লাদাখ নিয়ে ভারতের বিপুল আশা, তবে বাস্তবতা কঠিন by বার্তিল লিন্টনার
জম্মু
ও কাশ্মীরকে ভেঙে দিয়ে কেন্দ্র-শাসিত দুটি ইউনিয়ন অঞ্চল হিসেবে গড়ার
ভারতের সিদ্ধান্ত ওই অঞ্চলের মুসলিম প্রাধান্যপূর্ণ জনসাধারণের মধ্যে ক্ষোভ
সৃষ্টি করেছে, প্রতিবেশী পাকিস্তানে ও আরো দূরের ইসলামি মহলগুলোতে ক্রোধের
সঞ্চার হয়েছে।
কিন্তু ভারতীয় সংবিধানে থাকা রাজ্যটির বিশেষ মর্যাদা বাতিলসহ এই পদক্ষেপটি দৃশ্যত লাদাখকে খুশি করেছে। এখন লাদাখ নিজস্ব পরিচিতিতে ইউনিয়নভুক্ত অঞ্চলের মর্যাদা পাবে।
গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, এটি হবে হিন্দু-সংখ্যাগরিষ্ঠ ভারতে প্রথম প্রশাসনিক এলাকা, যেখানকার প্রায় অর্ধেক লোক বৌদ্ধ। এটি প্রতিবেশী চীনের মধ্যে সতর্কতা সৃষ্টি করবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
অনুচ্ছেদ ৩৭০ বিলুপ্তির বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত একমাত্র যে বিক্ষোভটি হয়েছে তা হলো কার্গিলে। জম্মু ও কাশ্মীর সীমান্তের কাছে লাদাখের মুসলিম প্রাধান্যপূর্ণ জেলায় অবস্থিত এই কার্গিল।
লাদাখের সাবেক ভারতীয় কূটনীতিবিদ পুনচুক স্টবদান ৭ আগস্ট হিন্দুস্তান টাইমসকে বলেন, অবশেষে মর্যাদা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হলো। তিনি বলেন, লাদাখিরা কখনো ব্যাপকভাবে মুসলিমসংখ্যাগরিষ্ঠ কাশ্মীরে প্রাধান্য সৃষ্টি করতে পারেনি।
তবে লাদাখের নতুন ইউনিয়ন ভূখণ্ডের ভবিষ্যত নিয়ে অনিশ্চয়তাও রয়েছে। আর তা ঘরোয়া ও একইসাথে আন্তর্জাতিকও।
ইস্যুটি স্পর্শকাতর হওয়ায় পরিচয় প্রকাশ করতে অনিচ্ছুক এক স্থানীয় অধিবাসী বলেন, লোকজন এতে খুশি। কিন্তু জমি সুরক্ষা ও বহিরাগতদের ঢল নিয়ে তাদের ভয় এখনো রয়ে গেছে।
অনুচ্ছেদ ৩৭০-এর ফলে স্থানীয় অধিবাসীরা কিছু সুরক্ষা পেত। বিশেষ করে ভারতের অন্যান্য অংশের লোকজন এখানে জমি ও অন্যান্য সম্পত্তি ক্রয় করতে পারত না।
ওই বাধা দূর হওয়ায় স্থানীয়রা আশঙ্কা করছে, ভারতের অন্যান্য অংশ থেকে উদ্যোক্ততারা এসে লাদাখের আকর্ষণীয় পর্যটন শিল্পে বিনিয়োগ করবে, এতে অনেক লাদাখির আয়ও বাড়বে।
লাদাখের নতুন ইউনিয়ন এলাকা কিভাবে শাসিত হবে তা নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। অন্যান্য রাজ্য কিংবা নতুন জম্মু ও কাশ্মীরের মতো লাদাখের কোনো নির্বাচিত পরিষদ থাকবে না।
এর বদলে স্থানীয় সরকার পরিচালিত হবে জাতীয় রাষ্ট্রপতির নিয়োগ করা একজন লে. গভর্নরের মাধ্যমে। স্থানীয়ভাবে নির্বাচিত পরিষদ না রাখার কারণ হলো, নয়া দিল্লি চায় এই স্পর্শকাতর সীমান্ত এলাকাকে কঠোর কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণে রাখতে।
