নাশকতা
তারপর... বঙ্গদেশে নাশকতার অভাব নেই। প্রতিদিনই এখানে-সেখানে ঘটছে নানা রকম নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড। এসব কর্মকাণ্ড ঘটার পর দেশে আরও কিছু ঘটনা ঘটে যায়। এসব ঘটনা ঘটে চক্রাকারে। এই ঘটনাচক্র নিয়ে লিখেছেন আলিম আল রাজি
পুলিশ পর্ব
ঘটনাস্থলে আসে পুলিশ। তারপর যা যা ঘটে:
—পুলিশ পুরো এলাকা ঘেরাও করে রাখে।
—আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পুরো ঘটনাস্থলে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তাব্যবস্থা নিশ্চিত করে।
—ঘটনা ঘটার পরই পুরো এলাকায় মোতায়েন করা হয় সাদা পোশাকের অসংখ্য ডিবি পুলিশ।
নিরাপত্তাকর্মীরা ফাঁকা গুলি ছুড়ে জনতাকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
চিকিৎসক পর্ব
এই ধাপে আছে হাসপাতাল আর চিকিৎসকের ব্যাপারস্যাপার।
—আশঙ্কাজনক অবস্থায় আহত ব্যক্তিদের নিকটস্থ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
—কর্তব্যরত চিকিৎসক অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে অনেককে মৃত ঘোষণা করে থাকেন।
—আহত ব্যক্তিদের উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়।
—হাসপাতালে টিভি-ক্যামেরা সঙ্গে নিয়ে মুখ পর্যাপ্ত পরিমাণ বেজার করে আহত ব্যক্তিদের দেখতে যান বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক নেতা।
শোক পর্ব
শোক প্রকাশের ধুম পড়ে যায় চারদিকে। এর কিছু নমুনা—পৃথক পৃথক বাণীতে গভীর শোক প্রকাশ করেন রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেত্রী। তাঁদের পাসপোর্ট সাইজের ছবিসহ সেই শোকবার্তা যায় বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে।
—এক শোকবার্তায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি অত্যন্ত শোকাহত। শোকের ভার আমি বইতে পারছি না। আমিও স্বজনদের হারিয়েছি। তাই স্বজন হারানোর বেদনা আমি বুঝি।’
—আরেক বার্তায় বিরোধীদলীয় নেত্রী নিহত ব্যক্তিদের রুহের মাগফিরাত কামনা করে থাকেন। নিহত ব্যক্তিদের স্বজনদের শোক কাটিয়ে ওঠার ব্যাপারে প্রার্থনা করেন।
প্রতিবাদ পর্ব
—হঠাৎ করে প্রতিবাদে মুখর হয়ে ওঠে সারা দেশ।
—ঝড় ওঠে ফেসবুকে। স্ট্যাটাস আর নোট দিয়ে কাঁপিয়ে ফেলা হয় ফেসবুক।
—বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন দোষী ব্যক্তিদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়ার দাবি জানায়।
—প্রেসক্লাবের সামনে হয় অনেক মানববন্ধন, টিভিতে হয় জ্বালাময়ী টক শো।
—নেতা-নেত্রীর বিবৃতি দেখা যায় পত্রিকার কোনায় কোনায়।
দোষারোপ পর্ব
সবচেয়ে বিনোদনময় পর্ব হচ্ছে এটা। এ ধাপে সরকারি ও বিরোধী দল ইচ্ছামতো একে অপরের ওপর দোষ চাপাতে থাকে। কিছু উদাহরণ—
—সমাজকল্যাণমন্ত্রী এক সভায় বলেন, দেশের উন্নয়নের গতিকে থামিয়ে দিতেই বিরোধী দল সুপরিকল্পিতভাবে একের পর এক নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে।
—আইনমন্ত্রী বলে থাকেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বাধাগ্রস্ত করতেই এই নাশকতা।
—বিরোধী দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব হাসিমুখে বলে থাকেন, ‘এই সরকার সম্পূর্ণ ব্যর্থ। এই মুহূর্তে সরকারের উচিত পদত্যাগ করে মধ্যবর্তী নির্বাচনের মাধ্যমে তাঁদের হাতে ক্ষমতা তুলে দেওয়া। কারণ, আমাদের সময়ে এ রকম কিছু ঘটে না। আমরা অতিযত্নের সঙ্গে সুলভ মূল্যে দেশ পরিচালনা করে থাকি।’
হ্যান করেঙ্গা ত্যান করেঙ্গা পর্ব
—এই পর্বে আলোচনায় আসেন বেশ গুরুত্বপূর্ণ কিছু ব্যক্তিত্ব। এসেই তাঁরা বাণীর বন্যা বইয়ে দেন। এই করব, সেই করব বলে গলা ফাটান তাঁরা।
