আহমদ শরীফ স্মারক বক্তৃতা ২০১২-মহাপুরুষদের আদর্শের ধারণা তত্ত্বগতভাবে বেঁচে আছে
মানবকল্যাণের জন্য যুগে যুগে দার্শনিক ও মহাপুরুষেরা যেসব আদর্শের ধারণা গড়ে তুলেছিলেন, সেগুলো এখন তত্ত্বগতভাবেই বেঁচে আছে। যে আদর্শ মানুষকে মনুষ্যত্ব দেয়, তা আবার মানুষে মানুষে বিরোধিতাও সৃষ্টি করে। যে আদর্শ সত্যিকারের মানুষ তৈরি করে, তা এখন ধর্মপ্রচারক এবং রাজনীতিকদের হাতে পারমাণবিক বোমার চেয়েও ভয়ানক অস্ত্র।
অধ্যাপক আহমদ শরীফ স্মারক বক্তৃতায় এ কথা বলেছেন বিশিষ্ট গবেষক অধ্যাপক গোলাম মুরশিদ। তিনি আরও বলেন, শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে মানুষ নিজের প্রজ্ঞা দিয়ে আদর্শ গড়ে তুললেও সম্পূর্ণ মানুষ হয়ে উঠতে পারেনি।
বাঙলাদেশ ভাষা সমিতি গতকাল সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটে ওই বক্তৃতার আয়োজন করে। আহমদ শরীফের ৯১তম জন্মদিন উপলক্ষে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা অংশ নেন।
স্মারক বক্তৃতায় বলা হয়, যে ধর্ম অন্য মানুষকে ভালোবাসার কথা বলে, সেই ধর্মই অন্য মানুষের প্রতি ঘৃণা সৃষ্টি করতে পারে, সামগ্রিকভাবে তা মানব সমাজের মধ্যে বিরোধের বীজ বপন করতে পারে। একই সমাজ এবং দেশের মানুষের মধ্যে যে যোগাযোগ ও সহযোগিতা কাম্য, তা বিচ্ছিন্ন অথবা বিপন্ন করতে পারে ধর্ম।
দৃষ্টান্ত হিসেবে বলা হয়, যিশুখ্রিষ্ট প্রেমের বাণী প্রচার করলেও এবং হজরত মুহাম্মদ (সা.) তাঁর ধর্মের নাম শান্তি রাখলেও ধর্মের নামে খ্রিষ্টান ও মুসলমানের যুদ্ধ বহু যুগের। এখনো উভয় ধর্মের অনুসারীরা একে অন্যকে সন্দেহের চোখে দেখে। মুসলমান ও ইহুদিদের বিরোধও তেমনি সমান প্রবল। হিন্দু ও মুসলমানদের নিত্য কলহ চলছে উপমহাদেশে। এমনকি ভারতে হিন্দু আর খ্রিষ্টানদের মধ্যে তীব্র হানাহানি দেখা দিয়েছে। ওডিশায় খ্রিষ্টান শিশুদের গাড়িতে বন্দী করে অথবা ঘুমন্ত ধর্মযাজককে পুড়িয়ে মারতে জাতীয়তাবাদী হিন্দুদের বিবেক আটকায়নি।
বক্তৃতায় বলা হয়, ধর্মের নামে মানুষ যে পশুর চেয়েও অধম হতে পারে, তা দেখা যায় গুজরাটে। ভারতের এই রাজ্যে নারী, শিশুসহ হিন্দুদের জীবন্ত পুড়িয়ে মারতে একশ্রেণীর মুসলমানের বিবেকে বাধেনি। এমনকি একশ্রেণীর হিন্দু শত শত শিশু, নারী ও বৃদ্ধ মুসলমানকে পুড়িয়ে মেরেছে। শুধু হিন্দু-মুসলমানের মধ্যেই নয়, ১৯৮৪ সালে হিন্দু ও শিখদের দাঙ্গায় তিন হাজারের বেশি শিখ নিহত হয়েছিল।
