ভয়ঙ্কর মাদক আইস ছড়িয়ে দিচ্ছে আন্তর্জাতিক চক্র by রুদ্র মিজান
দক্ষিণ পূর্ব-ইউরোপের ভয়ঙ্কর মাদক আইস। গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, মাদকটি ছড়িয়ে দিতে কাজ করছে আফ্রিকান কিছু নাগরিক। বিত্তশালী পরিবারের ছেলে-মেয়ে, বিশেষ করে ব্যবসায়ী, শোবিজ জগতের লোক, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেলের শিক্ষার্থীদের টার্গেট করে এই চক্র।
এক গ্রাম আইসের মূল্য ৭ থেকে ১০ হাজার টাকায় বিক্রি করছিলো তারা।
এই চক্রের মধ্যে রয়েছে এক নাইজেরিয়ান। তার সম্পর্কে তথ্য পান মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সদস্যরা। তারপরই মাঠে নামে তারা। আযা আনাইচুকা অনিনুসি নামক ওই নাইজেরিয়ানের সঙ্গে ক্রেতা সেজে যোগাযোগ করা হয় সোর্সের মাধ্যমে। সম্প্রতি আইস বিক্রি করতে হোটেল লা মেরিডিয়ান সংলগ্ন বিমানবন্দর রোডে ক্রেতাবেশী মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের গোয়েন্দা টিমের সঙ্গে সাক্ষাত করতে যায় আযা আনাইচুকা। তাৎক্ষণিকভাবে তাকে আটক করা হয়। এসময় তার কাছ থেকে ৫২২ গ্রাম আইস জব্দ করা হয়।
জিজ্ঞাসাবাদে ওই নাইজেরিয়ান জানান, তিনি ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লেখাপড়া শেষ করে এখানেই গার্মেন্টের ব্যবসা করছিলেন। তবে অল্প সময়ে বিপুল অর্থের মালিক হতে বিভিন্ন দেশে ভয়ঙ্কর এই মাদক ছড়িয়ে দিতে কাজ করছিলেন তিনি। বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া ভ্রমণ করে এসব দেশে আইস ছড়িয়ে দিতে চেষ্টা করেছেন। উগান্ডা থেকে বিশেষ কৌশলে তার কাছে এই মাদক পাঠানো হতো।
তবে ভয়ঙ্কর এই মাদকটির সন্ধান পাওয়া গেছে আরও আগেই। একজন ইয়াবা বিক্রেতাকে অনুসরণ করছিলো মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের গোয়েন্দা টিম। মোহাম্মদপুর, আদাবর, শ্যামলী, মিরপুর এলাকায় রয়েছে ওই মাদক ব্যবসায়ীর বিশেষ নেটওয়ার্ক। গত ২৬শে ফেব্রুয়ারি রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে ইয়াবা বিক্রেতা রাকিব উদ্দিনকে ইয়াবাসহ আটক করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের টিম। ওই সময়ে রাকিবের বাসায় ১৬০ পিস ইয়াবার সঙ্গে পাওয়া যায় পাঁচ গ্রাম নতুন এক মাদক। যা দেখতে অনেকটা লবণের মতো। বিদেশে প্রশিক্ষিত মাদকদ্রব্য অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক খুরশিদ আলম তা দেখেই বুঝতে পারেন এটি দক্ষিণ পূর্ব-ইউরোপের ভয়ঙ্কর মাদক আইস। কোথাও কোথাও এটিকে ক্রিস্টিল ম্যাথ নামে চিনে অনেকে। শক্তি ও যৌন উত্তেজনা বাড়ানোর জন্য তাপ দিয়ে এর বাষ্প শ্বাসের সঙ্গে গ্রহণ করে মাদকসেবীরা। এটি মাদকসেবীদের রক্তে মিশে যায়। পর্যায়ক্রমে এটি নেশায় পরিণত হয়। নেশা করতে গিয়ে এক পর্যায়ে নিজের শরীর, যৌনশক্তি সবই হারাতে হয় সেবনকারীদের। নটরডেম কলেজের এক সময়ের মেধাবী এক শিক্ষার্থী হতাশা থেকে মাদকে আসক্ত হন। তারপর নিজেই শুরু করেন মাদক বাণিজ্য।
আইস সম্পর্কে তার কাছ থেকে জানা যায় চাঞ্চল্যকর তথ্য। এই আইস বাণিজ্যের মূল হোতা ঝিগাতলার ইঞ্জিনিয়ার রাশিদুজ্জামানের ছেলে হাসিব মোহাম্মদ রশিদ (৩২)। ওই শিক্ষার্থীর দেয়া তথ্যানুসারেই ঝিগাতলার ৭/এ সড়কের ৬২ নম্বর বাড়িতে অভিযান চালানো হয়। হাসিবদের নিজেদের ওই বাড়ির বেইজমেন্টে ছিলো আইস তৈরির কারখানা। সেখানে ছিলো আইস ও এমডিএমএ সহ সিউডোএফ্রিড্রিন এক্সটাকশন সুবিধা সম্বলিত ডিস্টিলেশন চেম্বার। ওই অভিযানেই আইস নামক মাদক বাংলাদেশে প্রথম সনাক্ত হয় বলে জানান মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। তবে হাসিব পলাতক থাকায় তখনও তাকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। পরবর্তীতে গত ১৮ই মার্চ মিরপুর থেকে গ্রেপ্তার করা হয় তাকে। জিজ্ঞাসাবাদে হাসিব জানান, মালয়েশিয়ার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করেছেন তিনি। দেশে আসার পর অনলাইন ও বিদেশী বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমেই সময় কাটতো তার। ডার্ক নেটের মাধ্যমেই আইস তৈরি সম্পর্কে শিক্ষা নিয়ে নিজেই কারখানা তৈরি করে ইয়াবার চেয়ে ভয়ঙ্কর এই মাদক তৈরি করছিলেন হাসিব।
এসব বিষয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক খুরশিদ আলম বলেন, আর্ন্তজাতিক মাদক ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশকে টার্গেট করে নানা অপতৎপরতা চালাচ্ছে। এ বিষয়ে আমরা সতর্ক রয়েছি। যে কারণে আইসের মতো ভয়ঙ্কর মাদক ছড়িয়ে দেয়ার আগেই জড়িতদের আটক করা সম্ভব হয়েছে।
No comments