ভারতের ইউরেশিয়ায় প্রত্যাবর্তন by সালমান রাফি শেখ
দ্বিপাক্ষিক
বাণিজ্যের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র ভারতের জিএসপি সুবিধা বাতিল করায়
নয়াদিল্লীর অনেকে এখন মাথা চুলকাচ্ছেন। ঘটনার একটা বড় বাঁক বদল হয়েছে
এখানে। ট্রাম্প প্রশাসনের শুরুর দিকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী
ভারতকে তাদের ‘গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত অংশীদার’ ঘোষণা দিয়েছিলেন। ‘চীনকে
দমনের’ মার্কিন কৌশলের অংশ হিসেবে ওই ঘোষণা দেয়া হয়েছিল। ট্রাম্প প্রশাসনের
আমলের চতুর্থ বছরে এখন আছি আমরা এবং তাদের গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত অংশীদার
এখন ইউরেশিয়ার ভূ-অর্থনীতির মধ্যে হাতরানোতে ব্যস্ত এবং চীন ও রাশিয়ার সাথে
একটা অর্থনৈতিক ও সামরিক অংশীদারিত্বের পথ খুঁজতে তারা উদগ্রিব।
সম্প্রতি অনুষ্ঠিত এসসিও সম্মেলন বিভিন্নভাবে ভারতের ভবিষ্যত পররাষ্ট্রনীতির গতি প্রকৃতির জন্য অনেক দিক থেকেই একটা অর্থপূর্ণ দিক ঠিক করে দিয়েছে। সম্মেলনের পরে যে যৌথ ঘোষণা দেয়া হয়, সেখানে চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের (বিআরআই) উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করা হয়েছে – যেটাতে ভারত আগে বিরোধিতা করে এসেছে এবং এটাকে ‘ঋণের ফাঁদ’ হিসেবে বর্ণনা করে এসেছে।
যেখানে বিআরআইয়ের প্রশংসা করা হয়েছে, সেখানে যদিও বিশেষভাবে ভারতকে উল্লেখ করা হয়নি, তবে এই প্রশংসা এসেছে একটা যৌথ বিবৃতিতে এবং সেখানে ভারতের কোন আপত্তি বা সমালোচনার কথা উল্লেখ নেই। এটা নয়াদিল্লীর সম্ভাব্য অবস্থান পরিবর্তনের ব্যাপারে অনেক কিছু জানান দিয়েছে, কারণ সমালোচনার জায়গা থেকে তারা বিরোধিতা না করার অবস্থানে এসেছে। প্রধানমন্ত্রী মোদির বক্তৃতাতেও এ বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে, কারণ তার বক্তৃতাতে বিআরআইয়ের কোন উল্লেখই ছিল না, যদিও তিনি ‘আঞ্চলিক সংযোগের’ পক্ষে কথা বলার পাশাপাশি “সার্বভৌমত্বের প্রতি সম্মান, আঞ্চলিক অখণ্ডতা, সুশাসন, স্বচ্ছতা এবং আস্থার” উপর জোর দিয়েছেন – যে সব শর্তের অধীনে ভারত আঞ্চলিক ভূ-অর্থনৈতিক প্রচেষ্টার সাথে যুক্ত হতে পারে।
কিন্তু এই ধরনের প্রচেষ্টার অধিকাংশই এখন পর্যন্ত দ্বিপাক্ষিক পর্যায়ে হচ্ছে। চীনের শি ভারতের মোদির সাথে বৈঠকেও দ্বিপাক্ষিক নীতির উপর জোর দিয়েছেন। শি বলেছেন যে দুই দেশের মধ্যে (দ্বিপাক্ষিক) সহযোগিতা শুধু তাদের উন্নয়নকেই ত্বরান্বিত করবে না, বরং এশিয়া তথা সারা বিশ্বের শান্তি, স্থিতিশীলতা অর্জনে ভূমিকা রাখবে। উহানে গত বছর অনুষ্ঠিত শি-মোদি বৈঠকের দিকে ইঙ্গিত করে শি বলেন যে, ‘উহান স্পিরিট’ চীন-ভারত সম্পর্ককে নতুন মাত্রায় নিয়ে গেছে। তিনি আরও বলেন যে, দুই দেশের মধ্যে আরও ঘনিষ্ঠ উন্নয়ন অংশীদারিত্ব গঠনের জন্য ভারতের সাথে যোগ দিতে প্রস্তুত রয়েছে চীন।
