পদ্মা সেতু প্রকল্পের প্রাসঙ্গিক বাস্তবতা by মোঃ মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া
ইদানীং দেশের প্রায় সব পত্রপত্রিকা এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় পদ্মা সেতু প্রকল্পের বিষয়ে প্রচুর লেখালেখি ও আলাপ-আলোচনা হচ্ছে। দেশের রাজনীতিবিদ, বুদ্ধিজীবী, সিভিল সোসাইটি থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষও বিষয়টিতে কৌতূহলী হয়ে পড়েছেন।
বিশ্বব্যাংক গত ২৯ জুন প্রকল্পের ঋণচুক্তি বাতিল করায় বিষয়টিতে নতুন মাত্রা যুক্ত হয়েছে। এটি ‘টক অব দ্য কান্ট্রি’-তে পরিণত হয়েছে। এ অবস্থায় অনেক ক্ষেত্রেই পত্রিকা ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় আলোচকবৃন্দ প্রাসঙ্গিক বাস্তবতা যথার্থভাবে না জেনেই ধারণাপ্রসূত তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে অসত্য, অর্ধসত্য এবং ক্ষেত্রবিশেষে কাল্পনিক তথ্য উপস্থাপন করছেন। যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সেতু বিভাগের সচিব পদে দু’বছর কাজের সুবাদে আমি প্রত্যক্ষভাবে পদ্মা সেতু প্রকল্পের বিষয়ে অবহিত হওয়ার সুযোগ পেয়েছি। সময়ের প্রয়োজনে এবং দেশের স্বার্থে সে অভিজ্ঞতালব্ধ প্রাসঙ্গিক ঘটনাবলী জনসাধারণকে অবহিত করার লক্ষ্যে এ লেখার প্রয়াস।
পদ্মা সেতু প্রকল্পের কাজ, বিশেষজ্ঞ কমিটি ও ডিজাইন পরিবর্তন
বাংলাদেশে পদ্মা সেতু প্রকল্পই সম্ভবত একমাত্র প্রকল্প, যাতে ঋণচুক্তি সম্পাদনের পূর্বেই কাজ শুরু করার সম্মতি দেয়া হয়েছিল। প্রকল্পের কাজে সময়ক্ষেপণ পরিহার করে একইসঙ্গে বিভিন্ন কাজ এগিয়ে নেয়ার পদক্ষেপ গৃহীত হয়েছিল। একদিকে ডিজাইন প্রণয়ন, অন্যদিকে আনুষঙ্গিক কাজের প্রস্তুতি যেমন জমি অধিগ্রহণ ও এর মূল্য প্রদান, ৪টি পুনর্বাসন সাইট উন্নয়ন, পরিকল্পনামাফিক রাস্তাঘাট ও ইউটিলিটি সার্ভিস স্থাপনসহ অন্যান্য নাগরিক সুবিধার ব্যবস্থাকরণ, পরিবেশ সংরক্ষণ ইত্যাদি কার্যক্রম স্বচ্ছতা ও দ্রুততার সঙ্গে সম্পাদনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। অধিগ্রহণকৃত জমির সঠিক মূল্য পুনর্নির্ধারণের ও প্রদানের ক্ষেত্রে সেতু বিভাগের পদক্ষেপ ও ভূমিকা মাওয়া ও জাজিরা সাইটের ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ ও জনপ্রতিনিধিগণের কাছে বিপুলভাবে প্রশংসিত হয়। এ সব কাজে নূ্যূনতম কোন দুর্নীতি, অনিয়ম বা অভিযোগ ব্যতীত সরকারী বাজেটের ১০০০ কোটি টাকারও বেশি ব্যয় হয়। বিশ্বব্যাংকসহ প্রকল্পের সকল উন্নয়ন সহযোগীর প্রতিনিধিবর্গ উক্ত কার্যাদি পরিদর্শন করে সন্তোষ প্রকাশ করেন।
বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক, ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংক ও জাইকা প্রত্যেকেই পদ্মা সেতুর কাজের জন্য একজন করে প্রতিনিধি মনোনীত করে। সার্বিক কাজ সমন্বয়ের জন্য উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার মধ্যে বিশ্বব্যাংককে সমন্বয়কের দায়িত্ব দেয়া হয়। তদপ্রেক্ষিতে বিশ্বব্যাংক তাদের একজন অভিজ্ঞ কর্মকর্তাকে ‘টাস্ক টিম লিডার’ হিসেবে মনোনীত করে। উক্ত মনোনীত ব্যক্তিগণ সার্বক্ষণিক পদ্মা সেতু প্রকল্পের পরিচালকসহ অন্য ইঞ্জিনিয়ারগণের এবং ডিজাইন পরামর্শকের সঙ্গে যোগাযোগ ও সভার মাধ্যমে বিভিন্ন বিষয় নিষ্পত্তি করেন। আমাদের সহায়তার জন্য একটি আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ টিম (Pannel or Experts) গঠন করা হয়। প্রফেসর ড. জামিলুর রেজা চৌধুরীর নেতৃত্বে গঠিত উক্ত বিশেষজ্ঞ টিমে বুয়েটের আরও চারজন অধ্যাপক নিয়োজিত; তারা হলেন প্রফেসর ড. আইনুন নিশাত, ড. মু. সফিউল্লাহ, ড. ফিরোজ এবং ড. আলমগীর মুজিবুল হক। এছাড়া জাপান, নেদারল্যান্ডস ও নরওয়ের পাঁচজন পানি বিশেষজ্ঞ এই প্যানেলে অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। এদের অধিকাংশই বঙ্গবন্ধু যমুনা সেতু নির্মাণকালীন প্যানেল সদস্য হিসেবে কাজ করেছেন। ডিজাইন প্রণয়ন, সেতুর প্রতিটি প্যাকেজের ব্যয় নির্ধারণ, টেন্ডার প্রাক-যোগ্যতার ডকুমেন্ট তৈরি, মূল টেন্ডার ডকুমেন্ট তৈরি ইত্যাদি প্রতিটি ক্ষেত্রে উন্নয়ন সহযোগীদের ক্লিয়ারেন্স গ্রহণ করা হয়। সেতু বিভাগের পক্ষ হতে দ্রুত সিদ্ধান্ত প্রদান, নথি অনুমোদন, বিভিন্ন বিষয়ে সমন্বয় ইত্যকার বিষয় উন্নয়ন সহযোগী, প্যানেল অব এক্সপার্টস, ডিজাইন পরামর্শক এবং সর্বোপরি সরকারের কাছে ব্যাপক প্রশংসিত হয়। মূল সেতুর ঠিকাদার প্রাক-যোগ্যতার জন্য টেন্ডার আহ্বান করা হলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ১১টি প্রতিষ্ঠান প্রস্তাব দাখিল করে। এর মধ্যে মূল্যায়ন কমিটি পাঁচটি প্রতিষ্ঠানকে প্রাক-যোগ্য হিসেবে নির্বাচন করে। ডিজাইন আংশিক পরিবর্তনের অজুহাতে বিশ্বব্যাংক পুনঃ টেন্ডার আহ্বানের প্রস্তাব দেয়। পূর্বের ডিজাইনে দরপত্রে অংশগ্রহণে আগ্রহী প্রতিষ্ঠানসমূহের ইড়ৎবফ অথবা জধপশরহম চরষরহম-এর অভিজ্ঞতা থাকতে হবে মর্মে উল্লেখ ছিল। পরে চূড়ান্ত ডিজাইনে শুধু জধপশরহম চরষরহম-এর প্রভিশন রাখা হয়। বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে বিবাদ এবং লেখালেখিতে সময়ক্ষেপণ হতে পারে বিবেচনায় পুনঃটেন্ডার বিজ্ঞপ্তির প্রস্তাবে সম্মত হয়ে এপ্রিল ২০১০ সালে পুনরায় টেন্ডার আহ্বানের প্রেক্ষিতে পূর্বের পাঁচটি প্রতিষ্ঠানসহ মোট ১০টি প্রতিষ্ঠান দরপত্রে অংশ নেয় এবং পূর্বের প্রাক-যোগ্য বিবেচিত পাঁচটি প্রতিষ্ঠানই মূল্যায়ন কমিটি কর্তৃক প্রাক-যোগ্য বিবেচিত হয়।
