চলতি পথে নিত্য বিড়ম্বনা by মৌনতা আরওয়া
সময়টা অফিস শুরুর। ভ্যাপসা গরম আর লোকের ভিড়ে গাদাগাদি বাস। সংরক্ষিত মহিলা সিট খালি নেই। নেই পা ফেলানোর জায়গা। কোনো রকমে নিজের শরীরটা ধাক্কাধাক্কি থেকে বাঁচিয়ে দাঁড়ায় লিজা (ছদ্মনাম)। এরই মাঝে এক লোক ইচ্ছা করে গায়ের সঙ্গে লেপ্টে থাকে। বেশ কয়েকবার তাকে সরে দাঁড়াতে বলে লিজা।
একটু সময় সরে আবার আগের অবস্থানে চলে আসে। বিশ্রীভাবে ইচ্ছাকৃত গায়ের সঙ্গে লেপ্টে থাকা অনেকক্ষণ সহ্য করে সে। একটা সময় শরীরের সব জেদে দিগ্গি্বদিকশূন্য হয়ে পড়ে লিজা। সরে দাঁড়াতে পারেন না আপনি? অযথা গায়ের সঙ্গে লেপ্টে আছেন কেন? ধাক্কা দেয় লোকটিকে। আর যায় কোথায়? পুরো বাসের লোকজন এক হয়ে যাচ্ছে তাই বলতে শুরু করে মেয়েটিকে। 'তুমি একটা পুরুষের গায়ে হাত দিয়েছ! বেয়াদব মেয়ে, একচড়ে তোমার সব দাঁত ফেলে দেব। কত্ত বড় সাহস!' বলেন, বাবার বয়সী এক প্রৌঢ়। কিংকর্তব্যবিমূঢ় ও দিশেহারা হয়ে যায় লিজা কীভাবে এই পরিস্থিতি থেকে বের হয়ে আসবে।
অপমানে কান লাল হয়ে যায় তার। এতক্ষণ যে ভিড় বাসে লোকটি তার গায়ের সঙ্গে বিশ্রীভাবে গা লাগানোর চেষ্টা করছিল এটা কি কোনো অপরাধ নয়? যে লোকটি এ রকম আচরণ করছিল রাগের চোটে তাকে ধাক্কা দেওয়ার পরবর্তী পরিস্থিতি এ রকম হবে জানলে লিজা কি প্রতিবাদের এই পথ মাড়াত? 'আমি বলে বোঝাতে পারব না ব্যাপারটা আমার জন্য কতটা অপমানের ছিল। পুরো বাসের লোক আমার দিকে তেড়ে আসছিল। আমি কেন লোকটার গায়ে হাত তুললাম। আমার গায়ে বিশ্রীভাবে নোংরা হাত লাগাবে, ওদের ভাষ্য মতে এটাই স্বাভাবিক। আমি প্রতিবাদ করেছি সেটা অন্যায় হয়ে গেল। অপমানে নতমুখে আমাকে বাস থেকে নেমে আসতে হলো। এ আমরা কেমন দেশে বাস করি?' ছলছল চোখটায় প্রশ্নবোধক চাহনি লিজার।
শুধু লিজা নয়, এ প্রশ্ন রাজধানীর কর্মজীবী নারীদের। এ প্রশ্ন বাসে নিয়মিত যাতায়াত করা তরুণীদের। প্রতিদিন অফিস সময়ে ভিড় ঠেলে-ধাক্কিয়ে নিজের গা-টা কোনো রকমে বাসের ভেতর প্রবেশ করাতে পারলেও নিত্য এ রকম বিড়ম্বনার মধ্য দিয়ে যেতে হয় নারীদের। শুধু তো বাসের যাত্রীরা সুযোগের সদ্ব্যবহার করেন না, করেন বাসের হেলপাররাও। বাসে ওঠা কিংবা নামার সময় তাদের হাত থেকেও নিস্তার পান না পথচলা নারীরা। সেটা মুখের ভাষায় হোক কিংবা হাতের ব্যবহারে।
কর্মক্ষেত্রে সারাদিন কাজ করে যতটা না ক্লান্ত হন নারী বাসে এ রকম বিড়ম্বনায় মানসিক যন্ত্রণায় অধিক ক্লান্ত হয়ে যান তারা। সংরক্ষিত নয়টি সিটেও নারীরা বসতে পারেন না অনেক সময়। এখানেও নানা কথা, ছেলেমেয়ের সমান অধিকার। তাহলে বাসে তাদের জন্য সংরক্ষিত আসন লাগে কেন? দাঁড়িয়ে যেতে পারে না? এ রকম কথা অনেকেই বলেন। 'আরে বাবা দাঁড়িয়ে যেতে তো আমাদের সমস্যা নেই। কোনো রকমে কর্মক্ষেত্রে পেঁৗছতে পারলেই হলো। কিন্তু দাঁড়িয়ে যাওয়ার মতো পরিবেশও কতিপয় পুরুষ আমাদের দেন না। ভিড় বাসে কিংবা ওঠা-নামার সময় একজনের গায়ের সঙ্গে তো গা লাগতেই পারে। কিন্তু এই সুযোগে মুখোশপরা ভদ্রলোক লুকিয়ে খুলে ফেলেন মুখোশ। এর প্রতিবাদ করতে গেলে পুরো বাসের যাত্রীর কাছে মেয়েটি নির্লজ্জ হিসেবে পরিচিত হয়। এই ভয়ে প্রতিবাদ করি না। একবার করে বিশ্রী পরিস্থিতির শিকার হয়েছিলাম। কিন্তু প্রতিবাদ বা কোনো ব্যবস্থা না নিলে দিন দিন এই নোংরা পুরুষদের দৌরাত্ম্য বাড়তেই থাকবে।' বললেন একটি বেসরকারি ব্যাংকে কর্মরত ইসরাত জাহান।
সিটিং বাস বা লোকাল বাস যাই হোক না কেন, সব সময় দেখা যায় বাসের সামনের জায়গাটায় খুব ভিড় থাকে। অথচ পেছনের জায়গা ফাঁকা পড়ে থাকে। সামনের দিকে চাপাচাপি করে দাঁড়ানো দেখে একবার এক সিটিং বাসের ড্রাইভার রেগে গিয়ে বলেন, 'এই মহিলা ৯টা সিট সামনে না রাইখ্যা পেছনে রাখলে এই ভিড়টা পেছনে অইত।' পাশের ভদ্রমহিলা এই প্রতিবেদককে বলেন, একজন ড্রাইভার অল্প শিক্ষিত হয়েও যে অপমানটা করল তারপরও কারও এই জায়গা থেকে সরার নাম নেই। ঠায় দাঁড়িয়ে আছে মহিলাদের ঘাড়ের ওপর লেপ্টে। এ থেকে বাঁচার কোনো পথ নেই? আদৌ নারীরা কী এ দেশে স্বস্তিতে পথ চলতে পারবে? সেদিন কি আসবে কখনও!