শি জোর দিয়ে বলেন, দুই পক্ষের একটা মৌলিক বিশ্বাসের ব্যাপারে অনড় থাকা উচিত যে, চীন ও ভারত উন্নয়নের একটা সুযোগ এবং তারা একে অন্যের জন্য কোন হুমকি নয়। তিনি আরও বলেন, “তাদেরকে পারস্পরিক আস্থা জোরদার করা, সহযোগিতার দিকে মনোযোগ দেয়া এবং মতপার্থক্যের বিষয়গুলো মেনে নেয়ার মানসিকতা থাকতে হবে, যাতে চীন-ভারত সম্পর্ক আরও ইতিবাচক হিসেবে প্রমাণিত হয় এবং দুই দেশের উন্নয়নের ইতিবাচক শক্তি হিসেবে কাজ করে”।
ভারত ও চীন এখন তাদের সম্পর্কের উন্নয়নের জন্য যে পথে এগুচ্ছে, সেখানে দ্বি-পাক্ষিকতাই মূল বিষয়। চীনের বিআরআইকে চীনের কাছে ছেড়ে দিচ্ছে ভারত এবং নীতিগত বা অন্যভাবে এর বিরোধিতা করছে না। চীন অন্যদিকে ভারতের সাথে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক বাড়াতে প্রস্তুত এবং সীমান্ত বিরোধসহ সকল ইস্যুতে আলোচনার জন্য প্রস্তুত রয়েছে। এই সম্পর্কের প্রভাবটা অসামান্য, যেটার প্রভাব সুদূরপ্রসারী এবং আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক উভয় ক্ষেত্রেই যার প্রভাব পড়বে।
সম্পর্কের নতুন গতিপথের দিকে ইঙ্গিত করে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বলেছেন, “তাই আমরা এটাকে (মোদি-শি’র বিশকেক বৈঠক) ভারতে সরকার গঠনের পর একটা প্রক্রিয়ার সূচনা হিসেবে দেখছি এবং একবিংশ শতক এবং এশিয়া-প্রশান্ত অঞ্চলের বিস্তীর্ণ পরিসরে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে আমরা এখন ভারত-চীন সম্পর্কটিকে বিবেচনা করছি”।
রাশিয়ার পুতিনের সাথেও বৈঠক করেছেন ভারতের মোদি এবং ভারতের সম্পর্ককে নতুন দিকে চালিত করেছেন। সেপ্টেম্বরের শুরুর দিকে ভ্লাদিভস্তকে অনুষ্ঠিতব্য ইস্টার্ন ইকোনমিক ফোরামে প্রধান অতিথি হওয়ার ব্যাপারে পুতিনের আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছেন মোদি। দুই নেতাই আসন্ন জি২০ সম্মেলনে বৈঠক করবেন, এবং পুতিনও এ বছর ভারত সফর করতে পারেন। এগুলো কূটনৈতিক তৎপরতা হিসেবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ, এটা শুধু এসসিও’র নিজস্ব ভূ-রাজনৈতিক মাত্রাকেই সংহত করবে না, বরং এর সদস্য দেশগুলোকেও এগিয়ে নেবে।
রাশিয়া ও চীনের সাথে ভারতের ক্রমবর্ধমান ‘ব্রোমাঞ্চের’ মাধ্যমে বোঝা যাচ্ছে যে কিভাবে তারা বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে নিজেদের অবস্থানে ভারসাম্য আনতে চাচ্ছে, যে বিশ্বটা ক্রমেই একটা বহুমেরুর বিশ্বের দিকে চলেছে। যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্য যুদ্ধ এবং ৫-জি ইন্টারনেট সিস্টেম প্রথম তৈরির মাধ্যমে চীন বিশ্বে ঝড় তুলে দেয়ার পর, বহু দেশের মধ্যে (ভারতও সম্ভবত তাদের মধ্যে রয়েছে) এই বোধোদয় আরও বেড়েছে যে, চীন অবশ্যম্ভাবীভাবে বৈশ্বিক নেতৃত্বের অবস্থানে চলে যাচ্ছে এবং পারস্পরিক উপকারের বাণিজ্যিক ভূগোলোর জন্য তাদের সাথে যোগাযোগ রাখাটা কতটা গুরুত্বপূর্ণ।
