বইয়ের মেলা প্রাণের মেলা-ফাগুনে রঙিন বইমেলা by আশীষ-উর-রহমান
ফাগুন লেগেছে বনে বনে, শাখায় শাখায়, পাতায় পাতায়। তার রেশ ছড়িয়ে পড়েছিল নিসর্গবিবর্জিত এই মহানগরের বাসিন্দাদের মনেও। বসনে, ভূষণে, আবেগে, উচ্ছ্বাসে ঋতুরাজকে স্বাগত জানিয়েছেন তাঁরা। ছুটির দিনের ভিড়কেও ছাড়িয়ে গিয়েছিল গতকাল পয়লা ফাল্গুন একুশের বইমেলায়। শাহবাগ থেকে বইমেলা, শহীদ মিনার হয়ে দোয়েল চত্বর অবধি পুরো এলাকা হয়ে উঠেছিল বাসন্তী রঙে রঙিন।
গান-বাজনারও আয়োজন ছিল এই এলাকায়। সঙ্গী-সাথিদের নিয়ে মেলায় ঘুরে, অনুষ্ঠান দেখে, গায়ে মেখে ফুরফুরে দখিনা হাওয়া চুটিয়ে আড্ডা দিয়েছেন তাঁরা।
চেতনার নবায়নের উৎস
‘এই মেলা কেবল বইয়ের মেলা নয়। এটি আমাদের চেতনার নবায়নের উৎসও,’ ছড়াকার লুৎফর রহমান রিটন গতকাল মেলা সম্পর্কে এই মূল্যায়ন করলেন প্রথম আলোর কাছে। তিনি কানাডাপ্রবাসী। মেলার সময়টি দেশে কাটাতে আসেন প্রাণের টানে। বললেন, ‘এই একটিই আয়োজন এখনো আছে, যেখানে মুক্তিযুদ্ধ ও বাঙালি সংস্কৃতির চেতনাবিরোধীরা প্রভাব বিস্তার করতে পারেনি। এখানে যাঁরা আসেন তাঁদের নব্বই শতাংশই তরুণ প্রজন্ম। এখানে তাঁরা শেকড়ের টান অনুভব করেন। নিজের সঙ্গে বোঝাপড়া হয়। চেতনাকে শাণিত করেন তাঁরা।’
বসন্তের প্রথম দিনে লোকজনের সাজসজ্জায় এত বর্ণাঢ্যতা, তার ওপর বটগাছের পাতার আড়ালে বসা কোকিলের ডাক—এসব মিলিয়ে রিটনের কাছে মনে হয়েছিল, বসন্ত যেন এই মেলা থেকেই ছড়িয়ে গেছে সারা দেশে। এবার মেলায় দুটি বই এসেছে তাঁর; চন্দ্রাবতী একাডেমি থেকে ছড়া ভূতের বিয়ের নিমন্ত্রণ এবং অনন্যা থেকে কিশোর উপন্যাস ইতিহাস স্যার।
কে তুমি
প্রতিদিন নতুন বইয়ের তালিকা ও সংবাদবিজ্ঞপ্তির সঙ্গে টোস্ট আর লিকার চা মজুদ রাখেন মুর্শিদ উদ্দিন আহমদ মেলার সংবাদ সংগ্রহের জন্য আসা গণমাধ্যম প্রতিনিধিদের জন্য। তিনি বাংলা একাডেমীর জনসংযোগ উপবিভাগের উপপরিচালক। গতকাল দুই লাইন গানও শুনিয়ে দিলেন তিনি, ‘কে তুমি এলে মোর এই জীবনে/ ফাগুন এসেছে তাই বনে বনে/ আশার স্বপন জাগে দুই নয়নে’। বসন্ত নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতেই এই গুনগুন পরিবেশনা। তথ্যপ্রযুক্তির এই বিপুল উৎকর্ষের দিনেও মানুষ যে বইয়ের টানে মেলায় আসছে, সেটিই আয়োজক হিসেবে তাঁদের আশাবাদী করে বলে মন্তব্য করলেন তিনি।
মোড়ক উন্মোচন ও নতুন বই
