স্থপতি মাজহারুল ইসলাম আর নেই-পথিকৃতের প্রস্থান by আশীষ-উর-রহমান
কিছু কিছু মানুষ থাকেন, যাঁদের জীবনপঞ্জির তথ্য, এমনকি তাঁদের কাজের সংখ্যা দিয়েও পুরোপুরি ধরা যায় না তাঁদের অবদান, তাঁদের ভূমিকার তাৎপর্য। একটি বিশেষ সময়ে, সমাজের চাহিদা পূরণে তাঁরা এমন অনন্য কর্মময়তায় নিজেদের নিবেদিত করেন যে ব্যক্তির সীমানা অতিক্রম করে, তাঁরা ওই সময়ের সামগ্রিক ইতিহাসেরই অচ্ছেদ্য অংশে পরিণত হয়ে যান।
মুক্তিযোদ্ধা স্থপতি মাজহারুল ইসলাম ছিলেন এ দেশের তেমনই একজন। গত শনিবার দিবাগত রাত ১২টা ছয় মিনিটে তিনি ৮৯ বছর বয়সে ইহলোকের সব সম্পর্ক ছিন্ন করে চিরযাত্রা করেছেন (ইন্না লিল্লাহি...রাজিউন)।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, বেশ অনেক দিন থেকেই তিনি বার্ধক্যজনিত নানা সমস্যায় ভুগছিলেন। এ বছরের শুরুর দিকে ব্যাংককে মাস দুয়েক তাঁর চিকিৎসা করানো হয়। তবে অবস্থার খুব একটা ইতিবাচক পরিবর্তন হয়নি। গত মে মাস থেকে ক্রমশই দুর্বল হয়ে পড়েন। এমনকি বাকশক্তিও হারিয়ে ফেলেন। ৩১ মে তাঁকে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এর পর থেকে সেখানেই চিকিৎসাধীন ছিলেন। শেষ দিনগুলোতে তাঁকে হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে রাখা হয়েছিল। জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে ছিলেন। চিকিৎসায় কোনো সাড়া দেননি। অবশেষে জীবনের চিরন্তন পরিণতি মেনে চিরনিদ্রায় নিমগ্ন হয়েছেন। গতকাল রোববার বাদ আসর মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী গোরস্থানে তাঁর অন্তিমশয্যা রচনা করা হয়েছে।
এর আগে দুপুর ১২টায় হাসপাতাল থেকে তাঁকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে আনা হয়। চারুকলা অনুষদের মনোরম স্থাপত্যকর্মটি তাঁর হাতেই গড়া। সেখানে সর্বস্তরের মানুষ দেশের স্থাপত্যশিল্পের এই পথিকৃতের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। অন্যান্যের মধ্যে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পক্ষে যুগ্ম সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে সহ-উপাচার্য, চারুকলা অনুষদ, বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউটসহ বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধি এবং ব্যক্তিগতভাবে রাজনীতি, শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি অঙ্গনের প্রতিনিধিরা, তাঁর সহকর্মী, ছাত্র ও অনুরাগীরা ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে বাদ জোহর প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে মসজিদ প্রাঙ্গণে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তাঁকে গার্ড অব অর্নার প্রদান করা হয়। রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান শোকবার্তায় বলেছেন, ‘তাঁর মৃত্যুতে দেশের যে ক্ষতি হয়েছে, তা অপূরণীয়।’
শ্রদ্ধা নিবেদন করতে আসা তাঁর একসময়ের সহকর্মী প্রবীণ স্থপতি শেখ মুহম্মদ শহীদুল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, ‘স্থাপত্যকর্মের মধ্যে তিনি ফাইন আর্টের অন্য সব বিষয়কে সমন্বিত করে স্থাপত্যের একটি নতুন ধারা সৃষ্টি করেছিলেন। এমন আর কেউ করেননি। তিনি পথিকৃৎ।’ স্থপতি ইনস্টিটিউটের সভাপতি মোবাশ্বের হোসেন বলেন, ‘আজ বিশ্বদরবারে বাংলাদেশের স্থপতিরা যে কৃতিত্ব অর্জন করছেন, বাংলাদেশের স্থাপত্যের যে উন্মেষ, এর নেপথ্যে পুরো অবদানটি মাজহারুল ইসলামের।’ কবি ও স্থপতি রবিউল হুসাইন বললেন, ‘১৯৫৪ সালে চারুকলা অনুষদের এই পুরো ভবন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের মধ্য দিয়ে তিনি এ দেশে আধুনিক স্থাপত্যের গোড়াপত্তন করেছিলেন। চারুকলার স্থাপত্যটি এখন ধ্রুপদি স্থাপত্যের মর্যাদা লাভ করেছে।’ স্থপতি শামসুল ওয়ারেস গুরুত্ব দিলেন তাঁর সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ভূমিকার ওপর। বললেন, ‘স্থাপত্যকর্মকে তিনি মুক্তি দিয়েছিলেন। চার দেয়ালের বদ্ধ ঘরের ধারণাকে ভেঙে খোলামেলা উন্মুক্ত পরিবেশ, গাছপালার সমাবেশ নিয়ে যে আধুনিক স্থাপত্যরীতি, সেটি তাঁর হাত থেকেই এসেছে।’ এই স্থাপত্যের নিদর্শন চারুকলা অনুষদ, জাহাঙ্গীরনগর ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। তাঁর অন্য বিখ্যাত স্থাপত্যের মধ্যে আছে বিসিএসআইআর (সায়েন্স ল্যাবরেটরি) ভবন, কৃষি ভবন, জাতীয় আর্কাইভস ভবন, এসব।
