স্বামীর চার বন্ধুর ধর্ষণের বিষয়টি রহস্যজনক-সীমার অভিযোগের সঙ্গে তার আচরণ ও পারিপার্শ্বিকতা সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়

স্বামীর চার বন্ধু কর্তৃক ধর্ষিত হওয়ার অভিযোগে দায়েরকৃত মামলায় বাকি আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে। গ্রেফতারকৃত দুই আসামিকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। ঘটনাটি সাজানো বলে অভিযোগ করেছেন গ্রেফতারকৃত ২ জনের পরিবার।


পুরো বিষয়টি নিয়ে রীতিমতো রহস্যের জন্ম হয়েছে। পারিবারিক কলহের জের ধরে এমন অভিযোগে রহস্যজনক মামলাটি দায়ের হতে পারে।
গত ১২ জুলাই সকাল সাড়ে ১০টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পালাক্রমে গৃহবধূ সীমা স্বামীর চার বন্ধু কর্তৃক ধর্ষিত হয়েছেন বলে রাজধানীর উত্তরা থানায় ঘটনার পরদিন একটি মামলা দায়ের হয়। মামলায় গৃহবধূ সীমা আক্তার (২০) উল্লেখ করেন, তাঁর পিতার নাম সিরাজুল ইসলাম। মাতা বিলকিস। বাড়ি নওগাঁ জেলার মহাদেবপুর থানার খোশালবাড়ি এলাকায়। এক বছর আগে মোবাইল ফোনে শফি মাহমুদ
মনোয়ার ওরফে রিংকনের সঙ্গে পরিচয়। রিংকনের পিতার নাম একেএস আব্দুল মোতাবেল। মা রাবেয়া খাতুন। বাড়ি ময়মনসিংহ জেলা সদরের ১০ নম্বর ওয়ার্ডের গার্লস স্কুল রোডের ১৯/১ নম্বরে। পরিচয়ের সুবাদে নওগাঁতে কয়েকবার রিংকনের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাত হয়। চলতি বছরের ৫ জুন ৫ লাখ টাকা দেনমোহর ধার্য করে নওগাঁ আদালতে তাদের বিয়ে হয়। বিয়ের পর ৩ মাস তার বাড়িতে থাকার পর ঢাকায় আসে। ঢাকায় আসার পর স্বামীসহ স্বামীর বন্ধু মঈনুল ও রেজার সঙ্গেও মোবাইল ফোনে কথা হতো। স্বামীর কথামতো গত ৯ জুলাই রাতে রওনা হয়ে ভোর সাড়ে ৬টার দিকে ঢাকায় পৌঁছেন। ঠিকানা মোতাবেক উত্তরার ৪ নম্বর সেক্টরের ২০/সি নম্বর রোডের ৪ নম্বর বাড়িতে পৌঁছি। সাইমন হক জোয়ার্দ্দার নামে একজন বাড়ির গেট খুলে আমাকে স্বামীর কাছে নিয়ে যান। সারাদিন ওই বাসাতেই থাকি। সন্ধ্যায় স্বামী মনোয়ার আমাকে নিয়ে তার বন্ধু আব্দুল্লাহ ও আজিজের রাজধানীর দক্ষিণ খানের বাসায় যান। ১২ জুলাই সকাল সাড়ে ৯টা পর্যন্ত আমি সেখানেই ছিলাম। সকাল ১০টার দিকে পুনরায় আমাকে উত্তরার ২০/সি নম্বর রোডের ৪ নম্বর বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়। তখন সকাল সাড়ে ১০টা। আমাকে আমার স্বামী রুমে রেখে বাইরে থেকে তালা লাগিয়ে দেয়। কিছুক্ষণ পর সাইমন হক জোয়ার্দ্দার (৪০) রুমের তালা খুলে ভেতরে প্রবেশ করে। আমাকে হত্যার ভয় দেখিয়ে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। ধর্ষণ শেষে সে বাইরে তালা লাগিয়ে চলে যায়। এরপর রেজা (২৮) ও বক্কর এসে পরপর একইভাবে ধর্ষণ করে। সর্বশেষে মঈনুল হক (৩০) (তার স্বামীর এক রুমমেট) জোরপূর্বক তাকে ধর্ষণ করে। পর্যায়ক্রমে আসামিরা তাকে ধর্ষণ করে। সন্ধ্যার পর আসামি সাইমন হক জোয়ার্দ্দার বাইরে থেকে তালা খুলে ভেতরে প্রবেশ করে আমাকে হত্যার হুমকি দিয়ে হাতে ৫শ’ টাকা দিয়ে বাসযোগে নওগাঁ চলে যেতে বলে। রুম থেকে বের করে দেয়ার সময় তার হাতব্যাগ ওই রুমেই ছিল। ব্যাগে জামা-কাপড়, জুতো, মোবাইল ফোন ও কিছু কাগজপত্র ছিল।
ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেছে, আঞ্জুমান মঞ্জিল নামে ৩ তলা বাড়িটির তিন তলার উপরের চিলেকোঠায় ২টি কক্ষ। তাতে আসামি সাইমুনের পরিবার প্রায় ৯ বছর ধরে বসবাস করছেন। বাড়িটির নিচতলায় সাইমুনের মালিকানাধীন অরিজিন লজিস্টিক এ্যান্ড সার্ভিসেস কোম্পানি লিমিটেড নামে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটির কাজ বিভিন্ন ব্যাংকের ঋণগ্রহীতাদের কাছ থেকে টাকা উত্তোলন করা। সাইমুনের ছেলে সামিউন জানায়, সে পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্র। তার ছোট ভাই আদ্বিনের বয়স ৩ বছর। আর দ্বিতীয় তলায় মেস। সেখানে ৪টি কক্ষ। একটি কক্ষে সীমার স্বামী রিংকনসহ ৩ জন বাস করেন।
সাইমুনের স্ত্রী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জনকণ্ঠকে বলেন, তিনি মূলত গৃহবধূ। প্রায় সারাক্ষণই তিনি বাসায় থাকেন। সীমার স্বামী রিংকন তার স্বামী সাইমুনের প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। যে বাসায় সীমা উঠেছিল সেটি মূলত একটি মেস। ১২ জুলাই বৃহস্পতিবার ওই মেসে দুই গৃহকর্মীসহ অনেকেই ছিলেন। একজন গৃহবধূ ৪ পুরুষ কর্তৃক ইচ্ছার বিরুদ্ধে ধর্ষিত হলেন, অথচ বিষয়টি কেউ জানতে পারল না। এমনকি বাইরে থেকে তালা দিয়ে রাখার পর ভেতর থেকে কেন ওই গৃহবধূ ছিটকিনি লাগাননি। বাড়িটির পাশেই বাসা রয়েছে। পুরো বাড়ির কেউ বিষয়টি জানতে পারল না। বিষয়টি রীতিমতো রহস্যজনক। প্রথম জন ধর্ষণ করার পর গৃহবধূ কেন ভেতর থেকে ছিটকিনি লাগাননি। অথবা কেন তিনি চিৎকার চেঁচামেচি করেননি। একইভাবে পরপর ৪ জন গৃহবধূকে ধর্ষণ করার বিষয়টি রীতিমতো রহস্যজনক।
সীমার স্বামীর আরেক স্ত্রী আছে বলে তিনি শুনেছেন। পুরো ঘটনার সঙ্গে সীমার পূর্বপরিচিত দুইজন জড়িত। পুরো ঘটনাটি সাজানোর আগে দুইজনের একজন তার কাছে টেলিফোন করে ৪ লাখ টাকা দাবি করেছিল। টাকা দিতে রাজি না হওয়ায় শেষ পর্যন্ত ৬০ হাজার টাকা দাবি করে। তাতেও রাজি না হলে এমন অভিযোগে মামলা দায়েরের ঘটনা ঘটে।
গ্রেফতারকৃত অপরজন বাড়ির মালিকের পরিবারও একই ধরনের অভিযোগ করেছেন। বাড়ির গৃহকর্মী ও অন্যদের জিজ্ঞাসাবাদ করে এ ধরনের কোন ঘটনা ঘটেনি বলে জানা গেছে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উত্তরা মডেল থানার উপ-পরিদর্শক আবু মিয়া জনকণ্ঠকে জানান, পুরো বিষয়টি রহস্যজনক। সীমা গত ১২ জুলাই রাত প্রায় ৯টার দিকে থানায় উপস্থিত হয়ে মামলা দায়ের করেন। প্রাথমিকভাবে সীমা ধর্ষিত হওয়ার আলামত পাওয়া গেছে। তবে তা ধর্ষণ নাকি তার স্বামীর সঙ্গে সহবাসের আলামত তা স্পষ্ট নয়। গণধর্ষণের বিষয়টি রীতিমতো রহস্যের জন্ম দিয়েছে। ধর্ষণের পর বাইরের থেকে তালা লাগানো হলো। আবার আরেকজন তালা খুলে ভেতরে গেল। অথচ রুমটি ভেতর থেকে ছিটকিনি দেয়ার পদ্ধতি আছে। বিষয়টি রীতিমতো গোলকধাঁধার সৃষ্টি করেছে। তারপরও গ্রেফতারের বাইরে থাকা আসামি রেজা, বক্কর ও রিংকনকে গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত আছে। গ্রেফতারকৃত সাইমুন ও মঈনুলকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। সীমার মেডিক্যাল পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। মেডিক্যাল টেস্টেই ধরা পড়বে সীমা গণধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন কিনা।

No comments

Powered by Blogger.