রাসায়নিক সারের যথেচ্ছ ব্যবহারের কুফল by ড. মুহাম্মদ আশকার ইবনে শাইখ
বেশ কয়েক বছর ধরে বিষয়টি আলোচনায় গুরুত্ব পেলেও কার্যত প্রতিকার কিছুই হচ্ছে না। বাংলাদেশে ক্ষেত-খামারে উৎপাদিত ফল ও শাকসবজিতে রাসায়নিকের যথেচ্ছ ব্যবহার হচ্ছে এবং ক্রমেই এর ব্যবহারের মাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে ক্ষতি হচ্ছে মানব দেহের। অন্যদিকে প্রাণীবৈচিত্র্য এবং পরিবেশ বিপন্ন হচ্ছে।
রাসায়নিকের ব্যবহার উন্নত, অনুন্নত কিংবা উন্নয়নশীল আর কোনো দেশে যে হয় না তা নয়; কিন্তু কোনোভাবেই বাংলাদেশের মতো এত উদ্বেগজনক মাত্রায় নয়। এর কারণ, সেসব দেশের মানুষের সচেতনতা এবং সরকারের তরফে বিধিনিষেধ ও তা বাস্তবায়নে তাদের সরকার বা প্রশাসনের পক্ষ থেকে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ। খাদ্য উৎপাদন বা কৃষিক্ষেত্রে রাসায়নিক সারের ব্যবহার বিশ্বব্যাপী একটি স্বীকৃত বিষয়। আমরা অনেকেই জানি, উন্নত তো বটেই, উন্নয়নশীল অনেক দেশেও রাসায়নিক সার ব্যবহারের ক্ষেত্রে যথাযথ প্রশিক্ষণ, মানের নিশ্চয়তা বিধানসহ প্রয়োজনীয় অন্য ব্যবস্থাবলিও অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে নিরূপণ করা হয়ে থাকে। কিন্তু বাংলাদেশে তা হয় না। দারিদ্র্যপীড়িত এ দেশের সিংহভাগ মানুষই কোনো না কোনো রোগ-ব্যাধিতে আক্রান্ত এবং এর জন্য মানুষের অপরিণামদর্শী কর্মকাণ্ড বহুলাংশে দায়ী। আমাদের কৃষি মন্ত্রণালয়, বিভাগ, দপ্তর ও অধিদপ্তর থাকলেও তাদের তরফে রাসায়নিক সার প্রয়োগের ক্ষেত্রে কৃষককে সচেতন করে তোলা, প্রশিক্ষণ দেওয়া কিংবা সারের মান নির্ণয় ইত্যাদি ক্ষেত্রে তেমন কোনো পদক্ষেপ পরিলক্ষিত হয় না। ফলে অনেকেই এর ক্ষতিকর দিকটা সম্পর্কেও তেমন কিছুই জানে না।
বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, যেভাবে দেশে রাসায়নিকের ব্যবহার ক্রমে বৃদ্ধি পাচ্ছে, এ ব্যাপারে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে এর জন্য জাতিকে ভয়াবহ মাশুল গুনতে হবে। এ দেশের ক্ষেত-খামারে অধিকতর উৎপাদনের লক্ষ্যে যেভাবে রাসায়নিক সার ব্যবহার করা হচ্ছে তা প্রশ্নবোধক। দুঃখজনক এবং অনভিপ্রেত হলেও সত্য, আমরা খাদ্য উৎপাদন, সরবরাহ ও বাজারজাতকরণের ক্ষেত্রে অনেক উৎপাদক ও ব্যবসায়ীর যে ধরনের অসাধুতা খোলা চোখেই দেখতে পাই, তা বিস্ময়কর হলেও জনস্বার্থ-সংশ্লিষ্ট এসব বিষয় থেকে যাচ্ছে একেবারেই প্রতিকারহীন। সুস্থ-সবল জাতি ভিন্ন কোনো দেশ সমৃদ্ধির পথে এগোতে পারে না। জনস্বাস্থ্য নানা কারণে এমনিতেই এখানে ঝুঁকির মুখে রয়েছে। তার ওপর নিত্যনতুন উপসর্গ তা আরো প্রকট করে