অপমানে কান লাল হয়ে যায় তার। এতক্ষণ যে ভিড় বাসে লোকটি তার গায়ের সঙ্গে বিশ্রীভাবে গা লাগানোর চেষ্টা করছিল এটা কি কোনো অপরাধ নয়? যে লোকটি এ রকম আচরণ করছিল রাগের চোটে তাকে ধাক্কা দেওয়ার পরবর্তী পরিস্থিতি এ রকম হবে জানলে লিজা কি প্রতিবাদের এই পথ মাড়াত? 'আমি বলে বোঝাতে পারব না ব্যাপারটা আমার জন্য কতটা অপমানের ছিল। পুরো বাসের লোক আমার দিকে তেড়ে আসছিল। আমি কেন লোকটার গায়ে হাত তুললাম। আমার গায়ে বিশ্রীভাবে নোংরা হাত লাগাবে, ওদের ভাষ্য মতে এটাই স্বাভাবিক। আমি প্রতিবাদ করেছি সেটা অন্যায় হয়ে গেল। অপমানে নতমুখে আমাকে বাস থেকে নেমে আসতে হলো। এ আমরা কেমন দেশে বাস করি?' ছলছল চোখটায় প্রশ্নবোধক চাহনি লিজার।
শুধু লিজা নয়, এ প্রশ্ন রাজধানীর কর্মজীবী নারীদের। এ প্রশ্ন বাসে নিয়মিত যাতায়াত করা তরুণীদের। প্রতিদিন অফিস সময়ে ভিড় ঠেলে-ধাক্কিয়ে নিজের গা-টা কোনো রকমে বাসের ভেতর প্রবেশ করাতে পারলেও নিত্য এ রকম বিড়ম্বনার মধ্য দিয়ে যেতে হয় নারীদের। শুধু তো বাসের যাত্রীরা সুযোগের সদ্ব্যবহার করেন না, করেন বাসের হেলপাররাও। বাসে ওঠা কিংবা নামার সময় তাদের হাত থেকেও নিস্তার পান না পথচলা নারীরা। সেটা মুখের ভাষায় হোক কিংবা হাতের ব্যবহারে।
কর্মক্ষেত্রে সারাদিন কাজ করে যতটা না ক্লান্ত হন নারী বাসে এ রকম বিড়ম্বনায় মানসিক যন্ত্রণায় অধিক ক্লান্ত হয়ে যান তারা। সংরক্ষিত নয়টি সিটেও নারীরা বসতে পারেন না অনেক সময়। এখানেও নানা কথা, ছেলেমেয়ের সমান অধিকার। তাহলে বাসে তাদের জন্য সংরক্ষিত আসন লাগে কেন? দাঁড়িয়ে যেতে পারে না? এ রকম কথা অনেকেই বলেন। 'আরে বাবা দাঁড়িয়ে যেতে তো আমাদের সমস্যা নেই। কোনো রকমে কর্মক্ষেত্রে পেঁৗছতে পারলেই হলো। কিন্তু দাঁড়িয়ে যাওয়ার মতো পরিবেশও কতিপয় পুরুষ আমাদের দেন না। ভিড় বাসে কিংবা ওঠা-নামার সময় একজনের গায়ের সঙ্গে তো গা লাগতেই পারে। কিন্তু এই সুযোগে মুখোশপরা ভদ্রলোক লুকিয়ে খুলে ফেলেন মুখোশ। এর প্রতিবাদ করতে গেলে পুরো বাসের যাত্রীর কাছে মেয়েটি নির্লজ্জ হিসেবে পরিচিত হয়। এই ভয়ে প্রতিবাদ করি না। একবার করে বিশ্রী পরিস্থিতির শিকার হয়েছিলাম। কিন্তু প্রতিবাদ বা কোনো ব্যবস্থা না নিলে দিন দিন এই নোংরা পুরুষদের দৌরাত্ম্য বাড়তেই থাকবে।' বললেন একটি বেসরকারি ব্যাংকে কর্মরত ইসরাত জাহান।
সিটিং বাস বা লোকাল বাস যাই হোক না কেন, সব সময় দেখা যায় বাসের সামনের জায়গাটায় খুব ভিড় থাকে। অথচ পেছনের জায়গা ফাঁকা পড়ে থাকে। সামনের দিকে চাপাচাপি করে দাঁড়ানো দেখে একবার এক সিটিং বাসের ড্রাইভার রেগে গিয়ে বলেন, 'এই মহিলা ৯টা সিট সামনে না রাইখ্যা পেছনে রাখলে এই ভিড়টা পেছনে অইত।' পাশের ভদ্রমহিলা এই প্রতিবেদককে বলেন, একজন ড্রাইভার অল্প শিক্ষিত হয়েও যে অপমানটা করল তারপরও কারও এই জায়গা থেকে সরার নাম নেই। ঠায় দাঁড়িয়ে আছে মহিলাদের ঘাড়ের ওপর লেপ্টে। এ থেকে বাঁচার কোনো পথ নেই? আদৌ নারীরা কী এ দেশে স্বস্তিতে পথ চলতে পারবে? সেদিন কি আসবে কখনও!
No comments