বুয়েট আন্দোলনে নতুন মোড়- সকালের রূপ বদলে গেল বিকেলে by বিভাষ বাড়ৈ ও আসিফ ত্বাসীন
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপি-জামায়াতপন্থী শিক্ষকদের সাদা দল এবং বিএনপি নেতাদের প্রকাশ্য সমর্থনের পর নতুন মোড় নিয়েছে বুয়েট শিক্ষক আন্দোলন। পঞ্চম দিন সকালে শিক্ষার্থীদের নিয়ে সমিতি আন্দোলনে নামলেও বিকেলেই পাল্টে গেছে পরিস্থিতি।
জামায়াত ও হিযবুত তাহ্্রীরের সংশ্লিষ্টতার খবরের সঙ্গে সঙ্গে বিএনপি-জামায়াতপন্থীদের অবস্থানে বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছে আন্দোলনে অংশ নেয়া সাধারণ শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। কেবল তাই নয়, সংবাদ সম্মেলন করে শিক্ষক সমিতির আন্দোলনের সঙ্গে নেই বলে ঘোষণা দিয়ে মাঠে নেমেছেন প্রগতিশীল শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। শিক্ষক আন্দোলনকে অযৌক্তিক অভিহিত করে দুই দফা দাবি ও চারটি প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা। একই অবস্থান নিয়েছে বুয়েটের কর্মকর্তা-কর্মচারী এ্যাসোসিয়েশন। শিক্ষক আন্দোলনের বিরোধিতা করে নেতৃবৃন্দ বলেছেন, শিক্ষকদের অধিকাংশ দাবিই কর্মকর্তা-কর্মচারীদের স্বার্থবিরোধী। আমাদের কোন সম্পৃক্ততা না থাকলেও শিক্ষক সমিতি অবৈধভাবে আন্দোলনে কর্মকর্তা-কর্মচারী এ্যাসোসিয়েশনের নাম ব্যবহার করে সর্বস্তরে মিথ্যা তথ্য ছড়িয়েছে।
এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফেসবুকে হত্যার হুমকির মামলায় গ্রেফতারী পরোয়ানা জারির ১০ দিনেও গ্রেফতার হননি শিক্ষক নেতা হাফিজুর রহমান রানা। উল্টো রাতে হলে হলে গোপনে উগ্রপন্থী কিছু ব্যক্তিকে নিয়ে শিক্ষক সমিতির এই নেতা সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে নামার জন্য হুমকি দিচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রীকে হুমকি দেয়ার পরেও কিভাবে এতদিন একজন ব্যক্তি স্বাচ্ছন্দ্যে ঘোরাফেরা করেন তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারের একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনের পরেও জামায়াত ও হিযবুত তাহ্্রীরের কর্মকা- ও জামায়াত প্রভাবিত শিক্ষক সমিতির বেপরোয়া কর্মকা-ের বিষয়ে কঠোর অবস্থান না নেয়ার ফলেই সঙ্কট বৃহৎ রূপ নিয়েছে। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার হুমকি দেয়ার ঘটনায় গ্রেফতারী পরোয়ানা জারির পরও শিক্ষক নেতার প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ানো এবং জামায়াত নেতা গোলাম আযমের সাবেক বডিগার্ড ও তার স্ত্রীর হলে হলে তৎপরতার বিষয়ে কঠোর অবস্থান না নেয়ায় অযৌক্তিক শিক্ষক আন্দোলন বৃহৎ রূপ নেয়ার অন্যতম কারণ। এর আগে শুক্রবার দিনভর বুয়েটের শিক্ষক নেতাদের আন্দোলনে সমর্থন জানিয়ে বিভিন্নভাবে বক্তব্য দিয়েছেন বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা। সমিতির সঙ্গে সুর মিলিয়ে বুয়েটে দলীয়করণ ও অনিয়মের অভিযোগ এনেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপি-জামায়াতপন্থী সাদা দলের শিক্ষকরাও। জানা গেছে, বিএনপি নেতাদের অবস্থানের পর শুক্রবার রাতেই হলে হলে শিক্ষার্থীদের মাঝে শিক্ষক আন্দোলন নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। শনিবার সকালে আন্দোলনে আসা শিক্ষার্থীদের নিয়ে মাঠে নামেন শিক্ষক নেতারা। উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যের পদত্যাগ চেয়ে মৌন মিছিলের পর তাঁরা আন্দোলন অব্যাহত রাখার শপথ পড়ান শিক্ষার্থীদের। সকালে প্রশাসনিক ভবন থেকে মৌন মিছিল বের করেন তাঁরা। মিছিলটি ক্যাম্পাস থেকে বেরিয়ে শহীদ মিনার এলাকাও ঘুরে আসে। ক্যাম্পাসে ফিরে প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে সেখানে শপথ নেন তাঁরা। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের শপথ পড়ান শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা শপথে আন্দোলন কর্মসূচী থেকে সরে না যাওয়ার অঙ্গীকার করেন। দাবির সপক্ষে গণস্বাক্ষরতা অভিযান চালান তাঁরা। সংগৃহীত স্বাক্ষরসহ দাবি রবিবার আচার্য রাষ্ট্রপতি মোঃ জিল্লুর রহমানের কাছে দেয়া হবে বলে জানানো হয়। সমিতির আন্দোলনে বাইরের কোন শক্তির খাবারসহ অর্থ সাহায্য আসে বলে ব্যাপকভাবে আলোচনা চলছে। পুরো ঘটনা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই। গণমাধ্যমেও এ বিষয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। শনিবার আন্দোলনের সময়ে শিক্ষক নেতারা দাবি করেছেন, জামায়াত নেতাদের মাধ্যমে কোন খাবার আসেনি। সমিতি খাবারের একটি অংশ সরবরাহ করছে।
এদিকে যেসব শিক্ষক-কর্মকর্তা গণপদত্যাগ করেছেন তাঁদের মধ্যে ২৪ জন আওয়ামীপন্থী আছেনÑ এমন একটি প্রচারপত্র গোয়েন্দা সংস্থার নাম ব্যবহার করে সমিতির পক্ষে প্রচার করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এর মাধ্যমে শিক্ষক সমিতির সরকারবিরোধী রূপ পাল্টানোর অপচেষ্টা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন সাধারণ শিক্ষক-শিক্ষার্থী-কর্মকর্তা কর্মচারীরা। তবে গত চারদিন ধরে শিক্ষক সমিতি একতরফা আন্দোলন করলেও পঞ্চম দিন বিকেলে এসে হঠাৎ পাল্টে যায় পরিস্থিতি। পঞ্চম দিন সকালে শিক্ষার্থীদের নিয়ে সমিতি আন্দোলনে নামলেও বিকেলেই পাল্টে গেছে পরিস্থিতি। জামায়াত ও হিযবুত তাহ্্রীরের সংশ্লিষ্টতার খবরের সঙ্গে সঙ্গে বিএনপি-জামায়াতপন্থীদের অবস্থানে বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছে আন্দোলনে অংশ নেয়া সাধারণ শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। সংবাদ সম্মেলন ও সমাবেশ করে শিক্ষক সমিতির আন্দোলনের সঙ্গে নেই বলে ঘোষণা দিয়ে মাঠে নেমেছেন প্রগতিশীল শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। কাফেটারিয়ার সামনে মঞ্চ তৈরি করে ‘বুয়েট শিক্ষক ছাত্র কর্মকর্তা কর্মচারী ঐক্য ফোরামের ব্যানারে আয়োজিত সমাবেশ থেকে শিক্ষক আন্দোলনকে অযৌক্তিক অভিহিত করে দুই দফা দাবি ও চারটি প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা। অবিলম্বে শিক্ষক আন্দোলন প্রত্যাহার এবং বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠনের কাজে সহায়তা করার আহ্বান জানিয়ে তাঁরা বলেছেন, তদন্তের আগেই দ- কেন? বিচার বিভাগীয় তদন্তে আপত্তি কেন? শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা নয় কেন? সত্যের মুখোমুখি হতে ভয় কেন? সমাবেশে বক্তব্য রাখেন শিক্ষক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মুনাজ আহমেদ নূর, অধ্যাপক ড. আব্দুল জব্বার, ড. মিজানুর রহমান, শামীম আরা হাসান, ড. কায়েস বিন জামান, ডেপুটি রেজিস্ট্রার কামাল আহমেদ প্রমুখ। সমাবেশে সাব্বির আহমেদ ও আমিনুল হক পলক নামের দুই ছাত্র শিক্ষার্থীদের পক্ষে বক্তব্যে শিক্ষক আন্দোলন বন্ধ করে শিক্ষাঙ্গন সচল করার আহ্বান জানান। শিক্ষক কর্মকর্তারা বলেন, শিক্ষক সমিতির আন্দোলন শিক্ষার্থীদের স্বার্থে কতটা করা হচ্ছে? আন্দোলনকারীরা বলছেন, বুয়েটকে ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচাতে এ আন্দোলন। কিন্তু আসলে তা নয়। তিনি শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন করে বলেন, তোমরা কী নিজেদের স্বার্থে আন্দোলন করছ? তোমরা কারও স্বার্থে ব্যবহার হচ্ছে কি না জান?