প্রকল্পের কাজের মোটা দাগের প্যাকেজ, মূল্যায়ন কমিটি ও মূল্যায়ন
পদ্মা সেতু সংশ্লিষ্ট কাজ (package) মূলত মূল সেতু, নদীশাসন, সংযোগ সড়কসহ যাবতীয় পূর্ত কাজ এবং Construction Supervision Consultant ও Management Support Consultant নিয়োগ।
স্বচ্ছ ও বস্তুনিষ্ঠ মূল্যায়নের উদ্দেশে মাননীয় মন্ত্রী এবং উন্নয়ন সহযোগী সমন্বয়ক বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে আলোচনাক্রমে পদ্মা সেতু সংশ্লিষ্ট কাজ যথা মূল সেতু, নদীশাসন, সংযোগ সড়কসহ যাবতীয় পূর্ত কাজের দরপত্র মূল্যায়নের জন্য আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত বিশেষজ্ঞ এবং প্রশ্নাতীত সুনামের অধিকারী প্রফেসর ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী, ড. আইনুন নিশাত ও ড. আবু সিদ্দিকসহ সাত কর্মকর্তাকে নিয়ে একটি দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি গঠন করা হয়। এছাড়া Construction Supervision Consultant I Management Support Consultant দরপত্র মূল্যায়নের জন্য সচিবের নেতৃত্বে অপর একটি মূল্যায়ন কমিটি গঠন করা হয়। এ কমিটির অন্যান্য সদস্য ছিলেন সড়ক ও জনপথ বিভাগের সাবেক অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী তরুণ তপন দেওয়ান, পানি উন্নয়ন বোর্ডের অতিরিক্ত মহাপরিচালক প্রকৌশলী মকবুল আহমেদ, বুয়েটের একজন অধ্যাপক, এলজিইডির একজন অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী, পদ্মা সেতুর প্রকল্প পরিচালক রফিকুল ইসলাম এবং সেতু কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী কাজী মোঃ ফেরদৌস।
মূল সেতু, নদীশাসন, সংযোগ সড়কসহ যাবতীয় নির্মাণ প্যাকেজের মূল্যায়ন প্রক্রিয়ায় সহায়তা করেন ডিজাইন পরামর্শক প্রতিষ্ঠান অঊঈঙগ। মূল্যায়ন কমিটি অত্যন্ত স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষভাবে কাজ করেছে; তাঁদের কাজে কোনভাবেই কোন প্রভাব বিস্তার বা সেরূপ প্রচেষ্টা হয়নি; এমনকি মূল্যায়ন কমিটির কোন সিদ্ধান্ত বা মতামত সচিব কিংবা মন্ত্রী কর্তৃক কখনও অগ্রাহ্য করা হয়নি। দ্বিতীয়বার টেন্ডার আহ্বানের পর মূল সেতুর প্রাক-যোগ্যতা মূল্যায়ন প্রতিবেদন, ডিজাইন পরামর্শক এবং মূল্যায়ন কমিটি কর্তৃক চূড়ান্ত করার পর ০৮ জানুয়ারি, ২০১১ বিশ্বব্যাংকে প্রেরণ করা হয়। প্রথম টেন্ডারের পর যে পাঁচটি প্রতিষ্ঠান প্রাক-যোগ্য বিবেচিত হয়েছিল দ্বিতীয় টেন্ডারের মূল্যায়নেও সে পাঁচটি প্রতিষ্ঠানই কমিটি কর্তৃক প্রাক্-যোগ্য হিসেবে মূল্যায়ন করা হয়েছিল। বিশ্বব্যাংক