তবুও ইসরাইলের পক্ষেই সাফাই যুক্তরাষ্ট্রের

গাজায় মানবিক সহায়তা বৃদ্ধির জন্য ইসরাইলকে ৩০ দিনের ডেডলাইন বেঁধে দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। বলেছিল, এ সময়ের মধ্যে যদি মানবিক ত্রাণ সহায়তা বৃদ্ধির সুযোগ দেয়া না হয় তাহলে ইসরাইলকে যুক্তরাষ্ট্র যে সামরিক সহায়তা দেয়, তার কিছুটা কর্তন করা হবে। এখন যুক্তরাষ্ট্র বলছে, ত্রাণ সরবরাহ ব্লক করে বা বাধা দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের যে আইন তা লঙ্ঘন করেনি ইসরাইল। মঙ্গলবার কর্মকর্তারা বলেছেন, গাজায় সরবরাহ বৃদ্ধির জন্য বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে ইসরাইল। তবে অবশ্যই তাতে আরো অগ্রগতি করতে হবে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বেদান্ত প্যাটেল নতুন একটি স্থল ক্রসিং খুলে দেয়ার কথা উল্লেখ করে বক্তব্য রেখেছেন। ওই ক্রসিং দিয়ে গাজার উত্তরে ত্রাণ সরবরাহ শুরু হয়েছে। তবে অবরুদ্ধ জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরে কোনো ত্রাণ পৌঁছেছে কিনা সে বিষয়ে তিনি কিছু বলেননি। যুক্তরাষ্ট্রের এমন দাবি সত্ত্বেও জাতিসংঘ হুঁশিয়ারি দিয়েছে। তারা বলেছে, গাজায় যে পরিমাণ ত্রাণ পৌঁছেছে তা এক বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ের। সম্প্রতি জাতিসংঘ সমর্থিত এক রিপোর্টে সতর্ক করে বলা হয়েছে, গাজার উত্তরাঞ্চলে দুর্ভিক্ষাবস্থা অত্যাসন্ন। কারণ, গত এক মাসে গাজার উত্তরাঞ্চলে কোনো ত্রাণ পৌঁছেনি এমনটা বলা যায়। মানবাধিকার বিষয়ক জাতিসংঘের ভারপ্রাপ্ত আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল জয়সে মসুয়া বলেছেন, গাজায় আন্তর্জাতিক অপরাধ সংগঠিত হচ্ছে। মঙ্গলবার তিনি জাতিসংঘে কাউন্সিলের সদস্যদের এ বিষয়ে ব্রিফ করেন। তাতে বলেন, গাজার উত্তরাঞ্চলে এখনও যুদ্ধ চলছে। সেখানে কোনো মানবিক ত্রাণ সহায়তা পৌঁছে দেয়ার ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করেছে ইসরাইলি কর্তৃপক্ষ।

মিস মসুয়া বলেন, ওই অঞ্চলে কমপক্ষে ৭৫ হাজার মানুষ এখনও সরবরাহের দিকে তাকিয়ে আছে। গত মাসে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন ইসরাইলকে ৩০ দিনের সময়সীমা বেঁধে দেন। বলেন, এ সময়ের মধ্যে প্রতিদিন গাজায় ত্রাণবাহী ট্রাকের সংখ্যা বৃদ্ধি নিশ্চিত করতে হবে। মঙ্গলবার সেই সময়সীমা শেষ হয়েছে। এমন অবস্থায় মানবিক ত্রাণ বিষয়ক আটটি এজেন্সির একটি গ্রুপ ইসরাইলি সরকারের কাছে একটি চিঠি লিখেছে। তাতে গাজার উত্তরাঞ্চলকে বিচ্ছিন্ন করে রাখা বন্ধ করার আহ্বান জানানো হয়েছে। সতর্ক করা হয়েছে, সেখানে ইসরাইলি সেনাদের আক্রমণে সাধারণ নিরীহ মানুষগুলো অনাহারে আছেন। চিঠি পাঠানোর পর ওইসব মানুষের অবস্থার আরও অবনতি ঘটেছে। ইসরাইলের অবরোধে এমন অবস্থা সৃষ্টি হলেও মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্র যে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে তাতে ইঙ্গিত মেলে যে, তার মিত্র ইসরাইলকে অব্যাহতভাবে অস্ত্র সরবরাহ দিয়ে যাবে ওয়াশিংটন। এ নিয়ে কোন সাহায্যদাতা, কোন মানবাধিকার বিষয়ক গ্রুপ সাধারণ মানুষের জীবন নিয়ে কি সতর্কতা দিলেন তাতে কিছু যায় আসে না। এসব সংস্থা অব্যাহতভাবে সতর্কতা দিয়ে যাচ্ছে যে, গাজার উত্তরাঞ্চলে ইসরাইলের হামলায় অকাতরে নিহত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। বাস্তুচ্যুত হচ্ছেন অসংখ্য। পক্ষান্তরে ইসরাইলি সেনাবাহিনী তাদের সেই পুরনো ডায়ালগ আউরে যাচ্ছে। তারা বলছে, ওই অঞ্চলে হামাস যোদ্ধাদের উৎখাতে অভিযান চালাচ্ছে।

গাজায় ত্রাণের পরিমাণ বৃদ্ধি করেছে। কিন্তু তা যথাযথভাবে ত্রাণ বিষয়ক এজেন্সিগুলো বিতরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে বলে তাদের অভিযোগ। কমপক্ষে এক মাসের বেশি সময় অবরুদ্ধ হয়ে আছে বেইত হানুন। এ বিষয়ে মিস মসুয়া বলেন, শুধু সোমবার ওই আশ্রয়শিবিরে খাদ্য ও পানি পৌঁছেছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ইলজে কেহরিস বলেন, ইসরাইলি সেনারা  ধারায় হামলা চালাচ্ছে তাতে মনে হচ্ছে তারা সিস্টেমিকভাবে সাধারণ নাগরিকদের টার্গেট করছে। বেশির ভাগ নিহত ও ধ্বংসযজ্ঞ ঘটছে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্রে। এসব অস্ত্র হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ব্যবহারের জন্য ইসরাইলকে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। 

mzamin

No comments

Powered by Blogger.