নির্বাচনের ফলকে কীভাবে দেখছেন ভারতীয় গবেষকরা?
বাংলাদেশে
গত ৩০শে ডিসেম্বরের নির্বাচন যে 'সুষ্ঠু ও অবাধ হয়নি' এবং তার ফলাফলও যে
'অবিশ্বাস্য' - তা নিয়ে সন্দেহের কোনও অবকাশ নেই, বলছেন ভারতের রাজধানী
দিল্লির কিছু গবেষক ও বিশ্লেষক।
তাদের একজনের কথা: 'এ নির্বাচনে রিগিং না হলেও বিরোধীরা কম আসনই পেতেন, কিন্তু তার সংখ্যা সাত হতো না।'
দিল্লিতে এলেই বাংলাদেশের রাজনীতিবিদরা যে থিঙ্কট্যাঙ্কগুলোতে নিয়মিত যান, এমন একাধিক প্রতিষ্ঠানের গবেষকরা বিবিসিকে বলছেন এ কথাই - যার সাথে এ ব্যাপারে ভারতের সরকারি অবস্থান পুরোপুরি মেলে না।
ওই বিতর্কিত নির্বাচনের পর প্রথম যে বিদেশি সরকারপ্রধান প্রধানমন্ত্রী টেলিফোনে শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়েছিলেন, তিনি নরেন্দ্র মোদী।
সেটাকে বাংলাদেশ নির্বাচনী গ্রহণযোগ্যতার স্বীকৃতি হিসেবেই তুলে ধরেছে। তবে ভারতের শীর্ষস্থানীয় স্ট্র্যাটেজিক থিঙ্কট্যাঙ্কগুলোর বিশ্লেষণ কিন্তু দিল্লির এই সরকারি অবস্থানের সঙ্গে পুরোপুরি মিলছে না।
দিল্লির অন্যতম প্রধান দুটি থিঙ্কট্যাঙ্ক বিবেকানন্দ ইন্টারন্যাশনাল ফাউন্ডেশন ও অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন - বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন দলের রাজনীতিবিদরা ভারত সফরে এলেও তাদের প্রায়শই এই দুটি গবেষণাকেন্দ্রে আলোচনায় অংশ নিতে দেখা যায়।
উভয় প্রতিষ্ঠানই সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রেখে চলে - তবে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক নির্বাচন নিয়ে তাদের মূল্যায়ন কিন্তু রীতিমতো সমালোচনামূলক।
বিবেকানন্দ ইন্টারন্যাশনাল ফাউন্ডেশনের সিনিয়র ফেলো শ্রীরাধা দত্ত যেমন পরিষ্কার বলছেন, বাংলাদেশে বিরোধী জোট হয়তো এমনিতেও ক্ষমতায় আসতে পারত না - কিন্তু নির্বাচনী কারচুপির কারণেই তাদের আসন সংখ্যা এতটা কম হয়েছে।
তার কথায়, "রিগিং তো হয়েছে একশোবার - ভোটে রিগিং না-হলেও অবশ্য বিরোধীরা কম আসনই পেতেন, কিন্তু এরকম হাস্যকর সাতটা আসনে এসে তারা ঠেকতেন না।"
"আসলে যদি ধরি বাংলাদেশে এক-তৃতীয়াংশ আওয়ামী লীগের, এক-তৃতীয়াংশ বিএনপির কমিটেড ভোট - আর বাকিটা সুইং ভোট, যার মধ্যে এবার প্রচুর তরুণ ভোটার ছিলেন - সেই সুইং ভোটটা শেখ হাসিনা এবার একেবারেই বিরোধী জোটের দিকে যেতে দেননি!"
