দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি-কার্যকর তদারকি প্রয়োজন

আর মাত্র পাঁচ-ছয় দিন বাকি পবিত্র রমজান মাস শুরু হতে। অন্যান্য বছরের মতো এবারও ব্যবসায়ীরা রমজান উপলক্ষে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের মূল্য ব্যাপক হারে বাড়িয়ে দিয়েছে। আর সরকার যথারীতি মূল্য নিয়ন্ত্রণে চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, কোনো কোনো পণ্যে এই বৃদ্ধির হার শতভাগ।


কোনো কোনো ক্ষেত্রে সরকারের ভুল সিদ্ধান্তও মূল্যবৃদ্ধির ক্ষেত্রে সহায়ক হয়। যেমন- সপ্তাহখানেক আগে যখন বাজারে চিনির দাম ছিল প্রতি কেজি ৫২-৫৩ টাকা, তখন চিনি ও খাদ্যশিল্প সংস্থা ৬০ টাকা কেজি দরে চিনি বিক্রি শুরু করে। ফলে বাজারে এখন চিনির দাম ৫৮ টাকায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে। মাসখানেক আগেই সরকারের তরফ থেকে বলা হয়েছিল, ১৪টি টিম বাজার তদারকির কাজ শুরু করবে। অথচ এ পর্যন্ত সেসব টিমের কোনো নজরদারিই চোখে পড়ছে না। বাজারেও এর কোনো প্রভাব দেখা যাচ্ছে না।
সরকারের আমলা ও মন্ত্রীরা বারবার বলছেন, বাজারে কোনো সিন্ডিকেট নেই এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের পর্যাপ্ত মজুদ আছে। তাহলে ক্রমাগত দাম বাড়ছে কেন? প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিন তেলসহ কোনো কোনো পণ্যের দাম যথেষ্ট পরিমাণে কমেছে। কিন্তু আমাদের বাজারে সেসব পণ্যেরও দাম বাড়ছে কেন? সরকার আমদানিকারকদের জন্য ১ শতাংশ, পাইকারি বিক্রেতাদের জন্য ১ শতাংশ এবং খুচরা বিক্রেতাদের জন্য সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ পর্যন্ত মুনাফা নির্ধারণ করে দিয়েছিল। অথচ বাস্তবে কোথাও সে নিয়ম মানা হচ্ছে না। কাস্টম হাউসের তথ্য অনুযায়ী, আমদানি করা প্রতি কেজি সাধারণ মানের ছোলার দাম পড়ছে ৫৫-৫৬ টাকা এবং খরচসহ দাম পড়ছে ৫৮-৫৯ টাকা। আর ভালো মানের ছোলার আমদানি খরচসহ দাম পড়ছে ৬৭-৬৮ টাকা। অথচ পাইকারিভাবেই সাধারণ মানের ছোলা ৭৩ এবং ভালো মানের ছোলা ৭৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। একই অবস্থা দেখা যায় সয়াবিন তেলের ক্ষেত্রেও। অর্থাৎ কেউ কোনো নিয়ম মানছে না। অথচ মাত্র ১২টি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান রমজান উপলক্ষে আনা সয়াবিন, ছোলা, মসুর ডাল ও চিনির বাজারের বেশির ভাগ নিয়ন্ত্রণ করে। এ প্রতিষ্ঠানগুলো সরকারের নির্ধারিত নিয়ম মানছে কি না তা দেখার ক্ষমতাও কি সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর নেই? এ ব্যর্থতার জন্য কি নির্দিষ্ট বিভাগ বা সংস্থাগুলোর অদক্ষতা দায়ী, নাকি তারা বিশেষ কারণে ইচ্ছা করেই সেসব এড়িয়ে যাচ্ছে, সেসবের তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সংসদীয় কমিটির ভূমিকাও আমাদের কাম্য।
সড়ক-মহাসড়কে ডাকাতি ও চাঁদাবাজির প্রতিবাদে ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান মালিক সমিতি এবং ট্রান্সপোর্ট এজেন্সি মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের আহ্বানে সম্প্রতি ৪৮ ঘণ্টার ধর্মঘট পালন করা হয়েছে। পরিবহন ব্যবসায়ীদের দাবি, গত এক বছরে কেবল ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কেই অন্তত ২০০ কোটি টাকার পণ্য অথবা পণ্যসমেত ট্রাক-ভ্যান ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। চালক ও হেলপারদের খুন করা হচ্ছে। এই ধর্মঘটের কারণেও জিনিসপত্রের দাম কিছুটা বেড়েছে। পাশাপাশি এটা তো সত্য যে ডাকাতি ও চাঁদাবাজির কারণে পণ্য পরিবহনের খরচ অনেক বেড়ে যায়, সেই সঙ্গে বাড়ে পণ্যের দামও। আর চূড়ান্তভাবে ভোক্তাদেরই সেই বর্ধিত মূল্য পরিশোধ করতে হয়। ভোক্তা কারা? এ দেশেরই সাধারণ মানুষ তথা জনগণ। জনগণের স্বার্থ বিবেচনা করা কি সরকারের কর্তব্য নয়? রাস্তায় কারা চাঁদাবাজি করছে তা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর অজানা থাকার কথা নয়। এমনকি এক শ্রেণীর পুলিশের বিরুদ্ধেও চাঁদাবাজির ব্যাপক অভিযোগ রয়েছে। আমরা আশা করি, ভোক্তার স্বার্থরক্ষায় সরকার আন্তরিক হবে, মনিটরিং টিম ও সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলো যথাযথভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করবে এবং সিন্ডিকেট থাক আর না থাক, বাজারে যেন পাইকারি ও খুচরা বিক্রির সঙ্গে আমদানিমূল্যের সামঞ্জস্য থাকে, তার নিশ্চয়তা বিধান করতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.