জম্মু ও কাশ্মীরে ১৯৯০-এর দশক থেকে যে সহিংস বিদ্রোহ চলছে, তা স্পর্শ করেনি লাদাখকে। এর ফলে ভারতীয় ও বিদেশী পর্যটকদের জন্য জনপ্রিয় গন্তব্যে পরিণত হয়েছে।
এখানকার দর্শনীয় পর্বতগুলো, কোনো কোনোটি সমুদ্রস্তর থেকে সাত হাজার মিটার পর্যন্ত উঁচু, ট্রেকারদের আকর্ষণীয় বস্তু। বিশেষ করে যারা এখানকার তিব্বতি-বৌদ্ধ সংস্কৃতির অভিজ্ঞতা অর্জন করতে চান, তাদের কাছে এটি অনন্য সুযোগ।
সরকারি হিসাব অনুযায়ী, ২০১৮ সালে ৪৯,৪৭৭ জন বিদেশীসহ মোট ৩২৭,৩৬৬ জন পর্যটক লাদাখি রাজধানী লেহ ও এর আশপাশের এলাকা সফর করেছেন। এর আগের বছর সংখ্যাটি ছিল ৫০ হাজারের মতো।
লাদাখের ৫৯ হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকায় মাত্র ২৭৫,০০০ লোক বাস করে। অথচ ৫০ হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকার পাঞ্জাবে প্রায় তিন কোটি লোকের বাস।
তবে অঞ্চলটির জটিল ভূরাজনীতি সম্ভবত লাদাখের ভবিষ্যত শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য অনেক বেশি উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে।
ব্রিটিশ আমল পর্যন্ত রাজন্য শাসিত কাশ্মীরের মধ্যে কেবল ভারত-শাসিত কাশ্মীরই নয়, পাকিস্তান ও চীনের কাছে থাকা অংশও ছিল।
উপনিবেশ আমলের মোট ভূখণ্ডের প্রায় ৪৫ ভাগ এখন ভারতের নিয়ন্ত্রণে, পাকিস্তানের ৩৫ ভাগ ও চীনের নিয়ন্ত্রণে ২০ ভাগ।
পাকিস্তান ১৯৪৭ সালের যুদ্ধের পর জম্মু ও কাশ্মীরের পশ্চিম অংশের বড় অংশের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্টা করে। ১৯৬২ সালের চীন-ভারত যুদ্ধের পর ১৯৬৩ সালে সই হওয়া সীমান্ত চুক্তি অনুযায়ী পাকিস্তান কারাকোরাম রেঞ্চের উত্তর দিকে প্রায় সাত হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকায় চীন সার্বভৌমত্ব স্বীকার করে নেয়।
কারাকোরাম রেঞ্চটি আগে পাকিস্তানি ভূখণ্ড বিবেচিত হতো। ভারতও এই এলাকাটি দাবি করত। আবার চীনের নিয়ন্ত্রণে থাকা আকসাই চিনকেও (তা আরো বড় এলাকা) ভারত তার লাদাখের অংশ মনে করে। লাদাখের নতুন ইউনিয়ন এলাকার মর্যাদার ফলে এসব দাবি নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি এখনো করেনি। তবে ভবিষ্যতে করতে পারে।
লাদাখ শুরুতে ছিল তিব্বতি উপজাতীয়দের শাসিত একটি স্বাধীন রাজ্য। ১৮৩৪ সালে শিখ সাম্রাজ্য এটি দখল করে। ১৮৪৬ সালে এটি জম্মু ও কাশ্মীরে একীভূত হয়ে ব্রিটিশ কর্তৃত্ব মেনে নেয়।
তবে এর উত্তর সীমান্তটি নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। ১৮৬৫ সালে ব্রিটিশ সার্ভেয়ার উইলিয়াম এইচ জনসন আকসাই চিন দিয়ে সীমান্ত তৈরির প্রস্তাব করেন। পরে তা সংশোধন করে ব্রিটিশ গোয়েন্দা কর্মকর্তা স্যার জন্য আরদাঘ।
