নতুন শ্রেণী বিন্যাস এবং রাজনীতি by ড. আলী রীয়াজ
বাংলাদেশে
গত কয়েক দশক ধরেই উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি অর্জিত হচ্ছে। বাংলাদেশের
অর্থনীতির আকার বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রবৃদ্ধির ফলে আপাতদৃষ্টে দরিদ্র মানুষের
সংখ্যা কমেছে এবং মধ্যবিত্ত শ্রেণীর আকার বৃদ্ধি পেয়েছে। এইসব তথ্য আমরা
প্রায়শই শুনে থাকি। এই নিয়ে উৎসব আয়োজনের কথাও আমরা জানি। বাংলাদেশে
কোটিপতির সংখ্যা বৃদ্ধি, সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশীদের গচ্ছিত রাখা অর্থের
পরিমাণ, মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশীদের সেকেন্ড হোমের সংখ্যা এবং ওয়াশিংটনভিত্তিক
গবেষণা প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইনটিগ্রিটির (জিএফআই) তৈরি করা
হিসেব অনুযায়ী বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থের পরিমাণ এই সবই বাংলাদেশে
বিত্তবানদের সংখ্যা এবং সম্পদের প্রমাণ দেয় (রীয়াজ ২০১৭)। এ কথাও আমরা জানি
যে, প্রবৃদ্ধির ফলে মাথাপিছু আয় বেড়েছে।
কিন্তু এই সব তথ্যের পাশাপাশি যদি আমরা অন্যান্য তথ্য বিবেচনায় নেই তবে যে চিত্র আমরা পাই তা আমাদের দেখিয়ে দেয় যে এই প্রবৃদ্ধির সুবিধা কারা ভোগ করছেন। প্রথমত সাধারণ মানুষের প্রকৃত মজুরি হ্রাস পাচ্ছে।
পরিসংখ্যান ব্যুরো সম্প্রতি কৃষি, শিল্প ও সেবা খাতের কর্মীদের প্রকৃত আয়ের যে সূচক প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যায়, ‘অনানুষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের মজুরি ২০১০-১১ থেকে ২০১৪-১৫ সময়ে বেড়েছে ২৪.৭ শতাংশ। কিন্তু এ সময়ে ভোক্তামূল্য সূচক বেড়েছে ৩২.৬ শতাংশ। অর্থাৎ ২০১০-১১-এর তুলনায় শ্রমিকদের প্রকৃত আয় কমেছে ৭.৯ শতাংশ। এ থেকে প্রতীয়মান যে উচ্চ প্রবৃদ্ধির হার দাবি করা সত্ত্বেও সাধারণ মানুষ তাদের আয়-বৃদ্ধি থেকে শুধু বঞ্চিত হয়নি, বরং তাদের আয়ও হারিয়ে যাচ্ছে’ (তিতুমীর ২০১৮)। দ্বিতীয়ত, সম্পদ জমা হচ্ছে এক ছোট গোষ্ঠীর হাতে।
খানা আয় ও ব্যয় জরিপ-২০১৬ অনুযায়ী ‘দেশের সব মানুষের যত আয়, এর মাত্র ১ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ আয় করেন সবচেয়ে গরিব ১০ শতাংশ মানুষ। ছয় বছর আগেও মোট আয়ের ২ শতাংশ এই শ্রেণির মানুষের দখলে ছিল। অন্যদিকে সবচেয়ে ধনী ১০ শতাংশ মানুষের আয় বেড়ে মোট আয়ের ৩৮ দশমিক ১৬ শতাংশ। ছয় বছর আগে এর পরিমাণ ছিল ৩৫ দশমিক ৮৪ শতাংশ। জরিপে দেখা যাচ্ছে, দেশের মোট আয়ের দুই-তৃতীয়াংশের মালিক ওপরের দিকে থাকা ৩০ শতাংশ মানুষ। এই ক্রমবর্ধমান আয়বৈষম্যের প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে জিনি সূচকে।
আয়বৈষম্য নির্দেশক জিনি সূচক ২০০০ সালের দশমিক ৪৫১ থেকে ২০১৬ সালে দশমিক ৪৮৩ হয়েছে’ (তিতুমীর ২০১৮)। তৃতীয়ত এই ধরণের উন্নয়ন বেকারত্বের পরিমাণ বৃদ্ধি করছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ২০১৬-১৭ অর্থবছরের শ্রমশক্তি জরিপ অনুযায়ী, প্রকৃত বেকার মোট কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর ৪৪ দশমিক ২৫ শতাংশ। ব্যুরোর আরেক জরিপ অনুযায়ী ২০১৩-১৪ ও ২০১৪-১৫ দুই বছরে বেকারের সংখ্যা বেড়েছে ৪৮ লাখ। দেশের সব তরুণের স্বপ্ন যে বিসিএস পরীক্ষায় সফল হওয়া তাঁর কারণ হচ্ছে তাঁরা অন্যত্র আর কোনো সুযোগ দেখতে পান না।