"তা ছাড়া বিরোধী জোটে নেতৃত্বের সঙ্কটও ছিল প্রবলভাবে। তাদের প্রধান নেত্রী জেলে, তার ছেলে লন্ডনে - আর কামাল হোসেন যতই আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন জুরিস্ট হোন তাকে দেখে দেশের মানুষ ভোট দেয় না" , বলছিলেন শ্রীরাধা দত্ত।
ভারতে ক্ষমতাসীন বিজেপির আদর্শিক অভিভাবক বলে যাদের ধরা হয়, সেই আরএসএসের মুখপত্র 'দ্য অর্গানাইজারে'ও এই বিষয়ে একটি নিবন্ধ লিখেছেন ড: দত্ত।
সেখানেও তিনি সতর্ক করে দিয়েছেন, এই ধরনের একতরফা নির্বাচন স্বল্পমেয়াদে ভারতের স্বার্থ রক্ষা করলেও দীর্ঘমেয়াদে কিন্তু বিপর্যয় বয়ে আনতে পারে।
অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের সিনিয়র ফেলো জয়িতা ভট্টাচার্যর আবার ধারণা ভোটের ফল বেশ আশ্চর্যজনক হলেও বাংলাদেশের মানুষ আসলে আওয়ামী লীগের উন্নয়নের ন্যারেটিভটাই গ্রহণ করেছে।
তিনি বিবিসিকে বলছিলেন, "শেখ হাসিনা যেরকম বিপুল গরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় এসেছেন, ৯৫ শতাংশরও বেশি আসন পেয়েছেন সেটা সবাইকেই আশ্চর্য করেছে কোনও সন্দেহ নেই।"
"তবে আমাদের যেটা মনে হয়েছে, বাংলাদেশের মানুষ স্থিতিশীলতাই চান - এবং তাদের দেশ অর্থনৈতিক উন্নতির যে ধারায় এগিয়ে চলেছে সেটাকে তারা কোনওভাবে ডিসটার্ব করতে চান না। ২০১৪ সালের পর থেকে আসলে সেদেশের মানুষের রাজনৈতিক ফোকাসটাই বদলে গেছে।"
"তা ছাড়া বিরোধী জোট শক্তিশালী হলে তারা সরকারের সামনে যে ধরনের চ্যালেঞ্জ খাড়া করতে পারত তার ছিটেফোঁটা ক্ষমতাও এখন তাদের নেই। ফলে শেখ হাসিনা আরও অন্তত পাঁচ বছর নিশ্চিন্তে সরকার চালাতে পারবেন বলেই মনে হচ্ছে", বলছিলেন মিস ভট্টাচার্য।
সুতরাং বিরোধী জোটের দুর্বলতার কারণে শেখ হাসিনা সরকার এবারেও অনায়াসে মেয়াদ পূর্ণ করতে পারবে বলেই ভারতীয় গবেষকদের ধারণা।
কিন্তু ৩০শে ডিসেম্বরের নির্বাচনকে ঘিরে অনেক প্রশ্ন থাকলেও ভারত যেভাবে আগ বাড়িয়ে ও তড়িঘড়ি চীনেরও আগে সেটাকে স্বীকৃতি দিয়েছে, শ্রীরাধা দত্ত সেটাকে সমর্থন করতে পারছেন না।
"আমি তো বলব এটা একটা অদ্ভুত সিদ্ধান্ত - আমরা সবাই জানি এটা একটা একতরফা নির্বাচন - তারপরও যেভাবে চীনকে টেক্কা দিতে আমরা আগেভাগে তাকে বৈধতা দিতে গেলাম সেটা আমি তো বলব বেশ বাড়াবাড়িই হয়েছে।"
"২০১৪ সালের নির্বাচনের পরও আমরা শেখ হাসিনার সঙ্গে ঠিক একই জিনিসই করেছিলাম", বলছিলেন ড: দত্ত।
বাংলাদেশের সাম্প্রতিক নির্বাচন যে বিতর্কমুক্ত নয়, সে কথা স্বীকার করেছে দিল্লির আর একটি থিঙ্কট্যাঙ্ক ইনস্টিটিউট অব ডিফেন্স স্টাডিজ অ্যান্ড অ্যানালিসিসও।