এরপরপরই এটি পরিচিত হয় আরদাঘ-জনসন লাইন নামে। ভারত এই সীমান্তকে এখনো স্বীকার করে। তবে চীন কখনো এই সীমানা স্বীকার করেনি।
এর বদলে চীন ১৮৯৩ সালে জিনজিয়াংয়ের প্রধান শহর কাশগরের ব্রিটিশ কনস্যাল জর্জ ম্যাকার্থি ও তখনকার চীনা কিং শাসকদের ব্রিটিশ মন্ত্রী স্যার ক্লাউড ম্যাকডোনাল্ড প্রণীত অপর সীমানাটি দাবি করছে।
দাবি-পাল্টা দাবি থাকলেও চীন ও ভারতের মধ্যকার সীমান্ত মোটামুটিভাবে শান্তই রয়েছে। তবে উত্তর-পশ্চিম লাদাখে যেখানে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সীমান্ত রয়েছে, সেখানে দুই দেশের মধ্যে সংঘর্ষ প্রায়ই দেখা যায়।
লাদাখের কার্গিল জেলায় এ আশপাশের এলাকায় ১৯৯৯ সালে দুই দেশের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়।
পাকিস্তানের মিত্র চীন কিন্তু জম্মু ও কাশ্মীরের ব্যাপারে ভারতের সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছে। চীন মনে করে, এর ফলে সঙ্ঘাতের নতুন ধারার সূচনা করা হলো।
নয়া দিল্লির অনুচ্ছেদ ৩৭০ বাতিল করার পরপরই পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মাহমুদ কোরেশি আলোচনার জন্য বেইজিং যান। তবে চীনা উদ্বেগ পাকিস্তানের চেয়ে ভিন্ন।
পাকিস্তান চাচ্ছে, ইসলামপন্থীসহ কাশ্মীরী বিদ্রোহীদের প্রতি আন্তঃসীমান্ত সমর্থন বাড়াতে। কিন্তু চীন তার জিনজিয়াং সীমান্তের কাছে এমন বিদ্রোহীদের উপস্থিতি কামনা করে না। কারণ সে নিজেই সেখানকার মুসলিম জনসংখ্যা নিয়ে চিন্তায় আছে।
তাছাড়া আরো বেশি অস্থিতিশীল কাশ্মীর চীনের ভূ-রাজনীতি ও অর্থনৈতিক স্বার্থের অনুকূলে নয়, বিশেষ করে তথাকথিত চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোর প্রতিষ্ঠার দিকে চীন বেশ নজর দেয়ায়। কয়েক বিলিয়ন ডলারের এই অবকাঠামো প্রকল্পটি পাকিস্তানি বন্দর গোয়াদর দিয়ে চীনকে আরব সাগরে প্রবেশের সুযোগ দেবে।
তিব্বতি-বৌদ্ধ সংস্কৃতির লাদাখে নতুন প্রশাসনিক এলাকা সৃষ্টি করার ফলে চীনের সাথেও ঝামেলার সৃষ্টি হবে। উল্লেখ্য, চীন ১৯৫৯ সালে তিব্বতকে নিজের করে নেয়। এরপর থেকে দেশটি সেখানকার সংস্কৃতি, ধর্ম ও ঐতিহ্য মুছে ফেলার চেষ্টা করছে।
তিব্বতি বৌদ্ধদের নেতা দালাই লামা ১৯৫৯ সাল থেকে ভারতে প্রবাস জীবনযাপন করছেন। তিনি ভারত ও চীনের মধ্যকার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের কাঁটা হিসেবে বিরাজ করছেন। প্রবাসী এই আধ্যাত্মিক নেতা কয়েকবারই লাদাখ সফর করেছেন। সর্বশেষ করেছেন ২০১৮ সালের জুলাই মাসে। রাজধানী লেহ ও অন্যান্য এলাকা নতুন ইউনিয়নভুক্ত হওয়ার মর্যাদা প্রাপ্তিতে লাদাখিরা আনন্দপ্রকাশ করলেও উদ্বিগ্ন হওয়ার নতুন ও সম্ভাব্য অস্থিতিশীলতা সৃষ্টিকারী কারণ পারে চীন।
