বেঁচে যাওয়া রোহিঙ্গাদের না শুকানো ক্ষত by ফেলিম কাইন
মিয়ানমার
সামরিক বাহিনীর গণহত্যা, নির্যাতন, গণধর্ষণ ও অগ্নিসংযোগের পোড়ামাটি
অভিযান থেকে বেঁচে যাওয়া লোকদের দুর্ভোগ এখনো শেষ হয়নি। খুব শিগগিরই শেষ
হবে, এমন ইঙ্গিতও দেখা যাচ্ছে না। কেবল জিজ্ঞাসা করে দেখুন রাবিয়া বসরি,
আবদুল ওয়াহিদ ও আবু গফুরকে (তাদের প্রকৃত নাম নয়)।
রাবিয়া বসরির বয়স ২০১৭ সালের ২৭ আগস্ট ছিল ২১ বছর। ওই দিন সরকারি নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা রাখাইন রাজ্যের উত্তরপশ্চিমে চুট পিন গ্রামে প্রবেশ করলে তিনি পরিবারের সদস্যদের সাথে পাশের ধান ক্ষেতে পালিয়ে যান। তার স্বজনদের মধ্যে ৫ জন গুলিতে নিহত হন। রাবিয়া বসরি গুলি খেয়েও প্রাণে বেঁচে যান। গুলি তার বাম পায়ে ও ডান বাহুতে বিদ্ধ হয়। তখন চিকিৎসা করার সময় ছিল না। তার পরিবারের সদস্যরা তাকে বহন করে বাংলাদেশে নিয়ে আসে। দু’দিন পর তার চিকিৎসার ব্যবস্থা হয়। তবে ওই ক্ষত এখনো সারেনি, তিনি এখনো ক্রাচে ভর না করে চলতে পারেন না।
২০১৭ সালের ৫ সেপ্টেম্বর মিয়ানমার নিরাপত্তা বাহিনী যখন আবদুল ওয়াহিদের মাথা ও বাম পায়ে গুলি করে, তখন তার বয়স ছিল ৬ বছর। তিনি ও তার পরিবার রাখাইনের মরিকুরাম গ্রাম থেকে পালিয়ে এসেছেন। তার বিধ্বস্ত বাম পাটি তাকে সমস্যায় ফেলে গেছে, হাঁটতে তার খুবই কষ্ট হয়।
২০১৭ সালের আগস্টে আবু গফুরের বয়স ছিল ১৮ বছর। তিনি ছিলেন ছাত্র। থামবাজুর-কুন্দপারা গ্রামে সামরিক বাহিনীর ভারী অস্ত্রে সজ্জিত লোকজন তাকে ও তার কয়েকজন ক্লাসমেটের ওপর গুলি চালায়। তারা তখন স্কুল থেকে বাড়ি ফিরছিলেন। তার গুলি খাওয়ার দুঃস্বপ্নটি এখনো মনে আছে। প্রচণ্ড শব্দে তার কান স্তব্ধ হয়ে পড়ে। তার পরিবার নিরাপত্তার জন্য তাকে বাংলাদেশে নিয়ে আসে। এখন সে বাম কানে কিছু শোনে না, বাম চোখে দেখে না।
তবুও বলতে হবে, রাবিয়া বসরি, আবদুল ওয়াহিদ ও আবু গফুর ভাগ্যবান। ২০১৭ সালের আগস্টে মিয়ানমার নিরাপত্তা বাহিনী ও বৌদ্ধ রাখাইনরা যে ব্যাপক ও পরিকল্পিত সহিংসতা ছড়িয়ে দিয়েছিল, তা থেকে তারা প্রাণে রক্ষা পেয়েছেন। ওই সহিংসতা অন্তত ১০ হাজার রোহিঙ্গা বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়। এর জের ধরে সাত লাখ ৪০ হাজার রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশের কক্সবাজারে আশ্রয় নেয়। তারা এখনো কঠিন অবস্থায় সেখানে অবস্থান করছে।
বৃহস্পতিবার প্রকাশিত ফিজিশিয়ান্স ফর হিউম্যান রাইটসের নতুন এক প্রতিবেদনে ওই সহিংসতার চাপা পড়া কিছু বিষয় সামনে নিয়ে এসেছে। এতে বলা হয়েছে, অনেক রোহিঙ্গা গুলি, প্রহার, ছুরিকাঘাত থেকে রক্ষা পেলেও তারা এখন দীর্ঘ মেয়াদি শারীরিক প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়েছেন। এসব সমস্যা তাদের স্বাধীনভাবে চলাচল কঠিন করে তুলবে, তাদের উৎপাদনশীলতা হ্রাস করবে, ব্যথামুক্ত জীবনকে শেষ করে দেবে।
