তিক্ত উত্তরাধিকার রেখে গেলেন মুগাবে
রবার্ট
মুগাবের রাজনৈতিক ক্যারিয়ারকে তিনটি প্রধান ভাগে ভাগ করা যায়। প্রথমত,
তিনি একজন অসাধারণ দক্ষ নেতা ছিলেন। রোডেসিয়ার প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইয়ান
স্মিথের শাসনামলে শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে
নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। দ্বিতীয়ত, ১৯৮০ সাল থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত একজন বৈধ ও
ত্রুটিপূর্ণ শাসক ছিলেন তিনি। ২০০০ সালে সাংবিধানিক গণভোটে লজ্জাজনক পরাজয়
দেখেছিলেন জিম্বাবুয়ের সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদি শাসক। তৃতীয়ত, মুগাবে ছিলেন একজন
রক্তচোষা
একনায়ক। তিনি নির্বাচনে কারচুপি করেছেন। ২০১৭ সালে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার আগ পর্যন্ত নিজের বিরোধীদের ওপর নির্যাতন চালিয়েছেন। এসব ছাড়া, পদচ্যুত, মৃতপ্রায় ও স্বৈরশাসক হিসেবেও কিছু সময় পার করেছেন মুগাবে।
ইয়ান স্মিথ ১৯৬৪ সাল থেকে ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত রোডেসিয়ার প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। তার শাসনামলে ১১ বছর কারাবন্দি ছিলেন মুগাবে। পরবর্তীতে প্রতিবেশী দেশ মোজাম্বিকে একাধিক গেরিলা শিবিরে নির্বাসিত অবস্থায় দিন পার করেন। ওই সময়গুলো তার সাহস, দৃঢ়তা, কৌশলগত দক্ষতা ও প্রতিভার সুসপষ্ট প্রমাণ। জেসুইত ধর্মযাজকদের অধীনে থেকে নিজের বুদ্ধিদীপ্ততা ও চারুত্ব ঝালিয়ে নেন মুগাবে। কিন্তু এসব গুণের পেছনেই লুকিয়ে ছিল নির্মমতা ও ধূর্ততা। কারাগারে থাকাকালীন সময়ে বেশ কয়েকজন কারাবন্দিকে নিজের অধীনস্থ করতে পেরেছিলেন তিনি। পরবর্তীতে তাদের মুগাবের রাজনৈতিক দল জানু-পিএফ পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটিতে দেখা গেছে। কারাগারে থাকার সময় তার অনুসারীদের তৎকালীন সময়ে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত নেতা নাবানিঙ্গি সিটহোলেকে ক্ষমতাচ্যুত করার কথা জানিয়েছিলেন মুগাবে। কারাগার থেকে ছাড়া পাবার পর তিনি নির্বাসনে যান। নির্বাসনে থাকার সময় গেরিলা বাহিনী ও আফ্রিকান নেতাদের বোঝাতে সক্ষম হন যে, সরকার-বিরোধী আন্দোলনের মূল ব্যক্তি তিনিই। তার জীবনে একক অর্জনের মধ্যে এটি অন্যতম। এই পর্যায়ে পশ্চিমা নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয় তার। তারা তার প্রতি মুগ্ধ ছিলেন। তারা তার শিক্ষাবিদ হাবভাব দেখে মুগ্ধ হননি। তাদের মুগ্ধতার কারণ ছিল, মুগাবে সমালোচনাকারীদের দমাতে অঙ্গীকারবদ্ধ ছিলেন। গেরিলা শিবিরগুলোয় এধরনের সমালোচনা দূরীকরণের কাজ চলতো- নির্যাতন করে, বন্দি রেখে। এই পর্যায়ে মুগাবে ছিলেন একজন উৎসর্গী মার্ক্সিস্ট।