কিন্তু ভারতীয় সংবিধানে থাকা রাজ্যটির বিশেষ মর্যাদা বাতিলসহ এই পদক্ষেপটি দৃশ্যত লাদাখকে খুশি করেছে। এখন লাদাখ নিজস্ব পরিচিতিতে ইউনিয়নভুক্ত অঞ্চলের মর্যাদা পাবে।
গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, এটি হবে হিন্দু-সংখ্যাগরিষ্ঠ ভারতে প্রথম প্রশাসনিক এলাকা, যেখানকার প্রায় অর্ধেক লোক বৌদ্ধ। এটি প্রতিবেশী চীনের মধ্যে সতর্কতা সৃষ্টি করবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
অনুচ্ছেদ ৩৭০ বিলুপ্তির বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত একমাত্র যে বিক্ষোভটি হয়েছে তা হলো কার্গিলে। জম্মু ও কাশ্মীর সীমান্তের কাছে লাদাখের মুসলিম প্রাধান্যপূর্ণ জেলায় অবস্থিত এই কার্গিল।
লাদাখের সাবেক ভারতীয় কূটনীতিবিদ পুনচুক স্টবদান ৭ আগস্ট হিন্দুস্তান টাইমসকে বলেন, অবশেষে মর্যাদা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হলো। তিনি বলেন, লাদাখিরা কখনো ব্যাপকভাবে মুসলিমসংখ্যাগরিষ্ঠ কাশ্মীরে প্রাধান্য সৃষ্টি করতে পারেনি।
তবে লাদাখের নতুন ইউনিয়ন ভূখণ্ডের ভবিষ্যত নিয়ে অনিশ্চয়তাও রয়েছে। আর তা ঘরোয়া ও একইসাথে আন্তর্জাতিকও।
ইস্যুটি স্পর্শকাতর হওয়ায় পরিচয় প্রকাশ করতে অনিচ্ছুক এক স্থানীয় অধিবাসী বলেন, লোকজন এতে খুশি। কিন্তু জমি সুরক্ষা ও বহিরাগতদের ঢল নিয়ে তাদের ভয় এখনো রয়ে গেছে।
অনুচ্ছেদ ৩৭০-এর ফলে স্থানীয় অধিবাসীরা কিছু সুরক্ষা পেত। বিশেষ করে ভারতের অন্যান্য অংশের লোকজন এখানে জমি ও অন্যান্য সম্পত্তি ক্রয় করতে পারত না।
ওই বাধা দূর হওয়ায় স্থানীয়রা আশঙ্কা করছে, ভারতের অন্যান্য অংশ থেকে উদ্যোক্ততারা এসে লাদাখের আকর্ষণীয় পর্যটন শিল্পে বিনিয়োগ করবে, এতে অনেক লাদাখির আয়ও বাড়বে।
লাদাখের নতুন ইউনিয়ন এলাকা কিভাবে শাসিত হবে তা নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। অন্যান্য রাজ্য কিংবা নতুন জম্মু ও কাশ্মীরের মতো লাদাখের কোনো নির্বাচিত পরিষদ থাকবে না।
এর বদলে স্থানীয় সরকার পরিচালিত হবে জাতীয় রাষ্ট্রপতির নিয়োগ করা একজন লে. গভর্নরের মাধ্যমে। স্থানীয়ভাবে নির্বাচিত পরিষদ না রাখার কারণ হলো, নয়া দিল্লি চায় এই স্পর্শকাতর সীমান্ত এলাকাকে কঠোর কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণে রাখতে।
জম্মু ও কাশ্মীরে ১৯৯০-এর দশক থেকে যে সহিংস বিদ্রোহ চলছে, তা স্পর্শ করেনি লাদাখকে। এর ফলে ভারতীয় ও বিদেশী পর্যটকদের জন্য জনপ্রিয় গন্তব্যে পরিণত হয়েছে।