এসব পঙ্গু লোক মিয়ানমার নিরাপত্তা বাহিনীর নির্মম সহিংসতার প্রমাণ বহন করছে। তারা আরো অনেকে দিন এই যন্ত্রণা বয়ে বেড়াবে।
পিএইচআরের গবেষণায় সাক্ষাতকার দিতে ইচ্ছুক ১১৪ জনের কথা তুলে ধরেছে। এদের মধ্যে ৯০ জনই ওই সহিংসতায় আহত হয়েছিলেন। সংস্থার চিকিৎসকদের পরীক্ষায় দেখা গেছে, এদের মধ্যে ৪৩ জনকে দীর্ঘ মেয়াদে পঙ্গুত্বকে বরণ করে নিতে হবে।
রোহিঙ্গাদের যারা পঙ্গু হয়ে গেছে, তাদের আসলে মিয়ানমার বাহিনী গুলি করে হত্যা করতে চেয়েছিল। তারা পালানোর সময় গুলির মুখে পড়েন। ওই আঘাতের ফলে অনেকে হাঁটতে পারছেন না, অনেকে এমনকি সামান্য কাপও হাতে নিতে পারেন না, অনেকে এক ব্যাগ চালও টানতে পারেন না।
পিএইচআরের চিসিৎসকেরা জানিয়েছেন, এসব লোকের চিকিৎসার দিকে তেমন নজর দেয়া হয়নি। আবার অনেকের চিকিৎসা অনেক দেরিতে শুরু হওয়ায় কোনো কোনো অঙ্গ কেটে ফেলতে হয়েছে। সময়মতো চিকিৎসা হলে এসব অঙ্গ হয়তো রক্ষা করা যেত।
যাদের নৃশংসতার কারণে তারা ভূমি হারিয়েছে, পঙ্গুত্ব বরণ করেছে, তাদের অপরাধের দ্রুত বিচার হওয়া উচিত।
মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের জন্য মিয়ানমার নিরাপত্তা বাহিনীর বিচার হওয়া উচিত। আর এজন্য জাতিসঙ্ঘ তথ্যানুসন্ধান মিশন যেসব সুপারিশ করেছে, সে ব্যাপারে নতুন করে সোচ্চার হওয়া উচিত জাতিসঙ্ঘের। উল্লেখ্য, ওই মিশনের প্রতিবেদনে আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালতে কিংবা অস্থায়ী কোনো ফৌজদারি আদালতে দায়ীদের বিচারের সুপারিশ করা হয়েছে।
গণহত্যার অপরাধ প্রতিরোধ ও দায়ীদের শাস্তি দানের জন্য ১৯৪৮ সালের কনভেনশনের পক্ষ জাতিসঙ্ঘ সদস্য রাষ্ট্রগুলোর উচিত হবে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ করার জন্য মিয়ানমার সরকারের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালতে মামলা করা।
আর পঙ্গুত্ব বরণ করা রাবিয়া বসরি, আবদুল ওয়াহিদ ও আবু গফুরদের মতো লোকজন যাতে নিয়মিত পরিচর্যা পায় তা নিশ্চিত করা উচিত পঙ্গুত্ববিষয়ক জাতিসঙ্ঘ বিশেষ প্রতিনিধির। যাদের আঘাত মারাত্মক, তাদের দীর্ঘ মেয়াদি পুনর্বাসনের উদ্যাগ গ্রহণ করা উচিত। তাছাড়া তারা যাতে অর্থনৈতিকভাবে নির্ভরশীল না থঅকে, সেজন্য তাদেরকে কারিগরি বিদ্যা শিক্ষা দেয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করা উচিত।