নজরুল মঞ্চে মোড়ক উন্মোচনের ভিড় তো ছিলই, তার ওপর বসন্ত উদ্যাপনে আসা তরুণ-তরুণীরাও মঞ্চের চারপাশে বসে মেতে ছিলেন কুজনে। ফলে বটতলা জনাকীর্ণ। তার মধ্যেই পাক্কা এক ডজন বইয়ের মোড়ক উন্মোচিত হলো।
এদিকে প্রথমার স্টলে ছিল প্রচুর ভিড়। এ দিন অবশ্য কোনো নতুন বই আসেনি। বিক্রয় প্রতিনিধিরা জানালেন, গত কয়েক দিনে প্রকাশিত নতুন বইয়ের সঙ্গে আগের মেলার বইগুলো বেশ বিক্রি হচ্ছে। এর মধ্যে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক বইগুলো নিয়মিতই বিক্রি হয়।
তথ্যকেন্দ্রে বসন্ত দিনে প্রকাশিত ১২৮টি বইয়ের নাম জমা পড়েছে। এর মধ্যে ছিল বিভাস থেকে নির্মলেন্দু গুণের মুঠোফোনের কাব্য সমগ্র, অন্যপ্রকাশ থেকে হুমায়ূন আহমেদের কলাম সংকলন নিউ ইয়র্কের নীলাকাশে ঝকঝকে রোদ, দি স্কাই পাবলিশার্স থেকে সাহেদ মন্তাজের প্রবন্ধ মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়: অন্তরালে কথকতা, আবু ইসহাক হোসেনের প্রবন্ধ লালনের পথ ও মত, সাহিত্য প্রকাশ থেকে মোহাম্মদ সাইদুর রহমান স্মারকগ্রন্থ, প্রবাসীদের জীবনযাত্রা নিয়ে গ্রন্থপ্রকাশ থেকে জহিরুল ইসলামের তারুণ্যের শক্তি ও প্রবাসীর কষ্ট, গদ্যপদ্য থেকে টোকন ঠাকুরের কবিতা ঘামসূত্র, আসাদ চৌধুরীর শিশুতোষ দুখিয়ার গল্প, অঙ্কুর থেকে রতনতনু ঘোষের প্রবন্ধ ভাষা-আন্দোলন মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা, নান্দনিক থেকে আনজির লিটনের ছড়া দুপুর নাচে টাপুর টুপুর, মুক্তদেশ থেকে আল মাহমুদের কাব্য পাখির কথায় পাখা পেলাম, সময় থেকে মুহম্মদ জাফর ইকবালের উপন্যাস রূপ রুপালি, রওশন আরা খানমের শিশুতোষ কাকের জন্য ভালোবাসা, সংহতি থেকে রাজু আলাউদ্দিন ও রফিক উম মুনির চৌধুরী অনূদিত হোর্হে লুই বোর্হেসের আত্মজীবনী, অনিন্দ্য আহমদ রফিকের নানা আলোয় রবীন্দ্রনাথ (দুই খণ্ড), আবু নাছের টিপুর গণমাধ্যম ও প্রকাশনা বিষয়ক আইন, ইত্যাদি থেকে সুলতানা কামালের মানবাধিকার সুশাসন ও গণতন্ত্র, খোশরোজ কিতাবমহল থেকে আয়েশা জানের উপন্যাস মৌ, পাঠক সমাবেশ থেকে রইস উদ্দিন আরিফের ধর্মবিষয়ক বাংলার ভাবান্দোলন।
মেলা মঞ্চে
গতকাল মেলা মঞ্চে ছিল ‘জন্ম শতবর্ষের শ্রদ্ধাঞ্জলি: রণেশ দাশগুপ্ত’ শীর্ষক আলোচনা। প্রবন্ধ পড়েন মফিদুল হক। আলোচনা করেন শফি আহমেদ, কাজল বন্দ্যোপাধ্যায়, জাহিদ রেজা নূর ও সৌমিত্র শেখর। সভাপতিত্ব করেন সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী।