গোলাম মুরশিদ বলেন, স্বধর্মীদের ওপরও অত্যাচার করার দৃষ্টান্ত রয়েছে। উত্তর আয়ারল্যান্ডে খ্রিষ্টান খ্রিষ্টানে, ক্যাথেলিক আর প্রোটেস্ট্যান্টে, পাকিস্তান অথবা ইরাকে মুসলমানে মুসলমানে, শিয়া আর সুন্নিতে এবং কাদিয়ানি আর সুন্নিতে বিরোধ রয়েছে। তিনি বলেন, ধর্ম ছাড়াও গণতন্ত্রের নামে সাম্প্রতিককালে যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেন যেভাবে ইরাকের ওপর নির্যাতন চালিয়েছে, সেটা খুবই অগণতান্ত্রিক।
বক্তৃতায় বলা হয়, ক্ষমতাকে কেন্দ্রীভূত অথবা স্থায়ী করার চেষ্টা থাকলেও রাষ্ট্রযন্ত্র অনেক ক্ষেত্রে মানবতাবিরোধী প্রবল ভূমিকা পালন করে। মানবতা তখন পৃষ্ট হয় রাষ্ট্রযন্ত্রের তলায়।
গোলাম মুরশিদ তাঁর বক্তৃতায় ধর্মীয় আদর্শবাদ, জাতীয়তাবাদ, সাম্রাজ্যবাদ এবং মার্ক্সবাদ নিয়ে বিশ্লেষণ করেছেন। তিনি বলেন, মার্ক্সবাদে মানবকল্যাণের নামে যেভাবে মানুষ হত্যা করা হয়েছে, তাতে বোঝা যায়, মানুষের মঙ্গলের জন্য আদর্শ নয়, বরং আদর্শের জন্যই মানুষ। তিনি আরও বলেন, মার্ক্সের আদর্শ যা-ই হোক, বলশেভিক বিপ্লব থেকে আরম্ভ করে ৯০ বছরের বেশি সময় ধরে বিভিন্ন নেতার অধীনে যে তথাকথিত মার্ক্সবাদী আদর্শ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, সে আদর্শ মানবতার নয়। বরং তা সামগ্রিকভাবে মৌলিক অধিকার হরণ এবং নির্যাতনের মাধ্যমে নিষ্ঠুর রাষ্ট্রযন্ত্র স্থাপনের।
সভাপতির বক্তব্যে বাঙলাদেশ ভাষা সমিতির সভাপতি মনসুর মুসা বলেন, বাংলাদেশকে মুক্তবুদ্ধির আলোকে উজ্জ্বল করার জন্য সামাজিক সংগ্রামে নেমেছিলেন অধ্যাপক আহমদ শরীফ। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটের পরিচালক সুলতান আহমেদ। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন তেজগাঁও বিজ্ঞান কলেজের অধ্যক্ষ নূরজাহান বেগম।
বাঙলাদেশ ভাষা সমিতি গতকাল সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটে ওই বক্তৃতার আয়োজন করে। আহমদ শরীফের ৯১তম জন্মদিন উপলক্ষে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা অংশ নেন।
স্মারক বক্তৃতায় বলা হয়, যে ধর্ম অন্য মানুষকে ভালোবাসার কথা বলে, সেই ধর্মই অন্য মানুষের প্রতি ঘৃণা সৃষ্টি করতে পারে, সামগ্রিকভাবে তা মানব সমাজের মধ্যে বিরোধের বীজ বপন করতে পারে। একই সমাজ এবং দেশের মানুষের মধ্যে যে যোগাযোগ ও সহযোগিতা কাম্য, তা বিচ্ছিন্ন অথবা বিপন্ন করতে পারে ধর্ম।
দৃষ্টান্ত হিসেবে বলা হয়, যিশুখ্রিষ্ট প্রেমের বাণী প্রচার করলেও এবং হজরত মুহাম্মদ (সা.) তাঁর ধর্মের নাম শান্তি রাখলেও ধর্মের নামে খ্রিষ্টান ও মুসলমানের যুদ্ধ বহু যুগের। এখনো উভয় ধর্মের অনুসারীরা একে অন্যকে সন্দেহের চোখে দেখে। মুসলমান ও ইহুদিদের বিরোধও তেমনি সমান প্রবল। হিন্দু ও মুসলমানদের নিত্য কলহ চলছে উপমহাদেশে। এমনকি ভারতে হিন্দু আর খ্রিষ্টানদের মধ্যে তীব্র হানাহানি দেখা দিয়েছে। ওডিশায় খ্রিষ্টান শিশুদের গাড়িতে বন্দী করে অথবা ঘুমন্ত ধর্মযাজককে পুড়িয়ে মারতে জাতীয়তাবাদী হিন্দুদের বিবেক আটকায়নি।