জানাজার পর জাতীয় পতাকা জড়ানো কফিনটি শববাহী গাড়িতে করে আনা হয় তাঁর গুলশানের বাসভবনে। সেখানেও তাঁর স্বজন, সুহূদ, অনুরাগীরা উপস্থিত ছিলেন তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা ও শোকসন্তপ্ত পরিবারকে সমবেদনা জানাতে। বেলা চারটায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আসেন শোকার্ত বাড়িটিতে। তিনি মরহুমের রুহের মাগফিরাত কামনা করে মোনাজাত করেন। মহান মুক্তিযুদ্ধে তাঁর ভূমিকা, দেশাত্মবোধ, স্থাপত্যশিল্পে অবদান তুলে ধরেন। প্রায় আধা ঘণ্টা সময় শোকসন্তপ্ত পরিবারের সঙ্গে কাটিয়ে প্রধানমন্ত্রী বিদায় নেন।
গুলশানের আজাদ মসজিদে বাদ আসর তাঁর দ্বিতীয় জানাজা সম্পন্ন হয়। এরপর মরদেহ মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে দাফন করা হয়।
সংক্ষিপ্ত জীবনী: স্থপতি মাজহারুল ইসলামের জন্ম ২৫ ডিসেম্বর ১৯২৩ সালে। বাবা অধ্যাপক ওমদাতুল ইসলাম, মা বেগম জাকিয়া খাতুন। স্ত্রী সালমা ইসলাম। দুই পুত্র স্থপতি রফিক মাজহার ইসলাম ও তানভীর মাজহার ইসলাম। কন্যা রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী ডালিয়া নওশীন।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৪২ সালে বিজ্ঞানে, ১৯৪৬ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পুরকৌশল বিদ্যায় এবং ১৯৫২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ওরেগন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থাপত্যবিদ্যায় স্নাতক হন। পরে স্থাপত্যে স্নাতকোত্তর ডিপ্লোমা করেন লন্ডনের স্কুল অব আর্কিটেকচার থেকে। যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থাপত্যে মাস্টার্স ডিগ্রি নিয়েছেন ১৯৬১ সালে। কর্মজীবন শুরু করেছিলেন পূর্ব পাকিস্তানের কনস্ট্রাকশন, বিল্ডিং অ্যান্ড ইরিগেশনে। সরকারি চাকরি থেকে অবসর নিয়ে প্রকৌশলী শেখ মুহম্মদ শহীদুল্লাহর সঙ্গে ‘বাস্তুকলাবিদ’ নামে একটি স্থাপত্য উপদেষ্টা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য অনুষদ চালু করার ক্ষেত্রে তিনি বিশেষ ভূমিকা রেখেছেন এবং এখানে খণ্ডকালীন শিক্ষকতা করেছেন। এ ছাড়া স্থপতি ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করেছেন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সেমিনারে অভিসন্দর্ভ উপস্থাপন করেছেন। পুরস্কারের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘স্বাধীনতা পদক’ ভারতের জে, কে সিমেন্ট আয়োজিত স্থাপত্যশিল্পে শ্রেষ্ঠ অবদানের জন্য ‘গ্র্যান্ড মাস্টার অ্যাওয়ার্ড’।
নাগরিক শোকসভা: স্থপতি ইনস্টিটিউটের উদ্যোগে নাগরিক শোকসভা হবে আগামী বুধবার বিকেল পাঁচটায়। জাতীয় জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তনে এই শোকসভায় আলোচনা পর্বের আগে তাঁর জীবন ও কর্ম নিয়ে ইনস্টিটিউটের উদ্যোগে নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র ‘তিনি’ প্রদর্শন করা হবে।
