রাজশাহীতে ব্যাংকিং সুপারভিশন কার্যক্রমের ওপর ড. আতিউর রহমানের বক্তব্য বক্তব্যের অংশ বিশেষ প্রকাশিত হলো
ব্যাংক সুপারভিশন কার্যক্রমের ওপর বাংলাদেশ ব্যাংকের উদ্যোগে শাহ মখদুমের স্মৃতিধন্য পুণ্যভূমি রাজশাহী শহরে আয়োজিত (অদ্য ১৫ জুলাই ২০১২) সভায় উপস্থিত সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি। ব্যাংকিং খাতের নজরদারিতে কৌশলগত পরিবর্তন আনতে সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংক নানামুখী কার্যক্রম গ্রহণ করেছে।
ঝুঁকিকে মুখ্য বিবেচনায় নিয়ে নতুন নতুন পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে আমরা ব্যাংকিং খাতের সার্বিক অবস্থা তদারকি করছি। অফসাইট ও অনসাইট উভয় পরিদর্শনের ক্ষেত্রে নজরদারিকে আরো উন্নত করার জন্য আমরা নিরন্তর কাজ করছি। এরই অংশ হিসেবে মাঠপর্যায়ের সুপারভাইজারদের কাছ থেকে বাস্তব অভিজ্ঞতা জানতে এবং তার আলোকে ব্যাংকিং সুপারভিশনকে আরো শক্তিশালী করতে আমরা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নিয়ে জাতীয় এবং আঞ্চলিক পর্যায়ে টাউন হল সভা করছি। আপনারা জানেন, গত বছর ১৭ সেপ্টেম্বর প্রধান কার্যালয়ে সুপারভিশন সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর সমন্বিত উদ্যোগে ঢাকায় সুপারভিশন বিষয়ক প্রথম টাউন হল সভাটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল। বাংলাদেশ ব্যাংকের আঞ্চলিক অফিসগুলোতেও সুপারভিশন সংশ্লিষ্ট সবাইকে উদ্বুদ্ধ করার জন্য চট্টগ্রাম ও সিলেট এলাকার সুপারভিশন কর্মকর্তাদের নিয়ে চলতি বছরের ১৮ মার্চ চট্টগ্রামে দ্বিতীয় টাউন হল সভা অনুষ্ঠিত হয়। পরবর্তীতে ১২ এপ্রিল বরিশালে ব্যাংক সুপারভিশন কার্যক্রমের ওপর আঞ্চলিক সভার আয়োজন করা হয়। রাজশাহী, বগুড়া ও রংপুর এলাকার সুপারভিশন কর্মকর্তাদের নিয়ে আয়োজিত আজকের টাউন হল সভার মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে ‘Stronger Branches, Stronger Banks: Controlling Risks and Enhancing Returns at the Branch Level’ অর্থাৎ অধিকতর শক্তিশালী শাখা মানেই অধিকতর শক্তিশালী ব্যাংক; শাখা পর্যায়ে ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমেই ত্বরান্বিত হয় ব্যাংকের মুনাফা।
সভাগুলোর মূল লক্ষ্য হচ্ছে ব্যাংকিং সুপারভিশনের বিষয়গুলোকে আরো সমন্বিত করা। আমরা একটি সমন্বিত সুপারভিশন কাঠামো (Intregrated Supervisory Infrastructure) গড়ে তুলতে চাই। এর আওতায় প্রুডেন্সিয়াল রেগুলেশনগুলোকে আন্তর্জাতিক সর্বোত্তম রীতি-পদ্ধতির সঙ্গে সামঞ্জস্য বিধান, আইনগত কাঠামোকে আরো শক্তিশালী করা এবং অনসাইট ও অফসাইট সুপারভিশনের মধ্যে আন্তঃসমন্বয় জোরদার করতে চাই। ব্যাংকের ঋণ ও অন্যান্য ব্যবসায়িক কর্মকা-ের সঙ্গে জড়িত প্রাতিষ্ঠানিক ও পদ্ধতিগত ঝুঁকি এবং ব্যাংকগুলোর প্রাতিষ্ঠানিক সুশাসন ও অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়া কিভাবে এসব ঝুঁকি মোকাবেলা করছে তার ওপর বিশেষ গুরুত্ব¡ারোপ করতে চাই।