সন্ধ্যায় ছিল সৈয়দ শামসুল হক রচিত, আবদুল্লাহ আল মামুন নির্দেশিত ও সুদীপ চক্রবর্তী নির্মিত থিয়েটারের কাব্যনাটক পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়।
মেলায় শিশুদের জন্য নির্ধারিত সময় শিশু প্রহর ঘোষণা করা হয়েছে আগামী বৃহস্পতি ও শুক্রবার বেলা ১১টা থেকে তিনটা পর্যন্ত। ওই দুই দিন মেলা শুধুই শিশু ও তাদের অভিভাবকদের জন্য।
চেতনার নবায়নের উৎস
‘এই মেলা কেবল বইয়ের মেলা নয়। এটি আমাদের চেতনার নবায়নের উৎসও,’ ছড়াকার লুৎফর রহমান রিটন গতকাল মেলা সম্পর্কে এই মূল্যায়ন করলেন প্রথম আলোর কাছে। তিনি কানাডাপ্রবাসী। মেলার সময়টি দেশে কাটাতে আসেন প্রাণের টানে। বললেন, ‘এই একটিই আয়োজন এখনো আছে, যেখানে মুক্তিযুদ্ধ ও বাঙালি সংস্কৃতির চেতনাবিরোধীরা প্রভাব বিস্তার করতে পারেনি। এখানে যাঁরা আসেন তাঁদের নব্বই শতাংশই তরুণ প্রজন্ম। এখানে তাঁরা শেকড়ের টান অনুভব করেন। নিজের সঙ্গে বোঝাপড়া হয়। চেতনাকে শাণিত করেন তাঁরা।’
বসন্তের প্রথম দিনে লোকজনের সাজসজ্জায় এত বর্ণাঢ্যতা, তার ওপর বটগাছের পাতার আড়ালে বসা কোকিলের ডাক—এসব মিলিয়ে রিটনের কাছে মনে হয়েছিল, বসন্ত যেন এই মেলা থেকেই ছড়িয়ে গেছে সারা দেশে। এবার মেলায় দুটি বই এসেছে তাঁর; চন্দ্রাবতী একাডেমি থেকে ছড়া ভূতের বিয়ের নিমন্ত্রণ এবং অনন্যা থেকে কিশোর উপন্যাস ইতিহাস স্যার।
কে তুমি
প্রতিদিন নতুন বইয়ের তালিকা ও সংবাদবিজ্ঞপ্তির সঙ্গে টোস্ট আর লিকার চা মজুদ রাখেন মুর্শিদ উদ্দিন আহমদ মেলার সংবাদ সংগ্রহের জন্য আসা গণমাধ্যম প্রতিনিধিদের জন্য। তিনি বাংলা একাডেমীর জনসংযোগ উপবিভাগের উপপরিচালক। গতকাল দুই লাইন গানও শুনিয়ে দিলেন তিনি, ‘কে তুমি এলে মোর এই জীবনে/ ফাগুন এসেছে তাই বনে বনে/ আশার স্বপন জাগে দুই নয়নে’। বসন্ত নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতেই এই গুনগুন পরিবেশনা। তথ্যপ্রযুক্তির এই বিপুল উৎকর্ষের দিনেও মানুষ যে বইয়ের টানে মেলায় আসছে, সেটিই আয়োজক হিসেবে তাঁদের আশাবাদী করে বলে মন্তব্য করলেন তিনি।
মোড়ক উন্মোচন ও নতুন বই
নজরুল মঞ্চে মোড়ক উন্মোচনের ভিড় তো ছিলই, তার ওপর বসন্ত উদ্যাপনে আসা তরুণ-তরুণীরাও মঞ্চের চারপাশে বসে মেতে ছিলেন কুজনে। ফলে বটতলা জনাকীর্ণ। তার মধ্যেই পাক্কা এক ডজন বইয়ের মোড়ক উন্মোচিত হলো।
এদিকে প্রথমার স্টলে ছিল প্রচুর ভিড়। এ দিন অবশ্য কোনো নতুন বই আসেনি। বিক্রয় প্রতিনিধিরা জানালেন, গত কয়েক দিনে প্রকাশিত নতুন বইয়ের সঙ্গে আগের মেলার বইগুলো বেশ বিক্রি হচ্ছে। এর মধ্যে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক বইগুলো নিয়মিতই বিক্রি হয়।
