দুর্নীতির সুরাহা হলে জাপান সিদ্ধান্ত নেবে

পদ্মা সেতু প্রকল্পের দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে সরকারের পদক্ষেপের ওপর তীক্ষ দৃষ্টি রাখছে। দুর্নীতির অভিযোগের বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের পদক্ষেপের ওপর নির্ভর করেই অর্থ ছাড়ের সিদ্ধান্ত নেবে জাপান। তবে পদ্মা সেতু নির্মাণে বিশ্বব্যাংকের যে অর্থ দেওয়ার কথা ছিল, তা এককভাবে দেওয়া জাপানের পক্ষে সম্ভব নয়।


ঢাকায় জাপানের রাষ্ট্রদূত শিরো সাদোশিমা গতকাল রোববার ‘ডিকাব টক’ অনুষ্ঠানে এ মন্তব্য করেছেন। পদ্মা সেতু প্রকল্পে জাপানের সহযোগিতা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি এ কথা বলেন। জাতীয় প্রেসক্লাবে ডিপ্লোমেটিক করেসপনডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ (ডিকাব) সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। ডিকাবের সভাপতি রেজাউল করিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তৃতা করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক বশির আহমেদ।
বিশ্বব্যাংক ঋণচুক্তি বাতিলের পর জাপানের প্রতিশ্রুত অর্থের কী হবে এবং বিশ্বব্যাংকের পরিবর্তে জাপান প্রধান অর্থদাতা হবে কি না—জানতে চাইলে জাপানের রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘পদ্মা সেতু প্রকল্পের বিশ্বব্যাংকের ঋণচুক্তি বাতিল অত্যন্ত দুঃখজনক। এখন পর্যন্ত আমরা আগের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী (৩০০ মিলিয়ন বা ৩০ কোটি ডলার) টাকা দিতে রাজি আছি। তবে প্রায় তিন বিলিয়ন ডলারের এ প্রকল্পে বিশ্বব্যাংকের ১ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার দেওয়ার কথা ছিল। বিশ্বব্যাংকের যে পরিমাণ অর্থ জোগানোর কথা ছিল, সেটি যে আমাদের পক্ষে দেওয়া সম্ভব নয়, তা নিশ্চিতভাবেই বলতে পারি। এত বিপুল পরিমাণ অর্থ দেওয়া সম্ভব নয়।’
রাষ্ট্রদূত জানান, এ প্রকল্পে দুর্নীতির যে অভিযোগ উঠেছে, সে ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকার কী পদক্ষেপ নেয়, তার ওপর নির্ভর করছে জাপানের অর্থায়নের বিষয়টি। শিরো সাদোশিমা বলেন, ‘দুর্নীতির যে অভিযোগ উঠেছে সে প্রেক্ষাপটে সত্য উদ্ঘাটনে সরকার কী পদক্ষেপ নিচ্ছে, সে ব্যাপারে আমরা তীক্ষ নজর রাখছি। এর ওপরই নির্ভর করছে পদ্মা সেতু প্রকল্পে জাপানের সহযোগিতা। আপনাদের সরকার কী পদক্ষেপ নেয়, তা জাপান সরকারের সিদ্ধান্ত নেওয়ার কাজটা সহজ করে দেবে। যেহেতু অভিযোগ উঠেছে, তাই এর সুরাহা হওয়া উচিত।’
বিকল্প উপায়ে কিংবা বাংলাদেশের নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ সম্ভব কি না—প্রশ্নের উত্তরে জাপানের রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশ সরকার নিজেদের অর্থায়নেই এটি করার চেষ্টা করছে। যৌক্তিকভাবে এটি সম্ভব হলেও তা টেকসই হবে না। নিজস্ব অর্থায়নের এ বিষয়টি খুব সতর্কতার সঙ্গে লক্ষ্য রাখতে হবে।
শিরো সদোশিমা বলেন, ‘শুধু সেতু বানানোটা সরকারের লক্ষ্য নয়। এ সেতুর মাধ্যমে লোকজন তুলনামূলকভাবে কম খরচে ও সাশ্রয়ে নদী পার হতে পারে সেটিই মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত। লোকজনের কাছে সেবা পৌঁছে দেওয়াটাই লক্ষ্য। তা ছাড়া প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে গেলে এতে সরকারকে বিপুল পরিমাণ ভর্তুকি দিতে হবে। এতে সরকারের জন্য বিপুল বোঝা তৈরি হবে।
পদ্মা সেতু নির্মাণের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার জন্য বিশ্বব্যাংকের ওপর জাপান প্রভাব খাটাবে কি না—জানতে চাইলে শিরো সাদোশিমা বলেন, ‘এটি আমার ঠিক জানা নেই। তবে আমাদের অবস্থান কী হবে, এটি নিয়েই আমরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করছি। কারণ শেষ পর্যন্ত আমাদের করদাতাদের কাছে প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়।’
নতুন রূপরেখা চুক্তির আওতায় পদ্মা সেতুতে অর্থায়নের যে বিষয়টি আলোচনায় এসেছে, সেটি কী বিশ্বব্যাংকে রেখে হবে, না কি নতুন একটি চুক্তির আওতায় হবে—জানতে চাইলে তিনি বলেন, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকসহ (এডিবি) অন্য দাতা সংস্থার সঙ্গে আলোচনা হতে পারে। এ বিষয়ে দাতাদের সঙ্গে রাজনৈতিক সংলাপ জরুরি। বিশ্বব্যাংকের অভিযোগের ব্যাপারে কোনো তদন্ত চালাবে কি না—প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘আমরা এ ধরনের কিছু করব না। আর দুর্নীতির তদন্তে হস্তক্ষেপ করাটাও আমাদের উচিত হবে না।’
বাংলাদেশের দুর্নীতি পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘দুর্নীতি দূর করার পাশাপাশি সুশাসন নিশ্চিতের লক্ষ্যে কিছু পদক্ষেপ নিতে সরকার আন্তরিকভাবে চেষ্টা করছে। এ পদক্ষেপগুলো কার্যকরভাবে নেওয়া হলে সুফল আসবে বলে আমাদের আশা। এ নিয়ে আমরা আশাবাদী বলেই বাংলাদেশে জাপানের বিনিয়োগ বাড়ছে।’
রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জাপানের রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘গত এক থেকে দুই দশক ধরে বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রয়েছে। গণতন্ত্র থাকলেও তাকে আদর্শ হিসেবে বলা যায় না। তবে এটি কার্যকর আছে। আমরা এ দেশকে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবেই বিবেচনা করি। যদিও বিনিয়োগকারীদের কাছে পরিস্থিতি নিয়ে কখনো কখনো সংশয় তৈরি হয়।’
রাজনৈতিক মতপার্থক্য দূর করার বিষয়ে আলোচনার ওপর গুরুত্ব দিয়ে শিরো সাদোশিমা বলেন, যৌক্তিকভাবে সমাধান হওয়া উচিত—সহিংসতার মধ্য দিয়ে নয়। বাংলাদেশের ওপর আস্থা আছে বলেই এ দেশে জাপানের বিনিয়োগ বাড়ছে। কখনো কখনো সহিংস হয়ে পড়ে। তবে আগামী দিনে বাংলাদেশের রাজনীতি তুলনামূলকভাবে কম সহিংস হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

No comments

Powered by Blogger.