টাস্ক টিম লিডার ২৯ মার্চ ও ০৬ এপ্রিল তারিখের ই-মেইলের মাধ্যমে চায়না রেলওয়ে কনস্ট্রাকশন করপোরেশনকে (সিআরসিসি) প্রাক্-যোগ্য হিসেবে বিবেচনার অনুরোধ করে। মূল্যায়ন কমিটি তথা সেতু বিভাগ ০৭ এপ্রিল এক পত্রে সিআরসিসি-কে যোগ্য হিসেবে বিবেচনায় অসম্মতি জানায়। পুনরায় বিশ্বব্যাংক ১৩ এপ্রিল ই-মেইলে সিআরসিসির কাছ থেকে কিছু অতিরিক্ত তথ্য সংগ্রহ করে প্রস্তাব পুনর্মূল্যায়নের অনুরোধ জানায়। তদপ্রেক্ষিতে সেতু কর্তৃপক্ষ সিআরসিসির কাছে তাদের পূর্ব কাজের অভিজ্ঞতার স্বপক্ষে ড্রয়িং, ফটোগ্রাফ, নির্মাণসামগ্রী এবং বৃহৎ ডায়ামিটারের রেকিং পাইলে ব্যবহৃত হ্যামারের বর্ণনা দেয়ার জন্য চিঠি লেখেন। তারা যেসব তথ্য প্রেরণ করে তাতে ডিজাইন পরামর্শক ও মূল্যায়ন কমিটি বড় রকমের অসঙ্গতি দেখতে পায়। তারা অন্য প্রতিষ্ঠানের নির্মাণ করা ব্রিজের ছবি পরিবর্তন করে সিআরসিসির নামে জমা দেয়। তাছাড়া অন্যান্য কারিগরি বিষয়ে যেসব তথ্য হাজির করে তাতে পদ্মা সেতুর মতো বড় ব্রিজের পাইলিং করার মতো যোগ্যতা প্রমাণ করে না। ০৭ মে, ২০১১ তারিখে ডিজাইন পরামর্শক প্রতিষ্ঠান তার প্রতিবেদনে উল্লেখ করে যে, সিআরসিসি মিথ্যা তথ্য প্রদান করেছে। এতদপ্রেক্ষিতে ঢাকাস্থ চীনা দূতাবাসের ইকোনমিক কাউন্সিলরকে বিবিএ অফিসে ডেকে এনে সিআরসিসির চিঠি দেখানো হলে তিনি জানান যে, চিঠিতে উল্লেখিত চীনা কর্মকর্তার নামের স্বাক্ষর চীনা ভাষার নকল স্বাক্ষর। ০৯ মে, ২০১২ সিআরসিসি সেতু কর্তৃপক্ষকে পত্র দিয়ে মূল সেতুর প্রাক-যোগ্যতার প্রস্তাব প্রত্যাহার করে নেয় এবং তাদের স্থানীয় এজেন্ট ঠবহঃঁৎব ওহঃবৎহধঃরড়হধষ খরসরঃবফ-এর এজেন্সিশিপ বাতিল করে। এতে প্রতীয়মান হয় যে, সিআরসিসির পক্ষে স্থানীয় এজেন্ট ঠবহঃঁৎব ওহঃবৎহধঃরড়হধষ খরসরঃবফ বিভিন্ন জাল তথ্য পরিবেশন করেছে। ১৮ মে, ২০১১ তারিখে পুনরায় পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের প্রিকোয়ালিফিকেশনের সুপারিশ বিশ্বব্যাংকে প্রেরণ করা হয়। সিআরসিসি প্রাক্্-যোগ্যতার প্রতিযোগিতা হতে নাম প্রত্যাহার করায় বিশ্বব্যাংক আর তাদের পক্ষে চাপ প্রয়োগ করেনি। সিআরসিসির স্থানীয় এজেন্ট ঠবহঃঁৎব ওহঃবৎহধঃরড়হধষ খরসরঃবফ যোগাযোগ মন্ত্রী কর্তৃক মূল্যায়ন কমিটিকে প্রভাবিত করা হয়েছে মর্মে বিশ্বব্যাংকের নিকট অভিযোগ করে মর্মে অনেকে ধারণা করেন।
নদীশাসন কাজের প্রি-কোয়ালিফিকেশন টেন্ডার ২৪ জুলাই, ২০১০ সালে আহ্বান করা হয়। টেন্ডার কমিটি ছয়টি প্রতিষ্ঠানকে প্রি-কোয়ালিফিকেশনের জন্য ২৪ ডিসেম্বর, ২০১০ সালে বিশ্বব্যাংকে প্রেরণ করে। বিশ্বব্যাংক আরও দুটি চীনা প্রতিষ্ঠানকে প্রাক-যোগ্য বিবেচনা করা যায় কিনা তা পরীক্ষা করতে বলে। ডিজাইন পরামর্শক ও মূল্যায়ন কমিটি বিশ্বব্যাংকের এ প্রস্তাবেও সম্মত হয়নি। অক্টোবর পর্যন্ত নদীশাসন কাজের প্রি-কোয়ালিফিকেশন চূড়ান্ত হয়নি।
