বাজারদর-নিশ্চিত করা হোক বেঁধে দেওয়া দাম
নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ছে লাগামহীনভাবে। অস্থির বাজারে জিনিসপত্রের দামের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস ওঠার দশা। ব্যবসায়ীদের নানা কারসাজির কাছে ভোক্তাদের যে শেষ পর্যন্ত অসহায় আত্মসমর্পণ করতে হচ্ছে, তা বলাই বাহুল্য। বাজারের এ অবস্থা নতুন নয়। দীর্ঘদিন থেকেই এ অবস্থা চলে আসছে।
তার ওপর এখন সামনে আসছে রোজা। রমজান মাসে বাজারে জিনিসপত্রের দাম বাড়েনি_এমন উদাহরণ পাওযা যাবে না। রোজার মাসে জিনিসপত্রের দাম অনেক ক্ষেত্রেই সাধারণের আয়ত্তের বাইরে চলে যায়। তবে এবার অন্তত রোজার মাসে নিত্যপণ্যের দাম সাধারণের আয়ত্তে রাখার লক্ষ্যে বেঁধে দেওয়া হলো ভোজ্য তেল ও চিনির দাম। গতকাল থেকেই চিনি ৬৫ টাকা কেজি ও সয়াবিন তেল লিটারপ্রতি ১০৯ টাকা দরে বিক্রি হওয়ার কথা।
কালের কণ্ঠের সম্পাদকীয় স্তম্ভে বারবার উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশের বাজারে জিনিসপত্রের দাম বাড়ানোর জন্য সাধারণত কিছু উপলক্ষ লাগে। বিশেষ করে উৎসবের আগে বাজারে জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যায়। রমজান মাস হচ্ছে জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে দেওয়ার সবচেয়ে ভালো সময়। এ সময় বাজারে জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে দেওয়া যেন একধরনের রেওয়াজে পরিণত হয়েছে। চাল-ডাল-তেল-চিনিসহ নিত্যপণ্যের দাম রমজান মাসে বাড়বেই। এবার লক্ষ করা গেছে ব্যতিক্রম। এবার রোজা আসার অনেক আগেই বাজারে জিনিসপত্রের দাম বেড়ে গেছে। বেড়ে যাওয়া এই বাজারে কেমন করে পণ্যের দাম স্থিতিশীল রাখা যায়, অর্থাৎ দাম আর না বাড়ে, সেটাই বোধ হয় এখন সবার ভাবনা। এই অস্থিতিশীল বাজারে নতুন করে বেঁধে দেওয়া হয়েছে দুটি পণ্যের দাম। কিন্তু দাম বেঁধে দেওয়ার পরও বাজারে অন্তত সে দুটি পণ্যও নির্ধারিত দামে বিক্রি হবে, তার নিশ্চয়তা কে দেবে? অদৃশ্য বাজার সিন্ডিকেট কোনো কারসাজি করবে না_ এমন নিশ্চয়তা কে দেবে? বাজারের এই অদৃশ্য সিন্ডিকেটের কথাও আগে শোনা যেত। সরকারের বিকল্প বিপণন ব্যবস্থা না থাকায় সিন্ডিকেট সেই সুযোগটা নিয়েছে। বাজারে সিন্ডিকেটের একচ্ছত্র দাপট। অথচ সরকারের বিকল্প বিপণন ব্যবস্থা সক্রিয় থাকলে সিন্ডিকেট নিজেদের মতো করে জিনিসপত্রের দাম বাড়াতে পারত না। জিম্মি করতে পারত না সাধারণ ভোক্তাদের। কয়েক বছর ধরেই বিকল্প বিপণন ব্যবস্থা বা সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন সংস্থা টিসিবিকে কার্যকর করার কথা শোনা গেছে। কিন্তু কার্যকরভাবে সক্রিয় করা যায়নি টিসিবিকে। গত বছরও দেখা গেছে, টিসিবির ডিলাররা বাজারে পণ্য বিপণন করছেন না। সিন্ডিকেট এ অবস্থারই সুবিধাটা নিয়েছে। নিজেদের ইচ্ছেমতো পণ্যের দাম বাড়িয়ে বাজার অস্থিতিশীল করেছে। আলোচিত সেই বাজার সিন্ডিকেট দৃশ্যমান না হলেও তার অস্তিত্ব এখনো টের পাওয়া যায়। বাজারে জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ার নেপথ্যে বাজার সিন্ডিকেটের কালো হাত রয়েছে_সেটা বুঝতে কারো অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। শোনা যাচ্ছে, টিসিবি এবার বাজারে পাঁচ পণ্য বিক্রি করবে। রমজানে বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখাই যে এর লক্ষ্য, সেটা কাউকে নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। কিন্তু শুরুতেই প্রশ্ন উঠেছে পণ্যের মান নিয়ে। টিসিবি যে পণ্য বাজারজাত করছে, তার মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ডিলাররা। ডিলারদের অভিযোগ, নিম্নমানের ডাল ও খেজুর তাদের গছিয়ে দিচ্ছে টিসিবি। টিসিবির চেয়ারম্যানও বিষয়টি সংবাদমাধ্যমের কাছে স্বীকার করেছেন। প্রশ্ন উঠতে পারে, ইচ্ছে করেই কি নিম্নমানের পণ্য ডিলারদের কাছে সরবরাহ করছে টিসিবি? সেটা যদি হয়, তাহলে বলতে হবে, বাজার সিন্ডিকেটকে এক অর্থে একটা অনাকাঙ্ক্ষিত সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছে।
টিসিবিকে সক্রিয় করার পাশাপাশি মানসম্মত পণ্য সরবরাহও নিশ্চিত করতে হবে। নিশ্চিত করতে হবে বাজার তদারকি। খুচরা বিক্রেতারা প্রতিটি পণ্য সঠিক দামে বিক্রি করছে কি না, সেটা নিশ্চিত করতে হবে। ব্যবস্থা করতে হবে ভ্রাম্যমাণ আদালতের। উচ্চ আদালতও ভ্রাম্যমাণ আদালতের ব্যাপারে গুরুত্ব আরোপ করেছেন। শুধু দাম বেঁধে দিলেই হবে না, সেই দামে পণ্যপ্রাপ্তিও নিশ্চিত করতে হবে। এ ব্যাপারে যারা ব্যত্যয় ঘটাতে চেষ্টা করে তাদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক কঠোর দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
No comments