বাংলাদেশে আর্থিক খাতের প্রসার ও পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে গোটা জাতির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়ন সাধিত হচ্ছে। যেখানে ব্যাংকগুলোর শাখা রয়েছে, সেখানকার জনসাধারণ এই পরিবর্তনের প্রভাব অনুভব করতে পারছে। বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিবিড় পর্যবেক্ষণে আমাদের দেশে ৪৭টি তফসিলী ব্যাংক ও ৩১টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। ব্যাংকগুলো প্রায় ৪,৫০,০০০ কোটি টাকা আমানত গ্রহণের বিপরীতে ৩,৫০,০০০ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে। আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো সামষ্টিকভাবে ব্যাংকের মতো বড় না হলেও তারা লিজ ফাইন্যান্সের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিশেষ বিশেষ ব্যাংকিং সেবা দিয়ে যাচ্ছে, যা ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের জন্য সুবিধাজনক। এছাড়া, আর্থিক সেবা প্রদানকারী অনেক অ-ব্যাংক প্রতিষ্ঠান বিদ্যমান রয়েছে যা বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত নয়। বাংলাদেশে এসব প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বেড়েই চলেছে। যেমন-ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানগুলো (গঋওং) গ্রামের স্বল্প আয়ের মানুষকে বিশেষ করে নারীদের ঋণের আওতায় এনেছে। ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ ব্রোকার এবং ডিলারদের মধ্যে ডেট এবং ইক্যুইটি সিকিউরিটিজের লেনদেনের কাজ করছে। মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো নতুন নতুন ডেট এবং ইক্যুইটি সিকিউরিটিজকে পুঁজিবাজারে আনতে সাহায্য করছে।
গত পাঁচ বছর ধরে আমরা বিশ্বে আর্থিক বিপর্যয়ের সংক্রমণ বেশি বেশি পর্যবেক্ষণ করছি। এটি এমন একটি অবস্থা যেখানে একটি বৃহৎ ব্যাংকের সমস্যা অন্যান্য ব্যাংককে সংক্রমিত করে। অর্থাৎ সামগ্রিক আর্থিক খাতের একটি অংশের সমস্যা যখন গোটা ব্যাংকিং খাতকে সংক্রমিত করে তখন সেটিকে আর্থিক বিপর্যয়ের সংক্রমণ বলা যায়। ২০০৮ সালে সিকিউরিটিজ ফার্ম খবযসধহ ইৎড়ঃযবৎং-এর বিপর্যয় বেশ কয়েকটি ব্যাংককে আর্থিকভাবে পঙ্গু করে ফেলেছিল, যারা উক্ত প্রতিষ্ঠানকে বিরাট অঙ্কের ঋণ প্রদান করেছিল। এটি শুধু আমেরিকাতে নয় বিশ্বের বেশ কিছু বড় ব্যাংকের মধ্যে পারস্পরিক ঋণ আদান-প্রদান বন্ধ করে দিয়েছিল।
আপনারা ইতোমধ্যে জেনেছেন, বাংলাদেশ ব্যাংকে ‘ফাইন্যান্সিয়াল স্ট্যাবিলিটি ডিপার্টমেন্ট’ নামে একটি নতুন বিভাগ চালু করা হয়েছে। এ বিভাগটির অন্যতম প্রধান দায়িত্বগুলোর মধ্যে রয়েছে দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার বিষয়ে গবেষণা করা, অর্থনৈতিক ঝুঁকি বিশ্লেষণের মাধ্যমে পূর্বাভাস দেয়া আর্থিক খাতের স্থিতিশীলতা বজায় রাখার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় নীতিমালা সুপারিশ করা। এই বিভাগ শুধু ব্যাংকিং খাত নয়, গোটা আর্থিক খাতের সম্ভাব্য চাপ বা ঝুঁকি প্রাথমিক অবস্থাতেই চিহ্নিত করতে সক্ষম হবে। এটি ম্যাক্রোপ্রুডেন্সিয়াল সুপারভিশনের ক্ষেত্রে নতুন দিগন্তের সৃষ্টি করবে।
