জনস্বার্থকে প্রাধান্য দিতে হবে

জেলা প্রশাসকদের সম্মেলন শেষ হলো। এ ধরনের সম্মেলনের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় প্রশাসন এবং মাঠ প্রশাসনের মধ্যে অভিজ্ঞতা বিনিময় হয়। কর্তৃপক্ষের বার্তা যায় মাঠপর্যায়ের প্রশাসনে। মাঠ প্রশাসনের সুপারিশও আসে কেন্দ্রীয় প্রশাসনে।


এতে প্রশাসনিক কর্মকা-ে গতিশীলতা বৃদ্ধির জন্য নানা রকম উদ্যোগ গ্রহণ সহজ হয়। এবারের সম্মেলনেও এ ধরনের অভিজ্ঞতা বিনিময় হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জেলা প্রশাসকদের মুক্ত আলোচনা শুনেছেন। প্রধানমন্ত্রী স্থানীয় প্রশাসনকে জনগণের দোরগোড়ায় নিয়ে যাওয়া এবং জনকল্যাণে কাজ করার জন্য জেলা প্রশাসকদের নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি এও মনে করিয়ে দিয়েছেন যে, জেলা প্রশাসকরা জনগণের সেবক। তাই তাদের সঠিক আচরণের ওপরই আসলে নির্ভর করে স্থানীয় উন্নয়ন। এ লক্ষ্যে স্থানীয় প্রশাসনকে দলমতের উর্ধে উঠে সমন্বিতভাবে কাজ করার জন্য প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দেন। প্রধানমন্ত্রীর এ নির্দেশনা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্টরা দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেবেন বলে আশা করি।
একটি গণতান্ত্রিক দেশের নাগরিক হিসেবে সরকারী কর্মকর্তাদের ব্যক্তিগত রাজনৈতিক বিশ্বাস কিংবা মতামত থাকতেই পারে। কিন্তু প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হিসেবে এই বিশ্বাসের ভিত্তিতে তাদের আলাদাভাবে শনাক্ত করা উচিত নয়। এটা গণতন্ত্রের পরিপন্থী। সরকারী কর্মকর্তাদের উচিত তাদের সরকারী দায়িত্ব পালনকালে জনগণের কল্যাণকে সবার উর্ধে স্থান দেয়া। রাষ্ট্রের প্রতি তাদের অনুগত থেকে জনগণের উন্নয়ন ও কল্যাণে কাজ করে যেতে হবে। সরকারী কর্মকর্তাদের অবশ্যই নিরপেক্ষ হতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা সরকারী কর্মকর্তাদের যে কোন ধরনের দলীয় চাপকে পাশ কাটিয়ে দেশ ও জাতির সেবায় আত্মনিয়োগ করতে উৎসাহিত করবে বলে আমাদের বিশ্বাস।
সরকারী কর্মকর্তারা দেশের সেবক। জনগণের অর্থ থেকেই তাদের বেতন-ভাতা ও যাবতীয় খরচ মেটানো হয়। তাই সরকারী কর্মচারীদের তাদের দায়িত্ব পালনকালে সর্বদা নিরপেক্ষ হতে হবে। বাংলাদেশে রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত, কোনভাবেই সরকারী কর্মকর্তাদের তাঁদের দলীয় তৎপরতার সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা অপ্রত্যক্ষভাবে সংশ্লিষ্ট না করা। দেশের সর্বত্র প্রশাসন ও সরকারী কর্মতৎপরতাকে দলীয়করণ করা যাবে না। বিষয়টি রাষ্ট্রের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে। দেশে এমন একটি সুস্থ পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে, যাতে প্রতিটি সরকারী কর্মকর্তা দেশপ্রেম, ত্যাগ ও সেবার মনোভাব নিয়ে কাজ করতে পারেন। তাঁদের ঔপনিবেশিক আমলের ধ্যান-ধারণা বিসর্জন দিতে হবে। সরকারী কর্মকর্তাদের সম্পূর্ণ নিরপেক্ষভাবে জনকল্যাণে কাজ করতে হবে এ লক্ষ্য থেকে তাঁদের বিচ্যুত হলে চলবে না।
জনগণের দ্বারপ্রান্তে সেবা পৌঁছে দেয়া এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা, দ্রব্যমূল্য, ভূমিব্যবস্থাপনাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জন অনেকাংশে নির্ভর করে প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের সমন্বয়ের ওপর। প্রত্যেকে তার নিজ নিজ দায়িত্বের মধ্যে থেকে কাজ করলে কোনো সমস্যা হয় না। সীমা অতিক্রম করলেই দেখা দেয় সমস্যা। এছাড়া প্রশাসনিক অদক্ষতার কারণেও অনেক উন্নয়ন কর্মকা- সময়মতো বাস্তবায়িত হয় না। এমনকি অনেক সময় উন্নয়ন বরাদ্দ ফেরত আসার ঘটনাও ঘটে। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। জেলা পর্যায়ের প্রশাসনে সমন্বয়ের ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা এখনো রয়ে গেছে। এ সমস্যা উত্তরণে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। সবার আগে দেশের স্বার্থকে স্থান দিলে যে কেনো সঙ্কট উত্তরণ সহজ হয়। সংশ্লিষ্ট সবাইকে বিষয়টি মনে রাখতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.