তুলছে। এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ, পদক্ষেপ নেওয়ার অঙ্গীকার-প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত হলেও কাজের কাজ যে কিছুই হয়নি বা হচ্ছে না, এই সত্য এড়ানো কঠিন। এসব বিষয়ে উদাসীনতা কিংবা অদূরদর্শিতা সব সরকারের আমলেই পরিলক্ষিত হয়েছে। কিন্তু এই উদাসীনতা কিংবা অদূরদর্শিতা সার্বিক ক্ষেত্রে আমাদের জন্য ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে যাচ্ছে। এই সর্বনাশা কর্মকাণ্ডের যবনিকাপাত ঘটাতে না পারলে আমাদের ভবিষ্যৎ যে প্রচণ্ড হুমকির মধ্যে পড়বে_এ নিয়ে কোনোই সংশয় নেই। সরকারের উচিত কালবিলম্ব না করে এ ব্যাপারে বিশেষ কর্মসূচি হাতে নেওয়া এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিভাগ, দপ্তর-অধিদপ্তরের বিষয়টি রীতিমতো এজেন্ডা হিসেবে আমলে নিয়ে মাঠপর্যায়ে কাজ শুরু করা।
রাসায়নিক সারবিহীন কৃষি উৎপাদনের গুরুত্ব উপলব্ধি করা অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে। অতিরিক্ত রাসায়নিক সারের ব্যবহার জমির উর্বরা ও ফলনশক্তি ক্রমেই হ্রাস করছে। দেশের কোনো কোনো অঞ্চলে এ ব্যাপারে ক্ষীণ কিছু কার্যক্রম পরিলক্ষিত হলেও তা ব্যাপক ও বিস্তৃত করা ভিন্ন গত্যন্তর নেই। গণমাধ্যমের সহায়তায় এ ব্যাপারে খুব দ্রুত জোরদার কর্মসূচি নেওয়া অত্যন্ত দরকার। আমাদের দেশে জৈব সারের ব্যবহার বৃদ্ধির ক্ষেত্রে পদক্ষেপ নিলে এর সুফল মিলবে। কারণ জৈব সারের যথেষ্ট উপকরণ আমাদের দেশে অত্যন্ত সহজলভ্য। আর জৈব সারের ব্যবহার বাড়াতে পারলে আমাদের অর্থনীতিতেও ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। দরিদ্র কৃষকদের পক্ষেও তা মঙ্গলজনক। জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ রক্ষাসহ মাটির উর্বরা এবং ফলনশক্তিও এর মাধ্যমে রক্ষা পাবে। অভিযোগ আছে_কৃষি বিভাগ, দপ্তর-অধিদপ্তরের কার্যক্রম যথেষ্ট বেগবান কিংবা দূরদর্শী নয় বিধায় এর বিরূপ প্রভাব পড়ছে উৎপাদন ব্যবস্থায়। দেশে অনাবাদি জমির পরিমাণ এখনো অনেক। এই জমি চাষাবাদের আওতায় এনে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে ফসল উৎপাদনের কার্যক্রম বিস্তৃত করার যথেষ্ট সুযোগও রয়েছে। খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করা ও আমদানিনির্ভরতা হ্রাস করার লক্ষ্যে উৎপাদন বৃদ্ধির কোনোই বিকল্প নেই। দেশে জনসংখ্যা বাড়ছে, কিন্তু সে অনুপাতে বাড়ছে না প্রয়োজনীয় অনেক কিছু।
