তালেবানের সাথে মার্কিন কূটনীতিকদের আলোচনায় কি শান্তি ফিরবে আফগানিস্তানে?
আফগানিস্তানের একটি শরণার্থী শিবির |
লাস্ট আপডেট- ২ অক্টোবর ২০১৮: কিছুদিন আগে কাতারে তালেবানের সঙ্গে
প্রাথমিক আলোচনার জন্য বৈঠক করেছিল মার্কিন কূটনীতিকরা, যা আফগানিস্তানে
শান্তির পথ তৈরি করবে বলে ধারণা করেছিলেন অনেকে।
তবে আফগানিস্তানে সহিংসতা থামেনি এবং এখনো আফগান সরকার আর তালেবানের মধ্যেও পরিষ্কার কোন সমঝোতা দেখা যাচ্ছে না।
কাবুলের চেরাহিকাম্বার ক্যাম্পের যেখানেই যাওয়া হোক না কেন, সবজায়গাতেই সংবাদকর্মীদের পেছনে পেছনে ছুটে বেড়াতে দেখা যায় শিশুদের।
যেখানে যুদ্ধের কারণে ঘরবাড়ি হারানো বেশ কয়েকহাজার মানুষ বাঁশ,কাঠের ঘরবাড়িগুলোয় বসবাস করে।
এদের অনেকেই কয়েক বছর ধরে এখানে বাস করছেন।
তারা যখন শুনতে পেয়েছেন যে, আমেরিকানদের সঙ্গে তালেবানের প্রাথমিক আলোচনা শুরু হয়েছে, তখন তারা নতুন করে আশা দেখছেন।
বছরখানেক
ধরে সেখানকার অস্থায়ী ক্যাম্পগুলোতে থাকা মানুষ আবার বাড়িতে ফিরে যেতে
পারার স্বপ্ন দেখছেন। আবারো তাদের সন্তানরা স্কুলে ফিরে যেতে পারবে বলে
আশাবাদ ব্যক্ত করছেন।
গত জুন মাসে অপ্রত্যাশিতভাবে একটি যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর এই আশাবাদ আরো বেড়েছে।
সেসময় তালেবান যোদ্ধা আর সরকারি সৈনিকদের যৌথ সেলফি তুলতেও দেখা যায়।
তখন তালেবানের প্রধান একটি দাবি মেনে নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, তারা কাতারে তালেবানের রাজনৈতিক দপ্তরে বৈঠক করেছে।
তালেবান
অনেক দিন ধরেই দাবি করে আসছে যে, শুধুমাত্র যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গেই আলোচনা
হতে পারে, আফগান সরকারের সঙ্গে নয় - যাদের তারা পুতুল সরকার বলে মনে করে।
তবে যুক্তরাষ্ট্র বলছে, যখন পুরোদস্তুর আলোচনা শুরু হবে, সেটি হবে আফগানদের নেতৃত্বেই।
তালেবান কী চায়?
আলোচনাটি এখন
পর্যন্ত গোপনে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সাবেক তালেবান কমান্ডার আকবর আগা। এই
গ্রুপের প্রধান দাবিগুলো তিনি ব্যাখ্যা করছিলেন।
আফগানিস্তানে চলমান অস্থিরতায় সবচেয়ে বেশি ভুগতে হচ্ছে শিশুদের |
"আমেরিকানদের অবশ্যই
একটি সময়সীমা জানাতে হবে, যে কখন তারা আফগানিস্তান ছেড়ে যাবে। সেই সময়ে
তালেবান আর আফগান সরকার একটি সমঝোতায় আসবে", বলে জানান মি. আগা।
তিনি জানান, তার বদলে তালেবান এটা নিশ্চিত করবে যে আল-কায়েদা বা আর কোন চরমপন্থী গ্রুপকে আফগানিস্তানে ঘাটি গাড়তে দেয়া হবে না।
"যতদূর
আমি জানি, আল-কায়েদার মতো কোন গ্রুপকে আফগানিস্তানে প্রশ্রয় দেবে না
তালেবান। সেই আমল এখন শেষ। তারা আর অন্য কোন দেশকে নিয়েই চিন্তা করে না।"
তবে নানা পক্ষের আলাপ আলোচনা সত্ত্বেও সহিংসতা অব্যাহত আফগানিস্তানে রয়েছেই।
দ্বিতীয় দফার যুদ্ধবিরতিতে কখনো সম্মত হয়নি তালেবান।
আফগান প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, শুধুমাত্র গত একমাসেই সেনাবাহিনীর পাঁচশোর বেশি সদস্য নিহত হয়েছে।
বিমান হামলার সংখ্যাও অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে নেটো আর আফগান বাহিনী।
জটিল ব্যাপার হলো, কেউ বুঝতে পারছে না আসলে কি বোঝাপড়া চলছে।
আহমেদ রশীদ নামক একজন রাজনৈতিক বিশ্লেষক জানান, সহিংসতা কমা না পর্যন্ত কোন রাজনৈতিক আলোচনার সম্ভাবনা তিনি দেখছেন না।
"তালেবান
আসলে কখনোই বলেনি যে, তারা আসলে কি চায়। তারা কখনোই পরিষ্কারভাবে খুলে
বলেনি যে, তারা আংশিক হলেও রাজনৈতিক আলোচনায় আগ্রহী অথবা কখনো একটি যৌথ
সরকার গঠন করতে পারে", বলেন মি. রশীদ।
আফগানিস্তানের খুব কম মানুষই অবশ্য ভাবছে যে, আগামী এপ্রিলে নির্ধারিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে এ বিষয়ে বড় কোন অগ্রগতি হবে।
তালেবান
হয়তো ভাবতে পারে, একসময় আমেরিকান বাহিনী আফগানিস্তান থেকে অবশ্যই চলে
যাবে। তাদের তখন শুধু সে সময়ের জন্য অপেক্ষা করতে হবে কখন পুরো দেশটিই
তাদের হয়ে যাবে।
আফগানিস্তানের ভেতরে যুদ্ধে যুদ্ধে বাস্তুচ্যুত হওয়া একটি শরণার্থী শিবিরের |
No comments