সীমান্ত দিয়ে ঢুকছে মাদক, অস্ত্র, জড়িত শতাধিক সিন্ডিকেট by রুদ্র মিজান
মারণাস্ত্র
ও মরণ নেশা মাদক। নানা কৌশলে এই মারণাস্ত্র ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে দেশজুড়ে।
সীমান্তের কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্য দিয়েই ঢুকছে অস্ত্র ও মাদক। জড়িত
রয়েছে শক্তিশালী সিন্ডিকেট। মাঝে-মধ্যে আটক হচ্ছে মাদক ও অস্ত্রের চালান।
গত এক বছরে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও মাদক দেশে ঢুকেছে।
সীমান্ত পারি দিয়ে ফল, সবজি, মাছসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকে করে মাদক ছড়িয়ে দেয়া হয় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। একই পদ্ধতিতে অবৈধপথে আমদানি করা হয় অস্ত্র। বৈধ অস্ত্র নিয়ে গবেষণাকারী প্রতিষ্ঠান ‘বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টনারশিপ সেন্টার’ এর তথ্যানুসারে, দেশে অবৈধ অস্ত্র ব্যবসায় ১২৮টি শক্তিশালী সিন্ডিকেট সক্রিয়।
দেশে আসা এসব অস্ত্রের বেশির ভাগই পার্শ্ববর্তী দেশের তৈরি।
প্রায়ই র্যাব, বিজিবিসহ অন্যান্য সংস্থার অভিযানে জব্দ করা হচ্ছে অস্ত্র। র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)’র গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান মানবজমিনকে জানান, চোরাইপথে নানা কৌশলে অবৈধ অস্ত্র আমদানি করা হয়। প্রায়ই অস্ত্র জব্দ করা হচ্ছে। সাধারণত এসব অস্ত্র কোনো কারখানায় তৈরি হয় না। পার্শ্ববর্তী দেশে স্থানীয়ভাবে বিভিন্ন ওয়ার্কশপে তৈরি করা হয়।
এসব অস্ত্র যাতে দেশে না আসতে পারে, অস্ত্রের চালান ছড়িয়ে না যায় এজন্য র্যাব তৎপর রয়েছে বলে জানান তিনি।
র্যাব সূত্রে জানা গেছে, দেশেও তৈরি হচ্ছে বিভিন্ন অস্ত্র। চট্টগ্রামের দুর্গম পাহাড়ে দেশি প্রযুক্তি ব্যবহার করে অস্ত্র তৈরি করা হয়। কম দাম ও সহজলভ্য হওয়ায় এসব অস্ত্রের চাহিদা রয়েছে। এর মধ্যে দেশি এলজি, পিস্তল, পাইপগান, বন্দুক উল্লেখযোগ্য। এসব অস্ত্র যাচ্ছে বিভিন্ন প্রভাবশালীদের হাতে। যাদের বেশির ভাগই রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত। এ ছাড়াও সন্ত্রাসী, জঙ্গিদের হাতে যাচ্ছে এসব অস্ত্র।
গোয়েন্দা সূত্র জানায়, স্থল ও জলপথের অর্ধশতাধিক রুটে বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্রের চোরাচালান আনা-নেয়া করা হচ্ছে। অস্ত্র ও মাদকের সবচেয়ে বড় চালানগুলো ঢুকছে কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়া সীমান্ত দিয়ে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপরতা বাড়ালে ওই চক্রটিও রুট পরিবর্তন করে। যশোরের চৌগাছা, ঝিকরগাছা, শার্শা, দর্শনা, শাহজাদপুর, হিজলা, আন্দুলিয়া, মান্দারতলা, বেনাপোলের সীমান্তের গোগা, কায়বা, শিকারপুর, দৌলতপুর, দিনাজপুরের হিলি, খাগড়াছরির দীঘিনালা, পানছড়ি, মাটিরাঙ্গা, রাঙ্গামাটির বরকল ও বাঘাইছড়ি, বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার ভোলা নদী হয়ে এবং মোরেলগঞ্জ ও কচুয়া উপজেলা দিয়ে বলেশ্বরী নদীপথে সীমান্ত দিয়ে অবৈধ অস্ত্র ও মাদক দেশে ঢুকছে।