সন্দেহ নেই যে, রাশিয়া ও চীনের সাথে ভারতের সম্পর্ক বৃদ্ধির কারণে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে তাদের সম্পর্ক একটা অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে পড়ে যাবে, কিন্তু এই সম্পর্ক মেরামত করার দায়িত্বটা এখন যুক্তরাষ্ট্রের, ‘বাণিজ্য যুদ্ধের’ মাধ্যমে যেটা চাপিয়ে দিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন।
এটা ঠিক যে পেন্টাগন সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের ইন্দো-প্রশান্ত কৌশল নিয়ে যে রিপোর্ট প্রকাশ করেছে, সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত অংশীদার হলো ভারত এবং ইরানের ব্যাপারে অন্তত যুক্তরাষ্ট্রের পদাঙ্ক অনুসরণও করেছে তারা। তবে, এটাও নিশ্চিত যে, রাশিয়া ও চীনের সাথে আরও শক্তিশালী মিত্রতা তৈরির মাধ্যমে ক্রমবর্ধমান বহুমেরুর বিশ্বে বড় শক্তিগুলোর সাথে জোটের ক্ষেত্রে নিজেদের পরিধিটা আরও বাড়াচ্ছে ভারত।
ইউরেশিয়ার মধ্যে প্রবেশের মাধ্যমে ভারত শুধু এই অঞ্চলের এবং এখানকার সংযোগ কর্মসূচি থেকে বিশাল অর্থনৈতিক সুবিধাই পাবে না, বরং যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে নিজেকে একটা শক্তির জায়গাতেও নিয়ে যেতে পারবে।
এই যে প্রশ্নটা গুরুত্বপূর্ণ, সেটা হলো: ইউরেশিয়ায় আরও গভীরভাবে জড়িত হওয়া থেকে ভারতকে সরিয়ে রাখতে যুক্তরাষ্ট্র কি করবে, যদি আদৌ কিছু তারা করে? এখন অন্তত, ভারত একটা ঘোষণায় সাক্ষরের সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যেটার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে পরিস্কার ও বহুমুখী বার্তা দেয়া হয়েছে, যেখানে “নিয়ম-ভিত্তিক, স্বচ্ছ, বৈষম্যহীন, উন্মুক্ত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক বহুপাক্ষিক বাণিজ্য সিস্টেমের” আহ্বান জানানো হয়েছে, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার বহুপাক্ষিকতা ও সংরক্ষণবাদের নীতির ভিত্তিতে যেটা গড়ে তোলা হবে।
সম্প্রতি অনুষ্ঠিত এসসিও সম্মেলন বিভিন্নভাবে ভারতের ভবিষ্যত পররাষ্ট্রনীতির গতি প্রকৃতির জন্য অনেক দিক থেকেই একটা অর্থপূর্ণ দিক ঠিক করে দিয়েছে। সম্মেলনের পরে যে যৌথ ঘোষণা দেয়া হয়, সেখানে চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের (বিআরআই) উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করা হয়েছে – যেটাতে ভারত আগে বিরোধিতা করে এসেছে এবং এটাকে ‘ঋণের ফাঁদ’ হিসেবে বর্ণনা করে এসেছে।
যেখানে বিআরআইয়ের প্রশংসা করা হয়েছে, সেখানে যদিও বিশেষভাবে ভারতকে উল্লেখ করা হয়নি, তবে এই প্রশংসা এসেছে একটা যৌথ বিবৃতিতে এবং সেখানে ভারতের কোন আপত্তি বা সমালোচনার কথা উল্লেখ নেই। এটা নয়াদিল্লীর সম্ভাব্য অবস্থান পরিবর্তনের ব্যাপারে অনেক কিছু জানান দিয়েছে, কারণ সমালোচনার জায়গা থেকে তারা বিরোধিতা না করার অবস্থানে এসেছে। প্রধানমন্ত্রী মোদির বক্তৃতাতেও এ বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে, কারণ তার বক্তৃতাতে বিআরআইয়ের কোন উল্লেখই ছিল না, যদিও তিনি ‘আঞ্চলিক সংযোগের’ পক্ষে কথা বলার পাশাপাশি “সার্বভৌমত্বের প্রতি সম্মান, আঞ্চলিক অখণ্ডতা, সুশাসন, স্বচ্ছতা এবং আস্থার” উপর জোর দিয়েছেন – যে সব শর্তের অধীনে ভারত আঞ্চলিক ভূ-অর্থনৈতিক প্রচেষ্টার সাথে যুক্ত হতে পারে।