কনস্ট্রাকশন সুপারভিশন কনসালট্যান্সির (ঈঝঈ) প্রস্তাব মূল্যায়ন বিষয়ে আলোকপাত করতে চাই। এ প্যাকেজের জন্য প্রকল্পের ৩৪৫ কোটি টাকা (৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) ধরা আছে। বিশ্বব্যাংকের গাইড লাইন অনুসরণ করে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগের জন্য ০৮.১২.২০০৯ ঊীঢ়ৎবংংরড়হ ড়ভ ওহঃবৎবংঃ (ঊঙও) আহ্বান করা হলে ১৩টি প্রতিষ্ঠান প্রস্তাব দাখিল করে। আমি সেতু বিভাগে যোগদান করার পূর্বে গঠিত প্রস্তাব মূল্যায়ন কমিটি ৫টি প্রতিষ্ঠানকে ‘শর্ট লিস্টিং’ করে। এ ৫টি প্রতিষ্ঠান হলো :
১. ঐরময চড়রহঃ জবহফবষ খঃফ. ট. ক. ২. ঙৎরবহঃধষ ঈড়হংঁষঃধহঃং ঈড়সঢ়ধহু খঃফ, ঔধঢ়ধহ. ৩. ঐধষপৎড়ি এৎড়ঁঢ় খঃফ. টক. ৪. ঝঘঈ-খধাধষরহ ওহঃবৎহধঃরড়হধষ ওঘঈ. টক, ঈধহধফধ. ৫. অঊঈঙগ ঘবুিবধষধহফ খঃফ. প্রতিটি কোম্পানির সঙ্গে ৩-৪টি করে দেশী-বিদেশী কোম্পানি জয়েন্ট ভেঞ্চার কোম্পানি হিসেবে সংযুক্ত। নির্ধারিত সময়সীমা অর্থাৎ ৩০.০৬.২০১০ পর্যন্ত শর্ট লিস্টেড ৫টি প্রতিষ্ঠানই ‘দুই ইন্্ভেলপ’ পদ্ধতিতে কারিগরি ও আর্থিক প্রস্তাব দাখিল করে। জুলাই মাসেই আমার নেতৃত্বে গঠিত কমিটি মূল্যায়নের কাজ শুরু করে। তবে প্রায় চার মাস অতিক্রান্ত হলেও মূল্যায়ন প্রক্রিয়ায় তেমন অগ্রগতি হয়নি। এর কারণ সবাই দায়িত্বপূর্ণ কাজে নিয়োজিত। মূল্যায়ন করার জন্য সময় দেয়া তাঁদের পক্ষে সম্ভব হচ্ছিল না। বেশ কয়েক সদস্য সময়ক্ষেপণ করতে থাকেন। কয়েক সদস্যের মতামত ও কথাবার্তায় বোঝা যায় তারা একটি বিশেষ কোম্পানিকে সবচেয়ে যোগ্যতাসম্পন্ন বিবেচনা করছেন। বুয়েটের অধ্যাপকসহ অন্য কয়েক সদস্য ভিন্ন মত পোষণ করেন এবং অন্য একটি কোম্পানিকে অধিকতর যোগ্য বিবেচনা করেন, তবে তারা কেউই চূড়ান্ত মূল্যায়ন করে নম্বর প্রদান করেননি। আমি সময় বেঁধে দিলাম যে, আগামী দু’টি সভায় সম্পূর্ণ মূল্যায়ন চূড়ান্ত করে বিশ্বব্যাংকে প্রেরণ করতে হবে। ইত্যবসরে আমার ই-মেইলে দেখতে পাই কয়েক সদস্য তাদের মূল্যায়ন ই-মেইলে ছেড়ে দিয়েছেÑযা উচিত হয়নি। উক্ত মূল্যায়ন খুবই পক্ষপাতদুষ্ট ছিল। আমি দেখলাম, অন্য সদস্যগণ সুষ্ঠুভাবে মূল্যায়ন করলেও চূড়ান্ত মূল্যায়নে স্বচ্ছতা আসবে না। সে কারণে মাননীয় মন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে আমি সচিবের নেতৃত্বাধীন কমিটি ভেঙ্গে দিয়ে অধ্যাপক ড. জামিলুর রেজা চৌধুরীকে আহ্বায়ক, অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত, ড. মোঃ সফিউল্লাহ, ড. দাউদ আহমেদ (বিশ্বব্যাংক কর্তৃক মনোনীত পরামর্শক) এবং বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী কাজী ফেরদৌসকে সদস্য করে নিরপেক্ষ কমিটি গঠন করি।