তথ্যকেন্দ্রে বসন্ত দিনে প্রকাশিত ১২৮টি বইয়ের নাম জমা পড়েছে। এর মধ্যে ছিল বিভাস থেকে নির্মলেন্দু গুণের মুঠোফোনের কাব্য সমগ্র, অন্যপ্রকাশ থেকে হুমায়ূন আহমেদের কলাম সংকলন নিউ ইয়র্কের নীলাকাশে ঝকঝকে রোদ, দি স্কাই পাবলিশার্স থেকে সাহেদ মন্তাজের প্রবন্ধ মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়: অন্তরালে কথকতা, আবু ইসহাক হোসেনের প্রবন্ধ লালনের পথ ও মত, সাহিত্য প্রকাশ থেকে মোহাম্মদ সাইদুর রহমান স্মারকগ্রন্থ, প্রবাসীদের জীবনযাত্রা নিয়ে গ্রন্থপ্রকাশ থেকে জহিরুল ইসলামের তারুণ্যের শক্তি ও প্রবাসীর কষ্ট, গদ্যপদ্য থেকে টোকন ঠাকুরের কবিতা ঘামসূত্র, আসাদ চৌধুরীর শিশুতোষ দুখিয়ার গল্প, অঙ্কুর থেকে রতনতনু ঘোষের প্রবন্ধ ভাষা-আন্দোলন মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা, নান্দনিক থেকে আনজির লিটনের ছড়া দুপুর নাচে টাপুর টুপুর, মুক্তদেশ থেকে আল মাহমুদের কাব্য পাখির কথায় পাখা পেলাম, সময় থেকে মুহম্মদ জাফর ইকবালের উপন্যাস রূপ রুপালি, রওশন আরা খানমের শিশুতোষ কাকের জন্য ভালোবাসা, সংহতি থেকে রাজু আলাউদ্দিন ও রফিক উম মুনির চৌধুরী অনূদিত হোর্হে লুই বোর্হেসের আত্মজীবনী, অনিন্দ্য আহমদ রফিকের নানা আলোয় রবীন্দ্রনাথ (দুই খণ্ড), আবু নাছের টিপুর গণমাধ্যম ও প্রকাশনা বিষয়ক আইন, ইত্যাদি থেকে সুলতানা কামালের মানবাধিকার সুশাসন ও গণতন্ত্র, খোশরোজ কিতাবমহল থেকে আয়েশা জানের উপন্যাস মৌ, পাঠক সমাবেশ থেকে রইস উদ্দিন আরিফের ধর্মবিষয়ক বাংলার ভাবান্দোলন।
মেলা মঞ্চে
গতকাল মেলা মঞ্চে ছিল ‘জন্ম শতবর্ষের শ্রদ্ধাঞ্জলি: রণেশ দাশগুপ্ত’ শীর্ষক আলোচনা। প্রবন্ধ পড়েন মফিদুল হক। আলোচনা করেন শফি আহমেদ, কাজল বন্দ্যোপাধ্যায়, জাহিদ রেজা নূর ও সৌমিত্র শেখর। সভাপতিত্ব করেন সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী।
সন্ধ্যায় ছিল সৈয়দ শামসুল হক রচিত, আবদুল্লাহ আল মামুন নির্দেশিত ও সুদীপ চক্রবর্তী নির্মিত থিয়েটারের কাব্যনাটক পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়।
মেলায় শিশুদের জন্য নির্ধারিত সময় শিশু প্রহর ঘোষণা করা হয়েছে আগামী বৃহস্পতি ও শুক্রবার বেলা ১১টা থেকে তিনটা পর্যন্ত। ওই দুই দিন মেলা শুধুই শিশু ও তাদের অভিভাবকদের জন্য।
No comments