কিন্তু এই ধরনের প্রচেষ্টার অধিকাংশই এখন পর্যন্ত দ্বিপাক্ষিক পর্যায়ে হচ্ছে। চীনের শি ভারতের মোদির সাথে বৈঠকেও দ্বিপাক্ষিক নীতির উপর জোর দিয়েছেন। শি বলেছেন যে দুই দেশের মধ্যে (দ্বিপাক্ষিক) সহযোগিতা শুধু তাদের উন্নয়নকেই ত্বরান্বিত করবে না, বরং এশিয়া তথা সারা বিশ্বের শান্তি, স্থিতিশীলতা অর্জনে ভূমিকা রাখবে। উহানে গত বছর অনুষ্ঠিত শি-মোদি বৈঠকের দিকে ইঙ্গিত করে শি বলেন যে, ‘উহান স্পিরিট’ চীন-ভারত সম্পর্ককে নতুন মাত্রায় নিয়ে গেছে। তিনি আরও বলেন যে, দুই দেশের মধ্যে আরও ঘনিষ্ঠ উন্নয়ন অংশীদারিত্ব গঠনের জন্য ভারতের সাথে যোগ দিতে প্রস্তুত রয়েছে চীন।
শি জোর দিয়ে বলেন, দুই পক্ষের একটা মৌলিক বিশ্বাসের ব্যাপারে অনড় থাকা উচিত যে, চীন ও ভারত উন্নয়নের একটা সুযোগ এবং তারা একে অন্যের জন্য কোন হুমকি নয়। তিনি আরও বলেন, “তাদেরকে পারস্পরিক আস্থা জোরদার করা, সহযোগিতার দিকে মনোযোগ দেয়া এবং মতপার্থক্যের বিষয়গুলো মেনে নেয়ার মানসিকতা থাকতে হবে, যাতে চীন-ভারত সম্পর্ক আরও ইতিবাচক হিসেবে প্রমাণিত হয় এবং দুই দেশের উন্নয়নের ইতিবাচক শক্তি হিসেবে কাজ করে”।
ভারত ও চীন এখন তাদের সম্পর্কের উন্নয়নের জন্য যে পথে এগুচ্ছে, সেখানে দ্বি-পাক্ষিকতাই মূল বিষয়। চীনের বিআরআইকে চীনের কাছে ছেড়ে দিচ্ছে ভারত এবং নীতিগত বা অন্যভাবে এর বিরোধিতা করছে না। চীন অন্যদিকে ভারতের সাথে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক বাড়াতে প্রস্তুত এবং সীমান্ত বিরোধসহ সকল ইস্যুতে আলোচনার জন্য প্রস্তুত রয়েছে। এই সম্পর্কের প্রভাবটা অসামান্য, যেটার প্রভাব সুদূরপ্রসারী এবং আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক উভয় ক্ষেত্রেই যার প্রভাব পড়বে।
সম্পর্কের নতুন গতিপথের দিকে ইঙ্গিত করে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বলেছেন, “তাই আমরা এটাকে (মোদি-শি’র বিশকেক বৈঠক) ভারতে সরকার গঠনের পর একটা প্রক্রিয়ার সূচনা হিসেবে দেখছি এবং একবিংশ শতক এবং এশিয়া-প্রশান্ত অঞ্চলের বিস্তীর্ণ পরিসরে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে আমরা এখন ভারত-চীন সম্পর্কটিকে বিবেচনা করছি”।
রাশিয়ার পুতিনের সাথেও বৈঠক করেছেন ভারতের মোদি এবং ভারতের সম্পর্ককে নতুন দিকে চালিত করেছেন। সেপ্টেম্বরের শুরুর দিকে ভ্লাদিভস্তকে অনুষ্ঠিতব্য ইস্টার্ন ইকোনমিক ফোরামে প্রধান অতিথি হওয়ার ব্যাপারে পুতিনের আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছেন মোদি। দুই নেতাই আসন্ন জি২০ সম্মেলনে বৈঠক করবেন, এবং পুতিনও এ বছর ভারত সফর করতে পারেন। এগুলো কূটনৈতিক তৎপরতা হিসেবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ, এটা শুধু এসসিও’র নিজস্ব ভূ-রাজনৈতিক মাত্রাকেই সংহত করবে না, বরং এর সদস্য দেশগুলোকেও এগিয়ে নেবে।
