অশান্ত শিক্ষাঙ্গন-দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হোক

একের পর এক অশান্ত হয়ে উঠছে দেশের শিক্ষাঙ্গন। বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ক্রমাগত অস্থিরতা সেখানকার শিক্ষার পরিবেশ বিঘি্নত করছে। চলমান ঘটনাগুলো বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে, এগুলো বর্তমান সরকারের আমলে শিক্ষাক্ষেত্রে অর্জিত সাফল্যগুলো ম্লান করে দেওয়ার মতো।


জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে সৃষ্ট জটিলতা দূর হয়নি আজও। প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ এবং উপাচার্যের পরিবর্তন হওয়ার পর কিছুটা স্বস্তি ফেলার মতো অবস্থা তৈরি হলেও এখন সেখানে নতুন করে ইস্যু তৈরি হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে সেখানে উপাচার্য প্যানেল নির্বাচন না হওয়ায় যে স্থবিরতা চলে আসছিল, ২০ জুলাই অনুষ্ঠেয় সেই নির্বাচন তা কাটিয়ে তুলতে সক্ষম হবে- এমন আশাবাদ ব্যক্ত করেছিলেন অনেকেই। কিন্তু সেখানে আবারও আন্দোলন শুরু হয়েছে। যাঁরা একসময় ভিসি প্যানেল নির্বাচনের দাবি নিয়ে আন্দোলন করেছিলেন, তাঁরাই নতুন শর্ত যোগ করে প্যানেল নির্বাচনের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যের পদত্যাগ দাবি করে সেখানকার সব ডিন ও বিভাগীয় প্রধানের পদত্যাগের ঘোষণা এবং শিক্ষক-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের প্রায় সবাই একত্র হওয়ার পর যে জটিল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তা সবাইকে ভাবিয়ে তুলেছে। রবিবার আন্দোলনকারীরা বুয়েটের আচার্য মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয়েও এ বিষয়ে বৈঠক হওয়ার কথা। এরই মধ্যে বুয়েটে উপাচার্যের পক্ষে ক্ষুদ্র হলেও একটি গ্রুপ আত্মপ্রকাশ করায় সংঘাতের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বুয়েটের ভিসি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার পর তিনি প্রধানমন্ত্রীর যে নির্দেশনার কথা সংবাদমাধ্যমে জানিয়েছেন, তাও যে ফলদায়ক হবে, এমন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। উভয় পক্ষ তাদের সিদ্ধান্তে অটল থাকার কারণে সেখানকার অস্থিরতা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
সিলেটের প্রাচীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমসি কলেজে ছাত্রাবাস পুড়িয়ে দিয়েছে ছাত্র নামধারী কিছু দুর্বৃত্ত। সেই ঘটনা বিবেককে কতটা নাড়া দিয়েছে তার প্রমাণ পাওয়া যায় ঘটনাস্থল পরিদর্শনকালে শিক্ষামন্ত্রীর কান্নায়। ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গেছেন অর্থমন্ত্রীও। প্রাথমিক তদন্তে সরকারি দল সমর্থিত ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগের কর্মীদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে বলে সংবাদমাধ্যমে জানা গেছে। অপরাধী যদি সরকার সমর্থকও হয়, তাহলেও রেহাই পাবে না বলে যে বক্তব্য মন্ত্রীদ্বয় দিয়েছেন, তা কার্যকর হোক। তা না হলে শিক্ষাক্ষেত্রে সরকারের সাফল্য ধরে রাখা দুরূহ হবে। এ মুহূর্তে ১৯টি বিশ্ববিদ্যালয়, ৩৭টি কলেজ ও আটটি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে অস্থিরতা বিরাজ করছে বলে যে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে, তা আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার প্রতি হুমকি হিসেবে গণ্য। এই পরিস্থিতিকে দ্রুত ইতিবাচক ধারায় নিয়ে আসতে হবে। রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বন্ধ করে শিক্ষায়তনগুলোকে শিক্ষাক্ষেত্র হিসেবেই চলতে দিতে হবে। এর জন্য শিক্ষকদের ভূমিকা যেমন আছে, তেমনি আছে রাজনীতিবিদদেরও। একসময় শিক্ষাঙ্গনে ছাত্র রাজনীতির কুফল নিয়ে অনেক সমালোচনা হয়েছে। এখন সেখানে যোগ হয়েছে শিক্ষক রাজনীতি। প্রতিষ্ঠানকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা কোনোভাবেই উচিত হবে না। তা নিশ্চিত করতে হবে সরকার ও প্রতিষ্ঠান-সংশ্লিষ্টদের।

No comments

Powered by Blogger.