মুগাবের ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় পর্যায় শুরু হয় স্বাধীন জিম্বাবুয়ের প্রথম বৈধ নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বিশাল জয় দিয়ে। পরবর্তীতে ১৯৮৭ সাল থেকে অবশ্য প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন শুরু করেন তিনি। প্রায় এক দশকের মতো সময় ধরে তিনি জিম্বাবুইয়ানদের কাছে করা প্রতিশ্রুতি পূরণ করেন। স্থাপন করেন ৫ হাজারের কাছাকাছি খামার। তৎকালীন সময়ে আফ্রিকার মধ্যে সবচেয়ে দ্রুতগতিতে বেড়ে ওঠা কৃষি খাতগুলোর একটি ছিল জিম্বাবুয়ের। ক্ষমতার প্রথম দিকে নিজের শাসনে তেমন একটা দাগ লাগতে দেননি মুগাবে। একমাত্র দাগ যেটি ছিল সেটি হচ্ছে, দক্ষিণাঞ্চলে ভিন্নমত দমনের চেষ্টা। নেবেলে সমপ্রদায় ও অন্যান্য সংখ্যালঘু জাতিগোষ্ঠীগুলো মুগাবের সমর্থনপ্রাপ্ত শোনা সমপ্রদায়ের প্রভাবের বিরোধিতা করতো। তাদের দমাতে নারী, শিশুসহ প্রায় ২০ হাজার মানুষ হত্যা করেন মুগাবে। কিন্তু দেশের অর্থনীতি বাড়ছিল। সঙ্গে উন্নত হচ্ছিল দেশের নাগরিকদের জীবনমানও। সব মিলিয়ে পশ্চিমা সরকারগুলো ও আন্তর্জাতিক দাতারা মুগাবের অপরাধ দেখেও না দেখার ভান করেন।
নব্বইয়ের দশকের শেষের দিকে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েন মুগাবে। জমি হারানো মানুষের সংখ্যা ধীরে ধীরে বাড়ছিল। বিশেষ করে ঝানু যোদ্ধাদের একটি দল অভিযোগ তোলে, মুগাবে শ্বেতাঙ্গদের খামার কিনে তাদের মধ্যে ভাগ করে দিতে ব্যর্থ হওয়ায় এমনটি হচ্ছিল। ১৯৯৭ সালে বেপরোয়া সিদ্ধান্ত নেন তিনি। ওইসব ঝানু যোদ্ধাদের ব্যাপক পরিমাণ খামার তাদের হাতে তুলে দেন। এতে বাজেটে বিরূপ প্রভাব পড়ে। বিশ্বব্যাংক জিম্বাবুয়ের তহবিল আটকে রাখতে বাধ্য হয়। একইসঙ্গে শুরু হয় অর্থনৈতিক ধস।
মুগাবের ক্যারিয়ারের তৃতীয় পর্যায়ের অন্যতম দৃষ্টান্ত ২০০০ সালের সাংবিধানিক গণভোট। ভোটে জিতলে প্রেসিডেন্ট হিসেবে ব্যাপক ক্ষমতা উপভোগ করতে পারতেন তিনি। কিন্তু তা হয়নি, তিনি হেরে যান। একইসঙ্গে শুরু হয় তীব্র বিরোধী আন্দোলন। প্রভাবশালী বাণিজ্য সংগঠন নেতা মরগান টিভানগিরাইয়ের নেতৃত্বে গঠিত মুভমেন্ট ফর ডেমোক্রেটিক চেঞ্জ (ডিএমসি) মুগাবে সরকারের মধ্যে দুর্নীতিসহ অন্যান্য বিষয়ের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করে। ৪৬ শতাংশ ভোট পেয়ে হেরে যান মুগাবে। এটা তার কাছে বড় ধরনের হতাশা ছিল।
হারের লজ্জায় রেগে ওঠেন মুগাবে। কিছু সংখ্যক শ্বেতাঙ্গ কৃষকরা বিরোধী দলকে সমর্থন দিচ্ছিল তখন। তৎক্ষণাত ওই কৃষকদের জমি দখল করে নেন তিনি। তাদের কোনো ক্ষতিপূরণ দেয়া হয়নি। এমনকি জমি দখলে সহিংসতার চর্চাও করেছেন অনেক সময়। এতে তার দলের প্রধান সুবিধাভোগীরা বেশ খুশি হন। তার দ্বিতীয় স্ত্রী গ্রেস মুগাবে, যিনি কিনা বয়সে মুগাবের চেয়ে ৪১ বছরের ছোট, প্রেসিডেন্টের চারপাশে একটি লুণ্ঠনমূলক অভিযান চালানো শুরু করেন। অচিরেই জিম্বাবুয়ের অর্থনীতিতে ধস নেমে আসে। ২০০৮ সালে মুদ্রাস্ফীতি এত বেড়ে যায় যে, তা প্রায় মূল্যহীন হয়ে দাঁড়ায়। এসবের মধ্যদিয়ে এমডিসির জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে। ২০০৮ সালে স্বল্প ব্যবধানে নির্বাচনে জয়ীও হয় দলটি। নির্বাচনের প্রথম দফায় মুগাবেকে পরাজিত করেন টিভানগিরাই। কিন্তু নির্বাচন কমিশন ছিল মুগাবের প্রতি অনুগত। তারা মুগাবের পক্ষে ফল প্রকাশ করে। তাদের ঘোষণা অনুসারে, অল্প কিছু ভোটের ব্যবধানে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারায় এমডিসি। দ্বিতীয় দফায় কয়েকশ’ এমডিসি কর্মীকে হত্যা করা হয়। হার মানতে বাধ্য হন টিভানগিরাই।