অভিযোগ আছে, নম্বর কমিয়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে নামানো হয়েছে। আশা করি, সাংবাদিকরা বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন। প্রশাসনে এমন কোন অনিয়ম হয়নি, যার জন্য উপাচার্যের পদত্যাগ চেয়ে আন্দোলন করতে হবে। প্রগতিশীল এই শিক্ষকরা উপচার্য ও উপ-উপাচার্যের বিরুদ্ধে আন্দোলনকে সম্পূর্ণ অযৌক্তিক অভিহিত করে বলেন, গত বছর শিক্ষক সমিতি শিক্ষকদের অবসরের সময়সীমা ৬৫ বছর করার জন্য আন্দোলনে নেমেছিলেন। অথচ এর আগেই প্রধানমন্ত্রী ঘোষণার করেছিলেন সব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের চাকরির বয়সসীমা ৬৫ বছর করা হবে। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা পরও তাহলে কেন তাঁরা আন্দোলন করেছিলেন। বিচার বিভাগীয় তদন্তে শিক্ষক সমিতির এত ভয় কেন? তাহলে সত্য বেরিয়ে আসবে। তাদের আন্দোলনের আর যৌক্তিকতা থাকবে না? শিক্ষক কর্মকর্তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আহ্বান মেনে নিয়ে শিক্ষক সমিতিকে আলোচনায় বসার আহ্বান জানান। তাঁরা আরও বলেন, গত কয়েকদিনের আন্দোলনে কোথা থেকে এত খাবার আসছে? তা নিয়ে খবর বেরিয়েছে গণমাধ্যমেও। কিন্তু শিক্ষক সমিতির এত টাকা থাকার কথা নয়। তাহলে কোথা থেকে অর্থ আসছে আশা করি নেতারা পরিষ্কার করবেন। এদিকে একই অবস্থান নিয়েছে বুয়েটের কর্মকর্তা-কর্মচারী এ্যাসোসিয়েশন। শিক্ষক আন্দোলনের বিরোধিতা করে নেতৃবৃন্দ বলেছেন, শিক্ষকদের ১৬ দফা দাবির ১০টি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের স্বার্থবিরোধী। আমাদের কোন সম্পৃক্ততা না থাকলেও শিক্ষক সমিতি অবৈধভাবে আন্দোলনে কর্মকর্তা-কর্মচারী এ্যাসোসিয়েশনের নাম ব্যবহার করে সর্বস্তরে মিথ্যা তথ্য ছড়িয়েছে। শিক্ষকদের আন্দোলনের সঙ্গে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কোন ধরনের একাত্মতা নেইÑ এ বিষয়টি পরিষ্কার করে শনিবার প্রচারপত্র বিলি করা হয়েছে। অফিসার্স এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কামাল আহমেদ বলেছেন, অফিসারদের কোন ধরনের সম্পৃক্ততা শিক্ষকদের আন্দোলনে নেই। কারণ শিক্ষকদের ১৬ দফা দাবির মধ্যে ১০ দফাই অফিসারদের স্বার্থবিরোধী। আমরা কেন নিজের পায়ে নিজেরা কুড়াল মারব? অথচ শিক্ষকরা প্রচার করছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেছে। এটি ভুল তথ্য। তিনি বলেন, শুধু তৃতীয় শ্রেণীর একজন হিসাব কর্মকর্তা কেরামত আলী আন্দোলনে সংহতি জানিয়েছেন। কেরামত আলী গত অফিসার্স নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে পরাজিত হয়েছেন। তিনি বলেন, শিক্ষকরা আমাদের চেয়ে বেশি সুযোগসুবিধা ভোগ করছেন। বাসা-বাড়ি, পদোন্নতিসহ অনেক ক্ষেত্রেই অফিসারদের জায়গাগুলো তারা দখল করে রেখেছেন। তবে প্রশাসনের পক্ষে আমাদের অবস্থানও নেই। শিক্ষকরা নিজেদের আন্দোলন করছে, এর সঙ্গেও আমাদের সম্পৃক্ততা নেই।
অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রীকে ফেসবুকে হত্যার হুমকির মামলায় গ্রেফতারী পরোয়ানা জারির ১০ দিলেও শিক্ষক নেতা হাফিজুর রহমান রানা গ্রেফতার না হওয়ার ঘটনায় হতবাক শিক্ষক শিক্ষার্থীরা। প্রশ্ন তুলেছেন, প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার হুমকি দিয়েও যদি চলাফেরা করা যায় তাহলে বাকি থাকে কী?
এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফেসবুকে হত্যার হুমকির মামলায় গ্রেফতারী পরোয়ানা জারির ১০ দিনেও গ্রেফতার হননি শিক্ষক নেতা হাফিজুর রহমান রানা। উল্টো রাতে হলে হলে গোপনে উগ্রপন্থী কিছু ব্যক্তিকে নিয়ে শিক্ষক সমিতির এই নেতা সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে নামার জন্য হুমকি দিচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রীকে হুমকি দেয়ার পরেও কিভাবে এতদিন একজন ব্যক্তি স্বাচ্ছন্দ্যে ঘোরাফেরা করেন তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারের একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনের পরেও জামায়াত ও হিযবুত তাহ্্রীরের কর্মকা- ও জামায়াত প্রভাবিত শিক্ষক সমিতির বেপরোয়া কর্মকা-ের বিষয়ে কঠোর অবস্থান না নেয়ার ফলেই সঙ্কট বৃহৎ রূপ নিয়েছে। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার হুমকি দেয়ার ঘটনায় গ্রেফতারী পরোয়ানা জারির পরও শিক্ষক নেতার প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ানো এবং জামায়াত নেতা গোলাম আযমের সাবেক বডিগার্ড ও তার স্ত্রীর হলে হলে তৎপরতার বিষয়ে কঠোর অবস্থান না নেয়ায় অযৌক্তিক শিক্ষক আন্দোলন বৃহৎ রূপ নেয়ার অন্যতম কারণ। এর আগে শুক্রবার দিনভর বুয়েটের শিক্ষক নেতাদের আন্দোলনে সমর্থন জানিয়ে বিভিন্নভাবে বক্তব্য দিয়েছেন বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা। সমিতির সঙ্গে সুর মিলিয়ে বুয়েটে দলীয়করণ ও অনিয়মের অভিযোগ এনেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপি-জামায়াতপন্থী সাদা দলের শিক্ষকরাও। জানা গেছে, বিএনপি নেতাদের অবস্থানের পর শুক্রবার রাতেই হলে হলে শিক্ষার্থীদের মাঝে শিক্ষক আন্দোলন নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। শনিবার সকালে আন্দোলনে আসা শিক্ষার্থীদের নিয়ে মাঠে নামেন শিক্ষক নেতারা। উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যের পদত্যাগ চেয়ে মৌন মিছিলের পর তাঁরা আন্দোলন অব্যাহত রাখার শপথ পড়ান শিক্ষার্থীদের। সকালে প্রশাসনিক ভবন থেকে মৌন মিছিল বের করেন তাঁরা। মিছিলটি ক্যাম্পাস থেকে বেরিয়ে শহীদ মিনার এলাকাও ঘুরে আসে। ক্যাম্পাসে ফিরে প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে সেখানে শপথ নেন তাঁরা। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের শপথ পড়ান শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা শপথে আন্দোলন কর্মসূচী থেকে সরে না যাওয়ার অঙ্গীকার করেন। দাবির সপক্ষে গণস্বাক্ষরতা অভিযান চালান তাঁরা। সংগৃহীত স্বাক্ষরসহ দাবি রবিবার আচার্য রাষ্ট্রপতি মোঃ জিল্লুর রহমানের কাছে দেয়া হবে বলে জানানো হয়। সমিতির আন্দোলনে বাইরের কোন শক্তির খাবারসহ অর্থ সাহায্য আসে বলে ব্যাপকভাবে আলোচনা চলছে। পুরো ঘটনা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই। গণমাধ্যমেও এ বিষয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। শনিবার আন্দোলনের সময়ে শিক্ষক নেতারা দাবি করেছেন, জামায়াত নেতাদের মাধ্যমে কোন খাবার আসেনি। সমিতি খাবারের একটি অংশ সরবরাহ করছে।
