পুষ্পর বাটার ফ্লাই হোম by সাবিনা ইয়াসমিন
২৮ বছর বয়সী প্রাণবন্ত এক তরুণী পুষ্প
বাসনেত। নেপালী এ তরুণী চালান এক ব্যতিক্রমী স্কুল ‘বাটার ফ্লাই হোম’।
প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে পুষ্প চলে যান তার স্কুলে।
একঝাঁক শিশু শিক্ষার্থীর কাছে। নিজ হাতে শিশুদের স্কুলের কাপড় পরিয়ে দেন।
নাশতার ব্যবস্থা করেন। তারপর তাদের নিয়ে স্কুলের পথ ধরেন পুষ্প। প্রতিদিন
তার এই একই রুটিন। এভাবেই পুষ্প কাটিয়ে দিলেন বেশ কয়েকটি বছর। শিশুদের জন্য
পুষ্প তার জীবন উৎসর্গ করেছেন। শিশুদের কল্যাণে নিজেকে বিলিয়ে দিয়ে ২০১২
সালে ‘সিএনএন হিরো অব দ্য ইয়ার’ সম্মানে ভূষিত হন পুষ্প।
২০০৫ সালের ঘটনা। পুষ্প বাসনেত একদিন জানতে পারলেন নেপালের বিভিন্ন জেলে অসংখ্য শিশু রয়েছে। এর কারণ জানতে পুষ্প একই অনুসন্ধানে নেমে পড়েন। খোঁজ নিয়ে তিনি জানতে পারলেন, কারাগারে অনেক আসামির সন্তানদের বয়স কম। আবার অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় আসামি ছাড়া সন্তানদের দেখাশোনা করার কেউ নেই। সে ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত হয় যে, আসামিরা নিজ নিজ সন্তানদের নিয়েই কারাগারে অবস্থান করবেন। এর ফলে অসংখ্য শিশু তাদের বাবা-মায়ের সাথে নেপালের বিভিন্ন কারাগারে রয়েছে বলে পুষ্প জানতে পারেন। বিষয়টি পুষ্পকে ভীষণভাবে স্পর্শ করে। জেলের মতো ভয়াবহ পরিবেশে শিশুদের বেড়ে ওঠাকে পুষ্প সহজভাবে মেনে নিতে পারেননি। সেই থেকে তিনি নেপালের কারাগারে থাকা শিশুদের নিয়ে কাজ করতে শুরু করেন।
পুষ্প জেলে থাকা শিশুদের লেখাপড়া শেখানোর চিন্তা করেন। সেজন্য প্রথমে তিনি একটি ঘর ভাড়া করেন। এরপর জেলের ভেতরে থাকা ছয় বছরের কম বয়সী শিশুদের খোঁজ করে নিয়ে আসেন নিজের কাছে। তাদের লেখাপড়া করানোর যাবতীয় দায়িত্ব পালনের ভার নিজের কাঁধে তুলে নেন। পুষ্পর বয়স তখন মাত্র ২১ বছর। নিজের পড়াশোনার পাশাপাশি নেপালের বিভিন্ন জেলে ঘুরে বেড়িয়েছেন পুষ্প। সন্ধান করেছেন নিষ্পাপ শিশুদের। শুধু কারাগারেই নয়, বিভিন্ন মদের দোকান থেকেও তিনি শিশুদের নিয়ে আসেন। তাদের নিয়ে পুষ্প শুরু করেন নতুন এক আন্দোলন। তিনি ঘোষণা দেন, যতদিন আমি বেঁচে থাকব, একটি শিশুকেও জেলের দেয়ালের ভেতর বড় হতে দেব না।
শিশুদেরকে শিক্ষার অধিকার দেয়ার লক্ষ্যে পুষ্প কাজ করে যাচ্ছেন। পড়াশোনার জন্য পুষ্প নিজে ভাল ও সহায়ক পরিবেশ পেয়েছেন। তাই তার মতো করে অন্যরাও যাতে ভাল পরিবেশ পায় সে লক্ষ্যেই নিজেকে নিবেদিত করছেন পুষ্প। প্রথমদিকে এ লক্ষ্যে কাজ করাটা পুষ্পের জন্য মোটেও সহজ ছিল না। শিশুদের জন্য যখন পুষ্প ঘর ভাড়া করেন তখন থেকেই সমস্যা দেখা দেয়। সবাই পুষ্পর এ উদ্যোগকে সাধুবাদ জানালেও তার পরিবার থেকে আপত্তি জানানো হয়। আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে এ উদ্যোগ তেমন ফলপ্রসূ হবে না বলেই তারা বাধা দেন। কিন্তু তবুও দমে যাননি পুষ্প। নানা বাধা-বিপত্তি ও প্রতিকূলতাকে অতিক্রম করে পুষ্প এগিয়ে যান তার লক্ষ্যে। পরিবারের বাধা সত্ত্বেও কোনভাবে থেমে যাননি। বন্ধুদের কাছ থেকে টাকা সংগ্রহ করতে থাকেন তিনি। সবার কাছ থেকে টাকা সংগ্রহ করে তিনি একটি বাসা ভাড়া নেন। তারপর নিজের পরিকল্পনা মাকে বোঝাতে সক্ষম হন। মার সহায়তায় শিশুদের জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ক্রয় করেন পুষ্প। এরপর তিনি শিশুদের জন্য কাজ করতে শুরু করেন। শুরুতে সরকারের অনুমতি নিয়ে সকালে শিশুদের স্কুলে নিয়ে আসেন। আবার দিনশেষে শিশুদের জেলে দিয়ে আসতেন। পুষ্প কিন্তু এমনটা চাননি। তিনি চাইতেন শিশুদের যেন আর জেলে যেতে না হয়। সে চেষ্টা করতে থাকেন পুষ্প। এক সময় সরকারের কাছ থেকেও পুষ্প সাহায্য লাভ করতে থাকেন। সরকার পক্ষ থেকে পুষ্পকে নানাভাবে সহায়তা করা হয়। তারাই পুষ্পকে জেলের শিশুদের খরচ দিতে থাকে। এমনকি কোন জেলে শিশুদের সংখ্যা বেশি তারাই পুষ্পকে তা জানায়।
পুষ্প এগিয়ে চলেন তার স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে। ২০০৮ সালে পুষ্প তার এ স্কুলের নাম দেন ‘বাটারফ্লাই হোম’। নিজের স্বপ্ন পূরণের কথা ব্যক্ত করতে গিয়ে পুষ্প অনেক উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন। পুষ্পের কোন ক্লান্তি নেই। কর্মব্যস্ত প্রতিটি সকাল তাকে বেঁচে থাকার প্রেরণা জোগায় বলে পুষ্প জানান। এ জন্য তিনি সৃষ্টিকর্তার কাছে কৃতজ্ঞতাও প্রকাশ করেন।
দক্ষিণ এশিয়ার একটি ছোট দেশ নেপাল। অর্থ-সামাজিক দিক দিয়ে দেশটি এখনও পিছিয়ে রয়েছে। ইউনিসেফের এক হিসাব মতে, নেপালের শতকরা ৫৫ জন দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করছে। শিক্ষাসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ অধিকার হতে শিশুরা সে দেশে চরমভাবে বঞ্চিত। এমন এক প্রতিকূল পরিবেশে পুষ্প শুরু করেন তার স্বপ্নপূরণের আন্দোলন।
পুষ্প বাসনেতের উদ্যোগ এখন আরও বড়। তার বাটারফ্লাই হোমে এখন বহু লোক কাজ করছে। তার এ স্কুল থেকে লেখাপড়া শেষ করে অনেক শিশুই হাই স্কুল ও কলেজে পড়তে যাচ্ছে। কারাগারের অন্ধকার থেকে পুষ্প শিশুদের আলোর পথে নিয়ে এসেছেন। অসংখ্য আসামির সন্তানদের দিয়েছেন আলোর সন্ধান। পুষ্পের এ উদ্যোগের প্রশংসা করেছেন অনেকে। অনেক আসামি তাদের সন্তানদের জীবন সাজানোর জন্য পুষ্পের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