২০১৭ সালের সহিংসতার জন্য দায়ীদের প্রতি অর্থপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ না করা হলে এবং এর ফলে যারা পঙ্গু হয়ে পড়েছে তাদের প্রতি প্রত্যক্ষ সহায়তা না দিলে ওই রক্তক্ষরণের নিরাময় না হওয়া ক্ষত কেবল বাড়বেই।
রাবিয়া বসরির বয়স ২০১৭ সালের ২৭ আগস্ট ছিল ২১ বছর। ওই দিন সরকারি নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা রাখাইন রাজ্যের উত্তরপশ্চিমে চুট পিন গ্রামে প্রবেশ করলে তিনি পরিবারের সদস্যদের সাথে পাশের ধান ক্ষেতে পালিয়ে যান। তার স্বজনদের মধ্যে ৫ জন গুলিতে নিহত হন। রাবিয়া বসরি গুলি খেয়েও প্রাণে বেঁচে যান। গুলি তার বাম পায়ে ও ডান বাহুতে বিদ্ধ হয়। তখন চিকিৎসা করার সময় ছিল না। তার পরিবারের সদস্যরা তাকে বহন করে বাংলাদেশে নিয়ে আসে। দু’দিন পর তার চিকিৎসার ব্যবস্থা হয়। তবে ওই ক্ষত এখনো সারেনি, তিনি এখনো ক্রাচে ভর না করে চলতে পারেন না।
২০১৭ সালের ৫ সেপ্টেম্বর মিয়ানমার নিরাপত্তা বাহিনী যখন আবদুল ওয়াহিদের মাথা ও বাম পায়ে গুলি করে, তখন তার বয়স ছিল ৬ বছর। তিনি ও তার পরিবার রাখাইনের মরিকুরাম গ্রাম থেকে পালিয়ে এসেছেন। তার বিধ্বস্ত বাম পাটি তাকে সমস্যায় ফেলে গেছে, হাঁটতে তার খুবই কষ্ট হয়।
২০১৭ সালের আগস্টে আবু গফুরের বয়স ছিল ১৮ বছর। তিনি ছিলেন ছাত্র। থামবাজুর-কুন্দপারা গ্রামে সামরিক বাহিনীর ভারী অস্ত্রে সজ্জিত লোকজন তাকে ও তার কয়েকজন ক্লাসমেটের ওপর গুলি চালায়। তারা তখন স্কুল থেকে বাড়ি ফিরছিলেন। তার গুলি খাওয়ার দুঃস্বপ্নটি এখনো মনে আছে। প্রচণ্ড শব্দে তার কান স্তব্ধ হয়ে পড়ে। তার পরিবার নিরাপত্তার জন্য তাকে বাংলাদেশে নিয়ে আসে। এখন সে বাম কানে কিছু শোনে না, বাম চোখে দেখে না।
তবুও বলতে হবে, রাবিয়া বসরি, আবদুল ওয়াহিদ ও আবু গফুর ভাগ্যবান। ২০১৭ সালের আগস্টে মিয়ানমার নিরাপত্তা বাহিনী ও বৌদ্ধ রাখাইনরা যে ব্যাপক ও পরিকল্পিত সহিংসতা ছড়িয়ে দিয়েছিল, তা থেকে তারা প্রাণে রক্ষা পেয়েছেন। ওই সহিংসতা অন্তত ১০ হাজার রোহিঙ্গা বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়। এর জের ধরে সাত লাখ ৪০ হাজার রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশের কক্সবাজারে আশ্রয় নেয়। তারা এখনো কঠিন অবস্থায় সেখানে অবস্থান করছে।
বৃহস্পতিবার প্রকাশিত ফিজিশিয়ান্স ফর হিউম্যান রাইটসের নতুন এক প্রতিবেদনে ওই সহিংসতার চাপা পড়া কিছু বিষয় সামনে নিয়ে এসেছে। এতে বলা হয়েছে, অনেক রোহিঙ্গা গুলি, প্রহার, ছুরিকাঘাত থেকে রক্ষা পেলেও তারা এখন দীর্ঘ মেয়াদি শারীরিক প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়েছেন। এসব সমস্যা তাদের স্বাধীনভাবে চলাচল কঠিন করে তুলবে, তাদের উৎপাদনশীলতা হ্রাস করবে, ব্যথামুক্ত জীবনকে শেষ করে দেবে।