এদিকে যেসব শিক্ষক-কর্মকর্তা গণপদত্যাগ করেছেন তাঁদের মধ্যে ২৪ জন আওয়ামীপন্থী আছেনÑ এমন একটি প্রচারপত্র গোয়েন্দা সংস্থার নাম ব্যবহার করে সমিতির পক্ষে প্রচার করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এর মাধ্যমে শিক্ষক সমিতির সরকারবিরোধী রূপ পাল্টানোর অপচেষ্টা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন সাধারণ শিক্ষক-শিক্ষার্থী-কর্মকর্তা কর্মচারীরা। তবে গত চারদিন ধরে শিক্ষক সমিতি একতরফা আন্দোলন করলেও পঞ্চম দিন বিকেলে এসে হঠাৎ পাল্টে যায় পরিস্থিতি। পঞ্চম দিন সকালে শিক্ষার্থীদের নিয়ে সমিতি আন্দোলনে নামলেও বিকেলেই পাল্টে গেছে পরিস্থিতি। জামায়াত ও হিযবুত তাহ্্রীরের সংশ্লিষ্টতার খবরের সঙ্গে সঙ্গে বিএনপি-জামায়াতপন্থীদের অবস্থানে বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছে আন্দোলনে অংশ নেয়া সাধারণ শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। সংবাদ সম্মেলন ও সমাবেশ করে শিক্ষক সমিতির আন্দোলনের সঙ্গে নেই বলে ঘোষণা দিয়ে মাঠে নেমেছেন প্রগতিশীল শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। কাফেটারিয়ার সামনে মঞ্চ তৈরি করে ‘বুয়েট শিক্ষক ছাত্র কর্মকর্তা কর্মচারী ঐক্য ফোরামের ব্যানারে আয়োজিত সমাবেশ থেকে শিক্ষক আন্দোলনকে অযৌক্তিক অভিহিত করে দুই দফা দাবি ও চারটি প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা। অবিলম্বে শিক্ষক আন্দোলন প্রত্যাহার এবং বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠনের কাজে সহায়তা করার আহ্বান জানিয়ে তাঁরা বলেছেন, তদন্তের আগেই দ- কেন? বিচার বিভাগীয় তদন্তে আপত্তি কেন? শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা নয় কেন? সত্যের মুখোমুখি হতে ভয় কেন? সমাবেশে বক্তব্য রাখেন শিক্ষক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মুনাজ আহমেদ নূর, অধ্যাপক ড. আব্দুল জব্বার, ড. মিজানুর রহমান, শামীম আরা হাসান, ড. কায়েস বিন জামান, ডেপুটি রেজিস্ট্রার কামাল আহমেদ প্রমুখ। সমাবেশে সাব্বির আহমেদ ও আমিনুল হক পলক নামের দুই ছাত্র শিক্ষার্থীদের পক্ষে বক্তব্যে শিক্ষক আন্দোলন বন্ধ করে শিক্ষাঙ্গন সচল করার আহ্বান জানান। শিক্ষক কর্মকর্তারা বলেন, শিক্ষক সমিতির আন্দোলন শিক্ষার্থীদের স্বার্থে কতটা করা হচ্ছে? আন্দোলনকারীরা বলছেন, বুয়েটকে ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচাতে এ আন্দোলন। কিন্তু আসলে তা নয়। তিনি শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন করে বলেন, তোমরা কী নিজেদের স্বার্থে আন্দোলন করছ? তোমরা কারও স্বার্থে ব্যবহার হচ্ছে কি না জান?