ধীরস্থির ও শান্ত স্বভাবের অধিকারী পুষ্প। জীবনের কাছে তার কোন চাওয়া নেই বলে জানান তিনি। প্রতিটি শিশুর স্বপ্ন পূরণের চেষ্টা করাই এখন পুষ্পর কাজ। যতদিন বেঁচে থাকবেন শিশুদের জন্য তিনি কাজ করে যাবেন। কারাগারের দেয়াল ভেঙে দিতে চান পুষ্প। সেখানে যেন আর কোন নিষ্পাপ শিশুকে থাকতে না হয়। কারাগারের দেয়াল ভেঙে পুষ্প সব শিশুকে আলোর পথ দেখাতে চান। দেখাতে চান সুন্দর এ পৃথিবীকে।
২০০৫ সালের ঘটনা। পুষ্প বাসনেত একদিন জানতে পারলেন নেপালের বিভিন্ন জেলে অসংখ্য শিশু রয়েছে। এর কারণ জানতে পুষ্প একই অনুসন্ধানে নেমে পড়েন। খোঁজ নিয়ে তিনি জানতে পারলেন, কারাগারে অনেক আসামির সন্তানদের বয়স কম। আবার অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় আসামি ছাড়া সন্তানদের দেখাশোনা করার কেউ নেই। সে ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত হয় যে, আসামিরা নিজ নিজ সন্তানদের নিয়েই কারাগারে অবস্থান করবেন। এর ফলে অসংখ্য শিশু তাদের বাবা-মায়ের সাথে নেপালের বিভিন্ন কারাগারে রয়েছে বলে পুষ্প জানতে পারেন। বিষয়টি পুষ্পকে ভীষণভাবে স্পর্শ করে। জেলের মতো ভয়াবহ পরিবেশে শিশুদের বেড়ে ওঠাকে পুষ্প সহজভাবে মেনে নিতে পারেননি। সেই থেকে তিনি নেপালের কারাগারে থাকা শিশুদের নিয়ে কাজ করতে শুরু করেন।
পুষ্প জেলে থাকা শিশুদের লেখাপড়া শেখানোর চিন্তা করেন। সেজন্য প্রথমে তিনি একটি ঘর ভাড়া করেন। এরপর জেলের ভেতরে থাকা ছয় বছরের কম বয়সী শিশুদের খোঁজ করে নিয়ে আসেন নিজের কাছে। তাদের লেখাপড়া করানোর যাবতীয় দায়িত্ব পালনের ভার নিজের কাঁধে তুলে নেন। পুষ্পর বয়স তখন মাত্র ২১ বছর। নিজের পড়াশোনার পাশাপাশি নেপালের বিভিন্ন জেলে ঘুরে বেড়িয়েছেন পুষ্প। সন্ধান করেছেন নিষ্পাপ শিশুদের। শুধু কারাগারেই নয়, বিভিন্ন মদের দোকান থেকেও তিনি শিশুদের নিয়ে আসেন। তাদের নিয়ে পুষ্প শুরু করেন নতুন এক আন্দোলন। তিনি ঘোষণা দেন, যতদিন আমি বেঁচে থাকব, একটি শিশুকেও জেলের দেয়ালের ভেতর বড় হতে দেব না।
শিশুদেরকে শিক্ষার অধিকার দেয়ার লক্ষ্যে পুষ্প কাজ করে যাচ্ছেন। পড়াশোনার জন্য পুষ্প নিজে ভাল ও সহায়ক পরিবেশ পেয়েছেন। তাই তার মতো করে অন্যরাও যাতে ভাল পরিবেশ পায় সে লক্ষ্যেই নিজেকে নিবেদিত করছেন পুষ্প। প্রথমদিকে এ লক্ষ্যে কাজ করাটা পুষ্পের জন্য মোটেও সহজ ছিল না। শিশুদের জন্য যখন পুষ্প ঘর ভাড়া করেন তখন থেকেই সমস্যা দেখা দেয়। সবাই পুষ্পর এ উদ্যোগকে সাধুবাদ জানালেও তার পরিবার থেকে আপত্তি জানানো হয়। আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে এ উদ্যোগ তেমন ফলপ্রসূ হবে না বলেই তারা বাধা দেন। কিন্তু তবুও দমে যাননি পুষ্প। নানা বাধা-বিপত্তি ও প্রতিকূলতাকে অতিক্রম করে পুষ্প এগিয়ে যান তার লক্ষ্যে। পরিবারের বাধা সত্ত্বেও কোনভাবে থেমে