জাতীয় রাজনীতির কুপ্রভাব শিক্ষাঙ্গনে by ড. সিদ্দিক আহমেদ চৌধুরী

সম্প্রতি তুচ্ছ একটি বিষয়কে কেন্দ্র করে যে দুঃখজনক ঘটনাটি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘটল, এমনটি কারো কাম্য ছিল না। তবে আমার মনে হচ্ছে, এ ঘটনা চলমান জাতীয় ও ছাত্র রাজনীতির অসহিষ্ণু মনোভাবেরই চরম বহিঃপ্রকাশ। অতীতে অর্থাৎ বিগত প্রায় ২৪ বছরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংঘাতে অনেক শিক্ষার্থীর প্রাণহানি ঘটেছে, যা একেবারেই অপ্রত্যাশিত ও অগ্রহণযোগ্য।


শিক্ষাঙ্গনে শিক্ষার্থীর এমন প্রাণহানি ঘটবে ও সংঘাত-সংঘর্ষে জীবন বিপন্ন হবে তা কোনোভাবে মেনে নেওয়া যায় না। আজ পর্যন্ত ওই সব ঘটনার কোনো একটিরও বিচার হয়নি। যদি ওই সব মর্মন্তুদ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার হতো তাহলে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটত না। বাংলাদেশের ছাত্র রাজনীতির একটি গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায় আছে। ভাষা আন্দোলন, গণ-অভ্যুত্থান, স্বাধীনতা তথা মুক্তিযুদ্ধে এ দেশের ছাত্রদের ভূমিকার কথা বিশেষভাবে স্মরণ করতে হয়। স্বাধীন বাংলাদেশেও প্রায় প্রতিটি গণতান্ত্রিক-সাংস্কৃতিক আন্দোলনে তাদের ভূমিকা উল্লেখযোগ্য ও গৌরবের। কিন্তু বর্তমানে তা হৃত বলা যায়। আমি রাষ্ট্রবিজ্ঞানের একজন শিক্ষক হিসেবে মনে করি, আমাদের জাতীয় রাজনীতির ক্ষেত্রে যে অসহিষ্ণু ও বৈরী মনোভাব জিইয়ে আছে এরই কুপ্রভাব পড়েছে সর্বক্ষেত্রে। ছাত্র রাজনীতি এর বাইরে নয়। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সাম্প্রতিক ঘটে যাওয়া ওই দুঃখজনক ঘটনার রহস্য উন্মোচনে একটি তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে এবং ইতিমধ্যে তারা কাজও শুরু করেছে। অতীতেও এমন তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছিল কিন্তু আমার জানা মতে কোনো একটি ঘটনারও সুষ্ঠু তদন্তক্রমে যথাযথ প্রতিকার হয়নি। তবে আমরা আশা করি, বর্তমান তদন্ত কমিটি ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ওই বৃত্ত থেকে বেরিয়ে এসে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে প্রতিবেদন পেশ করতে সক্ষম হবে এবং এর আলোকে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে কঠোর ও কার্যকর পদক্ষেপ নেবে। দেশের উচ্চ বিদ্যাপীঠগুলোয় সম্প্রতি আবার হানাহানি-সংঘাতের আলামত পরিলক্ষিত হচ্ছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে এ ব্যাপারে চরম উদ্বিগ্ন। কারণ আমাদের অতীত অভিজ্ঞতা প্রীতিকর নয়। শিক্ষার সার্বিক পরিবেশ রক্ষার স্বার্থে দ্রুত এর অবসান জরুরি। লক্ষ করার মতো বিষয় যে জাতীয় রাজনীতির ক্ষেত্রে অস্থিরতা-অসহিষ্ণুতা যত দানা বাঁধছে শিক্ষাঙ্গনে বিশেষ করে উচ্চ বিদ্যাপীঠগুলোতে এর কুপ্রভাব তত বেশি পড়ছে। এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক নেতাদের দেশ-জাতির বৃহৎ স্বার্থে তাঁদের অবস্থান পরিবর্তন করা উচিত বলে মনে করি। সংঘাত-সংঘর্ষের পথ পরিহার করে শান্তির অন্বেষায় ও সহাবস্থানে সবার সে রকম পরিবেশ সৃষ্টির দায় রয়েছে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে যে ঘটনাটি ঘটল এর ফলে জানমালের ব্যাপক ক্ষতি হলো, যা চরম নিন্দনীয় ও দুঃখজনক। আমরা আশা করি, এমন বৈরী পরিস্থিতির মুখোমুখি আর আমাদের হতে হবে না। পাশাপাশি ক্ষমতাসীন মহলকে আরো বেশি সহিষ্ণুতা ও ঔদার্যের পরিচয় দিতে হবে। সংকীর্ণ রাজনীতির ঊধর্ে্ব উঠতেই হবে। ক্যাম্পাস অশান্ত থাকলে অন্য ক্ষেত্রেও এর বিরূপ প্রভাব পড়বে- যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্মন্তুদ ঘটনার প্রতিকারে সব কিছুর ঊধর্ে্ব উঠে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হবে- এটাই প্রত্যাশা।

No comments

Powered by Blogger.