'ত্রেইমসে ভারী অস্ত্রের ব্যবহার হয়নি কোনো গণহত্যাও হয়নি'
সিরিয়ার ত্রেইমসের গ্রামে গত বৃহস্পতিবার সরকারি বাহিনীর হামলায় ভারী অস্ত্র ব্যবহৃত হয়েছে_জাতিসংঘের এমন দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে দামেস্ক। তারা বরং উল্টো অভিযোগ করেছে, এ ব্যাপারে 'তড়িঘড়ি' মন্তব্য করেছেন জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন ও সিরিয়ার সংকট নিরসনে আরব লিগ মনোনীত বিশেষ দূত কফি আনান।
সেদিনের ঘটনাকে 'গণহত্যা' মানতেও নারাজ তারা। দামেস্কের দাবি, সেটা ছিল দুই পক্ষের সশস্ত্র সংঘর্ষ। এতে মারা গেছে ৩৭ জন।
এদিকে ঘটনা তদন্তে গতকাল রবিবার আবারও ত্রেইমসে গেছেন সিরিয়ায় অবস্থানকারী জাতিসংঘের পর্যবেক্ষক মিশন (ইউএনএসএমআইএস)। আগের দিন শনিবার ত্রেইমসে সফর শেষ ইউএনএসএমআইএস বৃহস্পতিবারের হামলায় ভারী অস্ত্রের ব্যবহারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছিল। তবে হতাহতের সংখ্যা জানাতে পারেনি তারা। সরকারবিরোধীদের দাবি, সরকারি বাহিনীর ভারী অস্ত্রের হামলায় বৃহস্পতিবার হামা প্রদেশের ওই গ্রামটিতে কমপক্ষে ১৫০ জন বেসামরিক নাগরিক মারা যায়। এ ঘটনায় বিশ্বব্যাপী নিন্দার ঝড় ওঠে। জাতিসংঘ মহাসচিব এ ব্যাপারে কঠোর ভাষায় নিন্দা জানিয়ে নিরাপত্তা পরিষদকে সক্রিয় ভূমিকা নেওয়ার আহ্বান জানান। গতকালও সংঘাতে হোমস শহরে দুজন বেসামরিক নাগরিকসহ ৯ জন মারা গেছে বলে সরকারবিরোধীরা দাবি করেছে।
গতকাল দামেস্কে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সিরীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জিহাদ মাকদিসি বলেন, ত্রেইমসে হামলায় হেলিকপ্টার, যুদ্ধবিমান বা ট্যাংকের মতো ভারী কোনো অস্ত্রের ব্যবহার হয়নি। রকেটচালিত গ্রেনেডসহ হালকা অস্ত্র ব্যবহৃত হয়েছে। তিনি দাবি করেন, পাঁচটি বাড়িতে লুকিয়ে থাকা 'সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের' লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়েছে। হামলার ক্ষেত্র এত ছোট ছিল যে সেখানে ট্যাংক ব্যবহারের কোনো সুযোগই ছিল না। 'সেখানে গণহত্যার কোনো ঘটনা ঘটেনি। ভারী অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত একটি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সামরিক বাহিনীর নিয়মিত হামলার অংশ ছিল এটি। ওই গোষ্ঠী সিরিয়া সংকটের রাজনৈতিক সমাধান চায় না।' ভারী অস্ত্রের ব্যবহার সম্পর্কে নিশ্চিত না হয়েই আনান 'তড়িঘড়ি' সিরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছেন বলেও তিনি দাবি করেন।
ক্রেমলিন গতকাল জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে আজ সোমবার বৈঠক করবেন আনান। পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভের সঙ্গেও তাঁর বৈঠকের সূচি রয়েছে। আজ সকালে আনানের মস্কোয় পেঁৗছার কথা। সিরীয় প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের উৎখাতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপ ক্রমশ বাড়ছে। সিরিয়ার অন্যতম মিত্র রাশিয়াও শেষ পর্যন্ত আনানের শান্তি পরিকল্পনার পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। এ অবস্থায় আনানের মস্কো সফরকে গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা করা হচ্ছে। গত ২৫ মার্চ রাশিয়া প্রথমবারের মতো ছয় শর্তসংবলিত আনানের শান্তি পরিকল্পনায় সম্মতিদানের পর এটি আনানের দ্বিতীয় মস্কো সফর। এদিকে ইন্দোনেশিয়া সফররত অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী বব কার আসাদ সরকারের পতন ঘটানোর পক্ষে সমর্থন দিতে রাশিয়ার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। জাতিসংঘ জানিয়েছে, আজ চীন সফরে যাবেন বান কি মুন। ইতিমধ্যে তিনি শান্তি পরিকল্পনা বাস্তবায়নে আসাদ সরকারকে চাপ দিতে বেইজিংয়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। দামেস্কের ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে পরিচিত চীনও গত ৩০ জুন প্রথমবারের মতো রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় ক্ষমতা হস্তান্তরে আসাদের প্রতি আহ্বান জানায়। এ অবস্থায় জাতিসংঘ মহাসচিবের বেইজিং সফর সিরিয়ার সমস্যা সমাধানে বিশেষ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে। এদিকে সিরিয়ায় সাহায্য পাঠানোর প্রয়োজনীয়তার ব্যাপারে আজ জেনেভায় আলোচনায় বসবেন দাতারা। জাতিসংঘ জানিয়েছে, সিরিয়ার সংঘাতময় এলাকার প্রায় সাড়ে আট লাখ মানুষের জন্য চলতি মাসে খাদ্য সাহায্য পাঠানো হবে। এ জন্য ১৮ কোটি ৯০ লাখ ডলারের সাহায্যের আবেদন জানানো হয়েছিল। এর মধ্যে মাত্র এক-পঞ্চমাংশ পাওয়া গেছে। এ অবস্থায় আজ বৈঠক হবে। সূত্র : এএফপি, বিবিসি।
No comments