গত বছরে বিপুল অস্ত্র জব্দ করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। এর মধ্যে রয়েছে ৭৭টি পিস্তল, আটটি ওয়ান সুটার গান, একটি একে-৪৭ রাইফেল, তিনটি রিভলবার, ১১টি এয়ার গান, তিনটি পাইপ গান, আটটি ওয়ান সুটার পিস্তল, একটি দুইনলা বন্দুক, ৭৬টি ম্যাগাজিন, ৩৭২ রাউন্ড গুলি, ৫৬টি ককটেল, ১২টি বিভিন্ন প্রকারের বোমা, ৫০৪ কেজি সালফার, ১০টি ‘নিউজেল-৯০’ (বিস্ফোরক), ১৭টি ডেটোনেটর, ২৮ কেজি ১০০ গ্রাম গান পাউডার।
এর মধ্যে নভেম্বরে জব্দ করা হয়েছে ১৮টি পিস্তল। ধারণা করা হচ্ছে, নির্বাচনকে কেন্দ্র করেই একটি চক্র অস্ত্রের বাণিজ্যে তৎপরতা বৃদ্ধি করেছিল। গত বছরে ছোট অস্ত্রের পাশাপাশি বড় ধরনের অস্ত্র দেশে আনা হয়েছে। এই অস্ত্রের পরিমাণ কত হতে পারে তার কোনো পরিসংখ্যান না থাকলেও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অবৈধ পথে আসা সকল অস্ত্র জব্দ করা সম্ভব না।
গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, একাধিক প্রভাবশালী চক্র জড়িত রয়েছে অস্ত্র আমদানিতে। দেশের বাইরে থেকে আমদানি করা বিভিন্ন অস্ত্র চট্টগ্রাম হয়ে দেশের বিভিন্ন এলাকা ও ভারতে পাঠায় একটি চক্র। আবার ভারত থেকেও অবৈধ অস্ত্র আমদানি করে তারা। অস্ত্রগুলো চড়া দামে বিক্রি হয় দেশের বাজারে। সীমান্ত এলাকার দর্শনা, শাঁকারা, চাঁপাই নবাবগঞ্জ, যশোর সীমান্ত এলাকা থেকে মূলত ফল ও বিভিন্ন ধরনের পণ্যের ট্রাকসহ নানা মাধ্যমে আনা হয় অবৈধ অস্ত্রের চালান। ছোট অস্ত্রগুলো পাচার করতে তেমন বেগ পেতে হয় না চক্রের সদস্যদের। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজর এড়াতে বিভিন্ন সবজি ও মৌসুমি ফলের ভেতরে ঢুকিয়েও পাচার করা হয় অস্ত্র। সীমান্ত এলাকা থেকে রাজধানীতে ঢুকতে প্রতিটি অস্ত্রের পরিবহন ব্যয় হয় পাঁচ-সাত হাজার টাকা। আন্ডারগ্রাউন্ডের এসব অস্ত্রের বেশির ভাগই ভারত, ইতালি, চিন, ব্রাজিল, আমেরিকা, জার্মানি ও আর্মেনিয়ার তৈরি।
গোয়েন্দারা জানান, ছোট অস্ত্রগুলো ধরতে বেশ বেগ পেতে হয়। অস্ত্র তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে আনা হয়। মূল হোতারা থাকে ধরাছোঁয়ার বাইরে। অস্ত্র চোরাচালান আটক হলেও মূল ব্যবসায়ীদের পরিচয় পর্যন্ত উদঘাটন করা দুষ্কর হয়ে যায়। আখের ট্রাকে, পেঁপে ও তরমুজের ভেতরে ঢুকিয়ে অস্ত্র আনা হয়। এমনকি কাঁচা তরকারির গাড়িতে, শিশুদের স্কুলব্যাগে, বাসের সিটের নিচসহ নানা কৌশলে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে নেয়া হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সন্দেহ এড়াতে অস্ত্র চোরাকারবারিরা নারীদেরকেও ব্যবহার করে। শরীরের স্পর্শকাতর স্থানে বিশেষভাবে ছোট অস্ত্রগুলো রেখে তা পরিবহন করছে।