বক্তৃতায় বলা হয়, ধর্মের নামে মানুষ যে পশুর চেয়েও অধম হতে পারে, তা দেখা যায় গুজরাটে। ভারতের এই রাজ্যে নারী, শিশুসহ হিন্দুদের জীবন্ত পুড়িয়ে মারতে একশ্রেণীর মুসলমানের বিবেকে বাধেনি। এমনকি একশ্রেণীর হিন্দু শত শত শিশু, নারী ও বৃদ্ধ মুসলমানকে পুড়িয়ে মেরেছে। শুধু হিন্দু-মুসলমানের মধ্যেই নয়, ১৯৮৪ সালে হিন্দু ও শিখদের দাঙ্গায় তিন হাজারের বেশি শিখ নিহত হয়েছিল।
গোলাম মুরশিদ বলেন, স্বধর্মীদের ওপরও অত্যাচার করার দৃষ্টান্ত রয়েছে। উত্তর আয়ারল্যান্ডে খ্রিষ্টান খ্রিষ্টানে, ক্যাথেলিক আর প্রোটেস্ট্যান্টে, পাকিস্তান অথবা ইরাকে মুসলমানে মুসলমানে, শিয়া আর সুন্নিতে এবং কাদিয়ানি আর সুন্নিতে বিরোধ রয়েছে। তিনি বলেন, ধর্ম ছাড়াও গণতন্ত্রের নামে সাম্প্রতিককালে যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেন যেভাবে ইরাকের ওপর নির্যাতন চালিয়েছে, সেটা খুবই অগণতান্ত্রিক।
বক্তৃতায় বলা হয়, ক্ষমতাকে কেন্দ্রীভূত অথবা স্থায়ী করার চেষ্টা থাকলেও রাষ্ট্রযন্ত্র অনেক ক্ষেত্রে মানবতাবিরোধী প্রবল ভূমিকা পালন করে। মানবতা তখন পৃষ্ট হয় রাষ্ট্রযন্ত্রের তলায়।
গোলাম মুরশিদ তাঁর বক্তৃতায় ধর্মীয় আদর্শবাদ, জাতীয়তাবাদ, সাম্রাজ্যবাদ এবং মার্ক্সবাদ নিয়ে বিশ্লেষণ করেছেন। তিনি বলেন, মার্ক্সবাদে মানবকল্যাণের নামে যেভাবে মানুষ হত্যা করা হয়েছে, তাতে বোঝা যায়, মানুষের মঙ্গলের জন্য আদর্শ নয়, বরং আদর্শের জন্যই মানুষ। তিনি আরও বলেন, মার্ক্সের আদর্শ যা-ই হোক, বলশেভিক বিপ্লব থেকে আরম্ভ করে ৯০ বছরের বেশি সময় ধরে বিভিন্ন নেতার অধীনে যে তথাকথিত মার্ক্সবাদী আদর্শ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, সে আদর্শ মানবতার নয়। বরং তা সামগ্রিকভাবে মৌলিক অধিকার হরণ এবং নির্যাতনের মাধ্যমে নিষ্ঠুর রাষ্ট্রযন্ত্র স্থাপনের।
সভাপতির বক্তব্যে বাঙলাদেশ ভাষা সমিতির সভাপতি মনসুর মুসা বলেন, বাংলাদেশকে মুক্তবুদ্ধির আলোকে উজ্জ্বল করার জন্য সামাজিক সংগ্রামে নেমেছিলেন অধ্যাপক আহমদ শরীফ। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটের পরিচালক সুলতান আহমেদ। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন তেজগাঁও বিজ্ঞান কলেজের অধ্যক্ষ নূরজাহান বেগম।
No comments