এখানকার দর্শনীয় পর্বতগুলো, কোনো কোনোটি সমুদ্রস্তর থেকে সাত হাজার মিটার পর্যন্ত উঁচু, ট্রেকারদের আকর্ষণীয় বস্তু। বিশেষ করে যারা এখানকার তিব্বতি-বৌদ্ধ সংস্কৃতির অভিজ্ঞতা অর্জন করতে চান, তাদের কাছে এটি অনন্য সুযোগ।
সরকারি হিসাব অনুযায়ী, ২০১৮ সালে ৪৯,৪৭৭ জন বিদেশীসহ মোট ৩২৭,৩৬৬ জন পর্যটক লাদাখি রাজধানী লেহ ও এর আশপাশের এলাকা সফর করেছেন। এর আগের বছর সংখ্যাটি ছিল ৫০ হাজারের মতো।
লাদাখের ৫৯ হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকায় মাত্র ২৭৫,০০০ লোক বাস করে। অথচ ৫০ হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকার পাঞ্জাবে প্রায় তিন কোটি লোকের বাস।
তবে অঞ্চলটির জটিল ভূরাজনীতি সম্ভবত লাদাখের ভবিষ্যত শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য অনেক বেশি উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে।
ব্রিটিশ আমল পর্যন্ত রাজন্য শাসিত কাশ্মীরের মধ্যে কেবল ভারত-শাসিত কাশ্মীরই নয়, পাকিস্তান ও চীনের কাছে থাকা অংশও ছিল।
উপনিবেশ আমলের মোট ভূখণ্ডের প্রায় ৪৫ ভাগ এখন ভারতের নিয়ন্ত্রণে, পাকিস্তানের ৩৫ ভাগ ও চীনের নিয়ন্ত্রণে ২০ ভাগ।
পাকিস্তান ১৯৪৭ সালের যুদ্ধের পর জম্মু ও কাশ্মীরের পশ্চিম অংশের বড় অংশের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্টা করে। ১৯৬২ সালের চীন-ভারত যুদ্ধের পর ১৯৬৩ সালে সই হওয়া সীমান্ত চুক্তি অনুযায়ী পাকিস্তান কারাকোরাম রেঞ্চের উত্তর দিকে প্রায় সাত হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকায় চীন সার্বভৌমত্ব স্বীকার করে নেয়।
কারাকোরাম রেঞ্চটি আগে পাকিস্তানি ভূখণ্ড বিবেচিত হতো। ভারতও এই এলাকাটি দাবি করত। আবার চীনের নিয়ন্ত্রণে থাকা আকসাই চিনকেও (তা আরো বড় এলাকা) ভারত তার লাদাখের অংশ মনে করে। লাদাখের নতুন ইউনিয়ন এলাকার মর্যাদার ফলে এসব দাবি নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি এখনো করেনি। তবে ভবিষ্যতে করতে পারে।
লাদাখ শুরুতে ছিল তিব্বতি উপজাতীয়দের শাসিত একটি স্বাধীন রাজ্য। ১৮৩৪ সালে শিখ সাম্রাজ্য এটি দখল করে। ১৮৪৬ সালে এটি জম্মু ও কাশ্মীরে একীভূত হয়ে ব্রিটিশ কর্তৃত্ব মেনে নেয়।
তবে এর উত্তর সীমান্তটি নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। ১৮৬৫ সালে ব্রিটিশ সার্ভেয়ার উইলিয়াম এইচ জনসন আকসাই চিন দিয়ে সীমান্ত তৈরির প্রস্তাব করেন। পরে তা সংশোধন করে ব্রিটিশ গোয়েন্দা কর্মকর্তা স্যার জন্য আরদাঘ।
এরপরপরই এটি পরিচিত হয় আরদাঘ-জনসন লাইন নামে। ভারত এই সীমান্তকে এখনো স্বীকার করে। তবে চীন কখনো এই সীমানা স্বীকার করেনি।