গত বছরে বিপুল মাদক জব্দ করেছে বিজিবি। জব্দকৃত মাদকের মধ্যে রয়েছে ১,২৬,৫৮,৫১৮ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট, ৩,৫৯,১৫০ বোতল ফেনসিডিল, ৭৯,২৮৬ বোতল বিদেশি মদ, ৪,৬০৮ লিটার বাংলা মদ, ৩৬,৪৩৫ ক্যান বিয়ার, ১৩,৬৮২ কেজি গাঁজা, ৩৩ কেজি ৩৫১ গ্রাম হেরোইন, ৮,৩৪,৬৯৫ পিস এনেগ্রা-সেনেগ্রা ট্যাবলেট, ১৯,৪৪৮টি নেশাজাতীয় ইনজেকশন এবং ৪৭,০৩,৮২৪ পিস অন্যান্য ট্যাবলেট। বিজিবি’র অভিযানে মাদক পাচারসহ অন্যান্য চোরাচালানে জড়িত থাকার অভিযোগে ২,৭০৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। অস্ত্রের মতো একই কায়দায় আনা হচ্ছে মাদক। সীমান্ত এলাকার বাসিন্দারা জানান, অনেক সময় ওপার থেকে বস্তায় ভরে তারকাঁটার ওপর দিয়ে মাদক এপারে পাঠিয়ে দেয় চক্রের সদস্যরা। এরকম নানা কৌশলে আসছে অস্ত্র ও মাদক।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, সমাজবিজ্ঞানী তৌহিদুল হক বলেন, আধিপত্য বিস্তার ও রাজনৈতিক শক্তি প্রদর্শনের জন্য বেশির ভাগ অবৈধ অস্ত্র দেশে আনা হচ্ছে। এছাড়াও ছিনতাইকারী, জঙ্গি ও ডাকাতদের হাতে এসব অবৈধ অস্ত্র চলে যাচ্ছে। এজন্য প্রথমেই রাজনৈতিক দলের শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দকে এক্ষেত্রে দলের নেতাকর্মীদের কঠোর নির্দেশনা দিতে হবে। কেউ যেন অবৈধ অস্ত্র ব্যবহার না করে। পাশাপাশি রাষ্ট্রকে নিরাপত্তা দিতে হবে। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। সবাই সচেতনভাবে দেশপ্রেম নিয়ে এগিয়ে গেলে অবৈধ অস্ত্র ও মাদক প্রতিরোধ সম্ভব বলে মনে করেন তিনি।
সীমান্ত পারি দিয়ে ফল, সবজি, মাছসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকে করে মাদক ছড়িয়ে দেয়া হয় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। একই পদ্ধতিতে অবৈধপথে আমদানি করা হয় অস্ত্র। বৈধ অস্ত্র নিয়ে গবেষণাকারী প্রতিষ্ঠান ‘বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টনারশিপ সেন্টার’ এর তথ্যানুসারে, দেশে অবৈধ অস্ত্র ব্যবসায় ১২৮টি শক্তিশালী সিন্ডিকেট সক্রিয়।
দেশে আসা এসব অস্ত্রের বেশির ভাগই পার্শ্ববর্তী দেশের তৈরি।
প্রায়ই র্যাব, বিজিবিসহ অন্যান্য সংস্থার অভিযানে জব্দ করা হচ্ছে অস্ত্র। র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)’র গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান মানবজমিনকে জানান, চোরাইপথে নানা কৌশলে অবৈধ অস্ত্র আমদানি করা হয়। প্রায়ই অস্ত্র জব্দ করা হচ্ছে। সাধারণত এসব অস্ত্র কোনো কারখানায় তৈরি হয় না। পার্শ্ববর্তী দেশে স্থানীয়ভাবে বিভিন্ন ওয়ার্কশপে তৈরি করা হয়।
এসব অস্ত্র যাতে দেশে না আসতে পারে, অস্ত্রের চালান ছড়িয়ে না যায় এজন্য র্যাব তৎপর রয়েছে বলে জানান তিনি।