এই যে উন্নয়নের ধারা তার নেতিবাচক দিকের সবচেয়ে বড় প্রকাশ দেখতে পাই ব্যাংকিং খাতে; ব্যাংকিং খাতের অবস্থাকে জনগণের অর্থে ফুটো চৌবাচ্চা ভরার এক প্রতিযোগিতা ছাড়া আর কিছুই বলার অবকাশ নেই (রীয়াজ ২০১৮)। কেননা রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোকে সরকার ২০০৯-১০ থেকে ২০১৬-১৭ অর্থবছর পর্যন্ত আট বছরে ১৪ হাজার ৫০৫ কোটি টাকা দিয়েছে। আর অন্য দিকে ২০১৮ সালের প্রথম তিন মাসেই খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১৪ হাজার কোটি টাকা। ‘২০১৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত খেলাপি ঋণ ছিল ৭৪ হাজার ৩০৩ কোটি ১১ লাখ টাকা। চলতি বছরের মার্চ শেষে তা বেড়ে হয়েছে ৮৮ হাজার ৫৮৯ কোটি ৩৭ লাখ টাকা, যা বিতরণকৃত ঋণের ১০ দশমিক ৭৮ শতাংশ। স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় আদায় অযোগ্য হয়ে পড়ায় ডিসেম্বর পর্যন্ত মামলাভুক্ত হয়েছে ৫৫ হাজার ৩১১ কোটি টাকার অবলোপনকৃত খেলাপি ঋণ। এ ঋণ যোগ করলে দেশের ব্যাংকিং খাতের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১ লাখ ৪৩ হাজার ৯০০ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে’ (বণিক বার্তা ২০১৮)।
বিরাজমান উন্নয়নের ধারা যে সম্পদের অবাধ লুন্ঠনের ব্যবস্থা তৈরি করেছে তার ফলে বিত্তবান শ্রেণীর পাশাপাশি ‘চুইয়ে পড়া’র মতো করে এই সম্পদের কিছু সমাজে এক নতুন মধ্যবিত্ত শ্রেণির উদ্ভব ঘটিয়েছে, যারা বিত্তের বিবেচনায় মধ্যবিত্ত বলে বিবেচিত হলেও আচার-আচরণে এবং রাজনৈতিক সংস্কৃতির বিবেচনায় অতীতে মধ্যবিত্ত যে ধরনের ভূমিকা পালন করত, তা পালনে আগ্রহী নয় (রীয়াজ ২০১৭)। বাংলাদেশে অতীতে মধ্যবিত্তের ভেতরে গণতান্ত্রিক আকাঙ্খা এবং অংশগ্রহণমূলক সমাজের স্বপ্ন ছিল, এখন তা প্রায় অবসিত। ‘গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া, স্বাধীন গণমাধ্যম, স্বাধীন বিচারব্যবস্থা, রাষ্ট্রীয় প্রকল্প ও অর্থ বরাদ্দে স্বচ্ছতা, জবাবদিহি, স্বাধীন নির্বাচনব্যবস্থা, স্বাধীন বিদ্যাচর্চা-সংস্কৃতিচর্চা’ এদের কাঙ্খিত নয় (মুহাম্মদ ২০১৮)। এই শ্রেণী যে বিরাজমান হাইব্রিড রেজিমের
রাজনৈতিক এজেন্ডার পক্ষে থাকবেন সেটাই স্বাভাবিক, তাঁদের অস্তিত্ব কার্যত নির্ভর করছে এই ব্যবস্থা অব্যাহত থাকার সঙ্গে। ফলে দেশের অর্থনীতিতে বিরাজমান দুর্নীতি এবং লুন্ঠনের প্রক্রিয়াকে বৈধতা প্রদানের প্রধান হাতিয়ার হচ্ছে এই নতুন শ্রেণী। এই শ্রেণীর রাজনৈতিক ভূমিকা বিবেচনা করলে বলা যায় যে, আগামীতে যেকোনো ধরনের অংশগ্রহণমূলক রাজনৈতিক ব্যবস্থার সম্ভাবনাকে এই শ্রেণী ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।