ইতোমধ্যে আমরা আন্তর্জাতিক সর্বোত্তম চর্চা (best practices) এবং ব্যাসেল কমিটির সুপারিশের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সুপারভিশনের বিধিগত কাঠামোতে পরিবর্তন এনেছি। ঋণ শ্রেণীকরণ ও প্রভিশনিংয়ের বিদ্যমান ব্যবস্থাকে আন্তর্জাতিকমানের সঙ্গে আরো ঘনিষ্ঠ সঙ্গতিতে আনার জন্য সম্প্রতি আমরা এ সংক্রান্ত মাস্টার সার্কুলার জারি করেছি। নতুন নিয়মানুসারে, দুই মাসের অধিক সময়ের মেয়াদোত্তীর্ণ ঋণগুলো ‘এসএমএ’ এবং ৩-৬ মাসের মেয়াদোত্তীর্ণ ঋণগুলো ‘নিম্নমান’ হিসেবে শ্রেণীকরণ করতে হবে।
বিশ্বজুড়ে ব্যাংকিং খাতের চেহারা দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে। সে কারণে ব্যাংক ব্যবস্থার নজরদারির ভূমিকায় আমাদেরও পরিবর্তন আনতে হবে। নতুন প্রেক্ষাপটে সনাতনী ধারনা ও পদ্ধতিগত প্রক্রিয়াগুলো যথেষ্ট নয়। অন্যান্য দেশের মতো আমাদের ব্যাংকগুলোতেও বহু ঝুঁকি ও দুর্বলতা রয়েছে। এই ঝুঁকি ও দুর্বলতাগুলো চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা আমাদের গ্রহণ করতে হবে। কার্যকর ব্যাংক সুপারভিশনের আন্তর্জাতিক সর্বোত্তম চর্চা যেন বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতে পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা যায় সে বিষয়ে আমরা নজর দিচ্ছি। আইনি সীমাবদ্ধতা দূর করতে আইনগত সংস্কার কার্যক্রমগুলো অব্যাহত রয়েছে।
বিশ্ব বিপর্যয়-উত্তর প্রেক্ষাপটে পৎরংরং ঢ়ৎবঢ়ধৎবফহবংং-এর প্রতি বেশি নজর দেয়া হচ্ছে। যেন এই সমস্যা দেখা দেয়ার আগেই তা রোধ করা যায় অথবা সমস্যাজনিত ক্ষতি হলেও তা যেন নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। আন্তর্জাতিকভাবে এ বিষয়ে যে সমস্ত পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে তার প্রতিও আমরা দৃষ্টি রাখছি। আর্থিক খাতকে ঝুঁকিমুক্ত রাখতে আর্থিক খাতব্যাপী অফসাইট ও অনসাইট উভয় ধরনের সুপারভিশনেরই বর্ধিত দায়িত্ব আমাদের। অর্থনীতির অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যে আমরা গভীরতর ও প্রশস্ততর আর্থিক সেবাভুক্তির বা ফাইন্যান্সিয়াল ইনক্লুশনের যেসব নতুন উদ্যোগ নিয়েছি সেগুলোর সঙ্গে জড়িত ঝুঁকির যথাযথ তদারকি ও নিয়ন্ত্রণও গুরুত্বপূর্ণ। সামগ্রিক প্রেক্ষাপটে ব্যাংক ব্যবস্থার ওপর জনসাধারণের আস্থা সুদৃঢ় করতে আমরা সুপারভিশন কার্যক্রমের মানোন্নয়নের উদ্যোগ নিয়েছি।
আপনারা জানেন, টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির মূল ভিত্তি হচ্ছে একটি শক্তিশালী এবং দৃঢ় ব্যাংকিং ব্যবস্থা। ব্যাংকগুলো তাদের গ্রাহক, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা, বৃহৎ কর্পোরেট ফার্ম এবং সরকারকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিবিধ সেবা দিয়ে থাকে। বাংলাদেশ ব্যাংক দক্ষতার সঙ্গে ব্যাংকের এসব কার্যাবলী নজরদারি করে যাচ্ছে। আমাদের এই নজরদারির মূল লক্ষ্য হচ্ছে ব্যাংকিং খাতে জনগণের আস্থা রক্ষা, আমানতকারীদের অর্থের নিরাপত্তা প্রদান, ব্যাংকের সুস্থতা ও শৃঙ্খলা বৃদ্ধি করা; গ্রাহকদের সাশ্রয়ী মূল্যে উন্নত ও আধুনিক আর্থিক সেবা নিশ্চিত করা এবং ব্যাংকগুলো কর্তৃক ব্যাংকিং আইন ও নীতিমালার প্রতিপালন নিশ্চিত করা। সম্প্রতি স্থানীয় ও বৈদেশিক মুদ্রায় অভ্যন্তরীণ বিল ক্রয়ের (আইবিপি) ক্ষেত্রে আমাদের বৈদেশিক মুদ্রা পরিদর্শন ও ভিজিল্যান্স