রাশিয়া ও চীনের সাথে ভারতের ক্রমবর্ধমান ‘ব্রোমাঞ্চের’ মাধ্যমে বোঝা যাচ্ছে যে কিভাবে তারা বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে নিজেদের অবস্থানে ভারসাম্য আনতে চাচ্ছে, যে বিশ্বটা ক্রমেই একটা বহুমেরুর বিশ্বের দিকে চলেছে। যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্য যুদ্ধ এবং ৫-জি ইন্টারনেট সিস্টেম প্রথম তৈরির মাধ্যমে চীন বিশ্বে ঝড় তুলে দেয়ার পর, বহু দেশের মধ্যে (ভারতও সম্ভবত তাদের মধ্যে রয়েছে) এই বোধোদয় আরও বেড়েছে যে, চীন অবশ্যম্ভাবীভাবে বৈশ্বিক নেতৃত্বের অবস্থানে চলে যাচ্ছে এবং পারস্পরিক উপকারের বাণিজ্যিক ভূগোলোর জন্য তাদের সাথে যোগাযোগ রাখাটা কতটা গুরুত্বপূর্ণ।
সন্দেহ নেই যে, রাশিয়া ও চীনের সাথে ভারতের সম্পর্ক বৃদ্ধির কারণে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে তাদের সম্পর্ক একটা অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে পড়ে যাবে, কিন্তু এই সম্পর্ক মেরামত করার দায়িত্বটা এখন যুক্তরাষ্ট্রের, ‘বাণিজ্য যুদ্ধের’ মাধ্যমে যেটা চাপিয়ে দিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন।
এটা ঠিক যে পেন্টাগন সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের ইন্দো-প্রশান্ত কৌশল নিয়ে যে রিপোর্ট প্রকাশ করেছে, সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত অংশীদার হলো ভারত এবং ইরানের ব্যাপারে অন্তত যুক্তরাষ্ট্রের পদাঙ্ক অনুসরণও করেছে তারা। তবে, এটাও নিশ্চিত যে, রাশিয়া ও চীনের সাথে আরও শক্তিশালী মিত্রতা তৈরির মাধ্যমে ক্রমবর্ধমান বহুমেরুর বিশ্বে বড় শক্তিগুলোর সাথে জোটের ক্ষেত্রে নিজেদের পরিধিটা আরও বাড়াচ্ছে ভারত।
ইউরেশিয়ার মধ্যে প্রবেশের মাধ্যমে ভারত শুধু এই অঞ্চলের এবং এখানকার সংযোগ কর্মসূচি থেকে বিশাল অর্থনৈতিক সুবিধাই পাবে না, বরং যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে নিজেকে একটা শক্তির জায়গাতেও নিয়ে যেতে পারবে।
এই যে প্রশ্নটা গুরুত্বপূর্ণ, সেটা হলো: ইউরেশিয়ায় আরও গভীরভাবে জড়িত হওয়া থেকে ভারতকে সরিয়ে রাখতে যুক্তরাষ্ট্র কি করবে, যদি আদৌ কিছু তারা করে? এখন অন্তত, ভারত একটা ঘোষণায় সাক্ষরের সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যেটার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে পরিস্কার ও বহুমুখী বার্তা দেয়া হয়েছে, যেখানে “নিয়ম-ভিত্তিক, স্বচ্ছ, বৈষম্যহীন, উন্মুক্ত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক বহুপাক্ষিক বাণিজ্য সিস্টেমের” আহ্বান জানানো হয়েছে, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার বহুপাক্ষিকতা ও সংরক্ষণবাদের নীতির ভিত্তিতে যেটা গড়ে তোলা হবে।
No comments