এই নতুন ধনিক শ্রেণীর উদ্ভবের আলোচনায় আমাদের স্মরণে রাখতে হবে যে, রাজনৈতিকভাবে ক্ষমতাসীনদের সংশ্লিষ্টতা ছাড়া এই ধরণের সুযোগ সুবিধা লাভ সম্ভব নয়। তার অর্থ হচ্ছে, এই ব্যবস্থায় এক শ্রেণীর মানুষ যারা ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নন তাঁরা যে কেবল সুবিধা বঞ্চিত হচ্ছেন তাই নয় তাঁরা তাঁদের প্রাপ্য থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন, ফলে অভাবনীয় ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। এই শ্রেণীর মানুষেরা এক ধরণের অংশগ্রহণমূলক অর্থনীতি এবং রাজনৈতিক ব্যবস্থার অনুকূলেই অবস্থান নেবেন।
উৎস: সেন্টার ফর গভর্নেন্স স্টাডিজ (সিজিএস)-এর জন্য আলোচনাপত্র
লেখক পরিচিতি : লেখক, যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ডিস্টিংগুইশড প্রফেসর
কিন্তু এই সব তথ্যের পাশাপাশি যদি আমরা অন্যান্য তথ্য বিবেচনায় নেই তবে যে চিত্র আমরা পাই তা আমাদের দেখিয়ে দেয় যে এই প্রবৃদ্ধির সুবিধা কারা ভোগ করছেন। প্রথমত সাধারণ মানুষের প্রকৃত মজুরি হ্রাস পাচ্ছে।
পরিসংখ্যান ব্যুরো সম্প্রতি কৃষি, শিল্প ও সেবা খাতের কর্মীদের প্রকৃত আয়ের যে সূচক প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যায়, ‘অনানুষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের মজুরি ২০১০-১১ থেকে ২০১৪-১৫ সময়ে বেড়েছে ২৪.৭ শতাংশ। কিন্তু এ সময়ে ভোক্তামূল্য সূচক বেড়েছে ৩২.৬ শতাংশ। অর্থাৎ ২০১০-১১-এর তুলনায় শ্রমিকদের প্রকৃত আয় কমেছে ৭.৯ শতাংশ। এ থেকে প্রতীয়মান যে উচ্চ প্রবৃদ্ধির হার দাবি করা সত্ত্বেও সাধারণ মানুষ তাদের আয়-বৃদ্ধি থেকে শুধু বঞ্চিত হয়নি, বরং তাদের আয়ও হারিয়ে যাচ্ছে’ (তিতুমীর ২০১৮)। দ্বিতীয়ত, সম্পদ জমা হচ্ছে এক ছোট গোষ্ঠীর হাতে।
খানা আয় ও ব্যয় জরিপ-২০১৬ অনুযায়ী ‘দেশের সব মানুষের যত আয়, এর মাত্র ১ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ আয় করেন সবচেয়ে গরিব ১০ শতাংশ মানুষ। ছয় বছর আগেও মোট আয়ের ২ শতাংশ এই শ্রেণির মানুষের দখলে ছিল। অন্যদিকে সবচেয়ে ধনী ১০ শতাংশ মানুষের আয় বেড়ে মোট আয়ের ৩৮ দশমিক ১৬ শতাংশ। ছয় বছর আগে এর পরিমাণ ছিল ৩৫ দশমিক ৮৪ শতাংশ। জরিপে দেখা যাচ্ছে, দেশের মোট আয়ের দুই-তৃতীয়াংশের মালিক ওপরের দিকে থাকা ৩০ শতাংশ মানুষ। এই ক্রমবর্ধমান আয়বৈষম্যের প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে জিনি সূচকে।
আয়বৈষম্য নির্দেশক জিনি সূচক ২০০০ সালের দশমিক ৪৫১ থেকে ২০১৬ সালে দশমিক ৪৮৩ হয়েছে’ (তিতুমীর ২০১৮)। তৃতীয়ত এই ধরণের উন্নয়ন বেকারত্বের পরিমাণ বৃদ্ধি করছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ২০১৬-১৭ অর্থবছরের শ্রমশক্তি জরিপ অনুযায়ী, প্রকৃত বেকার মোট কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর ৪৪ দশমিক ২৫ শতাংশ। ব্যুরোর আরেক জরিপ অনুযায়ী ২০১৩-১৪ ও ২০১৪-১৫ দুই বছরে বেকারের সংখ্যা বেড়েছে ৪৮ লাখ। দেশের সব তরুণের স্বপ্ন যে বিসিএস পরীক্ষায় সফল হওয়া তাঁর কারণ হচ্ছে তাঁরা অন্যত্র আর কোনো সুযোগ দেখতে পান না।