তাদের মন্তব্য প্রতিবেদেনও বলা হয়েছে, বাংলাদেশের গণতন্ত্র আসলে আজ অবধি এমন একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনই গড়ে তুলতে পারেনি যাকে কোনও বিরোধী দল ভরসা করতে পারে।
তবে নির্বাচন যতই ত্রুটিপূর্ণ হোক, ঢাকার ক্ষমতায় শেখ হাসিনাই যে ভারতের জন্য সেরা বাজি ও একমাত্র অপশন - তা নিয়ে এই থিঙ্কট্যাঙ্কগুলোর মধ্যে কোনও মতবিরোধ নেই।
তাদের একজনের কথা: 'এ নির্বাচনে রিগিং না হলেও বিরোধীরা কম আসনই পেতেন, কিন্তু তার সংখ্যা সাত হতো না।'
দিল্লিতে এলেই বাংলাদেশের রাজনীতিবিদরা যে থিঙ্কট্যাঙ্কগুলোতে নিয়মিত যান, এমন একাধিক প্রতিষ্ঠানের গবেষকরা বিবিসিকে বলছেন এ কথাই - যার সাথে এ ব্যাপারে ভারতের সরকারি অবস্থান পুরোপুরি মেলে না।
ওই বিতর্কিত নির্বাচনের পর প্রথম যে বিদেশি সরকারপ্রধান প্রধানমন্ত্রী টেলিফোনে শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়েছিলেন, তিনি নরেন্দ্র মোদী।
সেটাকে বাংলাদেশ নির্বাচনী গ্রহণযোগ্যতার স্বীকৃতি হিসেবেই তুলে ধরেছে। তবে ভারতের শীর্ষস্থানীয় স্ট্র্যাটেজিক থিঙ্কট্যাঙ্কগুলোর বিশ্লেষণ কিন্তু দিল্লির এই সরকারি অবস্থানের সঙ্গে পুরোপুরি মিলছে না।
দিল্লির অন্যতম প্রধান দুটি থিঙ্কট্যাঙ্ক বিবেকানন্দ ইন্টারন্যাশনাল ফাউন্ডেশন ও অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন - বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন দলের রাজনীতিবিদরা ভারত সফরে এলেও তাদের প্রায়শই এই দুটি গবেষণাকেন্দ্রে আলোচনায় অংশ নিতে দেখা যায়।
উভয় প্রতিষ্ঠানই সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রেখে চলে - তবে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক নির্বাচন নিয়ে তাদের মূল্যায়ন কিন্তু রীতিমতো সমালোচনামূলক।
বিবেকানন্দ ইন্টারন্যাশনাল ফাউন্ডেশনের সিনিয়র ফেলো শ্রীরাধা দত্ত যেমন পরিষ্কার বলছেন, বাংলাদেশে বিরোধী জোট হয়তো এমনিতেও ক্ষমতায় আসতে পারত না - কিন্তু নির্বাচনী কারচুপির কারণেই তাদের আসন সংখ্যা এতটা কম হয়েছে।
তার কথায়, "রিগিং তো হয়েছে একশোবার - ভোটে রিগিং না-হলেও অবশ্য বিরোধীরা কম আসনই পেতেন, কিন্তু এরকম হাস্যকর সাতটা আসনে এসে তারা ঠেকতেন না।"
"আসলে যদি ধরি বাংলাদেশে এক-তৃতীয়াংশ আওয়ামী লীগের, এক-তৃতীয়াংশ বিএনপির কমিটেড ভোট - আর বাকিটা সুইং ভোট, যার মধ্যে এবার প্রচুর তরুণ ভোটার ছিলেন - সেই সুইং ভোটটা শেখ হাসিনা এবার একেবারেই বিরোধী জোটের দিকে যেতে দেননি!"