—প্রধানমন্ত্রী এসে গম্ভীর গলায় জড়িত ব্যক্তিদের অনতিবিলম্বে গ্রেপ্তার করে আইনের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর নির্দেশ দেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মুখে শোনা যায় কিছু অতি কমন ডায়ালগ। যেমন, নাশকতা বরদাশত করা হবে না। হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করছি, দোষী যে-ই হোক না কেন, ত্বরিৎ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অপরাধীদের ধরতে সারা দেশে চিরুনি-অভিযান চালানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়।
তদন্ত কমিটি পর্ব
এই পর্বও বেশ মজার। ঘটে বেশ কিছু মজার ঘটনা। যেমন:
—ঘটনার গুরুত্ব বিবেচনা করে তিন অথবা সাত সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। উল্লেখ করা যেতে পারে যে বেশির ভাগ সময়ই তদন্ত কমিটির সদস্যসংখ্যা হয় বিজোড়।
তিন, পাঁচ অথবা সাত দিনের মধ্যে তদন্তের রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়। এ ক্ষেত্রেও বিজোড় সংখ্যার আধিপত্য লক্ষণীয়।
এই তদন্ত কমিটি জিনিসটা কী, এরা রিপোর্ট দেয় কি না, দিলেও আসলে কী দেয়, সেটা একটা বড় রহস্য বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।
গ্রেপ্তার পর্ব
এই পর্বে থাকে সবচেয়ে বেশি উত্তেজনা।
—প্রথমেই হুটহাট করে গ্রেপ্তার করে আনা হয় কয়েকজনকে।
জামিন নামঞ্জুর করে এক, তিন অথবা পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়।
—পত্রিকায় খবর আসে, গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিরা চাঞ্চল্যকর সব তথ্য দিয়েছেন। কিন্তু সেই তথ্যগুলো আসলে কী, সেটা আর জানা যায় না।
—এরপর ঘটনার গুরুত্ব কমে যায় প্রায় পুরোটাই। পত্রিকা থেকে হারিয়ে যায় খবর। সবাই ভুলে যায় ঘটনার কথা।
তারপর...
আবার ঘটে কোনো এক ঘটনা। অতঃপর কী ঘটে? জানতে চাইলে লেখাটি আবার প্রথম থেকে পড়া শুরু করে দিতে পারেন।
ঘটনাস্থলে আসে পুলিশ। তারপর যা যা ঘটে:
—পুলিশ পুরো এলাকা ঘেরাও করে রাখে।
—আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পুরো ঘটনাস্থলে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তাব্যবস্থা নিশ্চিত করে।
—ঘটনা ঘটার পরই পুরো এলাকায় মোতায়েন করা হয় সাদা পোশাকের অসংখ্য ডিবি পুলিশ।
নিরাপত্তাকর্মীরা ফাঁকা গুলি ছুড়ে জনতাকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
চিকিৎসক পর্ব
এই ধাপে আছে হাসপাতাল আর চিকিৎসকের ব্যাপারস্যাপার।
—আশঙ্কাজনক অবস্থায় আহত ব্যক্তিদের নিকটস্থ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
—কর্তব্যরত চিকিৎসক অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে অনেককে মৃত ঘোষণা করে থাকেন।
—আহত ব্যক্তিদের উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়।
—হাসপাতালে টিভি-ক্যামেরা সঙ্গে নিয়ে মুখ পর্যাপ্ত পরিমাণ বেজার করে আহত ব্যক্তিদের দেখতে যান বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক নেতা।
শোক পর্ব
শোক প্রকাশের ধুম পড়ে যায় চারদিকে। এর কিছু নমুনা—পৃথক পৃথক বাণীতে গভীর শোক প্রকাশ করেন রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেত্রী। তাঁদের পাসপোর্ট সাইজের ছবিসহ সেই শোকবার্তা যায় বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে।
—এক শোকবার্তায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি অত্যন্ত শোকাহত। শোকের ভার আমি বইতে পারছি না। আমিও স্বজনদের হারিয়েছি। তাই স্বজন হারানোর বেদনা আমি বুঝি।’