বিভাগ ব্যাংকগুলোতে ব্যাপক অনিয়ম খুঁজে পেয়েছে। শুধুমাত্র ডকুমেন্টস দেখে অন্য ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ বিল ক্রয় করে কোন কোন ব্যাংককে ঝুঁকিতে পড়তে হয়েছে। এ ধরনের বিল ক্রয় সংক্রান্ত কার্যাদি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের অগোচরেই ব্যাংকের শাখা পর্যায়ে সংঘটিত হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে প্রধান কার্যালয়ের পূর্বানুমোদন নেয়া এবং ক্রয়-বিক্রয়কৃত মালামালের প্রকৃত সরবরাহ যাচাই ছাড়া স্বীকৃত বিলের মূল্য পরিশোধে বিধিনিষেধ আরোপ করে গত সপ্তাহে আমরা একটি সার্কুলারও জারি করেছি। ব্যাংক পরিদর্শনের সময় সুপারভাইজারগণ এসব বিলের স্বীকৃতি প্রদান ও মূল্য পরিশোধের বিষয়ে তীক্ষè নজর রাখবেন। একইসঙ্গে, ব্যাংকগুলোকেও সতর্ক করছি, এখন থেকে আর ভুতুড়ে বিল কেনার দুঃসাহস দেখাবেন না। এ ধরনের বিলে স্বীকৃতি প্রদানের সময় কোন তাড়াহুড়ো করবেন না। ডকুমেন্টস হাতে পাওয়ার পর তা যাচাই-বাছাই করবেন।
বিশ্ব মন্দা-উত্তর পরিস্থিতিতেও বাংলাদেশের আর্থিক খাত ভালো অবস্থানে রয়েছে। গত এক দশকে যেখানে গড় জিডিপি প্রবৃদ্ধি ছিল ৫ শতাংশ তা এখন বেড়ে সাড়ে ৬ শতাংশের কাছাকাছি এসে দাঁড়িয়েছে। গত এক দশকে আমাদের নমিন্যাল জাতীয় আয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে তিনগুণেরও বেশি। মাথাপিছু আয় বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি। তাছাড়া, সামষ্টিক অর্থনীতির মুখ্য সূচকগুলো যেমন আমদানি-রফতানি, রেমিট্যান্স প্রবাহ, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ব্যাপক পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে। এই সময়ে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়েছে সাড়ে সাতগুণ এবং রেমিট্যান্স বেড়েছে সাড়ে চারগুণেরও বেশি। গত অর্থবছরে রেকর্ড কাক্সিক্ষত প্রায় তেরো বিলিয়ন (১২.৮৫ বিলিয়ন) ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। গত অর্থবছরে আমাদের রফতানি আয় হয়েছে প্রায় সাড়ে ২৪ বিলিয়ন ডলার। আমদানি ব্যয়ের উচ্চ প্রবৃদ্ধি সত্ত্বেও এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নে (আকু) পেমেন্ট সেটেলমেন্টের পরবর্তী সময়গুলো বাদ দিলে গত অর্থবছরের বাকি সময় রিজার্ভ ১০ বিলিয়ন ডলারের ওপরেই থেকেছে। বড় স্বস্তির বিষয়, অর্থবছর শেষে মাসভিত্তিক পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট মূল্যস্ফীতি ৮.৫৬ শতাংশে নেমে এসেছে। জিডিপিতে ব্যাংকিং খাতের অবদানও ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। ফলে দেশের অর্থনীতির আকার, ব্যাংকিং খাতের প্রতিযোগিতা বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তা এবং অন্য বিষয়াবলীর বিবেচনায় সম্প্রতি আরো নতুন কয়েকটি ব্যাংক অনুমোদন দেয়া হয়েছে। শীঘ্রই এসব ব্যাংক তাদের কাজ শুরু করবে। তাই আপনাদের কাজের পরিধিও বৃদ্ধি পাবে। আশার কথা যে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শক্ত নজরদারির কারণে মূলধন পর্যাপ্ততা সংক্রান্ত ব্যাসেল-২ নীতিমালার পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন হয়েছে। নিকট ভবিষ্যতে ব্যাসেল-৩ বাস্তবাস্তনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাও গ্রহণ করা হয়েছে। ব্যাংকিং খাতে শ্রেণীকৃত ঋণের হার প্রায় সাড়ে ৬ শতাংশে এবং নিট খেলাপী ঋণের হার ১ শতাংশে নেমে এসেছে। পরিশেষে, সুন্দর ও সুচারুরূপে আজকের অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য আয়োজক টিমকে সাধুবাদ জানাই। এখানে ব্যাংকিং খাত সম্পর্কে দীর্ঘ অভিজ্ঞতাসম্পন্ন আমাদের সিনিয়র কনসালটেন্ট ও ব্যাংক সুপারভিশন এ্যাডভাইজার আছেন। উপস্থিত রয়েছেন ব্যাংক সুপারভিশনে দক্ষতাসম্পন্ন উর্ধতন কর্মকর্তাগণ। ভবিষ্যতে সুপারভিশনকে কিভাবে আরো ফলপ্রসূ করা যায়, আর্থিক খাতে স্থিতিশীলতা বজায় রাখা যায়-তাঁদের অভিজ্ঞতালব্ধ আলোচনা থেকে আপনারা তা জানতে পারবেন বলে আমি আশা রাখি। সুপারভিশনের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালনে আপনাদের আন্তরিকতা ও পেশাদারিত্ব কামনা করে এবং আজকের এই আঞ্চলিক টাউন হল সভাটি সফল ও উপভোগ্য হোক এই প্রত্যাশা জানিয়ে এখানেই শেষ করছি। সবাই ভাল থাকুন। ধন্যবাদ।
সভাগুলোর মূল লক্ষ্য হচ্ছে ব্যাংকিং সুপারভিশনের বিষয়গুলোকে আরো সমন্বিত করা। আমরা একটি সমন্বিত সুপারভিশন কাঠামো (Intregrated Supervisory Infrastructure) গড়ে তুলতে চাই। এর আওতায় প্রুডেন্সিয়াল রেগুলেশনগুলোকে আন্তর্জাতিক সর্বোত্তম রীতি-পদ্ধতির সঙ্গে সামঞ্জস্য বিধান, আইনগত কাঠামোকে আরো শক্তিশালী করা এবং অনসাইট ও অফসাইট সুপারভিশনের মধ্যে আন্তঃসমন্বয় জোরদার করতে চাই। ব্যাংকের ঋণ ও অন্যান্য ব্যবসায়িক কর্মকা-ের সঙ্গে জড়িত প্রাতিষ্ঠানিক ও পদ্ধতিগত ঝুঁকি এবং ব্যাংকগুলোর প্রাতিষ্ঠানিক সুশাসন ও অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়া কিভাবে এসব ঝুঁকি মোকাবেলা করছে তার ওপর বিশেষ গুরুত্ব¡ারোপ করতে চাই।
বাংলাদেশে আর্থিক খাতের প্রসার ও পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে গোটা জাতির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়ন সাধিত হচ্ছে। যেখানে ব্যাংকগুলোর শাখা রয়েছে, সেখানকার জনসাধারণ এই পরিবর্তনের প্রভাব অনুভব করতে পারছে। বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিবিড় পর্যবেক্ষণে আমাদের দেশে ৪৭টি তফসিলী ব্যাংক ও ৩১টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। ব্যাংকগুলো প্রায় ৪,৫০,০০০ কোটি টাকা আমানত গ্রহণের বিপরীতে ৩,৫০,০০০ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে। আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো সামষ্টিকভাবে ব্যাংকের মতো বড় না হলেও তারা লিজ ফাইন্যান্সের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিশেষ বিশেষ ব্যাংকিং সেবা দিয়ে যাচ্ছে, যা ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের জন্য সুবিধাজনক। এছাড়া, আর্থিক সেবা প্রদানকারী অনেক অ-ব্যাংক প্রতিষ্ঠান বিদ্যমান রয়েছে যা বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত নয়। বাংলাদেশে এসব প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বেড়েই চলেছে। যেমন-ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানগুলো (গঋওং) গ্রামের স্বল্প আয়ের মানুষকে বিশেষ করে নারীদের ঋণের আওতায় এনেছে। ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ ব্রোকার এবং ডিলারদের মধ্যে ডেট এবং ইক্যুইটি সিকিউরিটিজের লেনদেনের কাজ করছে। মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো নতুন নতুন ডেট এবং ইক্যুইটি সিকিউরিটিজকে পুঁজিবাজারে আনতে সাহায্য করছে।