সবুজ বা জৈব সার তৈরি এবং তা প্রয়োগের ব্যবস্থা যত সম্প্রসারণ করা যাবে, ততই মঙ্গল। মনে রাখা দরকার, মানুষের বাঁচার জন্য খাদ্যশস্য উৎপাদনের প্রয়োজন। তবে জমিতে রাসায়নিক সার অতিমাত্রায় প্রয়োগ করে মানুষের জীবন বিপন্ন করার অপরিণামদর্শী কর্মকাণ্ডের যবনিকাপাত ঘটাতেই হবে। প্রাণীবৈচিত্র্যের ধ্বংস রোধ করতে হবে। এসব ব্যাপারে বিশেষ নজর দিতে হবে এবং সম্মিলিত প্রচেষ্টায় জনসচেতনতা বাড়াতে হবে। যেহেতু এ দেশের সিংহভাগ মানুষ অশিক্ষিত, সেহেতু জনসচেতনতা বৃদ্ধির কাজটি করতে হবে পরিকল্পিত উপায়ে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এসব বিষয়ে বিলম্বে হলেও ত্বরিত ব্যবস্থা গ্রহণে এখনই তৎপর হবে_এমনটিই আমাদের প্রত্যাশা। ফরমালিন, কার্বাইড ও অন্য রাসায়নিক মিশিয়ে খাদ্যদ্রব্য বিষাক্ত করে তোলা এবং একই সঙ্গে অজৈব সারের যথেচ্ছ ব্যবহার করে উৎপাদিত ফসলে বিষ প্রয়োগ অবশ্যই অপরাধ। এই অপরাধের জাল যাতে আর বিস্তৃত না হয়, সে লক্ষ্যেই দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।
লেখক : লন্ডনপ্রবাসী গবেষক
বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, যেভাবে দেশে রাসায়নিকের ব্যবহার ক্রমে বৃদ্ধি পাচ্ছে, এ ব্যাপারে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে এর জন্য জাতিকে ভয়াবহ মাশুল গুনতে হবে। এ দেশের ক্ষেত-খামারে অধিকতর উৎপাদনের লক্ষ্যে যেভাবে রাসায়নিক সার ব্যবহার করা হচ্ছে তা প্রশ্নবোধক। দুঃখজনক এবং অনভিপ্রেত হলেও সত্য, আমরা খাদ্য উৎপাদন, সরবরাহ ও বাজারজাতকরণের ক্ষেত্রে অনেক উৎপাদক ও ব্যবসায়ীর যে ধরনের অসাধুতা খোলা চোখেই দেখতে পাই, তা বিস্ময়কর হলেও জনস্বার্থ-সংশ্লিষ্ট এসব বিষয় থেকে যাচ্ছে একেবারেই প্রতিকারহীন। সুস্থ-সবল জাতি ভিন্ন কোনো দেশ সমৃদ্ধির পথে এগোতে পারে না। জনস্বাস্থ্য নানা কারণে এমনিতেই এখানে ঝুঁকির মুখে রয়েছে। তার ওপর নিত্যনতুন উপসর্গ তা আরো প্রকট করে তুলছে। এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ, পদক্ষেপ নেওয়ার অঙ্গীকার-প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত হলেও কাজের কাজ যে কিছুই হয়নি বা হচ্ছে না, এই সত্য এড়ানো কঠিন। এসব বিষয়ে উদাসীনতা কিংবা অদূরদর্শিতা সব সরকারের আমলেই পরিলক্ষিত হয়েছে। কিন্তু এই উদাসীনতা কিংবা অদূরদর্শিতা সার্বিক ক্ষেত্রে আমাদের জন্য ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে যাচ্ছে। এই সর্বনাশা কর্মকাণ্ডের যবনিকাপাত ঘটাতে না পারলে আমাদের ভবিষ্যৎ যে প্রচণ্ড হুমকির মধ্যে পড়বে_এ নিয়ে কোনোই সংশয় নেই। সরকারের উচিত কালবিলম্ব না করে এ ব্যাপারে বিশেষ কর্মসূচি হাতে নেওয়া এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিভাগ, দপ্তর-অধিদপ্তরের বিষয়টি রীতিমতো এজেন্ডা হিসেবে আমলে নিয়ে মাঠপর্যায়ে কাজ শুরু করা।