"তা ছাড়া বিরোধী জোটে নেতৃত্বের সঙ্কটও ছিল প্রবলভাবে। তাদের প্রধান নেত্রী জেলে, তার ছেলে লন্ডনে - আর কামাল হোসেন যতই আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন জুরিস্ট হোন তাকে দেখে দেশের মানুষ ভোট দেয় না" , বলছিলেন শ্রীরাধা দত্ত।
ভারতে ক্ষমতাসীন বিজেপির আদর্শিক অভিভাবক বলে যাদের ধরা হয়, সেই আরএসএসের মুখপত্র 'দ্য অর্গানাইজারে'ও এই বিষয়ে একটি নিবন্ধ লিখেছেন ড: দত্ত।
সেখানেও তিনি সতর্ক করে দিয়েছেন, এই ধরনের একতরফা নির্বাচন স্বল্পমেয়াদে ভারতের স্বার্থ রক্ষা করলেও দীর্ঘমেয়াদে কিন্তু বিপর্যয় বয়ে আনতে পারে।
অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের সিনিয়র ফেলো জয়িতা ভট্টাচার্যর আবার ধারণা ভোটের ফল বেশ আশ্চর্যজনক হলেও বাংলাদেশের মানুষ আসলে আওয়ামী লীগের উন্নয়নের ন্যারেটিভটাই গ্রহণ করেছে।
তিনি বিবিসিকে বলছিলেন, "শেখ হাসিনা যেরকম বিপুল গরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় এসেছেন, ৯৫ শতাংশরও বেশি আসন পেয়েছেন সেটা সবাইকেই আশ্চর্য করেছে কোনও সন্দেহ নেই।"
"তবে আমাদের যেটা মনে হয়েছে, বাংলাদেশের মানুষ স্থিতিশীলতাই চান - এবং তাদের দেশ অর্থনৈতিক উন্নতির যে ধারায় এগিয়ে চলেছে সেটাকে তারা কোনওভাবে ডিসটার্ব করতে চান না। ২০১৪ সালের পর থেকে আসলে সেদেশের মানুষের রাজনৈতিক ফোকাসটাই বদলে গেছে।"
"তা ছাড়া বিরোধী জোট শক্তিশালী হলে তারা সরকারের সামনে যে ধরনের চ্যালেঞ্জ খাড়া করতে পারত তার ছিটেফোঁটা ক্ষমতাও এখন তাদের নেই। ফলে শেখ হাসিনা আরও অন্তত পাঁচ বছর নিশ্চিন্তে সরকার চালাতে পারবেন বলেই মনে হচ্ছে", বলছিলেন মিস ভট্টাচার্য।
সুতরাং বিরোধী জোটের দুর্বলতার কারণে শেখ হাসিনা সরকার এবারেও অনায়াসে মেয়াদ পূর্ণ করতে পারবে বলেই ভারতীয় গবেষকদের ধারণা।
কিন্তু ৩০শে ডিসেম্বরের নির্বাচনকে ঘিরে অনেক প্রশ্ন থাকলেও ভারত যেভাবে আগ বাড়িয়ে ও তড়িঘড়ি চীনেরও আগে সেটাকে স্বীকৃতি দিয়েছে, শ্রীরাধা দত্ত সেটাকে সমর্থন করতে পারছেন না।
"আমি তো বলব এটা একটা অদ্ভুত সিদ্ধান্ত - আমরা সবাই জানি এটা একটা একতরফা নির্বাচন - তারপরও যেভাবে চীনকে টেক্কা দিতে আমরা আগেভাগে তাকে বৈধতা দিতে গেলাম সেটা আমি তো বলব বেশ বাড়াবাড়িই হয়েছে।"
"২০১৪ সালের নির্বাচনের পরও আমরা শেখ হাসিনার সঙ্গে ঠিক একই জিনিসই করেছিলাম", বলছিলেন ড: দত্ত।
বাংলাদেশের সাম্প্রতিক নির্বাচন যে বিতর্কমুক্ত নয়, সে কথা স্বীকার করেছে দিল্লির আর একটি থিঙ্কট্যাঙ্ক ইনস্টিটিউট অব ডিফেন্স স্টাডিজ অ্যান্ড অ্যানালিসিসও।
তাদের মন্তব্য প্রতিবেদেনও বলা হয়েছে, বাংলাদেশের গণতন্ত্র আসলে আজ অবধি এমন একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনই গড়ে তুলতে পারেনি যাকে কোনও বিরোধী দল ভরসা করতে পারে।
তবে নির্বাচন যতই ত্রুটিপূর্ণ হোক, ঢাকার ক্ষমতায় শেখ হাসিনাই যে ভারতের জন্য সেরা বাজি ও একমাত্র অপশন - তা নিয়ে এই থিঙ্কট্যাঙ্কগুলোর মধ্যে কোনও মতবিরোধ নেই।
No comments