জেলা ও মহানগর বিএনপির কর্মকাণ্ডে সমন্বয়হীনতা by আনু মোস্তফা,

বিএনপির রোডমার্চ ঘিরে রাজশাহী অঞ্চলে দলীয় নেতা-কর্মীদের মাঝে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা দিয়েছে। মহানগর বিএনপির উদ্যোগে রোডমার্চ সফল করতে চলছে ব্যাপক তৎপরতা। চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নাটোর, নওগাঁয়ও যেন সাজ সাজ রব। তবে রাজশাহী জেলা বিএনপির সাংগঠনিক তৎপরতা এখনো নেতাদের চেম্বারেই সীমাবদ্ধ। জেলা বিএনপির সভাপতি নাদিম মোস্তফার সঙ্গে মহানগর বিএনপির সভাপতি ও দলের যুগ্ম মহাসচিব মিজানুর রহমান মিনুর সম্পর্ক স্বাভাবিক না থাকায় দুই পক্ষের কর্মকাণ্ডে সমন্বয়হীনতা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।এদিকে সমাবেশ স্থগিত হওয়ায় নাটোরে দলীয় নেতা-কর্মীদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।


জেলা বিএনপির সভাপতি রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু বলেছেন, 'বিএনপির ঘাঁটি বলে পরিচিত নাটোরে খালেদা জিয়ার সমাবেশ স্থগিত হওয়ায় স্থানীয় নেতা-কর্মীরা হতাশ ও ক্ষুব্ধ। আমরা বঞ্চিত হলাম একটি সমাবেশ থেকে।'
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় রেলওয়ে স্টেশনে গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় এক কর্মী সমাবেশ শেষে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মিজানুর রহমান মিনু বলেন, রোডমার্চ কিছুটা কাটছাঁট হলেও এর মাধ্যমে রাজশাহী অঞ্চলে দলীয় নেতা-কর্মীরা ব্যাপকভাবে উজ্জীবিত। রোডমার্চ সফল করতে তাঁরা দিনরাত সভা-সমাবেশ করছেন রাজশাহী মহানগরীর ৩৫টি ওয়ার্ড ও থানা এলাকায়। আশপাশের জেলাগুলোতেও চলছে ব্যাপক প্রস্তুতি। তিনি দাবি করেন, রাজশাহী রোডমার্চে এ অঞ্চলের সাধারণ মানুষও ব্যাপকভাবে অংশ নেবে। এ লক্ষ্যে টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা থেকে শুরু করে সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, নওগাঁ, রাজশাহী হয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পর্যন্ত রোডমার্চের পথে কয়েক শ তোরণ নির্মাণ করা হচ্ছে। পথে পথে হাজার হাজার ব্যানার, ফেস্টুন আর ডিজিটাল পোস্টারের মাধ্যমে খালেদা জিয়াকে স্বাগত জানাবেন নেতা-কর্মীরা।
এদিকে রোডমার্চের অংশ হিসেবে নাটোরের সমাবেশ স্থগিত এবং রাজশাহীতে খালেদা জিয়ার রাত যাপনের সিদ্ধান্ত বাতিল করায় রাজশাহী রোডমার্চ কর্মসূচি থেকে এক দিন কমে গেছে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, সর্বশেষ সংশোধিত কর্মসূচি অনুযায়ী ১৮ অক্টোবর সকাল ১০টায় কর্মসূচির শুরুতে গাজীপুরের কালিয়াকৈরে খালেদা জিয়া এক পথসমাবেশে বক্তব্য দিয়ে রাজশাহী রোডমার্চ কর্মসূচির সূচনা করবেন। সেখান থেকে কয়েকটি পথসভায় সংক্ষিপ্ত বক্তব্য শেষে দুপুর সাড়ে ১২টায় টাঙ্গাইলের এলেঙ্গায় আরেকটি পথসভায় বক্তব্য দেবেন বিএনপি নেত্রী। দুপুর ২টায় সিরাজগঞ্জের হাটিকুমরুলে পথসভা শেষে খালেদা জিয়া বিকেল ৩টায় বগুড়ায় শহীদ আলতাফুন্নেসা মাঠে সমাবেশে বক্তব্য দেবেন।
মিজানুর রহমান মিনু জানান, বগুড়ায় রাত যাপন শেষে পরদিন ১৯ অক্টোবর সকাল ১০টায় খালেদা জিয়া নওগাঁর উদ্দেশে রওনা হবেন। সাড়ে ১১টায় নওগাঁর এটিম মাঠে সমাবেশ শেষে দুপুর ১২টায় রোডমার্চ ছুটবে রাজশাহীর উদ্দেশে। রাজশাহী-নওগাঁ মহাসড়কের মান্দা, মোহনপুর, নওহাটা, নওদাপাড়া আমচত্বর হয়ে রোডমার্চ প্রবেশ করবে মহানগরীতে।
সূত্র মতে, রাজশাহী রেলগেট, সিটি ভবন, বাইপাস মোড়, সিটি বাইপাস, কাশিয়াডাঙ্গা মোড় হয়ে রোডমার্চ চাঁপাইনবাবগঞ্জের উদ্দেশে যাত্রা করবে। পথে গোদাগাড়ীতে পথসভা শেষে তিনি দুপুর ২টায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ সরকারি কলেজ মাঠে সমাবেশ করে খালেদা জিয়া ওই দিনই রাজশাহীতে ফিরবেন। ফিরতি পথে কাশিয়াডাঙ্গা মোড় হয়ে নগরীর বাইপাস মোড় দিয়ে লক্ষ্মীপুর মোড়, সাহেববাজার জিরো পয়েন্ট, তালাইমারী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, বিনোদপুর, বানেশ্বর, পুঠিয়া হয়ে রোডমার্চ নাটোরে যাবে এবং নাটোর থেকে বনপাড়া দিয়ে ওই রাতেই খালেদা জিয়া ঢাকায় ফিরবেন।
এদিকে রোডমার্চ উপলক্ষে রাজশাহী জেলা বিএনপি গতকাল সন্ধ্যার পর নগরীর ষষ্ঠিতলায় জেলা কমিটির যুগ্ম সম্পাদক মামুনুর রশীদের ব্যবসায়িক চেম্বারে এক সভার আয়োজন করে। সভায় রোডমার্চ সফল করতে বিভিন্ন কর্মসূচি নেওয়া হয়। তবে সেখানে জেলার উল্লেখযোগ্য কোনো নেতা উপস্থিত ছিলেন না। দলীয় নেতা-কর্মীরা বলছেন, নাদিম মোস্তফার সঙ্গে মিজানুর রহমান মিনুর সম্পর্ক স্বাভাবিক না থাকায় এ দুই ইউনিটের কোনো সমন্বিত সভা এখনো হয়নি। রাজশাহী হয়ে রোডমার্চ চাঁপাইনবাবগঞ্জে যাওয়ার সময় রোডমার্চের নিয়ন্ত্রণ মিনুর হাতে থাকবে বলে তাঁরা জানান। তবে এ দুই নেতার সমর্থক দলীয় নেতা-কর্মীদের সহাবস্থান নিয়েও শঙ্কা রয়েছে শীর্ষস্থানীয় নেতাদের মধ্যে। দলীয় নেতা-কর্মীরা জানান, বিএনপি নেত্রীর ১৯ অক্টোবর চাঁপাইনবাবগঞ্জের সমাবেশ শেষে রাজশাহীতে রাত যাপনের সিদ্ধান্ত বাতিল করা হয়েছে মূলত মিনু ও নাদিম মোস্তফার প্রবল দ্বন্দ্বের কারণেই।

No comments

Powered by Blogger.