এর বদলে চীন ১৮৯৩ সালে জিনজিয়াংয়ের প্রধান শহর কাশগরের ব্রিটিশ কনস্যাল জর্জ ম্যাকার্থি ও তখনকার চীনা কিং শাসকদের ব্রিটিশ মন্ত্রী স্যার ক্লাউড ম্যাকডোনাল্ড প্রণীত অপর সীমানাটি দাবি করছে।
দাবি-পাল্টা দাবি থাকলেও চীন ও ভারতের মধ্যকার সীমান্ত মোটামুটিভাবে শান্তই রয়েছে। তবে উত্তর-পশ্চিম লাদাখে যেখানে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সীমান্ত রয়েছে, সেখানে দুই দেশের মধ্যে সংঘর্ষ প্রায়ই দেখা যায়।
লাদাখের কার্গিল জেলায় এ আশপাশের এলাকায় ১৯৯৯ সালে দুই দেশের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়।
পাকিস্তানের মিত্র চীন কিন্তু জম্মু ও কাশ্মীরের ব্যাপারে ভারতের সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছে। চীন মনে করে, এর ফলে সঙ্ঘাতের নতুন ধারার সূচনা করা হলো।
নয়া দিল্লির অনুচ্ছেদ ৩৭০ বাতিল করার পরপরই পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মাহমুদ কোরেশি আলোচনার জন্য বেইজিং যান। তবে চীনা উদ্বেগ পাকিস্তানের চেয়ে ভিন্ন।
পাকিস্তান চাচ্ছে, ইসলামপন্থীসহ কাশ্মীরী বিদ্রোহীদের প্রতি আন্তঃসীমান্ত সমর্থন বাড়াতে। কিন্তু চীন তার জিনজিয়াং সীমান্তের কাছে এমন বিদ্রোহীদের উপস্থিতি কামনা করে না। কারণ সে নিজেই সেখানকার মুসলিম জনসংখ্যা নিয়ে চিন্তায় আছে।
তাছাড়া আরো বেশি অস্থিতিশীল কাশ্মীর চীনের ভূ-রাজনীতি ও অর্থনৈতিক স্বার্থের অনুকূলে নয়, বিশেষ করে তথাকথিত চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোর প্রতিষ্ঠার দিকে চীন বেশ নজর দেয়ায়। কয়েক বিলিয়ন ডলারের এই অবকাঠামো প্রকল্পটি পাকিস্তানি বন্দর গোয়াদর দিয়ে চীনকে আরব সাগরে প্রবেশের সুযোগ দেবে।
তিব্বতি-বৌদ্ধ সংস্কৃতির লাদাখে নতুন প্রশাসনিক এলাকা সৃষ্টি করার ফলে চীনের সাথেও ঝামেলার সৃষ্টি হবে। উল্লেখ্য, চীন ১৯৫৯ সালে তিব্বতকে নিজের করে নেয়। এরপর থেকে দেশটি সেখানকার সংস্কৃতি, ধর্ম ও ঐতিহ্য মুছে ফেলার চেষ্টা করছে।
তিব্বতি বৌদ্ধদের নেতা দালাই লামা ১৯৫৯ সাল থেকে ভারতে প্রবাস জীবনযাপন করছেন। তিনি ভারত ও চীনের মধ্যকার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের কাঁটা হিসেবে বিরাজ করছেন। প্রবাসী এই আধ্যাত্মিক নেতা কয়েকবারই লাদাখ সফর করেছেন। সর্বশেষ করেছেন ২০১৮ সালের জুলাই মাসে। রাজধানী লেহ ও অন্যান্য এলাকা নতুন ইউনিয়নভুক্ত হওয়ার মর্যাদা প্রাপ্তিতে লাদাখিরা আনন্দপ্রকাশ করলেও উদ্বিগ্ন হওয়ার নতুন ও সম্ভাব্য অস্থিতিশীলতা সৃষ্টিকারী কারণ পারে চীন।
পূর্ব লদাখের রাজধানী লেহ’র থিকসে বৌদ্ধ মঠের পাদদেশে খেলছে একদল শিশু, ছবি: এএফপি |
No comments