অভিযোগ আছে, নম্বর কমিয়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে নামানো হয়েছে। আশা করি, সাংবাদিকরা বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন। প্রশাসনে এমন কোন অনিয়ম হয়নি, যার জন্য উপাচার্যের পদত্যাগ চেয়ে আন্দোলন করতে হবে। প্রগতিশীল এই শিক্ষকরা উপচার্য ও উপ-উপাচার্যের বিরুদ্ধে আন্দোলনকে সম্পূর্ণ অযৌক্তিক অভিহিত করে বলেন, গত বছর শিক্ষক সমিতি শিক্ষকদের অবসরের সময়সীমা ৬৫ বছর করার জন্য আন্দোলনে নেমেছিলেন। অথচ এর আগেই প্রধানমন্ত্রী ঘোষণার করেছিলেন সব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের চাকরির বয়সসীমা ৬৫ বছর করা হবে। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা পরও তাহলে কেন তাঁরা আন্দোলন করেছিলেন। বিচার বিভাগীয় তদন্তে শিক্ষক সমিতির এত ভয় কেন? তাহলে সত্য বেরিয়ে আসবে। তাদের আন্দোলনের আর যৌক্তিকতা থাকবে না? শিক্ষক কর্মকর্তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আহ্বান মেনে নিয়ে শিক্ষক সমিতিকে আলোচনায় বসার আহ্বান জানান। তাঁরা আরও বলেন, গত কয়েকদিনের আন্দোলনে কোথা থেকে এত খাবার আসছে? তা নিয়ে খবর বেরিয়েছে গণমাধ্যমেও। কিন্তু শিক্ষক সমিতির এত টাকা থাকার কথা নয়। তাহলে কোথা থেকে অর্থ আসছে আশা করি নেতারা পরিষ্কার করবেন। এদিকে একই অবস্থান নিয়েছে বুয়েটের কর্মকর্তা-কর্মচারী এ্যাসোসিয়েশন। শিক্ষক আন্দোলনের বিরোধিতা করে নেতৃবৃন্দ বলেছেন, শিক্ষকদের ১৬ দফা দাবির ১০টি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের স্বার্থবিরোধী। আমাদের কোন সম্পৃক্ততা না থাকলেও শিক্ষক সমিতি অবৈধভাবে আন্দোলনে কর্মকর্তা-কর্মচারী এ্যাসোসিয়েশনের নাম ব্যবহার করে সর্বস্তরে মিথ্যা তথ্য ছড়িয়েছে। শিক্ষকদের আন্দোলনের সঙ্গে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কোন ধরনের একাত্মতা নেইÑ এ বিষয়টি পরিষ্কার করে শনিবার প্রচারপত্র বিলি করা হয়েছে। অফিসার্স এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কামাল আহমেদ বলেছেন, অফিসারদের কোন ধরনের সম্পৃক্ততা শিক্ষকদের আন্দোলনে নেই। কারণ শিক্ষকদের ১৬ দফা দাবির মধ্যে ১০ দফাই অফিসারদের স্বার্থবিরোধী। আমরা কেন নিজের পায়ে নিজেরা কুড়াল মারব? অথচ শিক্ষকরা প্রচার করছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেছে। এটি ভুল তথ্য। তিনি বলেন, শুধু তৃতীয় শ্রেণীর একজন হিসাব কর্মকর্তা কেরামত আলী আন্দোলনে সংহতি জানিয়েছেন। কেরামত আলী গত অফিসার্স নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে পরাজিত হয়েছেন। তিনি বলেন, শিক্ষকরা আমাদের চেয়ে বেশি সুযোগসুবিধা ভোগ করছেন। বাসা-বাড়ি, পদোন্নতিসহ অনেক ক্ষেত্রেই অফিসারদের জায়গাগুলো তারা দখল করে রেখেছেন। তবে প্রশাসনের পক্ষে আমাদের অবস্থানও নেই। শিক্ষকরা নিজেদের আন্দোলন করছে, এর সঙ্গেও আমাদের সম্পৃক্ততা নেই।
অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রীকে ফেসবুকে হত্যার হুমকির মামলায় গ্রেফতারী পরোয়ানা জারির ১০ দিলেও শিক্ষক নেতা হাফিজুর রহমান রানা গ্রেফতার না হওয়ার ঘটনায় হতবাক শিক্ষক শিক্ষার্থীরা। প্রশ্ন তুলেছেন, প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার হুমকি দিয়েও যদি চলাফেরা করা যায় তাহলে বাকি থাকে কী?
No comments