শেখ জামালের মেয়েদের ইতিহাসে পা

পুরো লিগে গোলোৎসবের পর ফাইনালে তারা পড়েছিল খানিকটা চ্যালেঞ্জের মুখে। এই চ্যালেঞ্জেও মোহামেডান ঠিক প্রতিদ্বন্দ্বি হয়ে উঠতে পারেনি। ৯০ মিনিটের খেলায় প্রমাণ হলো শেখ জামাল অপ্রতিদ্বন্দ্বি। প্রথম মহিলা লিগের শ্রেষ্ঠত্ব তাদেরই মানায়। মোহামেডানকে ২-০ গোলে হারিয়ে তারা শেখ জামাল ধানমণ্ডি ক্লাব মহিলা ফুটবল লিগের প্রথম চ্যাম্পিয়ন হিসেবে নতুন ইতিহাসের পথচলা শুরু করেছে।এই ইতিহাসের বড় অংশ জুড়েই থাকবেন সুইনু-সাবিনারা। তাই শিরোপা জয়ের আনন্দে তাঁরা আত্মহারা। এই প্রথম ফুটবল যেন অন্য রকম বার্তা নিয়ে হাজির হয়েছে তাঁদের কাছে। কারো কাছে খেলাটা 'প্যাশন', আবার কারো কাছে ফুটবল দারিদ্র্য-বিমোচনের উপায়।


দুই তরফেই এই শিরোপার অপার মহিমা, তাই তাঁরা নেচে-গেয়ে তা উদ্যাপন করেছেন। তার পরও বীরের বেশে (যেটা ছেলেদের ফুটবলেও তাঁরা পারেননি) শেখ জামালের এই বিজয় উদ্যাপনটা ঠিক জমেনি ভক্তকুলের অনুপস্থিতিতে।
লিগের শুরু থেকেই তো তারা এগিয়েছে দুর্বার গতিতে। প্রথম ম্যাচে দিপালী যুব সংঘকে ৪-০ গোলে হারানোর পর থেকেই তারা প্রতিপক্ষকে গোল-বন্যায় ভাসিয়ে গেছে। গতকাল গোলের বন্যা হয়নি বলে ফাইনালটা মানে বেঁচেছে। নইলে খেলার যে ধারা এবং শেখ জামালের যেমন আধিপত্য ছিল তাতে এক হালিরও বেশি গোল হতে পারত ম্যাচে। নিজেদের মিস এবং মোহামেডান গোলরক্ষক সাবিনার চমৎকার কিপিংয়ে বেঁচে গেছে সাদা-কালোরা। খেলার মান ও টেকনিকে তারা অনেকখানিই পিছিয়ে শেখ জামালের চেয়ে। নিচ থেকে আক্রমণ গড়া, সাবিনা-মিরনাদের বলের ওপর নিয়ন্ত্রণ দেখে পুরুষ জাতীয় দলের ফুটবলাররাও বিস্মিত। তাঁরাও নির্দি্বধায় রায় দিচ্ছেন, এ দেশের মেয়েরা ফুটবলে এগিয়েছে। এমনকি তাঁদের ছেলেদের অনূর্ধ্ব-১৪ দলের সমকক্ষ বলেও ভাবছেন মোনায়েম খান রাজুরা! ৫৯ গোল করে ফাইনালে এসে শেখ জামাল গতকাল মাত্র দুটো গোল পেয়েছে। ২৭ মিনিটে ফ্রি-কিক থেকে প্রথম গোলটি করেন ফারহানা খাতুন। ৬৪ মিনিটে মিরনার থ্রু ধরে সাবিনা খাতুন মোহামেডান গোলরক্ষককে বোকা বানিয়ে বল জালে পাঠিয়ে দিয়ে দলকে জিতিয়েছেন। আর নিজে পুরো লিগে গোলোৎসবের সুবাদে পেয়েছেন সর্বোচ্চ (২৫) গোলদাতার পুরস্কার। মোহামেডানের সুইনু প্রু মারমা হয়েছেন লিগের সেরা খেলোয়াড়।
মোহামেডান কাউন্টার অ্যাটাকে দু-একবার বল নিয়ে শেখ জামালের ডিফেন্সে হানা দিলেও তেমন কোনো সুযোগই তৈরি করতে পারেনি। তার পরও সাদা-কালো কোচ পনীর সন্তুষ্টি খুঁজছেন, 'সেমিফাইনালের চেয়ে আমরা আজ (কাল) ভালো খেলেছি। শেখ জামালের প্রায় জাতীয় দলের বিপক্ষে এটাই মোহামেডানের ভালো পারফরম্যান্স।' বিতর্কিত পুল এবং সঠিক মানদণ্ডে পুল না গড়ায় শেখ জামাল কিছু সুবিধা ভোগ করেছে বলেও তাঁর দাবি। তবে শেখ জামাল কোচ মোশাররফ বাদলের গর্ব দলটাকে চ্যাম্পিয়ন দলে হিসেবে তৈরি করার মধ্যে, 'পুল কিভাবে করেছে, সেটা বাফুফের বিষয়। আমি এই দলটিকে দুই মাস প্র্যাকটিস করিয়ে এ অবস্থায় নিয়ে এসেছি। আগে থেকেই বলে আসছিলাম, আমার দল চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মতো।'

No comments

Powered by Blogger.