রাসায়নিক সারবিহীন কৃষি উৎপাদনের গুরুত্ব উপলব্ধি করা অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে। অতিরিক্ত রাসায়নিক সারের ব্যবহার জমির উর্বরা ও ফলনশক্তি ক্রমেই হ্রাস করছে। দেশের কোনো কোনো অঞ্চলে এ ব্যাপারে ক্ষীণ কিছু কার্যক্রম পরিলক্ষিত হলেও তা ব্যাপক ও বিস্তৃত করা ভিন্ন গত্যন্তর নেই। গণমাধ্যমের সহায়তায় এ ব্যাপারে খুব দ্রুত জোরদার কর্মসূচি নেওয়া অত্যন্ত দরকার। আমাদের দেশে জৈব সারের ব্যবহার বৃদ্ধির ক্ষেত্রে পদক্ষেপ নিলে এর সুফল মিলবে। কারণ জৈব সারের যথেষ্ট উপকরণ আমাদের দেশে অত্যন্ত সহজলভ্য। আর জৈব সারের ব্যবহার বাড়াতে পারলে আমাদের অর্থনীতিতেও ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। দরিদ্র কৃষকদের পক্ষেও তা মঙ্গলজনক। জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ রক্ষাসহ মাটির উর্বরা এবং ফলনশক্তিও এর মাধ্যমে রক্ষা পাবে। অভিযোগ আছে_কৃষি বিভাগ, দপ্তর-অধিদপ্তরের কার্যক্রম যথেষ্ট বেগবান কিংবা দূরদর্শী নয় বিধায় এর বিরূপ প্রভাব পড়ছে উৎপাদন ব্যবস্থায়। দেশে অনাবাদি জমির পরিমাণ এখনো অনেক। এই জমি চাষাবাদের আওতায় এনে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে ফসল উৎপাদনের কার্যক্রম বিস্তৃত করার যথেষ্ট সুযোগও রয়েছে। খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করা ও আমদানিনির্ভরতা হ্রাস করার লক্ষ্যে উৎপাদন বৃদ্ধির কোনোই বিকল্প নেই। দেশে জনসংখ্যা বাড়ছে, কিন্তু সে অনুপাতে বাড়ছে না প্রয়োজনীয় অনেক কিছু।
সবুজ বা জৈব সার তৈরি এবং তা প্রয়োগের ব্যবস্থা যত সম্প্রসারণ করা যাবে, ততই মঙ্গল। মনে রাখা দরকার, মানুষের বাঁচার জন্য খাদ্যশস্য উৎপাদনের প্রয়োজন। তবে জমিতে রাসায়নিক সার অতিমাত্রায় প্রয়োগ করে মানুষের জীবন বিপন্ন করার অপরিণামদর্শী কর্মকাণ্ডের যবনিকাপাত ঘটাতেই হবে। প্রাণীবৈচিত্র্যের ধ্বংস রোধ করতে হবে। এসব ব্যাপারে বিশেষ নজর দিতে হবে এবং সম্মিলিত প্রচেষ্টায় জনসচেতনতা বাড়াতে হবে। যেহেতু এ দেশের সিংহভাগ মানুষ অশিক্ষিত, সেহেতু জনসচেতনতা বৃদ্ধির কাজটি করতে হবে পরিকল্পিত উপায়ে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এসব বিষয়ে বিলম্বে হলেও ত্বরিত ব্যবস্থা গ্রহণে এখনই তৎপর হবে_এমনটিই আমাদের প্রত্যাশা। ফরমালিন, কার্বাইড ও অন্য রাসায়নিক মিশিয়ে খাদ্যদ্রব্য বিষাক্ত করে তোলা এবং একই সঙ্গে অজৈব সারের যথেচ্ছ ব্যবহার করে উৎপাদিত ফসলে বিষ প্রয়োগ অবশ্যই অপরাধ। এই অপরাধের জাল যাতে আর বিস্তৃত না হয়, সে লক্ষ্যেই দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।
লেখক : লন্ডনপ্রবাসী গবেষক
No comments