মুগাবের রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের সবচেয়ে ভয়াবহ পর্যায় ছিল লজ্জাজনক একটি শেষ। বৃদ্ধ বয়সের ক্ষমতা হারানোর দৃষ্টান্ত ও তার স্ত্রীর লালসায় এটা সপষ্ট হয়ে ওঠছিল যে, মুগাবের মৃত্যুর পর ক্ষমতা দখল করতে চাইছিলেন গ্রেস। এমতাবস্থায় সামরিক অভ্যুত্থানের মুখে ক্ষমতা হারান একসময় বীর হিসেবে আখ্যায়িত মুগাবে। অবশেষে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার দুই বছর পর সমপ্রতি প্রয়াত হয়েছেন তিনি।
মুগাবের মৃত্যুতে জিম্বাবুয়ের ভেতরে তেমন কোনো পরিবর্তন আসবে না। কেননা, তিনি দুই বছর ধরে দেশটির রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটেই নেই। তাছাড়া দেশেও নেই গত কয়েক মাস ধরে। হয়তো তার শেষকৃত্যে প্রচুর মানুষের সমাগম হবে। হয়তো তাদের অনেকে বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করবে। কিন্তু বর্তমান প্রেসিডেন্ট একসময় মুগাবের ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন। ক্ষমতায় এসে তিনি দলে তেমন কোনো পরিবর্তন আনেননি। মুগাবের আমলের সুবিধাভোগীরা এখনো নিজস্ব পদে বহাল আছেন। দেশের অর্থনীতির উন্নতি হয়নি। এমন কী যে নির্বাচনের মধ্যদিয়ে তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন, সে নির্বাচনে সহিংসতা, জালিয়াতির অভিযোগ রয়েছে।
(লন্ডনভিত্তিক সাময়িকী দ্য ইকোনমিস্টে প্রকাশিত প্রতিবেদন অবলম্বনে)
একনায়ক। তিনি নির্বাচনে কারচুপি করেছেন। ২০১৭ সালে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার আগ পর্যন্ত নিজের বিরোধীদের ওপর নির্যাতন চালিয়েছেন। এসব ছাড়া, পদচ্যুত, মৃতপ্রায় ও স্বৈরশাসক হিসেবেও কিছু সময় পার করেছেন মুগাবে।
ইয়ান স্মিথ ১৯৬৪ সাল থেকে ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত রোডেসিয়ার প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। তার শাসনামলে ১১ বছর কারাবন্দি ছিলেন মুগাবে। পরবর্তীতে প্রতিবেশী দেশ মোজাম্বিকে একাধিক গেরিলা শিবিরে নির্বাসিত অবস্থায় দিন পার করেন। ওই সময়গুলো তার সাহস, দৃঢ়তা, কৌশলগত দক্ষতা ও প্রতিভার সুসপষ্ট প্রমাণ। জেসুইত ধর্মযাজকদের অধীনে থেকে নিজের বুদ্ধিদীপ্ততা ও চারুত্ব ঝালিয়ে নেন মুগাবে। কিন্তু এসব গুণের পেছনেই লুকিয়ে ছিল নির্মমতা ও ধূর্ততা। কারাগারে থাকাকালীন সময়ে বেশ কয়েকজন কারাবন্দিকে নিজের অধীনস্থ করতে পেরেছিলেন তিনি। পরবর্তীতে তাদের মুগাবের রাজনৈতিক দল জানু-পিএফ পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটিতে দেখা গেছে। কারাগারে থাকার সময় তার অনুসারীদের তৎকালীন সময়ে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত নেতা নাবানিঙ্গি সিটহোলেকে ক্ষমতাচ্যুত করার কথা জানিয়েছিলেন মুগাবে। কারাগার থেকে ছাড়া পাবার পর তিনি নির্বাসনে যান। নির্বাসনে থাকার সময় গেরিলা বাহিনী ও আফ্রিকান নেতাদের বোঝাতে সক্ষম হন যে, সরকার-বিরোধী আন্দোলনের মূল ব্যক্তি তিনিই। তার জীবনে একক অর্জনের মধ্যে এটি অন্যতম। এই পর্যায়ে পশ্চিমা নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয় তার। তারা তার প্রতি মুগ্ধ ছিলেন। তারা তার শিক্ষাবিদ হাবভাব দেখে মুগ্ধ হননি। তাদের মুগ্ধতার কারণ ছিল, মুগাবে সমালোচনাকারীদের দমাতে অঙ্গীকারবদ্ধ ছিলেন। গেরিলা শিবিরগুলোয় এধরনের সমালোচনা দূরীকরণের কাজ চলতো- নির্যাতন করে, বন্দি রেখে। এই পর্যায়ে মুগাবে ছিলেন একজন উৎসর্গী মার্ক্সিস্ট।
মুগাবের ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় পর্যায় শুরু হয় স্বাধীন জিম্বাবুয়ের প্রথম বৈধ নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বিশাল জয় দিয়ে। পরবর্তীতে ১৯৮৭ সাল থেকে অবশ্য প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন শুরু করেন তিনি। প্রায় এক দশকের মতো সময় ধরে তিনি জিম্বাবুইয়ানদের কাছে করা প্রতিশ্রুতি পূরণ করেন। স্থাপন করেন ৫ হাজারের কাছাকাছি খামার। তৎকালীন সময়ে আফ্রিকার মধ্যে সবচেয়ে দ্রুতগতিতে বেড়ে ওঠা কৃষি খাতগুলোর একটি ছিল জিম্বাবুয়ের। ক্ষমতার প্রথম দিকে নিজের শাসনে তেমন একটা দাগ লাগতে দেননি মুগাবে। একমাত্র দাগ যেটি ছিল সেটি হচ্ছে, দক্ষিণাঞ্চলে ভিন্নমত দমনের চেষ্টা। নেবেলে সমপ্রদায় ও অন্যান্য সংখ্যালঘু জাতিগোষ্ঠীগুলো মুগাবের সমর্থনপ্রাপ্ত শোনা সমপ্রদায়ের প্রভাবের বিরোধিতা করতো। তাদের দমাতে নারী, শিশুসহ প্রায় ২০ হাজার মানুষ হত্যা করেন মুগাবে। কিন্তু দেশের অর্থনীতি বাড়ছিল। সঙ্গে উন্নত হচ্ছিল দেশের নাগরিকদের জীবনমানও। সব মিলিয়ে পশ্চিমা সরকারগুলো ও আন্তর্জাতিক দাতারা মুগাবের অপরাধ দেখেও না দেখার ভান করেন।
নব্বইয়ের দশকের শেষের দিকে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েন মুগাবে। জমি হারানো মানুষের সংখ্যা ধীরে ধীরে বাড়ছিল। বিশেষ করে ঝানু যোদ্ধাদের একটি দল অভিযোগ তোলে, মুগাবে শ্বেতাঙ্গদের খামার কিনে তাদের মধ্যে ভাগ করে দিতে ব্যর্থ হওয়ায় এমনটি হচ্ছিল। ১৯৯৭ সালে বেপরোয়া সিদ্ধান্ত নেন তিনি। ওইসব ঝানু যোদ্ধাদের ব্যাপক পরিমাণ খামার তাদের হাতে তুলে দেন। এতে বাজেটে বিরূপ প্রভাব পড়ে। বিশ্বব্যাংক জিম্বাবুয়ের তহবিল আটকে রাখতে বাধ্য হয়। একইসঙ্গে শুরু হয় অর্থনৈতিক ধস।
