যে সেতু দোয়েলের ফড়িঙের by সিমু নাসের
রমরমা ঘটনায় ভরা এই দেশে সবকিছুকে পেছনে ফেলে পদ্মা সেতু সবার মুখে মুখে। উঠেপড়ে লেগেছে সবাই, এই সেতুটা নাকি বানাতেই হবে! সেতু বানানো বিষয়ে নানাজন দুর্দান্ত সব আইডিয়াও দিচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু তৈরি করব।’ অর্থমন্ত্রী বলেছেন, ‘নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু সম্ভব নয়।
’ সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী বলেছেন, ‘একবেলা বাজারের টাকা বাঁচিয়ে পদ্মা সেতু তৈরি করব।’ সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেছেন, ‘১৬ কোটি মানুষের ৩২ কোটি হাত দিয়ে পদ্মা সেতু তৈরি করব।’ স্পিকার আবদুল হামিদ বলেছেন, ‘প্রতি মোবাইল কলে ২৫ পয়সা হারে কর ধার্য করে আমরা সেতু তৈরি করব।’
কোথায় জানি কবে একটা কথা দেখেছিলাম—‘মাথায় কিলবিল করে আইডিয়া, উইপোকা কয় খাই গিয়া’। বাঙালি আসলে মহা আইডিয়াবাজ জাতি। কোনো কিছুতেই আইডিয়ার কোনো অভাব হয় না। পত্রিকার সম্পাদকীয়, উপসম্পাদকীয়, ফেসবুক, ব্লগ ও টিভির টক শো আইডিয়ায় আইডিয়ায় ভরে যাচ্ছে। কিন্তু রস+আলোর কথা হলো, এই সেতুটা কেন বানাতেই হবে? না বানালে কী হয়? এমনিতেই দেশ সমাপ্ত-অসমাপ্ত সেতুতে সেতুতে ভরে গেছে (প্রথম আলোর সেতু সংখ্যা দ্রষ্টব্য)। আসছে নতুন সেতু কেনই বা তাকে করে দিতে হবে স্থান? সেতুটা বানাতে চাইছে সরকার, যাতে লোকজন নদী পার হতে পারে, তাই তো। এত টাকা দিয়ে সেতু না বানিয়েও কিন্তু পদ্মা পার হওয়া যাবে অনেক কম টাকায়। তাহলে সেই পদ্ধতিগুলো কেন ফলো করছি না আমরা? সেতুর বিকল্প হিসেবে নদী পার হওয়ার জন্য প্রস্তাবিত পদ্ধতিগুলো জানাচ্ছে রস+আলো। যে অবস্থা শুরু হয়েছে, তাতে এই পদ্ধতিগুলোকে দয়া করে হেসে উড়িয়ে দেবেন না।
১. পদ্মার এই পারে আর ওই পারে দুটি বিমানবন্দর স্থাপন করা হোক। (ভবিষ্যতের ঝামেলা কমানোর জন্য শুরুতেই বিমানবন্দর দুটির নাম প্রয়াত দুই নেতার নামে করে ফেলা যেতে পারে।) মানুষজন এক পারের বিমানবন্দর পর্যন্ত সাধারণ বাসে গিয়ে সেখানে বিমানে উঠে বসবে। অন্য পারের বিমানবন্দরে নেমে আবার বাসে উঠে যে যার গন্তব্যে যাবে। এতে সুবিধা অনেক। এক. দ্রুত পদ্মা পাড়ি দেওয়া যাবে। দুই. দক্ষিণবঙ্গের সাধারণ মানুষ বিমানে চড়ার অভূতপূর্ব অভিজ্ঞতা লাভ করবে।
২. কয়েক দিন আগের বৃষ্টিতে দেখা গেছে, চট্টগ্রাম শহরে অর্ধেক ডুবে রিকশা চলছে। ঢাকাতেও হরহামেশাই চলে। রিকশা যদি পানিতে চলতে পারে, তবে বাস কেন চলতে পারবে না। জাপান বা চীনকে হালকার ওপর একটু অনুরোধ করলেই তারা রাস্তা, পানি এবং আকাশে ওড়ার উপযোগী এমন বহুচর যান বানিয়ে দিতে পারবে। ঢাকা থেকে সেটায় টাইট হয়ে বসবে যাত্রী। আর নো নামানামি। একেবারে গিয়ে নামবে নির্ধারিত গন্তব্যে। এ ছাড়া পত্রিকায় পড়েছি, দেশে পৌনে তিন হাজার অসমাপ্ত সেতু রয়েছে। সেগুলো কোনো কাজে লাগছে না। সেই অসমাপ্ত সেতুগুলো বিভিন্ন জায়গা থেকে তুলে এনে একসঙ্গে জোড়া লাগিয়ে বসিয়ে দেওয়া যেতে পারে পদ্মার ওপর। জোড়া লাগানোর জন্য খরচ হবে শুধু সিমেন্ট। (খরচ কমাতে সুপারগ্লুও ব্যবহার করা যেতে পারে।)
