পরিবহন শ্রমিকদের বেতন-ভাতা বাড়ানোর বিকল্প নেই-সব ধরনের চাঁদাবাজি বন্ধ হোক

পরিবহন খাতে দীর্ঘদিন ধরেই যে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, দখলবাজি চলে আসছে তা সবারই জানা। কিন্তু এ খাতের ৯৩২টি সংগঠনের মধ্যে ৬৮৬টিই যে অবৈধ তা হয়তো অনেকের অজানা ছিল। রোববার শ্রম মন্ত্রণালয়সংক্রান্ত সংসদীয় উপকমিটির বৈঠকে এই চাঞ্চল্যকর তথ্য জানিয়েছেন পরিবহন মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের নেতারা।


যে খাতে বৈধ সংগঠনের চেয়ে অবৈধ সংগঠনের সংখ্যা দ্বিগুণেরও বেশি, সে খাতে চাঁদাবাজি ও বখড়া আদায়ের দৌরাত্ম্য চলবেই। সংসদীয় কমিটির সভাপতি ইসরাফিল আলম স্বীকার করেছেন পরিবহন খাতে যে অবৈধ চাঁদাবাজি চলছে, সে জন্য অবৈধ সংগঠনগুলোই দায়ী। তবে বৈধ সংগঠনগুলো ধোয়া তুলসী পাতা ভাবার কারন নেই।
সাংসদ ও পরিবহন-মালিকেরা যে পরিবহন খাতের চাঁদাবাজিকে বৈধ ও অবৈধ দুই ভাগে ভাগ করেছেন, তার যুক্তিটা কী? দরগার বাক্সের মতে পরিবহন খাতে কেউ স্বেচ্ছায় অর্থ দেন না। যে অর্থ পরিবহন মালিকদের কাছ থেকে চাঁদা হিসেবে নেওয়া হয় সেই অর্থ বাড়তি বেতন-ভাতা হিসেবে দিলে শ্রমিকেরা লাভবান হত। এখন মালিকেরা অর্থ দিচ্ছেন ঠিকই কিন্তু সাধারণ শ্রমিকেরা তার সুফল পাচ্ছে না। লাভের গুড় কতিপয় শ্রমিক নেতা ও সংগঠনের পকেটে যায়। শ্রমিক সংগঠন বা নেতাদের দায়িত্ব পরিবহন মালিকদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় নয়, তারা যাতে শ্রমিকদের উপযুক্ত বেতন-ভাতা ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা দেয় সেটি নিশ্চিত করা।
বৈঠকে উপস্থিত নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান পরিবহন খাতে অবৈধ চাঁদা বন্ধ করতে নির্দিষ্ট হারে চাঁদা আদায়কে বৈধতা দেওয়ার যে সুপারিশ করেছেন, আমরা তারও বিরোধিতা করি। এ খাতে সব ধরনের চাঁদাবাজি বন্ধ করতে হবে। মালিকেরা যে অর্থ চাঁদা হিসেবে দিচ্ছেন সেই অর্থ তাঁরা শ্রমিকদের বেতন-ভাতা হিসেবে দিতে দোষটা কী? এ খাতের শ্রমিকদের বেতন-ভাতা তুলনামূলকভাবে কম এবং বেশিরভাগ শ্রমিককে জীবনধারণের জন্য অতিরিক্ত সময় কাজ করতে হয়। এটিও সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারন বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। দ্বিতীয়ত কোন শ্রমিক সংগঠন বৈধ, কোনটি অবৈধ তা নিরূপণ করবে কে? এক সরকারের আমলে যে সগঠনকে অবৈধ ঘোষণা করা হলে পরের সরকার সানন্দে সেই সংগঠনকে বৈধতা দেবে। এই চক্র থেকেও পরিবহন শ্রমিকদের বেরিয়ে আসতে হবে।
পরিবহন খাতের অবৈধ চাঁদাবাজিকে বৈধতা দেওয়ার কাজ সংসদীয় কমিটি বা উপকমিটির নয়। তাদের উচিত এই খাতের মৌলিক সমস্যাগুলো চিহ্নিত এবং তার প্রতিকারে বাস্তবসম্মত সুপারিশ করা। অন্যদিকে পরিবহন মালিকদেরও বুঝতে হবে সাধারণ শ্রমিকেরাই এই খাতটিকে টিকিয়ে রেখেছে; তাদের বেঁচে থাকার জন্য ন্যূনতম বেতন ভাতা ও সুযোগ সুবিধা দেওয়া হলে এই খাতে নৈরাজ্য ও চাঁদাবাজি যেমন কমবে, তেমনি যাত্রী সেবাও বাড়বে।
আমরা মনে করি, পরিবহনসহ সব সেবা খাতের চাঁদাবাজি কঠোর হাতে বন্ধ করতে হবে। শ্রমিকদের কল্যাণে যদি পরিবহন-মালিকেরা সত্যি সত্যি কিছু করতে চান তার উত্তম উপায় হলো তাদের বেতন-ভাতা ও সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো, চাঁদার নামে অবৈধ উপার্জনে প্রলুব্ধ করা নয়।

No comments

Powered by Blogger.