মুগাবের ক্যারিয়ারের তৃতীয় পর্যায়ের অন্যতম দৃষ্টান্ত ২০০০ সালের সাংবিধানিক গণভোট। ভোটে জিতলে প্রেসিডেন্ট হিসেবে ব্যাপক ক্ষমতা উপভোগ করতে পারতেন তিনি। কিন্তু তা হয়নি, তিনি হেরে যান। একইসঙ্গে শুরু হয় তীব্র বিরোধী আন্দোলন। প্রভাবশালী বাণিজ্য সংগঠন নেতা মরগান টিভানগিরাইয়ের নেতৃত্বে গঠিত মুভমেন্ট ফর ডেমোক্রেটিক চেঞ্জ (ডিএমসি) মুগাবে সরকারের মধ্যে দুর্নীতিসহ অন্যান্য বিষয়ের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করে। ৪৬ শতাংশ ভোট পেয়ে হেরে যান মুগাবে। এটা তার কাছে বড় ধরনের হতাশা ছিল।
হারের লজ্জায় রেগে ওঠেন মুগাবে। কিছু সংখ্যক শ্বেতাঙ্গ কৃষকরা বিরোধী দলকে সমর্থন দিচ্ছিল তখন। তৎক্ষণাত ওই কৃষকদের জমি দখল করে নেন তিনি। তাদের কোনো ক্ষতিপূরণ দেয়া হয়নি। এমনকি জমি দখলে সহিংসতার চর্চাও করেছেন অনেক সময়। এতে তার দলের প্রধান সুবিধাভোগীরা বেশ খুশি হন। তার দ্বিতীয় স্ত্রী গ্রেস মুগাবে, যিনি কিনা বয়সে মুগাবের চেয়ে ৪১ বছরের ছোট, প্রেসিডেন্টের চারপাশে একটি লুণ্ঠনমূলক অভিযান চালানো শুরু করেন। অচিরেই জিম্বাবুয়ের অর্থনীতিতে ধস নেমে আসে। ২০০৮ সালে মুদ্রাস্ফীতি এত বেড়ে যায় যে, তা প্রায় মূল্যহীন হয়ে দাঁড়ায়। এসবের মধ্যদিয়ে এমডিসির জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে। ২০০৮ সালে স্বল্প ব্যবধানে নির্বাচনে জয়ীও হয় দলটি। নির্বাচনের প্রথম দফায় মুগাবেকে পরাজিত করেন টিভানগিরাই। কিন্তু নির্বাচন কমিশন ছিল মুগাবের প্রতি অনুগত। তারা মুগাবের পক্ষে ফল প্রকাশ করে। তাদের ঘোষণা অনুসারে, অল্প কিছু ভোটের ব্যবধানে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারায় এমডিসি। দ্বিতীয় দফায় কয়েকশ’ এমডিসি কর্মীকে হত্যা করা হয়। হার মানতে বাধ্য হন টিভানগিরাই।
মুগাবের রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের সবচেয়ে ভয়াবহ পর্যায় ছিল লজ্জাজনক একটি শেষ। বৃদ্ধ বয়সের ক্ষমতা হারানোর দৃষ্টান্ত ও তার স্ত্রীর লালসায় এটা সপষ্ট হয়ে ওঠছিল যে, মুগাবের মৃত্যুর পর ক্ষমতা দখল করতে চাইছিলেন গ্রেস। এমতাবস্থায় সামরিক অভ্যুত্থানের মুখে ক্ষমতা হারান একসময় বীর হিসেবে আখ্যায়িত মুগাবে। অবশেষে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার দুই বছর পর সমপ্রতি প্রয়াত হয়েছেন তিনি।
মুগাবের মৃত্যুতে জিম্বাবুয়ের ভেতরে তেমন কোনো পরিবর্তন আসবে না। কেননা, তিনি দুই বছর ধরে দেশটির রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটেই নেই। তাছাড়া দেশেও নেই গত কয়েক মাস ধরে। হয়তো তার শেষকৃত্যে প্রচুর মানুষের সমাগম হবে। হয়তো তাদের অনেকে বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করবে। কিন্তু বর্তমান প্রেসিডেন্ট একসময় মুগাবের ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন। ক্ষমতায় এসে তিনি দলে তেমন কোনো পরিবর্তন আনেননি। মুগাবের আমলের সুবিধাভোগীরা এখনো নিজস্ব পদে বহাল আছেন। দেশের অর্থনীতির উন্নতি হয়নি। এমন কী যে নির্বাচনের মধ্যদিয়ে তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন, সে নির্বাচনে সহিংসতা, জালিয়াতির অভিযোগ রয়েছে।
(লন্ডনভিত্তিক সাময়িকী দ্য ইকোনমিস্টে প্রকাশিত প্রতিবেদন অবলম্বনে)
No comments