৩. একটা সময় ছিল, যখন দেশে ডগ স্কোয়াড আমদানি করা হয়েছিল। সেটা ছিল সময়ের প্রয়োজনে। এখন আবার সেই সময় এসেছে। ডগ স্কোয়াডের মতো দেশে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কুমির স্কোয়াড আমদানি করা যেতে পারে। এসব কুমির স্রোতের প্রতিকূলে সাঁতরাতে দক্ষ হবে এবং মানুষের মাংসে থাকবে তাদের ব্যাপক অনীহা। কুমিরগুলো দুভাবে সার্ভিস দেবে। এক. পার্সোনাল সাভিস: একজন একজন করে পার হবে। দুই. গ্রুপ সার্ভিস—অনেকগুলো কুমির জোটবদ্ধ হয়ে একটি আস্ত বাস পার করে দেবে।
৪. পদ্মার দুই পারে বছরজুড়েই চলবে সাঁতার প্রতিযোগিতা। এতে প্রতিযোগিতায় অংশও নেওয়া হবে আবার পদ্মাও পার হওয়া হবে। প্রতি ঘণ্টায় সেখানে প্রতিযোগিতার বাঁশি বাজবে। দক্ষিণবঙ্গের যাত্রীরা ঝাঁপিয়ে পড়বে প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে। প্রয়োজনে শিশু, নারী ও পুরুষের আলাদা কোটায় প্রতিযোগিতা হবে। চাইলে আন্ডার সেভেনটিন, আন্ডার টোয়েন্টি—এমন বয়সভিত্তিক প্রতিযোগিতাও হতে পারে। আর এতে বিজয়ী হলে থাকবে আকর্ষণীয় পুরস্কার। এর বাই প্রডাক্ট হিসেবে প্রতিবছর আমরা এমন কিছু সাঁতারু পাব, যারা অলিম্পিক, কমনওয়েলথ গেমসে সাঁতারে সোনা জিতে দেশের মুখ উজ্জ্বল করতে পারবে।
৫. বিদেশ থেকে প্রচুর পরিমাণে পোলভোল্ট উপযোগী পোল আমদানি করে পদ্মা নদী পার হতে ইচ্ছুকের হাতে একটি করে পোল ধরিয়ে দেওয়া হবে। তারপর এক লাফেই পদ্মা পার। তবে আমাদের সবাইকে আউট অব দ্য বক্স চিন্তা করতে শিখতে হবে। খালি ওপরে ওঠার চিন্তা কেন? আমাদের সিন্ধু সেচে মুক্তাও তো আনতে হবে, নাকি। পদ্মা নদীর নিচ দিয়ে একটা সুড়ঙ্গ খুঁড়ে আন্ডারগ্রাউন্ড পথ বানিয়ে দিলেই তো হয়। তাতে আর সেতুর ঝামেলা থাকে না। বাস-ট্রেন সরাসরি সেই পথ দিয়ে চলাচল করতে পারবে। আর উপরি হিসেবে উজ্জ্বল সম্ভাবনা থাকে সুড়ঙ্গ খোঁড়ার সময় মণি-মুক্তা-সোনার খনি পেয়ে যাওয়ার।
৬. এটা হলো সর্বশেষ পদ্ধতি। পশ্চিমবঙ্গের মমতা আপাকে রিকোয়েস্ট করে ফারাক্কাটাকে আজীবনের জন্য বন্ধ করে দিতে হবে। তাহলে এমনিতেই পদ্মায় আর পানি থাকবে না। তখন সেটাকে সবাই মিলে ভরাট করে রাস্তা তৈরি করে এমনিতেই পার হওয়া যাবে। বাঙালি বীরের জাতি। পদ্মা ভরাট করার জন্য প্রয়োজন হলে তখন তারা একমুঠো করে বালু দান করবে সরকারকে। এলাকায় এলাকায় বসানো হবে ‘মুক্ত হস্তে বালু দান’ প্রকল্প।
No comments