—আরেক বার্তায় বিরোধীদলীয় নেত্রী নিহত ব্যক্তিদের রুহের মাগফিরাত কামনা করে থাকেন। নিহত ব্যক্তিদের স্বজনদের শোক কাটিয়ে ওঠার ব্যাপারে প্রার্থনা করেন।
প্রতিবাদ পর্ব
—হঠাৎ করে প্রতিবাদে মুখর হয়ে ওঠে সারা দেশ।
—ঝড় ওঠে ফেসবুকে। স্ট্যাটাস আর নোট দিয়ে কাঁপিয়ে ফেলা হয় ফেসবুক।
—বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন দোষী ব্যক্তিদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়ার দাবি জানায়।
—প্রেসক্লাবের সামনে হয় অনেক মানববন্ধন, টিভিতে হয় জ্বালাময়ী টক শো।
—নেতা-নেত্রীর বিবৃতি দেখা যায় পত্রিকার কোনায় কোনায়।
দোষারোপ পর্ব
সবচেয়ে বিনোদনময় পর্ব হচ্ছে এটা। এ ধাপে সরকারি ও বিরোধী দল ইচ্ছামতো একে অপরের ওপর দোষ চাপাতে থাকে। কিছু উদাহরণ—
—সমাজকল্যাণমন্ত্রী এক সভায় বলেন, দেশের উন্নয়নের গতিকে থামিয়ে দিতেই বিরোধী দল সুপরিকল্পিতভাবে একের পর এক নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে।
—আইনমন্ত্রী বলে থাকেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বাধাগ্রস্ত করতেই এই নাশকতা।
—বিরোধী দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব হাসিমুখে বলে থাকেন, ‘এই সরকার সম্পূর্ণ ব্যর্থ। এই মুহূর্তে সরকারের উচিত পদত্যাগ করে মধ্যবর্তী নির্বাচনের মাধ্যমে তাঁদের হাতে ক্ষমতা তুলে দেওয়া। কারণ, আমাদের সময়ে এ রকম কিছু ঘটে না। আমরা অতিযত্নের সঙ্গে সুলভ মূল্যে দেশ পরিচালনা করে থাকি।’
হ্যান করেঙ্গা ত্যান করেঙ্গা পর্ব
—এই পর্বে আলোচনায় আসেন বেশ গুরুত্বপূর্ণ কিছু ব্যক্তিত্ব। এসেই তাঁরা বাণীর বন্যা বইয়ে দেন। এই করব, সেই করব বলে গলা ফাটান তাঁরা।
—প্রধানমন্ত্রী এসে গম্ভীর গলায় জড়িত ব্যক্তিদের অনতিবিলম্বে গ্রেপ্তার করে আইনের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর নির্দেশ দেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মুখে শোনা যায় কিছু অতি কমন ডায়ালগ। যেমন, নাশকতা বরদাশত করা হবে না। হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করছি, দোষী যে-ই হোক না কেন, ত্বরিৎ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অপরাধীদের ধরতে সারা দেশে চিরুনি-অভিযান চালানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়।
তদন্ত কমিটি পর্ব
এই পর্বও বেশ মজার। ঘটে বেশ কিছু মজার ঘটনা। যেমন:
—ঘটনার গুরুত্ব বিবেচনা করে তিন অথবা সাত সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। উল্লেখ করা যেতে পারে যে বেশির ভাগ সময়ই তদন্ত কমিটির সদস্যসংখ্যা হয় বিজোড়।
তিন, পাঁচ অথবা সাত দিনের মধ্যে তদন্তের রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়। এ ক্ষেত্রেও বিজোড় সংখ্যার আধিপত্য লক্ষণীয়।
এই তদন্ত কমিটি জিনিসটা কী, এরা রিপোর্ট দেয় কি না, দিলেও আসলে কী দেয়, সেটা একটা বড় রহস্য বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।
গ্রেপ্তার পর্ব
এই পর্বে থাকে সবচেয়ে বেশি উত্তেজনা।
—প্রথমেই হুটহাট করে গ্রেপ্তার করে আনা হয় কয়েকজনকে।
জামিন নামঞ্জুর করে এক, তিন অথবা পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়।
—পত্রিকায় খবর আসে, গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিরা চাঞ্চল্যকর সব তথ্য দিয়েছেন। কিন্তু সেই তথ্যগুলো আসলে কী, সেটা আর জানা যায় না।
—এরপর ঘটনার গুরুত্ব কমে যায় প্রায় পুরোটাই। পত্রিকা থেকে হারিয়ে যায় খবর। সবাই ভুলে যায় ঘটনার কথা।
তারপর...
আবার ঘটে কোনো এক ঘটনা। অতঃপর কী ঘটে? জানতে চাইলে লেখাটি আবার প্রথম থেকে পড়া শুরু করে দিতে পারেন।
No comments