উক্ত কমিটি পূর্বের প্রেক্ষাপট বুঝতে পারে এবং নতুনভাবে মূল্যায়নের কাজ শুরু করে। এখানে উল্লেখযোগ্য যে, এ মূল্যায়নে ডিজাইন কন্্সালট্যান্ট কর্তৃক কমিটিকে সহায়তার সুযোগ নেই, কারণ অঊঈঙগ নিজেই ঈঝঈ-এর একজন প্রতিদ্বন্দ্বী। মূল্যায়ন কমিটি বেশ কয়েকটি সভায় মিলিত হয়ে তাঁদের কারিগরি মূল্যায়ন প্রতিবেদন ডিসেম্বর, ২০১০ মাসে বিশ্বব্যাংকে প্রেরণ করে। বিশ্বব্যাংক ১০.০৩.২০১১ উক্ত কারিগরি মূল্যায়নের ওপর সম্মতি প্রদান করে। কারিগরি মূল্যায়নে ঐচজ, টশ প্রথম স্থান, ঝঘঈ-খধাধষরহ, ঈধহধফধ দ্বিতীয় স্থান, অঊঈঙগ, ঘবুিবধষধহফ তৃতীয় স্থান, ঐধষপৎড়,ি টক চতুর্থ স্থান এবং ঙৎরবহঃধষ, ঔধঢ়ধহ পঞ্চম স্থান অধিকার করে। উক্ত কারিগরি মূল্যায়ন অনুমোদনের সময় বিশ্বব্যাংক বিবিএকে এ মর্মে অনুরোধ করে যে, আর্থিক মূল্যায়নের স্কোর যোগ করে চূড়ান্ত মূল্যায়নের সময় মূল্যায়ন কমিটি যাতে সর্বোচ্চ নম্বরধারী দুটি প্রতিষ্ঠানের প্রস্তাবিত পরামর্শক সদস্যদের (গধহঢ়ড়বিৎ) জীবনবৃত্তান্ত ভালভাবে পরীক্ষা করে। বিশ্বব্যাংকের সম্মতিপ্রাপ্তির পর মূল্যায়ন কমিটি আর্থিক প্রস্তাব উন্মুক্ত করে। বিশ্বব্যাংকের গাইড লাইন অনুযায়ী কারিগরি মূল্যায়নের ওপর ৯০% এবং আর্থিক প্রস্তাবের ওপর ১০% ‘ওয়েটেজ’ রাখা হয়। বিশ্বব্যাংকের পরামর্শ অনুযায়ী জীবনবৃত্তান্ত যাচাইকালে তিন ব্যক্তির জীবনবৃত্তান্তে কিছু অসঙ্গতি পাওয়া যায়। একটি প্রতিষ্ঠান আনুষ্ঠানিক চিঠি দিয়ে তাদের অসাবধানতার জন্য ভুল স্বীকার করে। উল্লিখিত অসঙ্গতি দূর করতে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের কারিগরি প্রস্তাব আংশিক পুনঃমূল্যায়ন প্রয়োজন হয়। কারিগরি ও আর্থিক প্রস্তাব যুক্ত করে সার্বিক মূল্যায়নে এসএনসি-লাভালিন প্রথম হয়। এর কারণ কারিগরি মূল্যায়নে প্রথম স্থান অধিকারী ঐচজ-এর আর্থিক দর এসএনসি-লাভালিনের প্রায় দ্বিগুণ। মূল্যায়ন কমিটির চূড়ান্ত মূল্যায়ন আগস্ট, ২০১১ বিশ্বব্যাংকে প্রেরণ করা হয়েছে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী কর্তৃক এতদবিষয়ে লিখিত একটি নিবন্ধ গত ০২ জুলাই, ২০১২ তারিখ দৈনিক সমকাল পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। উক্ত নিবন্ধে তিনিও এ বিষয়ে বিশদভাবে বর্ণনা করেছেন। (ক্রমশঃ)
* এ নিবন্ধের মতামত লেখকের নিজস্ব। এটি কোন সরকারী বক্তব্য নয়।
লেখক : সচিব ও নির্বাহী চেয়ারম্যান
বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, ঢাকা।
No comments