শোক: স্থপতি মাজহারুল ইসলামের মৃত্যুতে গভীর শোক ও পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া, জাতীয় সংসদের স্পিকার আবদুল হামিদ, ডেপুটি স্পিকার শওকত আলী, চিফ হুইপ আব্দুস শহীদ, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, শ্রম ও কর্মসংস্থানমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন, প্রধানমন্ত্রীর জনপ্রশাসনবিষয়ক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বিবৃতি দিয়েছেন। এ ছাড়া সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম, আইন ও সালিশ কেন্দ্র, বাংলাদেশ বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির পক্ষ থেকে শোক প্রকাশ করা হয়।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, বেশ অনেক দিন থেকেই তিনি বার্ধক্যজনিত নানা সমস্যায় ভুগছিলেন। এ বছরের শুরুর দিকে ব্যাংককে মাস দুয়েক তাঁর চিকিৎসা করানো হয়। তবে অবস্থার খুব একটা ইতিবাচক পরিবর্তন হয়নি। গত মে মাস থেকে ক্রমশই দুর্বল হয়ে পড়েন। এমনকি বাকশক্তিও হারিয়ে ফেলেন। ৩১ মে তাঁকে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এর পর থেকে সেখানেই চিকিৎসাধীন ছিলেন। শেষ দিনগুলোতে তাঁকে হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে রাখা হয়েছিল। জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে ছিলেন। চিকিৎসায় কোনো সাড়া দেননি। অবশেষে জীবনের চিরন্তন পরিণতি মেনে চিরনিদ্রায় নিমগ্ন হয়েছেন। গতকাল রোববার বাদ আসর মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী গোরস্থানে তাঁর অন্তিমশয্যা রচনা করা হয়েছে।
এর আগে দুপুর ১২টায় হাসপাতাল থেকে তাঁকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে আনা হয়। চারুকলা অনুষদের মনোরম স্থাপত্যকর্মটি তাঁর হাতেই গড়া। সেখানে সর্বস্তরের মানুষ দেশের স্থাপত্যশিল্পের এই পথিকৃতের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। অন্যান্যের মধ্যে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পক্ষে যুগ্ম সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে সহ-উপাচার্য, চারুকলা অনুষদ, বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউটসহ বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধি এবং ব্যক্তিগতভাবে রাজনীতি, শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি অঙ্গনের প্রতিনিধিরা, তাঁর সহকর্মী, ছাত্র ও অনুরাগীরা ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে বাদ জোহর প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে মসজিদ প্রাঙ্গণে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তাঁকে গার্ড অব অর্নার প্রদান করা হয়। রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান শোকবার্তায় বলেছেন, ‘তাঁর মৃত্যুতে দেশের যে ক্ষতি হয়েছে, তা অপূরণীয়।’
শ্রদ্ধা নিবেদন করতে আসা তাঁর একসময়ের সহকর্মী প্রবীণ স্থপতি শেখ মুহম্মদ শহীদুল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, ‘স্থাপত্যকর্মের মধ্যে তিনি ফাইন আর্টের অন্য সব বিষয়কে সমন্বিত করে স্থাপত্যের একটি নতুন ধারা সৃষ্টি করেছিলেন। এমন আর কেউ করেননি। তিনি পথিকৃৎ।’ স্থপতি ইনস্টিটিউটের সভাপতি মোবাশ্বের হোসেন বলেন, ‘আজ বিশ্বদরবারে বাংলাদেশের স্থপতিরা যে কৃতিত্ব অর্জন করছেন, বাংলাদেশের স্থাপত্যের যে উন্মেষ, এর নেপথ্যে পুরো অবদানটি মাজহারুল ইসলামের।’ কবি ও স্থপতি রবিউল হুসাইন বললেন, ‘১৯৫৪ সালে চারুকলা অনুষদের এই পুরো ভবন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের মধ্য দিয়ে তিনি এ দেশে আধুনিক স্থাপত্যের গোড়াপত্তন করেছিলেন। চারুকলার স্থাপত্যটি এখন ধ্রুপদি স্থাপত্যের মর্যাদা লাভ করেছে।’ স্থপতি শামসুল ওয়ারেস গুরুত্ব দিলেন তাঁর সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ভূমিকার ওপর। বললেন, ‘স্থাপত্যকর্মকে তিনি মুক্তি দিয়েছিলেন। চার দেয়ালের বদ্ধ ঘরের ধারণাকে ভেঙে খোলামেলা উন্মুক্ত পরিবেশ, গাছপালার সমাবেশ নিয়ে যে আধুনিক স্থাপত্যরীতি, সেটি তাঁর হাত থেকেই এসেছে।’ এই স্থাপত্যের নিদর্শন চারুকলা অনুষদ, জাহাঙ্গীরনগর ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। তাঁর অন্য বিখ্যাত স্থাপত্যের মধ্যে আছে বিসিএসআইআর (সায়েন্স ল্যাবরেটরি) ভবন, কৃষি ভবন, জাতীয় আর্কাইভস ভবন, এসব।