গত পাঁচ বছর ধরে আমরা বিশ্বে আর্থিক বিপর্যয়ের সংক্রমণ বেশি বেশি পর্যবেক্ষণ করছি। এটি এমন একটি অবস্থা যেখানে একটি বৃহৎ ব্যাংকের সমস্যা অন্যান্য ব্যাংককে সংক্রমিত করে। অর্থাৎ সামগ্রিক আর্থিক খাতের একটি অংশের সমস্যা যখন গোটা ব্যাংকিং খাতকে সংক্রমিত করে তখন সেটিকে আর্থিক বিপর্যয়ের সংক্রমণ বলা যায়। ২০০৮ সালে সিকিউরিটিজ ফার্ম খবযসধহ ইৎড়ঃযবৎং-এর বিপর্যয় বেশ কয়েকটি ব্যাংককে আর্থিকভাবে পঙ্গু করে ফেলেছিল, যারা উক্ত প্রতিষ্ঠানকে বিরাট অঙ্কের ঋণ প্রদান করেছিল। এটি শুধু আমেরিকাতে নয় বিশ্বের বেশ কিছু বড় ব্যাংকের মধ্যে পারস্পরিক ঋণ আদান-প্রদান বন্ধ করে দিয়েছিল।
আপনারা ইতোমধ্যে জেনেছেন, বাংলাদেশ ব্যাংকে ‘ফাইন্যান্সিয়াল স্ট্যাবিলিটি ডিপার্টমেন্ট’ নামে একটি নতুন বিভাগ চালু করা হয়েছে। এ বিভাগটির অন্যতম প্রধান দায়িত্বগুলোর মধ্যে রয়েছে দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার বিষয়ে গবেষণা করা, অর্থনৈতিক ঝুঁকি বিশ্লেষণের মাধ্যমে পূর্বাভাস দেয়া আর্থিক খাতের স্থিতিশীলতা বজায় রাখার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় নীতিমালা সুপারিশ করা। এই বিভাগ শুধু ব্যাংকিং খাত নয়, গোটা আর্থিক খাতের সম্ভাব্য চাপ বা ঝুঁকি প্রাথমিক অবস্থাতেই চিহ্নিত করতে সক্ষম হবে। এটি ম্যাক্রোপ্রুডেন্সিয়াল সুপারভিশনের ক্ষেত্রে নতুন দিগন্তের সৃষ্টি করবে।
ইতোমধ্যে আমরা আন্তর্জাতিক সর্বোত্তম চর্চা (best practices) এবং ব্যাসেল কমিটির সুপারিশের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সুপারভিশনের বিধিগত কাঠামোতে পরিবর্তন এনেছি। ঋণ শ্রেণীকরণ ও প্রভিশনিংয়ের বিদ্যমান ব্যবস্থাকে আন্তর্জাতিকমানের সঙ্গে আরো ঘনিষ্ঠ সঙ্গতিতে আনার জন্য সম্প্রতি আমরা এ সংক্রান্ত মাস্টার সার্কুলার জারি করেছি। নতুন নিয়মানুসারে, দুই মাসের অধিক সময়ের মেয়াদোত্তীর্ণ ঋণগুলো ‘এসএমএ’ এবং ৩-৬ মাসের মেয়াদোত্তীর্ণ ঋণগুলো ‘নিম্নমান’ হিসেবে শ্রেণীকরণ করতে হবে।
বিশ্বজুড়ে ব্যাংকিং খাতের চেহারা দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে। সে কারণে ব্যাংক ব্যবস্থার নজরদারির ভূমিকায় আমাদেরও পরিবর্তন আনতে হবে। নতুন প্রেক্ষাপটে সনাতনী ধারনা ও পদ্ধতিগত প্রক্রিয়াগুলো যথেষ্ট নয়। অন্যান্য দেশের মতো আমাদের ব্যাংকগুলোতেও বহু ঝুঁকি ও দুর্বলতা রয়েছে। এই ঝুঁকি ও দুর্বলতাগুলো চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা আমাদের গ্রহণ করতে হবে। কার্যকর ব্যাংক সুপারভিশনের আন্তর্জাতিক সর্বোত্তম চর্চা যেন বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতে পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা যায় সে বিষয়ে আমরা নজর দিচ্ছি। আইনি সীমাবদ্ধতা দূর করতে আইনগত সংস্কার কার্যক্রমগুলো অব্যাহত রয়েছে।