র্যাব সূত্রে জানা গেছে, দেশেও তৈরি হচ্ছে বিভিন্ন অস্ত্র। চট্টগ্রামের দুর্গম পাহাড়ে দেশি প্রযুক্তি ব্যবহার করে অস্ত্র তৈরি করা হয়। কম দাম ও সহজলভ্য হওয়ায় এসব অস্ত্রের চাহিদা রয়েছে। এর মধ্যে দেশি এলজি, পিস্তল, পাইপগান, বন্দুক উল্লেখযোগ্য। এসব অস্ত্র যাচ্ছে বিভিন্ন প্রভাবশালীদের হাতে। যাদের বেশির ভাগই রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত। এ ছাড়াও সন্ত্রাসী, জঙ্গিদের হাতে যাচ্ছে এসব অস্ত্র।
গোয়েন্দা সূত্র জানায়, স্থল ও জলপথের অর্ধশতাধিক রুটে বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্রের চোরাচালান আনা-নেয়া করা হচ্ছে। অস্ত্র ও মাদকের সবচেয়ে বড় চালানগুলো ঢুকছে কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়া সীমান্ত দিয়ে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপরতা বাড়ালে ওই চক্রটিও রুট পরিবর্তন করে। যশোরের চৌগাছা, ঝিকরগাছা, শার্শা, দর্শনা, শাহজাদপুর, হিজলা, আন্দুলিয়া, মান্দারতলা, বেনাপোলের সীমান্তের গোগা, কায়বা, শিকারপুর, দৌলতপুর, দিনাজপুরের হিলি, খাগড়াছরির দীঘিনালা, পানছড়ি, মাটিরাঙ্গা, রাঙ্গামাটির বরকল ও বাঘাইছড়ি, বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার ভোলা নদী হয়ে এবং মোরেলগঞ্জ ও কচুয়া উপজেলা দিয়ে বলেশ্বরী নদীপথে সীমান্ত দিয়ে অবৈধ অস্ত্র ও মাদক দেশে ঢুকছে।
গত বছরে বিপুল অস্ত্র জব্দ করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। এর মধ্যে রয়েছে ৭৭টি পিস্তল, আটটি ওয়ান সুটার গান, একটি একে-৪৭ রাইফেল, তিনটি রিভলবার, ১১টি এয়ার গান, তিনটি পাইপ গান, আটটি ওয়ান সুটার পিস্তল, একটি দুইনলা বন্দুক, ৭৬টি ম্যাগাজিন, ৩৭২ রাউন্ড গুলি, ৫৬টি ককটেল, ১২টি বিভিন্ন প্রকারের বোমা, ৫০৪ কেজি সালফার, ১০টি ‘নিউজেল-৯০’ (বিস্ফোরক), ১৭টি ডেটোনেটর, ২৮ কেজি ১০০ গ্রাম গান পাউডার।
এর মধ্যে নভেম্বরে জব্দ করা হয়েছে ১৮টি পিস্তল। ধারণা করা হচ্ছে, নির্বাচনকে কেন্দ্র করেই একটি চক্র অস্ত্রের বাণিজ্যে তৎপরতা বৃদ্ধি করেছিল। গত বছরে ছোট অস্ত্রের পাশাপাশি বড় ধরনের অস্ত্র দেশে আনা হয়েছে। এই অস্ত্রের পরিমাণ কত হতে পারে তার কোনো পরিসংখ্যান না থাকলেও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অবৈধ পথে আসা সকল অস্ত্র জব্দ করা সম্ভব না।
গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, একাধিক প্রভাবশালী চক্র জড়িত রয়েছে অস্ত্র আমদানিতে। দেশের বাইরে থেকে আমদানি করা বিভিন্ন অস্ত্র চট্টগ্রাম হয়ে দেশের বিভিন্ন এলাকা ও ভারতে পাঠায় একটি চক্র। আবার ভারত থেকেও অবৈধ অস্ত্র আমদানি করে তারা। অস্ত্রগুলো চড়া দামে বিক্রি হয় দেশের বাজারে। সীমান্ত এলাকার দর্শনা, শাঁকারা, চাঁপাই নবাবগঞ্জ, যশোর সীমান্ত এলাকা থেকে মূলত ফল ও বিভিন্ন ধরনের পণ্যের ট্রাকসহ নানা মাধ্যমে আনা হয় অবৈধ অস্ত্রের চালান। ছোট অস্ত্রগুলো পাচার করতে তেমন বেগ পেতে হয় না চক্রের সদস্যদের। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজর এড়াতে বিভিন্ন সবজি ও মৌসুমি ফলের ভেতরে ঢুকিয়েও পাচার করা হয় অস্ত্র। সীমান্ত এলাকা থেকে রাজধানীতে ঢুকতে প্রতিটি অস্ত্রের পরিবহন ব্যয় হয় পাঁচ-সাত হাজার টাকা। আন্ডারগ্রাউন্ডের এসব অস্ত্রের বেশির ভাগই ভারত, ইতালি, চিন, ব্রাজিল, আমেরিকা, জার্মানি ও আর্মেনিয়ার তৈরি।
গোয়েন্দারা জানান, ছোট অস্ত্রগুলো ধরতে বেশ বেগ পেতে হয়। অস্ত্র তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে আনা হয়। মূল হোতারা থাকে ধরাছোঁয়ার বাইরে। অস্ত্র চোরাচালান আটক হলেও মূল ব্যবসায়ীদের পরিচয় পর্যন্ত উদঘাটন করা দুষ্কর হয়ে যায়। আখের ট্রাকে, পেঁপে ও তরমুজের ভেতরে ঢুকিয়ে অস্ত্র আনা হয়। এমনকি কাঁচা তরকারির গাড়িতে, শিশুদের স্কুলব্যাগে, বাসের সিটের নিচসহ নানা কৌশলে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে নেয়া হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সন্দেহ এড়াতে অস্ত্র চোরাকারবারিরা নারীদেরকেও ব্যবহার করে। শরীরের স্পর্শকাতর স্থানে বিশেষভাবে ছোট অস্ত্রগুলো রেখে তা পরিবহন করছে।
গত বছরে বিপুল মাদক জব্দ করেছে বিজিবি। জব্দকৃত মাদকের মধ্যে রয়েছে ১,২৬,৫৮,৫১৮ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট, ৩,৫৯,১৫০ বোতল ফেনসিডিল, ৭৯,২৮৬ বোতল বিদেশি মদ, ৪,৬০৮ লিটার বাংলা মদ, ৩৬,৪৩৫ ক্যান বিয়ার, ১৩,৬৮২ কেজি গাঁজা, ৩৩ কেজি ৩৫১ গ্রাম হেরোইন, ৮,৩৪,৬৯৫ পিস এনেগ্রা-সেনেগ্রা ট্যাবলেট, ১৯,৪৪৮টি নেশাজাতীয় ইনজেকশন এবং ৪৭,০৩,৮২৪ পিস অন্যান্য ট্যাবলেট। বিজিবি’র অভিযানে মাদক পাচারসহ অন্যান্য চোরাচালানে জড়িত থাকার অভিযোগে ২,৭০৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। অস্ত্রের মতো একই কায়দায় আনা হচ্ছে মাদক। সীমান্ত এলাকার বাসিন্দারা জানান, অনেক সময় ওপার থেকে বস্তায় ভরে তারকাঁটার ওপর দিয়ে মাদক এপারে পাঠিয়ে দেয় চক্রের সদস্যরা। এরকম নানা কৌশলে আসছে অস্ত্র ও মাদক।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, সমাজবিজ্ঞানী তৌহিদুল হক বলেন, আধিপত্য বিস্তার ও রাজনৈতিক শক্তি প্রদর্শনের জন্য বেশির ভাগ অবৈধ অস্ত্র দেশে আনা হচ্ছে। এছাড়াও ছিনতাইকারী, জঙ্গি ও ডাকাতদের হাতে এসব অবৈধ অস্ত্র চলে যাচ্ছে। এজন্য প্রথমেই রাজনৈতিক দলের শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দকে এক্ষেত্রে দলের নেতাকর্মীদের কঠোর নির্দেশনা দিতে হবে। কেউ যেন অবৈধ অস্ত্র ব্যবহার না করে। পাশাপাশি রাষ্ট্রকে নিরাপত্তা দিতে হবে। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। সবাই সচেতনভাবে দেশপ্রেম নিয়ে এগিয়ে গেলে অবৈধ অস্ত্র ও মাদক প্রতিরোধ সম্ভব বলে মনে করেন তিনি।
No comments