এসব পঙ্গু লোক মিয়ানমার নিরাপত্তা বাহিনীর নির্মম সহিংসতার প্রমাণ বহন করছে। তারা আরো অনেকে দিন এই যন্ত্রণা বয়ে বেড়াবে।
পিএইচআরের গবেষণায় সাক্ষাতকার দিতে ইচ্ছুক ১১৪ জনের কথা তুলে ধরেছে। এদের মধ্যে ৯০ জনই ওই সহিংসতায় আহত হয়েছিলেন। সংস্থার চিকিৎসকদের পরীক্ষায় দেখা গেছে, এদের মধ্যে ৪৩ জনকে দীর্ঘ মেয়াদে পঙ্গুত্বকে বরণ করে নিতে হবে।
রোহিঙ্গাদের যারা পঙ্গু হয়ে গেছে, তাদের আসলে মিয়ানমার বাহিনী গুলি করে হত্যা করতে চেয়েছিল। তারা পালানোর সময় গুলির মুখে পড়েন। ওই আঘাতের ফলে অনেকে হাঁটতে পারছেন না, অনেকে এমনকি সামান্য কাপও হাতে নিতে পারেন না, অনেকে এক ব্যাগ চালও টানতে পারেন না।
পিএইচআরের চিসিৎসকেরা জানিয়েছেন, এসব লোকের চিকিৎসার দিকে তেমন নজর দেয়া হয়নি। আবার অনেকের চিকিৎসা অনেক দেরিতে শুরু হওয়ায় কোনো কোনো অঙ্গ কেটে ফেলতে হয়েছে। সময়মতো চিকিৎসা হলে এসব অঙ্গ হয়তো রক্ষা করা যেত।
যাদের নৃশংসতার কারণে তারা ভূমি হারিয়েছে, পঙ্গুত্ব বরণ করেছে, তাদের অপরাধের দ্রুত বিচার হওয়া উচিত।
মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের জন্য মিয়ানমার নিরাপত্তা বাহিনীর বিচার হওয়া উচিত। আর এজন্য জাতিসঙ্ঘ তথ্যানুসন্ধান মিশন যেসব সুপারিশ করেছে, সে ব্যাপারে নতুন করে সোচ্চার হওয়া উচিত জাতিসঙ্ঘের। উল্লেখ্য, ওই মিশনের প্রতিবেদনে আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালতে কিংবা অস্থায়ী কোনো ফৌজদারি আদালতে দায়ীদের বিচারের সুপারিশ করা হয়েছে।
গণহত্যার অপরাধ প্রতিরোধ ও দায়ীদের শাস্তি দানের জন্য ১৯৪৮ সালের কনভেনশনের পক্ষ জাতিসঙ্ঘ সদস্য রাষ্ট্রগুলোর উচিত হবে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ করার জন্য মিয়ানমার সরকারের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালতে মামলা করা।
আর পঙ্গুত্ব বরণ করা রাবিয়া বসরি, আবদুল ওয়াহিদ ও আবু গফুরদের মতো লোকজন যাতে নিয়মিত পরিচর্যা পায় তা নিশ্চিত করা উচিত পঙ্গুত্ববিষয়ক জাতিসঙ্ঘ বিশেষ প্রতিনিধির। যাদের আঘাত মারাত্মক, তাদের দীর্ঘ মেয়াদি পুনর্বাসনের উদ্যাগ গ্রহণ করা উচিত। তাছাড়া তারা যাতে অর্থনৈতিকভাবে নির্ভরশীল না থঅকে, সেজন্য তাদেরকে কারিগরি বিদ্যা শিক্ষা দেয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করা উচিত।
২০১৭ সালের সহিংসতার জন্য দায়ীদের প্রতি অর্থপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ না করা হলে এবং এর ফলে যারা পঙ্গু হয়ে পড়েছে তাদের প্রতি প্রত্যক্ষ সহায়তা না দিলে ওই রক্তক্ষরণের নিরাময় না হওয়া ক্ষত কেবল বাড়বেই।
No comments