এই যে উন্নয়নের ধারা তার নেতিবাচক দিকের সবচেয়ে বড় প্রকাশ দেখতে পাই ব্যাংকিং খাতে; ব্যাংকিং খাতের অবস্থাকে জনগণের অর্থে ফুটো চৌবাচ্চা ভরার এক প্রতিযোগিতা ছাড়া আর কিছুই বলার অবকাশ নেই (রীয়াজ ২০১৮)। কেননা রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোকে সরকার ২০০৯-১০ থেকে ২০১৬-১৭ অর্থবছর পর্যন্ত আট বছরে ১৪ হাজার ৫০৫ কোটি টাকা দিয়েছে। আর অন্য দিকে ২০১৮ সালের প্রথম তিন মাসেই খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১৪ হাজার কোটি টাকা। ‘২০১৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত খেলাপি ঋণ ছিল ৭৪ হাজার ৩০৩ কোটি ১১ লাখ টাকা। চলতি বছরের মার্চ শেষে তা বেড়ে হয়েছে ৮৮ হাজার ৫৮৯ কোটি ৩৭ লাখ টাকা, যা বিতরণকৃত ঋণের ১০ দশমিক ৭৮ শতাংশ। স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় আদায় অযোগ্য হয়ে পড়ায় ডিসেম্বর পর্যন্ত মামলাভুক্ত হয়েছে ৫৫ হাজার ৩১১ কোটি টাকার অবলোপনকৃত খেলাপি ঋণ। এ ঋণ যোগ করলে দেশের ব্যাংকিং খাতের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১ লাখ ৪৩ হাজার ৯০০ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে’ (বণিক বার্তা ২০১৮)।
বিরাজমান উন্নয়নের ধারা যে সম্পদের অবাধ লুন্ঠনের ব্যবস্থা তৈরি করেছে তার ফলে বিত্তবান শ্রেণীর পাশাপাশি ‘চুইয়ে পড়া’র মতো করে এই সম্পদের কিছু সমাজে এক নতুন মধ্যবিত্ত শ্রেণির উদ্ভব ঘটিয়েছে, যারা বিত্তের বিবেচনায় মধ্যবিত্ত বলে বিবেচিত হলেও আচার-আচরণে এবং রাজনৈতিক সংস্কৃতির বিবেচনায় অতীতে মধ্যবিত্ত যে ধরনের ভূমিকা পালন করত, তা পালনে আগ্রহী নয় (রীয়াজ ২০১৭)। বাংলাদেশে অতীতে মধ্যবিত্তের ভেতরে গণতান্ত্রিক আকাঙ্খা এবং অংশগ্রহণমূলক সমাজের স্বপ্ন ছিল, এখন তা প্রায় অবসিত। ‘গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া, স্বাধীন গণমাধ্যম, স্বাধীন বিচারব্যবস্থা, রাষ্ট্রীয় প্রকল্প ও অর্থ বরাদ্দে স্বচ্ছতা, জবাবদিহি, স্বাধীন নির্বাচনব্যবস্থা, স্বাধীন বিদ্যাচর্চা-সংস্কৃতিচর্চা’ এদের কাঙ্খিত নয় (মুহাম্মদ ২০১৮)। এই শ্রেণী যে বিরাজমান হাইব্রিড রেজিমের
রাজনৈতিক এজেন্ডার পক্ষে থাকবেন সেটাই স্বাভাবিক, তাঁদের অস্তিত্ব কার্যত নির্ভর করছে এই ব্যবস্থা অব্যাহত থাকার সঙ্গে। ফলে দেশের অর্থনীতিতে বিরাজমান দুর্নীতি এবং লুন্ঠনের প্রক্রিয়াকে বৈধতা প্রদানের প্রধান হাতিয়ার হচ্ছে এই নতুন শ্রেণী। এই শ্রেণীর রাজনৈতিক ভূমিকা বিবেচনা করলে বলা যায় যে, আগামীতে যেকোনো ধরনের অংশগ্রহণমূলক রাজনৈতিক ব্যবস্থার সম্ভাবনাকে এই শ্রেণী ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।
এই নতুন ধনিক শ্রেণীর উদ্ভবের আলোচনায় আমাদের স্মরণে রাখতে হবে যে, রাজনৈতিকভাবে ক্ষমতাসীনদের সংশ্লিষ্টতা ছাড়া এই ধরণের সুযোগ সুবিধা লাভ সম্ভব নয়। তার অর্থ হচ্ছে, এই ব্যবস্থায় এক শ্রেণীর মানুষ যারা ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নন তাঁরা যে কেবল সুবিধা বঞ্চিত হচ্ছেন তাই নয় তাঁরা তাঁদের প্রাপ্য থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন, ফলে অভাবনীয় ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। এই শ্রেণীর মানুষেরা এক ধরণের অংশগ্রহণমূলক অর্থনীতি এবং রাজনৈতিক ব্যবস্থার অনুকূলেই অবস্থান নেবেন।
উৎস: সেন্টার ফর গভর্নেন্স স্টাডিজ (সিজিএস)-এর জন্য আলোচনাপত্র
লেখক পরিচিতি : লেখক, যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ডিস্টিংগুইশড প্রফেসর
No comments