বখাটের উৎপাত-দুর্বার প্রতিরোধ প্রয়োজন

দুর্বিষহ অবস্থা সমাজের। নৈতিকতা, মূল্যবোধগুলো যে কতটা নেমে গেছে, তার মূল্যায়ন করা সত্যি কঠিন। বিষয়টি দেশের সব শ্রেণীর মানুষকেই ভাবিয়ে তুলেছে। উপায় নিরূপণ এবং তরুণদের উদ্বুদ্ধ করার ব্যাপারেও কিছু উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। তারই একটি অংশ হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের একটি সিদ্ধান্ত আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গত মঙ্গলবার ঘোষণা করা হয়, আগামী ছয় মাসব্যাপী তারা বিভিন্ন বিষয়ে কর্মশালা অনুষ্ঠান করতে যাচ্ছে। সেগুলোর মধ্যে প্রাধান্য পাবে যুবসমাজের নৈতিকতাবোধ জাগ্রত করা। কিন্তু সেদিনই দেশের বিভিন্ন এলাকায় ঘটে যায় তিনটি ঘটনা, যা যেকোনো মানুষকেই উদ্বিগ্ন না করে পারে না। সব কয়টিই নৈতিকতাবর্জিত এবং সবই বখাটেপনার শিকার হওয়ার ঘটনা। মঙ্গলবার ঢাকা, পিরোজপুর ও বরিশালে তিনজনকে আত্মহত্যার মাধ্যমে বখাটেদের হাত থেকে রক্ষা পেতে হয়েছে। এই বখাটেদের অত্যাচার এমন পর্যায়ে গিয়ে ঠেকেছে যে তারা শিশু কিংবা গৃহবধূ কাউকেই ছাড় দিতে চায় না। ঢাকার মতিঝিল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্রী টুকটুকি। ১১ বছরের এই শিশুটির মাত্র পুতুল খেলারই বয়স এখন। তাকে উত্ত্যক্ত করেছে এক কিশোর। বরিশাল বিএম কলেজের ছাত্রী সুপর্ণা বালা একজন গৃহিণীও বটে। তাঁরই সহপাঠী আপত্তিজনক ছবি তুলে তাঁকে ব্ল্যাকমেইলের মাধ্যমে আত্মহত্যায় প্ররোচিত করেছে। পিরোজপুরের আরেক ছাত্রী জেনিকে গাছে ঝুলে জীবন দিতে হয়েছে ধর্ষণের কারণে। মাত্র দুদিন পরই তাঁর বিয়ের কথাবার্তা চূড়ান্ত হওয়ার কথা ছিল। এ অবস্থা থেকে আমাদের শিক্ষায়তনগুলোও নিরাপদ নয়। সম্প্রতি যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছে ঢাকার ভিকারুননিসা স্কুলের দশম শ্রেণীর এক শিক্ষার্থী। নির্যাতক পরিমল জয়ধর ওই ছাত্রীরই পিতৃতুল্য এক শিক্ষক। সম্প্রতি ঈশ্বরদী, রাজশাহী ও দেশের বিভিন্ন স্থানের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের মাধ্যমে যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছে। এ অবস্থা যে কতটা দুর্বিষহ তা বোঝা যায় সহযোগী একটি দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত একটি সংবাদ থেকে। শিক্ষকদের নৈতিক অবক্ষয়ের একটি দুর্বিষহ চিত্র দেখা যায় সেই সংবাদে। গত ছয় মাসেই দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষকদের হাতে নির্যাতিত হয়েছে ২৯৪ স্কুলছাত্রী। পিতৃতুল্য শিক্ষকের কাছেও ছাত্রীরা নিরাপদ না থাকার কারণে তারা শিক্ষকদের প্রতি আস্থা ও শ্রদ্ধাশীল থাকতে পারছে না। একইভাবে কিছু বিকৃত মানসিকতার শিক্ষকের কারণে গোটা শিক্ষকসমাজকে তার দায় বহন করতে হচ্ছে। অভিভাবক যখন নিজের সন্তানের নির্যাতকের কথা চিন্তা করেন তখন নির্দিষ্ট কোনো শিক্ষকের কথা ভাবতে পারেন না। তাঁদের দৃষ্টি এখন গোটা শিক্ষক সম্প্রদায়কেও স্পর্শ করছে। এমন পরিস্থিতিতে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, মনোবিজ্ঞানী, অভিভাবক শ্রেণীর প্রতিনিধি, প্রশাসনের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিবর্গকে নিয়ে দ্রুত পরামর্শসভার আয়োজন করা উচিত। অন্তত শিক্ষার্থীর জীবনকে স্বচ্ছন্দ এবং নিরাপদ করার ব্যবস্থা নিতে হবে অতি দ্রুত। ছাত্রীদের উদ্বুদ্ধ করতে হবে আত্মহত্যা নয়, প্রতিরোধে এগিয়ে আসতে।

No comments

Powered by Blogger.