জানাজার পর জাতীয় পতাকা জড়ানো কফিনটি শববাহী গাড়িতে করে আনা হয় তাঁর গুলশানের বাসভবনে। সেখানেও তাঁর স্বজন, সুহূদ, অনুরাগীরা উপস্থিত ছিলেন তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা ও শোকসন্তপ্ত পরিবারকে সমবেদনা জানাতে। বেলা চারটায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আসেন শোকার্ত বাড়িটিতে। তিনি মরহুমের রুহের মাগফিরাত কামনা করে মোনাজাত করেন। মহান মুক্তিযুদ্ধে তাঁর ভূমিকা, দেশাত্মবোধ, স্থাপত্যশিল্পে অবদান তুলে ধরেন। প্রায় আধা ঘণ্টা সময় শোকসন্তপ্ত পরিবারের সঙ্গে কাটিয়ে প্রধানমন্ত্রী বিদায় নেন।
গুলশানের আজাদ মসজিদে বাদ আসর তাঁর দ্বিতীয় জানাজা সম্পন্ন হয়। এরপর মরদেহ মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে দাফন করা হয়।
সংক্ষিপ্ত জীবনী: স্থপতি মাজহারুল ইসলামের জন্ম ২৫ ডিসেম্বর ১৯২৩ সালে। বাবা অধ্যাপক ওমদাতুল ইসলাম, মা বেগম জাকিয়া খাতুন। স্ত্রী সালমা ইসলাম। দুই পুত্র স্থপতি রফিক মাজহার ইসলাম ও তানভীর মাজহার ইসলাম। কন্যা রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী ডালিয়া নওশীন।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৪২ সালে বিজ্ঞানে, ১৯৪৬ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পুরকৌশল বিদ্যায় এবং ১৯৫২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ওরেগন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থাপত্যবিদ্যায় স্নাতক হন। পরে স্থাপত্যে স্নাতকোত্তর ডিপ্লোমা করেন লন্ডনের স্কুল অব আর্কিটেকচার থেকে। যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থাপত্যে মাস্টার্স ডিগ্রি নিয়েছেন ১৯৬১ সালে। কর্মজীবন শুরু করেছিলেন পূর্ব পাকিস্তানের কনস্ট্রাকশন, বিল্ডিং অ্যান্ড ইরিগেশনে। সরকারি চাকরি থেকে অবসর নিয়ে প্রকৌশলী শেখ মুহম্মদ শহীদুল্লাহর সঙ্গে ‘বাস্তুকলাবিদ’ নামে একটি স্থাপত্য উপদেষ্টা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য অনুষদ চালু করার ক্ষেত্রে তিনি বিশেষ ভূমিকা রেখেছেন এবং এখানে খণ্ডকালীন শিক্ষকতা করেছেন। এ ছাড়া স্থপতি ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করেছেন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সেমিনারে অভিসন্দর্ভ উপস্থাপন করেছেন। পুরস্কারের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘স্বাধীনতা পদক’ ভারতের জে, কে সিমেন্ট আয়োজিত স্থাপত্যশিল্পে শ্রেষ্ঠ অবদানের জন্য ‘গ্র্যান্ড মাস্টার অ্যাওয়ার্ড’।
নাগরিক শোকসভা: স্থপতি ইনস্টিটিউটের উদ্যোগে নাগরিক শোকসভা হবে আগামী বুধবার বিকেল পাঁচটায়। জাতীয় জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তনে এই শোকসভায় আলোচনা পর্বের আগে তাঁর জীবন ও কর্ম নিয়ে ইনস্টিটিউটের উদ্যোগে নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র ‘তিনি’ প্রদর্শন করা হবে।
শোক: স্থপতি মাজহারুল ইসলামের মৃত্যুতে গভীর শোক ও পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া, জাতীয় সংসদের স্পিকার আবদুল হামিদ, ডেপুটি স্পিকার শওকত আলী, চিফ হুইপ আব্দুস শহীদ, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, শ্রম ও কর্মসংস্থানমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন, প্রধানমন্ত্রীর জনপ্রশাসনবিষয়ক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বিবৃতি দিয়েছেন। এ ছাড়া সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম, আইন ও সালিশ কেন্দ্র, বাংলাদেশ বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির পক্ষ থেকে শোক প্রকাশ করা হয়।
No comments