বিশ্ব বিপর্যয়-উত্তর প্রেক্ষাপটে পৎরংরং ঢ়ৎবঢ়ধৎবফহবংং-এর প্রতি বেশি নজর দেয়া হচ্ছে। যেন এই সমস্যা দেখা দেয়ার আগেই তা রোধ করা যায় অথবা সমস্যাজনিত ক্ষতি হলেও তা যেন নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। আন্তর্জাতিকভাবে এ বিষয়ে যে সমস্ত পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে তার প্রতিও আমরা দৃষ্টি রাখছি। আর্থিক খাতকে ঝুঁকিমুক্ত রাখতে আর্থিক খাতব্যাপী অফসাইট ও অনসাইট উভয় ধরনের সুপারভিশনেরই বর্ধিত দায়িত্ব আমাদের। অর্থনীতির অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যে আমরা গভীরতর ও প্রশস্ততর আর্থিক সেবাভুক্তির বা ফাইন্যান্সিয়াল ইনক্লুশনের যেসব নতুন উদ্যোগ নিয়েছি সেগুলোর সঙ্গে জড়িত ঝুঁকির যথাযথ তদারকি ও নিয়ন্ত্রণও গুরুত্বপূর্ণ। সামগ্রিক প্রেক্ষাপটে ব্যাংক ব্যবস্থার ওপর জনসাধারণের আস্থা সুদৃঢ় করতে আমরা সুপারভিশন কার্যক্রমের মানোন্নয়নের উদ্যোগ নিয়েছি।
আপনারা জানেন, টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির মূল ভিত্তি হচ্ছে একটি শক্তিশালী এবং দৃঢ় ব্যাংকিং ব্যবস্থা। ব্যাংকগুলো তাদের গ্রাহক, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা, বৃহৎ কর্পোরেট ফার্ম এবং সরকারকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিবিধ সেবা দিয়ে থাকে। বাংলাদেশ ব্যাংক দক্ষতার সঙ্গে ব্যাংকের এসব কার্যাবলী নজরদারি করে যাচ্ছে। আমাদের এই নজরদারির মূল লক্ষ্য হচ্ছে ব্যাংকিং খাতে জনগণের আস্থা রক্ষা, আমানতকারীদের অর্থের নিরাপত্তা প্রদান, ব্যাংকের সুস্থতা ও শৃঙ্খলা বৃদ্ধি করা; গ্রাহকদের সাশ্রয়ী মূল্যে উন্নত ও আধুনিক আর্থিক সেবা নিশ্চিত করা এবং ব্যাংকগুলো কর্তৃক ব্যাংকিং আইন ও নীতিমালার প্রতিপালন নিশ্চিত করা। সম্প্রতি স্থানীয় ও বৈদেশিক মুদ্রায় অভ্যন্তরীণ বিল ক্রয়ের (আইবিপি) ক্ষেত্রে আমাদের বৈদেশিক মুদ্রা পরিদর্শন ও ভিজিল্যান্স বিভাগ ব্যাংকগুলোতে ব্যাপক অনিয়ম খুঁজে পেয়েছে। শুধুমাত্র ডকুমেন্টস দেখে অন্য ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ বিল ক্রয় করে কোন কোন ব্যাংককে ঝুঁকিতে পড়তে হয়েছে। এ ধরনের বিল ক্রয় সংক্রান্ত কার্যাদি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের অগোচরেই ব্যাংকের শাখা পর্যায়ে সংঘটিত হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে প্রধান কার্যালয়ের পূর্বানুমোদন নেয়া এবং ক্রয়-বিক্রয়কৃত মালামালের প্রকৃত সরবরাহ যাচাই ছাড়া স্বীকৃত বিলের মূল্য পরিশোধে বিধিনিষেধ আরোপ করে গত সপ্তাহে আমরা একটি সার্কুলারও জারি করেছি। ব্যাংক পরিদর্শনের সময় সুপারভাইজারগণ এসব বিলের স্বীকৃতি প্রদান ও মূল্য পরিশোধের বিষয়ে তীক্ষè নজর রাখবেন। একইসঙ্গে, ব্যাংকগুলোকেও সতর্ক করছি, এখন থেকে আর ভুতুড়ে বিল কেনার দুঃসাহস দেখাবেন না। এ ধরনের বিলে স্বীকৃতি প্রদানের সময় কোন তাড়াহুড়ো করবেন না। ডকুমেন্টস হাতে পাওয়ার পর তা যাচাই-বাছাই করবেন।
