর সমঅধিকারের জন্য আন্দোলন এবং অন্যদিকে উত্তরাধিকার আইনে নারীর অধিকারে বৈষম্য স্বীকার করে নেওয়া সম্পূর্ণভাবেই বিপরীতমুখী কার্যকরণ এবং কিছুতেই তা সমর্থন করা যায় না। নারীর সমঅধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হলে উত্তরাধিকার আইনে পুরুষের সমান অধিকার নারীকে প্রদান করে আইনের সংশোধন করতে হবে সর্বাগ্রে। উত্তরাধিকার আইনে নারীর সমঅধিকার নিশ্চিত করেই কেবল আমরা সমাজে নারীর ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারি। নারী-পুরুষকে বৈষম্যের রশিতে বিভক্ত নয়, বরং সমান অধিকারে সিক্ত করার জন্যই উত্তরাধিকার আইনে পরিবর্তন আনা জরুরি।
গণমাধ্যম থেকে শুরু করে এনজিও প্রতিষ্ঠানগুলো নারীদের অধিকার নিয়ে কাজ করছে বাংলাদেশে বহু বছর ধরে। ১৬ কোটি লোকসংখ্যার দেশ বাংলাদেশে অর্ধেকই নারী। সেই অর্ধেক নারী সমাজকে উপেক্ষা করে বাংলাদেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়_ এমন সত্য অনুধাবন করে নারী-পুরুষ সবাই নারী উন্নয়নের স্বার্থে নারী অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে সমানভাবে জড়িত। ফলে বাংলাদেশের উন্নয়ন এবং নারী সমাজের উন্নয়ন সমার্থক শব্দ হিসেবে ধরা দিয়েছে সচেতন শ্রেণীর কাছে।
নারীর প্রতি এত খেয়াল দেওয়ার পরও, নারী আন্দোলনে নারীর পাশাপাশি পুরুষের সাহায্য বিদ্যমানু থাকার পরও, নারীর শিক্ষা বিস্তারের পরও এবং নারী সমাজের প্রতিটি স্তরে সমানভাবে আবির্ভাব হওয়ার পরও বাংলাদেশে নারীর সমঅধিকার প্রতিষ্ঠা করা এখনও সম্ভব হয়নি। নারীর সমঅধিকারের জন্য আজও নারীকে সংগ্রাম করতে হচ্ছে, পথে নামতে হচ্ছে। যেখানে বিংশ শতাব্দীতে বিশ্বের অধিকাংশ দেশেই নারীর সমঅধিকারকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে উত্তরাধিকার আইনে, সেখানে শুধু বাংলাদেশের মতো কিছু দেশে এখন পর্যন্ত উত্তরাধিকার আইনে নারীর সমঅধিকার প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয়নি। বাংলাদেশে একটি কন্যাসন্তান জন্ম লাভের সঙ্গে সঙ্গে সেই কন্যাসন্তান অসম পরিস্থিতির শিকার হয়। পরিবার থেকেই শুরু হয় এই বৈষম্য। অন্যদিকে নির্দিষ্ট করে বলতে গেলে পিতা-মাতা থেকেই শুরু হয় বৈষম্য। জীবদ্দশায় পিতা-মাতা এই বৈষম্য পালনে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে। আর তাই এ বৈষম্যের বিষ সময়ের ব্যবধানে আরও শক্তিশালী হয়ে দেখা দেয় পিতার মৃত্যুর পর, যখন তার রেখে যাওয়া সম্পত্তি থেকে কন্যাকে বাদ বা অর্ধেক প্রদানের বিধান মেনে নিতে হয় সমাজকে।
নারী-পুরুষকে সমান চোখে দেখতে হলে এবং সমাজে নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হলে অবশ্যই হিন্দু এবং মুসলিম উত্তরাধিকার আইনে পরিবর্তন আনতে হবে। মুখে শুধু নারীর অধিকার মেনে নেওয়া নয়, বরং আইনে যে বৈষম্য বিদ্যমান তা দূর করতে হবে। নারীকে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করার একটি বিকল্প উপায় তার পিতার সম্পত্তিতে সমান অধিকার প্রতিষ্ঠা করা। পুরুষকে তাতে ঠকানো হবে না, বরং পুরুষের প্রতিও তাতে ন্যায়বিচার করা হবে। পিতার প্রতি সব সন্তানের সমদায়িত্ব এবং সমান অধিকার প্রতিষ্ঠাই সত্য ও সুন্দর আইনের বহিঃপ্রকাশ হবে। এতে সমাজ থেকে একটি বড় বৈষম্য দূর হওয়ার পথ খুঁজে পাবে। একটি বৈষম্য অন্য বৈষম্যের জন্ম দেয়। তাই সমাজের বৈষম্য দূর করতে উত্তরাধিকার আইনের পরিবর্তন প্রয়োজন। মুললিম এবং হিন্দু উত্তরাধিকার আইন পরিবর্তন করে সেখানে খ্রিস্টান উত্তরাধিকার আইনের মতো পুরুষ এবং নারীর সমঅধিকারকে প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন। নারীর মুক্তি, নারীর সমঅধিকার, নারীর উন্নয়ন, নারীর সমমর্যাদা প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে আমাদের সর্বাগ্রে উত্তরাধিকার আইনে নারীর সমঅধিকার মেনে নিতে হবে। সংসার থেকে, পরিবার থেকে, পিতা-মাতা থেকে শুরু করতে হবে নারীর সমঅধিকারের উৎস। নারী যদি তার পরিবারে, তার পিতার কাছেই সমঅধিকার থেকে বঞ্চিত হয়, তবে সমাজের অন্যান্য ক্ষেত্রে তার সমঅধিকার চাওয়ার যুক্তি অর্থহীন। একদিকে নারীর সমঅধিকারের জন্য আন্দোলন এবং অন্যদিকে উত্তরাধিকার আইনে নারীর অধিকারে বৈষম্য স্বীকার করে নেওয়া সম্পূর্ণভাবেই বিপরীতমুখী কার্যকরণ এবং কিছুতেই তা সমর্থন করা যায় না। নারীর সমঅধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হলে উত্তরাধিকার আইনে পুরুষের সমান অধিকার নারীকে প্রদান করে আইনের সংশোধন করতে হবে সর্বাগ্রে। উত্তরাধিকার আইনে নারীর সমঅধিকার নিশ্চিত করেই কেবল আমরা সমাজে নারীর ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারি। নারী-পুরুষকে বৈষম্যের রশিতে বিভক্ত নয়, বরং সমান অধিকারে সিক্ত করার জন্যই উত্তরাধিকার আইনে পরিবর্তন আনা জরুরি।
No comments