যাননি। বন্ধুদের কাছ থেকে টাকা সংগ্রহ করতে থাকেন তিনি। সবার কাছ থেকে টাকা সংগ্রহ করে তিনি একটি বাসা ভাড়া নেন। তারপর নিজের পরিকল্পনা মাকে বোঝাতে সক্ষম হন। মার সহায়তায় শিশুদের জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ক্রয় করেন পুষ্প। এরপর তিনি শিশুদের জন্য কাজ করতে শুরু করেন। শুরুতে সরকারের অনুমতি নিয়ে সকালে শিশুদের স্কুলে নিয়ে আসেন। আবার দিনশেষে শিশুদের জেলে দিয়ে আসতেন। পুষ্প কিন্তু এমনটা চাননি। তিনি চাইতেন শিশুদের যেন আর জেলে যেতে না হয়। সে চেষ্টা করতে থাকেন পুষ্প। এক সময় সরকারের কাছ থেকেও পুষ্প সাহায্য লাভ করতে থাকেন। সরকার পক্ষ থেকে পুষ্পকে নানাভাবে সহায়তা করা হয়। তারাই পুষ্পকে জেলের শিশুদের খরচ দিতে থাকে। এমনকি কোন জেলে শিশুদের সংখ্যা বেশি তারাই পুষ্পকে তা জানায়।
পুষ্প এগিয়ে চলেন তার স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে। ২০০৮ সালে পুষ্প তার এ স্কুলের নাম দেন ‘বাটারফ্লাই হোম’। নিজের স্বপ্ন পূরণের কথা ব্যক্ত করতে গিয়ে পুষ্প অনেক উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন। পুষ্পের কোন ক্লান্তি নেই। কর্মব্যস্ত প্রতিটি সকাল তাকে বেঁচে থাকার প্রেরণা জোগায় বলে পুষ্প জানান। এ জন্য তিনি সৃষ্টিকর্তার কাছে কৃতজ্ঞতাও প্রকাশ করেন।
দক্ষিণ এশিয়ার একটি ছোট দেশ নেপাল। অর্থ-সামাজিক দিক দিয়ে দেশটি এখনও পিছিয়ে রয়েছে। ইউনিসেফের এক হিসাব মতে, নেপালের শতকরা ৫৫ জন দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করছে। শিক্ষাসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ অধিকার হতে শিশুরা সে দেশে চরমভাবে বঞ্চিত। এমন এক প্রতিকূল পরিবেশে পুষ্প শুরু করেন তার স্বপ্নপূরণের আন্দোলন।
পুষ্প বাসনেতের উদ্যোগ এখন আরও বড়। তার বাটারফ্লাই হোমে এখন বহু লোক কাজ করছে। তার এ স্কুল থেকে লেখাপড়া শেষ করে অনেক শিশুই হাই স্কুল ও কলেজে পড়তে যাচ্ছে। কারাগারের অন্ধকার থেকে পুষ্প শিশুদের আলোর পথে নিয়ে এসেছেন। অসংখ্য আসামির সন্তানদের দিয়েছেন আলোর সন্ধান। পুষ্পের এ উদ্যোগের প্রশংসা করেছেন অনেকে। অনেক আসামি তাদের সন্তানদের জীবন সাজানোর জন্য পুষ্পের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
ধীরস্থির ও শান্ত স্বভাবের অধিকারী পুষ্প। জীবনের কাছে তার কোন চাওয়া নেই বলে জানান তিনি। প্রতিটি শিশুর স্বপ্ন পূরণের চেষ্টা করাই এখন পুষ্পর কাজ। যতদিন বেঁচে থাকবেন শিশুদের জন্য তিনি কাজ করে যাবেন। কারাগারের দেয়াল ভেঙে দিতে চান পুষ্প। সেখানে যেন আর কোন নিষ্পাপ শিশুকে থাকতে না হয়। কারাগারের দেয়াল ভেঙে পুষ্প সব শিশুকে আলোর পথ দেখাতে চান। দেখাতে চান সুন্দর এ পৃথিবীকে।
No comments