বিশ্ব মন্দা-উত্তর পরিস্থিতিতেও বাংলাদেশের আর্থিক খাত ভালো অবস্থানে রয়েছে। গত এক দশকে যেখানে গড় জিডিপি প্রবৃদ্ধি ছিল ৫ শতাংশ তা এখন বেড়ে সাড়ে ৬ শতাংশের কাছাকাছি এসে দাঁড়িয়েছে। গত এক দশকে আমাদের নমিন্যাল জাতীয় আয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে তিনগুণেরও বেশি। মাথাপিছু আয় বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি। তাছাড়া, সামষ্টিক অর্থনীতির মুখ্য সূচকগুলো যেমন আমদানি-রফতানি, রেমিট্যান্স প্রবাহ, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ব্যাপক পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে। এই সময়ে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়েছে সাড়ে সাতগুণ এবং রেমিট্যান্স বেড়েছে সাড়ে চারগুণেরও বেশি। গত অর্থবছরে রেকর্ড কাক্সিক্ষত প্রায় তেরো বিলিয়ন (১২.৮৫ বিলিয়ন) ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। গত অর্থবছরে আমাদের রফতানি আয় হয়েছে প্রায় সাড়ে ২৪ বিলিয়ন ডলার। আমদানি ব্যয়ের উচ্চ প্রবৃদ্ধি সত্ত্বেও এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নে (আকু) পেমেন্ট সেটেলমেন্টের পরবর্তী সময়গুলো বাদ দিলে গত অর্থবছরের বাকি সময় রিজার্ভ ১০ বিলিয়ন ডলারের ওপরেই থেকেছে। বড় স্বস্তির বিষয়, অর্থবছর শেষে মাসভিত্তিক পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট মূল্যস্ফীতি ৮.৫৬ শতাংশে নেমে এসেছে। জিডিপিতে ব্যাংকিং খাতের অবদানও ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। ফলে দেশের অর্থনীতির আকার, ব্যাংকিং খাতের প্রতিযোগিতা বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তা এবং অন্য বিষয়াবলীর বিবেচনায় সম্প্রতি আরো নতুন কয়েকটি ব্যাংক অনুমোদন দেয়া হয়েছে। শীঘ্রই এসব ব্যাংক তাদের কাজ শুরু করবে। তাই আপনাদের কাজের পরিধিও বৃদ্ধি পাবে। আশার কথা যে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শক্ত নজরদারির কারণে মূলধন পর্যাপ্ততা সংক্রান্ত ব্যাসেল-২ নীতিমালার পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন হয়েছে। নিকট ভবিষ্যতে ব্যাসেল-৩ বাস্তবাস্তনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাও গ্রহণ করা হয়েছে। ব্যাংকিং খাতে শ্রেণীকৃত ঋণের হার প্রায় সাড়ে ৬ শতাংশে এবং নিট খেলাপী ঋণের হার ১ শতাংশে নেমে এসেছে। পরিশেষে, সুন্দর ও সুচারুরূপে আজকের অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য আয়োজক টিমকে সাধুবাদ জানাই। এখানে ব্যাংকিং খাত সম্পর্কে দীর্ঘ অভিজ্ঞতাসম্পন্ন আমাদের সিনিয়র কনসালটেন্ট ও ব্যাংক সুপারভিশন এ্যাডভাইজার আছেন। উপস্থিত রয়েছেন ব্যাংক সুপারভিশনে দক্ষতাসম্পন্ন উর্ধতন কর্মকর্তাগণ। ভবিষ্যতে সুপারভিশনকে কিভাবে আরো ফলপ্রসূ করা যায়, আর্থিক খাতে স্থিতিশীলতা বজায় রাখা যায়-তাঁদের অভিজ্ঞতালব্ধ আলোচনা থেকে আপনারা তা জানতে পারবেন বলে আমি আশা রাখি। সুপারভিশনের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালনে আপনাদের আন্তরিকতা ও পেশাদারিত্ব কামনা করে এবং আজকের এই আঞ্চলিক টাউন হল সভাটি সফল ও উপভোগ্য হোক এই প্রত্যাশা জানিয়ে এখানেই শেষ করছি। সবাই ভাল থাকুন। ধন্যবাদ।
No comments